somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এসে গেছে ! এসে গেছে !! সংখ্যালঘু নির্যাতনের মৌসুম এসে গেছে !!!

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুখবর ! সুখবর !! সুখবর !!! এসে গেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ! পাঁচ বছর পর পর আসে সে সুযোগ । যিসকা হামে ইন্তেজার থা অউর হ্যাঁয় । খায়েস মেটানোর সেই দুর্দমনীয় আকাঙ্খা এবার মিটিবেই মিটিবে।

আপনার বাড়ির আশেপাশে কি কোনও সংখ্যালঘু পরিবার বাস করে । আপনার আমার মতোই মানুষ যারা । যাদের পরিবারের পুরুষরা আমাদের বাপ ভাইদের মতোই চাকরি, বাণিজ্য, ক্ষেতখামার করে আয় রোজগার করে । মহিলারা আমাদের মা খালাদের মতোই ঘরে বাইরে কাজ করে সংসার সামলায় । যাদের পরিবারের বাচ্চারা আমাদের আমাদের মানে তথাকথিত সংখ্যা গরিষ্ঠদের মতোই একই স্কুলে পড়ে, একই মাঠে খেলে, একই স্বপ্ন দেখে । যেইসব সংখ্যা লঘুদের তালিকা আমরা তৈরি করে রেখেছি, রেখেছি চোখে চোখে , শালা মালাউনের দল, বিধর্মীর দল । হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের দল । এখন রাতের অন্ধকারে তাদের উপর আপনার খায়েস মেটানোর মৌসুম এটা । হুম, সবই পাবেন । ওই বাড়িতে আমার আপনার বাড়ির মতোই চাল, ডাল, সোনা দানা – গহনা, নারী, পুরুষ সবই আছে । একটু খেয়াল কৈরা । এরা কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের আকাঙ্ক্ষিত “জিনিস” গুলা বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড় আর ডোবায় লুকাইয়া রাখে । অপরেশন এর সময় চেক কইরেন অইগুলা যেন বাদ না যায় ।

মূল কথায় আসি - কার সাথে অথবা কোনটাকে নিয়ে কি করতে হবে তা তো আগে থেকেই নিশ্চয়ই ছক বেঁধে রেখেছেন । ছক না বেঁধে থাকলেও এখন বেঁধে ফেলুন । খুব বেশী সময় লাগার কথা না । দীর্ঘ প্রতীক্ষিত হলেও কাজ তো অল্পই । না পারলে পাশের সমমনা ভাইয়ের সাহায্য নিন । নিয়েছেন ? করেছেন পরিকল্পনা ? কোর্স অব একশন রেডি ? সাবাস । এখন শুধু রাতের অপেক্ষা । রাত যতো গভীর হবে, মজা ততোই জমবে । রাতের অন্ধকারে মুখে গামছা বেঁধে দল বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ুন সংখ্যালঘু, দালালগুলোর উপর । কিসের দালাল ? আরে ধুর মিয়া - অতো ভাবলে কি চলে ! ভিন্ন দলের দালাল, ভিন্ন মতের দালাল, ভিন্ন ধর্মের দালাল, ভিন্ন দেশের দালাল ... অগো দালালির কি অভাব আছে নাকি মিয়া । কোনও দালালির ক্যাটেগরিতে ফালাইতে না পারলেও কুনু সমস্যা নাই, অর বাপ, নইলে দাদা, নইলে পরদাদা ... কেউ না কেউ তো ভিন্ন মতাদর্শের ছিলই, ওই টাই দালালি । খালি খালি আলগা, অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন কইরা সময় নষ্ট করতেছেন । এখন আবার মুল কথায় আসেন। কই যেন ছিলাম ? ও হ্যাঁ, শোনেন - চাইলে গামছার আড়ালে মুখ না লুকিয়ে, মুখ খোলাও রাখতে পারেন, রাতের অন্ধকারে গেলেও – আপনার মহৎ উদ্দেশের কারনে আপনি তো আর কাপুরুষ বলে গণ্য হবেন না রে ভাই !!! যে তাণ্ডব চালাবেন তাতে আপনি মুখ না ঢাকলেও, মানবতা বলেন, বিবেক বলেন অথবা মনুষ্যত্ব বলেন সবই নিজ থেকে মুখ লুকাবে, নির্বাসনে যাবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য । ওই গুলা অবশ্য বইয়ের জিনিস পত্র, কাগজে কলমে থাকলেই হবে ।

