জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভা থেকে বেরোনো খন্দকার মাহবুব হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন শেষে আটক হয়েছেন বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমান।
Published : 07 Jan 2014, 06:30 PM
বিএনপি নেতাদের আটকে পুলিশের মঙ্গলবারের অভিযানে দুই দুজনের পাশাপাশি গ্রেপ্তার হয়েছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন এবং সংসদ সদস্য নাজিমউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া আরো কয়েকজনকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
পুলিশের এই আটকাভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যিনি নিজেও হরতালের মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
বিএনপি নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “একদিকে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছেন। অন্যদিক বিরোধী দলের সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করছেন। তবে এভাবে বিরোধী দলের আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না।”
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ১৮ জোটের আন্দোলনের মধ্যে বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা কারাবন্দি থাকার মধ্যে বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের পর মঙ্গলবার এই চারজন আটক হলেন।
বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া ও আ স ম হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, হাফিজউদ্দিন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও মাহবুবউদ্দিন খোকন।
এছাড়াও রয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নসিরউদ্দিন, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, সাবেক সাংসদ সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, বর্তমান সাংসদ শাম্মী আক্তার, এবং চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
তাদের সঙ্গে যোগ হতে যাওয়া সেলিমা, মাহবুব, মিলন ও নাজিমকে রাখা হয়েছে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কী অভিযোগ রয়েছে, তা জানায়নি পুলিশ।
বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিয়ে দুপুর সোয়া ২টার দিকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার হন।
বিএনপিপন্থী সংগঠন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বের হওয়ার সময় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা মাহবুবকে ঘিরে ফেলে, এরপর তাকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এই সাবেক সভাপতিকে কী অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে- জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলে উস্কানির অভিযোগে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিরোধী দলের ঢাকা অভিযাত্রা ও সমাবেশের আগের দিন গত ২৮ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে খন্দকার মাহবুব ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্য দেন। পরের দুই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতা ঘটে। এই অভিযোগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
মাহবুবকে গ্রেপ্তারের পর সাড়ে ৩টার দিকে বারিধারার একটি বাসা থেকে আটক করা হয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিলন ও লক্ষ্মীপুরের সাংসদ নাজিমকে।
বারিধারায় বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবিদন ফারুকের একটি ব্যবসায়িক কার্যালয়ে ছিলেন তারা, সেখানে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালায়।
সেখানে উপস্থিত মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই ভবনের তৃতীয় তলায় ফারুকের সঙ্গে মিলন, নাজিমউদ্দিন ছাড়াও বিএনপির সাংসদ এ বি এম আশরাফউদ্দিন নিজান ও লায়ন হারুনুর রশিদ ছিলেন।
“পুলিশ এসে প্রথমে আমাদের সবাইকে নিচে নিয়ে যায় এবং গাড়িতে তোলে। এরপর আবার গাড়ি থেকে নামিয়ে উপরে নিয়ে আসে। তারপর দুজনকে রেখে আমাদের বলে, ‘আপনাদের আর দরকার নেই’।”
নির্বাচন বাতিল এবং মাহবুবসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গুলশানে নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে আরো ১২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেয়ার পরপরই গ্রেপ্তার হন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান।
ওই সংবাদ সম্মেলনে সেলিমার সঙ্গে থাকা বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংবাদ সম্মেলনের পর একই ভবনে ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলেন সেলিমা রহমান।
“গোয়েন্দা পুলিশ প্রথমে বাসায় তল্লাশি করে না পেয়ে ভাইয়ের বাসা থেকে উনাকে আটক করে নিয়ে যায়।”
বিভিন্ন নেতাদের গ্রেপ্তার এবং অন্যদের অজ্ঞাতবাসে গত ২৯ ডিসেম্বর টানা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই প্রেসক্লাবের ফটকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হাফিজউদ্দিন।
হাফিজ গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খোন্দকার মাহবুব সংবাদ সম্মেলন করে একবার বিরোধী জোটের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। তারপর মঙ্গলবার সেলিমার আগে দুই দিন সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন চেয়াপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক।
নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের বোন সেলিমা এর আগে ৩০ ডিসেম্বর অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন। পরে অবশ্য তিনিসহ আটক রাশেদা বেগম হীরা ও নেওয়াজ হালিমা আলীকে ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ।
সেলিমাকে মঙ্গলবার কোন অভিযোগে আটক করা হল- জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
‘গ্রেপ্তারে আন্দোলন দমবে না’
শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল বিবৃতিতে বলেন, “একদিকে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহবান জানাচ্ছেন। অন্যদিক বিরোধী দলের সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করছেন। আমরা এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানাই।”
সারাদেশে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং কাউকে না পেলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে দাবিতে বিরোধী দল আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের সঙ্গে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা না গিয়ে ওই দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
“কিন্তু সরকার এই গণদাবিতে দাবিতে ভীত হয়ে বিরোধী দলকে দমাতে দমন নীতির আশ্রয় নিয়েছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, নির্দলীয় সরকারের চলমান আন্দোলন নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করে কিংবা মামলা দিয়ে স্তব্ধ করা যাবে না।”