somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কুলে যাবার আগে

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্তানের স্কুলে ভর্তি করার জন্য একটা যুদ্ধে নেমে পড়তে হয় অভিভাবকদের। ছোট ছোট শিশুরা কিছু বুঝে উঠার আগেই ভর্তির জন্য প্রস্তুত হতে থাকে নানা রকম প্রশ্ন মোকাবেলা করার জন্য। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী বেকারেরা চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাতে যে ধরনের প্রশ্নের সম্মুখিন হয়, অনেক স্কুলে ১ম শ্রেনীর ভর্তি পরীক্ষাতেও তেমন প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, তোমার সম্পর্কে ইংরেজীতে ৫টি বাক্য লেখ। পরীক্ষার হলে বসে ছোট ছোট শিশুরা এমন প্রশ্ন বুঝবে কী, আর লিখবেই বা কী। বরং প্রথমবারের মত পরীক্ষার হলে এসে, বাবা-মা ছাড়া নতুন, অপরিচিত পরিবেশে এসে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। পরীক্ষা কী ওরা তা বোঝে না। তবু পরীক্ষা না নিয়েও উপায় নেই, আসন সংখ্যা যে সীমিত! এছাড়াও ভর্তি নিয়ে দুর্নীতি, বানিজ্য এগুলো তো থাকলই।

এ বছর থেকে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ১ম শ্রেনীতে ভর্তির জন্য শিশুদের লটারির মাধ্যমে বাছাই করার নিয়ম চালু হয়েছে। তাতে শিশুদের উপর ঐটুকু বয়সেই এত বড় পরীক্ষায় অংশ নেবার নামে অমানুষিক অত্যাচার দূর হয়েছে। লটারি জিতে অনেক স্কুলে ৫ থেকে ৭ বছরের শিশুরা ইতোমধ্যে ভর্তিও হয়ে গেছে। কিন্তু স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া আর স্কুলে নিয়মিত উপস্থিত থেকে পড়ালেখা করা ভিন্ন ব্যাপার। ছোট শিশুদের স্কুলের প্রথমদিনগুলোতে বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়। আর এ সমস্যা শুধু শিশুদেরই নয়, অভিভাবক ও শিক্ষক সবারই। চলুন দেখি কেমন সমস্যা তৈরি হয় এদিনগুলোতে।

বাবা-মা ছাড়া এই প্রথম কোন শিশু দীর্ঘসময় সম্পূর্ণ নতুন ও অপরিচিত পরিবেশে আসে। এতে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারে, ভয় পেতে পারে, কান্নাকাটি করে ক্লাসের ব্যঘাত ঘটাতে পারে। অনেক শিশু এমন কান্নাকাটি করে যে, বাবা-মাকে ক্লাসরুমেই সারাটা ক্ষন অবস্থান করতে হয়। এজন্য শিশুটিকে স্কুলে ভর্তির আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। স্কুল খুব আনন্দের জায়গা, সেখানে গেলে অনেক বন্ধু পাওয়া যাবে, অনেক নতুন কিছু শেখা যাবে এসব বলে তার সংকা দূর করতে হবে। স্কুলের ইউনিফর্ম তৈরি, ব্যাগ কেনা, জুতা কেনা, টিফিন বক্স, বই,খাতা, পেনসিল ইত্যাদি আনুসাংগিক জিনিস কেনার সময় তাকে সাথে রাখা উচিত, যেন সে নিজেই পছন্দ করে কিনতে পারে। ক্লাস শুরুর আগে স্কুল থেকে ঘুরিয়ে আনা যেতে পারে। তার ক্লাসরুম, শিক্ষকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

