ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও পোলিং এজেন্টদের মারধর করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ১০ স্বতন্ত্রসহ ১৩ প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
Published : 05 Jan 2014, 01:34 PM
এরা হলেন- ঢাকা-১৫ আসনের মোহাম্মদ এখলাস উদ্দিন মোল্লা, শেরপুর-২ আসনের বদিউজ্জামান বাদশা, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের শওকত আলী, বরগুনা-২ আসনের আবুল হোসেন শিকদার, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের আতাউর রহমান রতন, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের এ কে এম শরিফ উদ্দিন ও আজাদ উদ্দিন চৌধুরী, বরিশাল-২ আসনের সাবিনা আখতার, জামালপুর-১ আসনের আজিজ আহমেদ হাসান ও জামালপুর-২ আসনের আতিকুর রহমান।
এছাড়াও রয়েছেন চট্টগ্রাম-১২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জামালপুর-৫ আসনের জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী বাবর আলী খান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের ফরিদ আহমেদ।
এবিষয়ে ইসি সচিবালয়ের উপসচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, “মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর ভোটে না থাকার কোনো সুযোগ নেই। আইনগতভাবে তারা প্রার্থী।”
সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
ঢাকা
দুপুরে নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন কাজীপাড়া, সেনপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা (একটি অংশ) ও ইব্রাহীমপুরসহ কাফরুল থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লা।
তিনি বলেন, “সরকার ঘোষণা দিয়েছিল সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হবে। আমরাও তা বিশ্বাস করেছিলাম। জনগণও বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু এখন দেখছি, ভোটকেন্দ্র দখল করছে সরকারি দলের প্রার্থীর সমর্থকরা।
“১২৯টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে দুপুর ১টার মধ্যে ৭০টি কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে তারা। এ অবস্থায় নির্বাচন করা সম্ভব নয়।”
শেরপুর
শেরপুর-২ (নকলা ও নালিতাবাড়ি) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে এজেন্টদের বের করে দিয়ে ৫০টি কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনেছেন তারই এক সময়ের সহযোগী স্বতন্ত্র প্রার্থী বদিউজ্জামান বাদশা।
দুপুরে নকলা হলপট্টি মোড়ে সাংবাদিক উপস্থিতিতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন কৃষক লীগের সহ-সভাপতি বাদশা।
নারায়ণগঞ্জ
ভোট শুরু হওয়ার ৫ ঘণ্টা পর দুপুরে নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত আলী।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থকরা অর্ধশতাধিক কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছে।
লক্ষ্মীপুর
ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছেন লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ উদ্দিন।
সাংবাদিকদের কাছে তিনি অভিযাগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহর সমর্থকরা ২৫টি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে।
একই অভিযোগে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আজাদ উদ্দিন চৌধুরী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সমর্থকদের নিয়ে রামগতি উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালি) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মজিদ মণ্ডলের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আতাউর রহমান রতন।
বেলকুচির সোহাগপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে এই ঘোষণা দেয়ার সময় তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ারও অভিযোগ এনেছেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী ফরিদ আহমেদ সকাল ১০টার দিকে শহরের অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে।
এরপরই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “ভোট কারচুপির একটা সীমা আছে। যেভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট দেয়া হচ্ছে হচ্ছে তা ভাবা যায়না। আমি কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে ভোট ছাপানোর মহোত্সব দেখেছি।”
বরিশাল
বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা আখতার দুপুরে উজিরপুর উপজেলা চত্বরে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার মো. ইউনুসের কর্মী-সমর্থকরা ভোটকেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে।
“তারা ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জাল ভোট দিচ্ছে।”
বরগুনা
দুপুরে বরগুনা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেন শিকদার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, বেলা ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও তার সমর্থকরা পাথরঘাটা উপজেলার ৫১টি ও বামনা উপজেলার দুটি কেন্দ্র দখল করে তার নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন।
বিষয়টি জেলা রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জানিয়েও তিনি কোনো প্রতিকার না পাননি বলে অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক আবদুল ওয়াহাব ভূঞা জানান, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম
ভোটকেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দিয়ে জালভোট দেয়ার অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
রোববার দুপুরে পটিয়া পৌর সদরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, “পটিয়ায় নীল নকশার নির্বাচন চলছে। আমার এজেন্টদের অনেককে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
“বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়া হচ্ছে। পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের টহলও নেই। প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ করেও প্রতিকার না পেয়ে আমি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি।”
এবিষয়ে জানতে চাইলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের সামশুল হক চৌধুরী বলেন, “এটা মিথ্যা অভিযোগ। উল্টো জাতীয় পার্টির প্রার্থী তার বাড়ির সামনের পশ্চিম ঢেঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি দখল করতে চেয়েছিলেন। ”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকেয়া পারভীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল থেকে তিনি যত অভিযোগ করেছেন তার প্রেক্ষিতে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি ও প্রশাসনের লোকজন গিয়ে কোনো সত্যতা পাননি।”
জামালপুর
আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সিল মেরে ভোট নেয়া ও এজেন্টদের মারধরের অভিযোগ করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন জামালপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজ আহমেদ হাসান ও জামালপুর-২ আসনের প্রার্থী আতিকুর রহমান।
দুপুরে আজিজ আহমেদ হাসান সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের আবুল কালাম অাজাদের ক্যাডাররা তাকে হুমতি দিয়ে এজেন্টদের মারধর করে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বের দিয়েছে।
রিটানিং অফিসারকে জানিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
জামালপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফরিদুল হক খান দুলালের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ এনেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ফরিদুল হক খান দুলালের ক্যাডাররা তার নির্বাচনী এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে নির্বাচন বর্জন করেছেন তিনি।
জামালপুর-৫ আসনের জেপি প্রার্থী বাবর আলী খান বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম হীরার সমর্থকরা তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে কেন্দ্রগুলোতে নৌকা প্রতীতে সিল মেরেছে।
প্রশাসনের সহযোগিতা না পেয়ে তিনি দুপুরেই তিনি নির্বাচন বর্জন করেছেন বলে জানান।