আরে ভাই দেরী কইরেন না, আমাদের মতো অনেক খায়েস ওয়ালা লোকজন খায়েস মেটানো শুরু করে দিছে । টিভি দেখেন নাই, পেপার পড়েন নাই ! যশোরে, দিনাজপুরে, ঠাকুরগাঁয়ে তো সংখ্যালঘু গুলারে সিরাম দাবড়ানি দেওয়া হইছে । শালারা যারা সামনে পরছে, প্যাঁদানি খাইছে । যেইগুলা পলাইয়াছিল অইগুলার বাড়িঘর পুড়াইয়া দিছে, চাল ডাল নুন – সব কিছু । মাছ ধরার জাল টাও ছাড়ে নাই আগুন । হা হা হা হা ... এখন লুকানো জায়গা থিকা বাড়ি ফিরা রাইন্ধাও খাইতে পারে নাই । এলা মজা বুঝ ।

কি বললেন ? বিপদ !!! কিসের বিপদ ? এইটা তো মৌসুম ই এই কাম করার । দায়িত্ব প্রাপ্ত লোকজন আর যাদের জন্য তারা করছে ওই প্রভাবশালী লোকজন কিছু করবো কি না ? আপনে কি বেকুব নাকি মিয়া এই শীতের দিনে যেখানে নড়াচড়া করতে কষ্ট লাগে ওই খানে রাতে তো ডান পাশ থিকা বাম পাশ হইয়া শোওয়ার প্রশ্নই আসে না, আর আপনি আইছেন মিয়া লেপ কুম্বলের ওম থিকা বের হইয়া সাহায্য করার কথা নিয়া, বাধা দেওয়ার কথা নিয়া। যতোসব অবাস্তব চিন্তা । ঘটনা ঘটিয়া যাবারও অনেক পরে তাহারা আসিবেন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাঁদবেন, হম্বি তম্বি করবেন, লোক দেখানো যথোপযুক্ত কর্মপ্রক্রিয়া সম্পাদনের আশ্বাস দিবেন । তারপর চলিয়া যাইবেন ।

কি বললেন ? ওরা আপনার প্রতিবেশী, সুখে দুখে এক সাথে মিলেমিশে থাকেন ! ওই বাড়ির কিশোরী মেয়েগুলোর সাথে আপনার বোন স্বভাবসুলভ চপলতায় মেতে উঠে ! আপনার ভাই ওই সংখ্যালঘু পাড়ার ছেলেগুলোর সাথে ক্রিকেট, ডাংগুলি, ক্যারাম, গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা খেলে, গুলতি দিয়ে পাখি শিকারে যায়, পূজা পার্বণে প্রসাদ খায় !!! তো কি হইছে ?!?!
ওই পাড়ার মায়েদের সাথে আপনার মা পড়ন্ত বিকেলে বসে রাজ্যের আলাপ জুড়ে দেয়, চুলে তেল দিয়ে দেয়, পান খায় আর হাসে, পিঠার রেসিপি আদান প্রদান করে, এ পাড়া ও পাড়ার – এর ওর গল্প চালায় ! তো কি হইছে !?!?

আপনার বাবা-চাচা-মামা ওই সংখ্যালঘু সমবয়সী পুরুষদের সাথে সান্ধকালীন আড্ডায় গল্পের তুবড়ি ছোটায়, রাজনীতি, দেশ, দর্শন নিয়ে যুক্তি-তর্ক-বিতর্কে মাতে, একসাথে তামাক খায়, প্রতি হাট বার সন্ধায় তিন ব্যাটারির লাইট জালিয়ে বাজার করে বাড়ি ফিরে, দিনের বেলায় পাশাপাশি ক্ষেতে চাষ করে, একসাথে মাছ ধরে, শীতের সন্ধায় বাড়ির পাশের ক্ষেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে “আগুন তাপায়” আর জানা অজানা গল্প শোনায় একে অপরকে ! তো কি হইছে !?!?!

ওদেরকে আপনারই বাপ মা ভাই বোনের মতো মনে হয়, ওদের আপনার বর্ধিত পরিবার মনে হয় ! সর্বোপরি, তাদের উপর এই খায়েস মেটানোর কর্ম সাধন আপনার নির্মম, পাশবিক, ঘৃণ্য, স্ববিরোধী, বিবেকবর্জিত, মানবতার চূড়ান্ত অপমান মনে হয় ? না ভাই, আপনি শুধু শুধু আমার এতগুলো সময় নষ্ট করলেন । কারণ আপনার আত্মা এখনও মরে যায়নি, আপনি এখনও অমানুষ হইতে পারেন নাই । আপনাকে দিয়ে হবে না। এই খায়েস মেটাতে হলে আপনাকে পশুর চেয়েও নিচে নামতে হবে, ইবলিশও যেন ভয় পায়, ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় – এমন কাজ করতে হবে ।

কি বললেন ? আপনি পারবেন না? আমিও ভাই পারবো না । ও আমার দ্বারা হবে না। আমাদের দ্বারা হবে না।
২৬টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×