স্কুলে ভর্তির আগে থেকেই বর্ণমালা, কিছু ছড়া শিশুকে শিখিয়ে রাখলে ক্লাসে যেয়ে তার পড়া ধরতে সুবিধা হবে। কিন্তু বাবা-মায়েরা শিশুদের বর্ণমালা, ছড়া ইত্যাদি শেখানোর জন্য এমন চাপ দেন যে ওদের মনে পড়ালেখা সম্পর্কে একটা ভীতি তৈরি হয়ে যায়। এমন কি ওদেরকে ভয়ও দেখানো হয়ে থাকে এই বলে, ‘’এমন করলে স্কুলে টিচার তোমাকে মারবে’’। এভাবে শিক্ষকদের প্রতিও ওদের একটা নেতিবাচক ধারণা তৈর হয়ে যায়। বরং ছবি আঁকা, গল্প বলা, গান, নাচ, অভিনয়ের মাধ্যমে পড়ার প্রতি শিশুর আগ্রহ তৈরি করা যেতে পারে। পড়ালেখা যে খুবই আনন্দের ব্যাপার এ মনোভাব তার মনে বাবা-মাই সৃষ্টি করতে পারেন। যদিও অনেক স্কুলে শিশুদের এমনভাবে পড়ালেখা করানো হয় যে, পরে তাদের পড়ার প্রতি আগ্রহটাই নষ্ট হয়ে যায়।

স্কুলে সময়মত পৌঁছানোর জন্য খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে, নাস্তা করে প্রস্তুত হওয়া খুবই জরুরি। কিন্তু এ অভ্যাস শিশুদের মধ্যে একদিনে তৈরি হয়ে যাবে না। এখন বাচ্চারা অনেক রাত পর্যন্ত টিভিতে কার্টুন দেখে সকালে ঘুম থেকে উঠতে চায় না। তাই ঘু্ম থেকে উঠেই সকালের নাস্তা করতে চায় না। শিশুর এসব অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে অতিরিক্ত টিভি দেখলে কী ক্ষতি হয়। শিশুকে নিজে নিজে টয়লেট ব্যবহার করা ও পরে নিজেকে পরিষ্কার করা শেখাতে হবে। স্কুলে যেয়ে টয়লেটে যাবার প্রয়োজন হলে লজ্জা না করে যেন শিক্ষককে সে তা বলে। বর্ণমালা শেখানোর চেয়ে এগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্কুলে যাবার আগে তার বই, খাতা, পেনসিল ইত্যাদি গুছিয়ে রাখা শেখাতে হবে। নিজের বই খাতা ও অন্যান্য জিনিসগুলো তাকে চেনাতে হবে, যেন হারিয়ে না ফেলে। ভুলে (বা ইচ্ছে করে) অন্য কারো জিনিস নিয়ে না আসে।

স্কুলে যেয়ে শিশুরা আরেকটি বড় সমস্যায় পড়ে। অন্য শিশুদের সাথে মারামারি, ঝগড়া, বিভিন্ন নামে ক্ষেপানো ইত্যাদি। নিজে তো মারামারি করা যাবেই না, অন্য কারো মার খেয়েও তাকে মার দেওয়া যাবে না। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষককে যেয়ে বলতে হবে। কেউ যদি তাকে কোন নাম দিয়ে ক্ষেপাতে চায় তবে সেগুলো এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান গিয়ে বের করে দিতে হবে, কোন পাত্তা দেওয়া যাবে না। শিশুকে বোঝাতে হবে, কেউ তাকে গাধা, গরু বললেই সে গাধা গরু হয়ে যায় না। সুতরাং এসব নিয়ে মাথা না ঘামানোই ভাল।

স্কুল ছুটি হবার পরে শিশু যেন সবার সাথে দৌড়াদৌড়ি, ধাক্কাধাক্কি করে না বের হয়।তাতে সে ব্যথা পেতে পারে, বুঝিয়ে বলতে হবে। আর অপরিচিত কেউ তাকে কিছু দেবার লোভ দেখালে, কোথাও যাবার কথা বললে যেন না যায় সে ব্যাপারে সচেতন করে দিতে হবে। তাকে নিজের বাবা-মার নাম ও ফোন নাম্বার মুখস্ত করিয়ে রাখবেন। আর এসব একদিনেই শিশুকে শিখিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন না। স্কুলের দিনগুলো শিশুদের জন্য আনন্দময় হোক।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×