somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের ভার্জিন সি বিচ নিঝুম দ্বীপে

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের কোলে সম্প্রতি আরও একটি সমুদ্রসৈকত জেগে উঠেছে। সৈকতটি একেবারে আনকোরা, কুমারী। ইংরেজিতে যাকে বলে ভার্জিন সি বিচ। সমুদ্রসৈকতটি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ-সংলগ্ন দমার চরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত।

প্রায় ১০ কিলোমিটার কর্দমাক্ত পথ ভেঙে মাঝে পাঁচ-ছয়টা ছোট বড় খাল সাঁতরে দমার চরে পৌঁছে আমি বিস্ময়ে হতবাক। একদিকে নির্জন সমুদ্রসৈকত। স্নিগ্ধ ঊর্মিমালা। অন্যদিকে হাজার হাজার রঙ-বেরংয়ের পাখির ওড়াওড়ি, মধুর কলতান, মাঝে শতশত গরু-মহিষের অবাধ-নির্বিঘ্ন বিচরণ। অদূরে মেঘের মতো ঘন কালো বিশাল প্যারা (ম্যানগ্রোভ) বনের হাতছানি। এটা বাংলাদেশ তো! আমি আর আমার পথপ্রদর্শক আবদুল মালেক ছাড়া এই সমুদ্রসৈকতে আর কোনো জনমানুষের টিকিটি পর্যন্ত নেই। দমার চর বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। এখান থেকে হাতিয়া উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় চলি্লশ কিলোমিটার। নিঝুম দ্বীপের পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় সেখানে। সেখান থেকে হেঁটে সমুদ্রসৈকতে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। অপূর্ব সুন্দর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য সংবলিত এই দ্বীপটি এখনো বাইরের মানুষের এমনকি নিঝুম দ্বীপের সাধারণ জনগণেরও অজ্ঞাত। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিনকে দমার চরের সমুদ্রসৈকত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এ ব্যাপারে তার অজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, দমার চরের দক্ষিণ প্রান্তে সাগরের পানিতে ভেসে আসা অনেক বালু জমে আছে যা দেশের অমূল্য সম্পদ। তিনি এই বালু আহরণের জন্য সরকারকে বিভিন্ন সময় অনুরোধ করেছেন বলে জানান। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হোসেন মো. মঈনুদ্দিনও জানান, তিনি দমার চরে কোনো সমুদ্রসৈকত থাকার কথা কোনোদিন শোনেননি। হাতিয়ার সাপ্তাহিক 'হাতিয়া কণ্ঠে'র সম্পাদক এম হেলাল উদ্দিনও দমার চরে কোনো সমুদ্রসৈকত থাকার ব্যাপারে অবহিত নন বলে জানান। জেলেরা যায় আশপাশের নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরতে। এই সমুদ্রসৈকতটি কক্সবাজার সৈকতের চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় এই কারণে যে, এখানে শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসে হাজার হাজার অতিথি পাখি। সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ বেশ দূর থেকে শোনা যায়। সৈকতের যে দিকটা পানি পর্যন্ত নেমে গেছে সেখানকার মাটি শক্ত ঠনঠনে। পা একদম দেবে যায় না। হাঁটু পানি পর্যন্ত নেমে হাঁটা এবং গোসল করা যায় নির্বিঘ্নে। সৈকতের উপরিভাগটায় শুকনো সাদা বালুর স্তূপ। ছড়ানো রাশি রাশি বালু একদম ঝকঝকে। এজন্যই নিঝুম দ্বীপের লোকেরা এটাকে বলে দেইলা। সাদা বালুতে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার বিচরণ। তারা বালুতে গর্ত করে থাকে। মানুষের সাড়া পেলেই দ্রুত গর্তের ভেতরে ঢুকে যায়। চোখের আন্দাজে নতুন সৈকতটি লম্বায় দশ থেকে পনেরো কিলোমিটার হবে। মাঝে কিছু কিছু জায়গায় নরম মাটি আর ছোট ছোট খাল রয়েছে। ভাটির সময় এসব খাল একদম শুকিয়ে যায়। তখন হেঁটেই পার হওয়া যায়। জোয়ারের সময় খালগুলো পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যায়। এখানে আসতে আমাকে এরকম অর্ধডজন খালের বুক সমান পানি ভাঙতে হয়েছে। তবে মূল সৈকত কখনই পানিতে ডোবে না। সারা বছরই এই জায়গাটা জেগে থাকে। এমনকি বর্ষায় ভরা পূর্ণিমাতেও সৈকতের উপরিভাগে পানি ওঠে না।

২০১৩'র জুন-জুলাইয়ের দিকে আমি সর্বপ্রথম নিঝুম দ্বীপে যাই। সেখানে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল নিঝুম দ্বীপের হরিণ দেখা। সে সময় আমি দমার চরের কথা স্থানীয় লোকজনের মুখে শুনতে পাই। সে সময় নিঝুম দ্বীপে ভূমিহীনদের নেতা নামে পরিচিত আবদুল মালেক দমার চরের অনেক কথা বলেন। তিনি বলেন, সেখানে সাগরের পাড়ে একটি জায়গা রয়েছে যেখানে অনেক বালুর স্তূপ। মাটিও শক্ত বলে জানান। সেবার আমার আর দমার চর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এর মাঝে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আমি ভোলা যাই। সেখানে ঢাল চরের দক্ষিণ প্রান্তে তাড়ুয়া দ্বীপে এরকম একটি ভার্জিন দ্বীপের সন্ধান লাভ করি। তাড়ুয়া দ্বীপের লোকজনও প্রথমে আমাকে বালুর স্তূপের কথা বলেছিল। পরে গিয়ে দেখি সেখানে গড়ে উঠেছে অসাধারণ সুন্দর একটি সমুদ্রসৈকত। তখন থেকেই আমার মাথায় এই ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, দমার চরের দক্ষিণ ভাগটাও সম্ভবত আর একটি সমুদ্রসৈকত হবে। এরপর থেকেই সমুদ্রসৈকতটি আবিষ্কারের সুযোগ খুঁজছিলাম। একদিন সন্ধ্যায় এমভি ফারহান-৩ নামের তিনতলা লঞ্চে উঠে পড়ি হাতিয়ার উদ্দেশে। পরদিন সকালে হাতিয়া নেমে একটি ভাড়া করা মোটরসাইকেল নিয়ে সোজা পৌঁছে যাই নিঝুম দ্বীপে। সেখানে গিয়ে খুঁজতে থাকি আবদুল মালেক নামের ভূমিহীনদের সেই নেতাকে। মালেকসহ পরদিন সকালে দমার চরের উদ্দেশে রওনা হই। নিঝুম দ্বীপের পূর্বদিকের ঘাট থেকে একটি মাছধরা নৌকার মাঝিকে ১০০ টাকা দিয়ে যেখানে পৌঁছাই সেখানে হাঁটুসমান কাদা। ভাটা থাকায় নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। তীরে ভেড়ার কোনো উপায় নেই। অগত্যা সেই হাঁটুসমান কাদা ভেঙে নদীর তীরে উঠতে হলো। তীরে উঠে দেখতে পেলাম, দমার চরের বিস্তীর্ণ সবুজ প্রান্তর। ছোট ছোট সবুজ ঘাসে ভরা বিশাল খোলা মাঠ। চোখ জুড়িয়ে গেল। আমার সামনে বিশাল একটা ভার্জিন সি বিচ।


সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×