দশম সংসদ নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরও আন্দোলনরত বিএনপিকে আগামী নির্বাচন নিয়ে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 06 Jan 2014, 03:35 PM
তবে এক্ষেত্রে সংঘাতের পথ এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার শর্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দিয়েছেন তিনি।
বিরোধী জোটের বর্জনের মধ্যে ভোট হয়ে যাওয়ার পর সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এসে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ তথা সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন হাসিনা।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের নির্দলীয় সরকারের দাবি উপেক্ষা করেই দশম সংসদ নির্বাচন শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। তবে সমঝোতা হলে দশম সংসদ ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের কথা আগেই বলেছিলেন হাসিনা।
গণভবনে সংবাদ সম্মেলনেও তিনি বলেন,“আমি বিরোধী দলের সম্মানিত নেত্রীসহ সকলকে আবার আহ্বান জানাই, সন্ত্রাস ও সহিংসতা পরিহার করে যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিবাদী জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ আলোচনায় আসুন।”
“আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করেই সমাধান করা হবে। সেজন্য সকলকে ধৈর্য্য ধরতে হবে, সহনশীল হতে হবে এবং সকল প্রকার রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।”
নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খালেদা জিয়া দুই কূলই হারালেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংলাপে কী নিয়ে আলোচনা হবে- প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সব কিছু নিয়েই আলোচনা হবে।”
নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বিরোধী জোটের কর্মসূচির প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “তারা হরতাল দিয়ে যাচ্ছে, যদিও জনগণ তা মানছে না। আমরা বলছি, তাদের হরতাল বন্ধ করতে হবে, খুন বন্ধ করতে হবে, ধ্বংসাত্মক কাজ বন্ধ করতে হবে।”
গণভবনে খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিদেশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন হাসিনা।
নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিরোধী জোটের সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যা, অগ্নিসংযোগের পরও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এজন্য সরকার, দল ও জনগণের পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান হাসিনা।
“জনগণ যে ভোট দিতে পেরেছে, তাই যথেষ্ট; যতটুকু দিয়েছে, আমি তাতেই সন্তুষ্ট।”
ভোটের দিন সহিংসতায় সারাদেশে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়, পুড়িয়ে দেয়া হয় শতাধিক ভোটকেন্দ্র।
যারা ভোট কেন্দ্র পুড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান হাসিনা।
নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুনরায় সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ; যদিও আগাম নির্বাচনের ইঙ্গিত দেয়ায় এই সংসদের মেয়াদ পূরণ নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে।
রোববার যে ১৪৭টি আসনে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে ১০৪টিতে জয়ের ফলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জনকে নিয়ে দলটির মোট আসন দাঁড়াচ্ছে ২৩১টিতে, যা সরকার গঠনের ন্যূনতম আসনের চেয়ে ৮১টি বেশি
তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হতে চলা হাসিনা বলেন, “আমি স্পষ্ট করে ঘোষণা করছি, আমার নির্বাচিত সরকারের প্রথম কাজ হবে যে কোনো মূল্যে দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করা।”
কোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচারের রায় কার্যকর অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কি না- জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, “হাই কোর্ট জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে রায় দিয়েছে। এই বিষয়ে হাই কোর্টে আরেকটা রিট আছে মনে হয়, তাই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। “আমি অন্তত কোনো দুর্নীতিবাজকে প্রটেকশন দিতে যাব না,” বলেন তিনি।
হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতার অবৈধ সম্পদ থাকলে দুর্নীতি দমন কমিশন ব্যবস্থা নেবে।