'সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সঠিক পদক্ষেপ। আর দেশে যে সহিংস রাজনীতি চলছে, সেটা মোকাবিলায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান দুই দলকে আলোচনায় বসে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। তবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি জামাতের সঙ্গে কোনো সংলাপ কিংবা সমঝোতা করা যাবে না। কেননা, দেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে, তার মূলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামাত। এ সংকট কাটাতে জামাতসহ দেশের সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায়ের বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতে হবে।'
এতে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের মারা হচ্ছে। একে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়া আর কী বলা যায়!
'১৯৯৬-এর নির্বাচনের সঙ্গে অনেকে এবারের নির্বাচনকে এক করে ফেলছেন। কিন্তু সেবার ভোট পড়েছিল মাত্র ২৬ শতাংশ'। এবারের নির্বাচন হয়ে যাওয়া ঠিকই হচ্ছে। না হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, লক্ষ্য যদি এক না থাকে, তাহলে সংলাপ বিফল হবে। ১৯৭১ সালেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি জামাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। তাহলে তারা কি জামাতের কাছে বাঁধা পড়ে গেছে? সে কথা তাদের বলতে হবে।
যারা সন্ত্রাস করছে তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ হতে পারে না। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জাতীয় মর্যাদা সমুন্নত রাখা, সন্ত্রাস দমন ও জনকল্যাণমূলক রাজনীতিতে সম্মত হলেই সংলাপ হতে পারে।
'সাধারণ মানুষকে হত্যা করে, ভোটার হত্যা করে কি ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়?' শুধু জামাতকে নয়, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে না। সংকটের মূলে রয়েছে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি।
বড় বড় পত্রিকা ও সুশীল সমাজের অনেকেই বলছেন, নির্বাচন পিছিয়ে দিতে হবে। সংলাপ করতে হবে। কিন্তু কেউ বলছে না, আগে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, তারপর আলোচনা হবে, তারপর নির্বাচন করতে হবে।
'যাঁরা নির্বাচন বন্ধ করার কথা বলেন, সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করার কথা বলেন, তাঁরা আসলে জামাতকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে চান। আমি এতে খুবই হতাশ হই।' তিনি বলেন, দেশের একটি উপজেলায় জামাতকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এক হয়েছে। সারা দেশে কেন এই রোল মডেল করা যাচ্ছে না?
এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে। আরেকটি বড় কারণ বাংলাদেশকে আবারও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা।
বিএনপির এখন স্বীকার করা উচিত যে, তাদের কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। তারা নির্বাচন বন্ধ করতে পারেনি। তারা মনে করেছিল হয় গণ-অভ্যুত্থান হবে, নয়তো সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেবে। কোনোটিই হয়নি। আবার বিএনপিকে নির্বাচনে না আনতে পারা সরকারের ব্যর্থতা।
ঐক্য দুই ধরনের হয়। অভিন্ন লক্ষ্য থেকে ঐক্য আর অভিন্ন ঝুঁকি থেকে ঐক্য। আমাদের এখন ঝুঁকির কারণেই ঐক্য করতে হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছেন, বিরোধী দলের সে সুযোগ নেওয়া উচিত। আর সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আলোচনা হোক, সমঝোতা হোক। আর সংঘাত বন্ধ করার একমাত্র সমাধানই হলো আলোচনা করা। দুই নেত্রীর কাছেই এখন গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ।
'এত দিন আমরা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেশনের কথা বলতাম, কিন্তু এখন দেশে রাজনীতিতেও সিন্ডিকেশনও হয়ে গেছে। ১৮-দলীয় জোট, ১৪-দলীয় জোট। জোটের কারণেই বড় দলগুলো অনেক কিছুই করতে পারে না।'
জামাতের নেতাকে আওয়ামী লীগে নিয়ে আসা হচ্ছে। কেন নেতাদের দিয়ে এ কাজ করা হচ্ছে? বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, 'সারা দেশে জামাতের চলমান সহিংসতার মধ্যেও দেশে জামাতের নেতাকে বরণ করে নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা। তাঁকে এখন পর্যন্ত বহিষ্কারও করা হয়নি। সরকারের এমন দু'মুখো আচরণ কেন?'
দেশের অনেক স্থানেই আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় জামাত বেড়ে উঠেছে । 'সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাই জামাতের আমির। তাঁর মা জামাতের রোকন। সেখানে কেন তাঁকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে?' তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি যদি হয় শুধু ভোটের রাজনীতি, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা টিকবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:১৪