বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ ও বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে হামলা-নাশকতার মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে গণনা চলছে।
Published : 05 Jan 2014, 03:14 PM
রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৫৯ জেলার ১৪৭টি আসনে এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়।
এ সময় ভোটকেন্দ্রে হামলা ও সংঘর্ষে নয় জেলায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আর ভোট শুরুর আগে ভোরে সংঘর্ঘ ও আগের দিন আহত ও দগ্ধ আরো চারজনের মৃত্যু হয়েছে এদিন।
নির্বাচন কমিশনের উপ সচিব মিহির সরোয়ার মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। তবে ওই সময়ের মধ্যে যারা কেন্দ্রের ভেতরে পৌঁছেছেন, তাদের সবার ভোট নেয়া হবে।”
ভোটের আগের রাতে ও ভোটের সময় নাশকতার কারণে বিভিন্ন জেলার দেড় শতাধিক কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।
শেষ পর্যন্ত কতো শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন সে বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “কয়েকটা দল এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ভোটার টার্ন আউট কিছুটা কম হবে।”
দুপুরে ঢাকার একটি কেন্দ্র পরিদর্শনের পর ভোট ‘সুষ্ঠু’ হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “উত্তরাঞ্চলে ঘন কুয়াশা থাকায় সেখানে ভোটার উপস্থিতি কম। আবহাওয়া ভালো হলে এবং দিন বাড়ার সাথে সাথে ভোটারও বাড়বে।”
তবে রাজধানীসহ সারা দেশেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় অনেক কম দেখা গেছে। সিলেটের বিশ্বনাথের একটি কেন্দ্রে সারা দিনে একটি ভোটও পড়েনি।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় এ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, দেশবাসী এ নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে; সারাদেশে ‘ভোটারবিহীন’ ভোটকেন্দ্রই তার প্রমাণ।
অবশ্য আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপ কমিটির আহ্বায়ক মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক। সকালের তুলনায় বিকালে উপস্থিতি বেড়েছে।
রোববার বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, “সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে, সব ষড়যন্ত্র বানচাল করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।… নির্বাচন যথাযথভাবে হয়েছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিজয় হয়েছে।”
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতিতে গণনা হবে।
সব কেন্দ্রের ফল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছানোর পর একীভূত করে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফল দেয়া হবে। পরে এ ফলাফল ইসি সচিবালয়ে পাঠানো হলে কমিশনের পক্ষ থেকে তা ঘোষণা করা হবে।
ইসি চত্বরে ‘কেন্দ্রীয় প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র’ থেকে ইসি সচিব তা ঘোষণা করবেন।
সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ডে এবার ভোট দিতে পারেননি ১৪৭ আসনের ভোটাররা। পাঁচটি জেলায় ভোটই হয়নি।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের ১২৭ জন ইতোমধ্যে জয়ী হওয়ায় সরকার গঠন নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো সংশয় ছিল না। তবে ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে আগেই কর্মীদের সক্রিয় হওয়র আহ্বান জানিয়েছিলেন দলটির নেতারা।
দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা ৯ কোটি ১৯ লাখ হলেও ১৫৩ আসনে ভোট না হওয়ায় ৪ কোটি ৮০ লাখের ভোট দিতে হয়নি এবার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ নতুন ভোটার, যারা প্রথম নির্বাচনে ভোট দেয়ারই সুযোগ পাননি।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সিইসি কাজী রকিব যেসব আসনের ভোটার সেখানে একক প্রার্থী থাকায় তাদের আর ভোট দেয়া হয়নি।
নির্বাচনে থাকা না থাকা নিয়ে নানা নাটকীয়তার জন্ম দেয়া জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ পক্ষকাল ধরে হাসপাতালে। আর নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত কয়েকদিন ধরেই কার্যত অবরুদ্ধ।
বিরোধী জোটের অনুপস্থিতিতে ১২টি দল দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। সব মিলিয়ে প্রার্থী ছিলেন ৫৪৩ জন।
তবে এর মধ্যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন ৩৯০ জন, এর মধ্যে ১০৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
১৪৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১২০ জন, জাতীয় পার্টির ৬৬ জন, জেপির ২৭ জন, বিএনএফের ২২ জন, জাসদের ২১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ১৬ জন।
বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এ দলেরই কোনো কোনো নেতা, তারা লড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ১২৭ জনই আওয়ামী লীগের, ২০ জন জাতীয় পার্টির,৩ জন জাসদের, ২ জন ওয়ার্কার্স পার্টির এবং ১ জন জেপির।
বিএনপির দাবি ছিল, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তবে তা উপেক্ষা করে পঞ্চদশ সংশোধনের পর সাংবিধানিক ধারা অনুসরণের পক্ষেই এগিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা হলে এই নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর সংসদ ভেঙে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়া হবে।
ফলে রোববারের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের মেয়াদ নির্ধারিত পাঁচ বছর থাকাটা অনিশ্চিত। রাজনৈতিক সমঝোতা না থাকায় এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসেনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কমনওয়েলথ।
শুধু ভারত ও ভুটান থেকে আসা পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে দেশিদের মিলিয়ে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার জন।
বরাবরের মতো এবারের নির্বাচনেও মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী। সশস্ত্র বাহিনীর অর্ধ লক্ষ সদস্যের সঙ্গে রয়েছেন ৮০ হাজার পুলিশ, ৮ হাজার র্যাব, ১৬ হাজার বিজিবি ও প্রায় সোয়া ২ লাখ আনসার সদস্য।
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্ব পালন করবেন। র্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা রয়েছেন টহলে।