somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নির্বাচনের পরপরই দিনাজপুর, যশোর, সাতক্ষীরা ও ঠাকুরগাঁওয়ে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা শুরু করে জামাত-শিবির ক্যাডাররা। গত রবিবার রাত থেকে এসব জেলায় হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। অনেকে প্রাণভয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মন্দিরে। কেউ কেউ পালিয়ে রয়েছেন অন্য গ্রামে। প্রশাসনের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে হিন্দু লোকজনদের নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে যেতে বললেও তারা বাড়ি ফিরতে চাচ্ছেন না। এদিকে, নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও দোকান পাটেও হামলা করছে দুর্বৃত্তরা।

শুধু এবারই নয়, অতীতেও নির্বাচন এলেই আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। তবে এবার তাদের ওপর হামলা, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন ইত্যাদির ব্যাপকতা অত্যন্ত বেশি। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা জঙ্গিদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো ভরসা পাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সার্বক্ষণিকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে জঙ্গিরা নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী সৃষ্টি করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনের চলাফেরা ও কর্মকা-ের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রেখে যাচ্ছে। তাতে শান্তিকামী সাধঅরণ মানুষের ভীতসন্ত্রস্ততা মোটেও কাটছে না। তাই তারা গ্রাম ছেড়ে কিছুটা নিরাপদ শহরে গিয়ে বসবাস শুরু করছে। অত্যাচারিত হয়ে হয়ে সবারই মন ভেঙে গেছে। ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে সবাই চরম উদ্বিগ্ন এবং তারা যে কোনো সময় যেখানেই নিরাপদ বলে মনে করবেন ও সুযোগ পাবেন সেখানেই চলে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন। তাদের সবার বিনিদ্র রজনী কাটে, ঘরে-বাইরে হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

এই ভূ-অঞ্চলে সভ্যতা বিকাশের গোড়াপত্তনকারী এবং হাজার হাজার বছর ধরে বসবাসকারী উন্নত বিশাল এক জনগোষ্ঠী দিনদিন বিপন্ন থেকে বিপন্নতর হচ্ছে। মূলত বিগত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ বিভাজনকে কেন্দ্র করে তাদের এই বিপন্নতার সূত্রপাত ঘটে। ভারতীয় উপমহাদেশের তৎকালীন রাজনীতিবিদদের ধর্মীয়, আঞ্চলিক, সমপ্রদায় ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব, কূটচাল ও ক্ষমতালিপ্সার মদমত্ততায় ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্তের বলি বর্তমান বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠী- যাদের মধ্যে প্রায় ৯৯% হিন্দু ধর্মাবলম্বী, বাকিরা বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। দুঃখজনক হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দলের নেৃতত্বে সরকার পরিচালিত হলেও সংখ্যালঘুরা হামলা থেকে রেহাই পাননি। দেশের সকল প্রান্তে রয়ে-রয়ে হামলা পরিচালিত হতে থাকে। তবে গেলো বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি অন্যতম যুদ্ধাপরাধী কুখ্যাত দেইল্যা রাজাকারের ফাঁসির রায় ঘোষিত হওয়ার পর সংখ্যালঘুদের ওপর দেশব্যাপী একযোগে সবচেয়ে বড় হামলা পরিচালিত হয়। সেই থেকে অদ্যাবধি প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো স্থানে তাদের ওপর হামলা চলে আসছে।

বিগত ২৫ নভেম্বর দশম নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জঙ্গি বাহিনী কর্তৃক সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিশেষ করে জামাত-শিবির দেশের সর্বত্র সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা পরিচালনা করতে থাকে। বিগত ১২ ডিসেম্বর অন্যতম যুদ্ধাপরাধী মিরপুরের কসাই নামে পরিচিত কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হলে জঙ্গিদের হামলার মাত্রা তীব্রতর হয়। ১৬ ডিসেম্বর থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে যৌথবাহিনীর অভিযান সত্ত্বেও এসব হামলা অব্যাহত থাকে।

প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা পড়ে-পড়ে মার খাচ্ছেন, তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত ও বিয়ে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই জনগোষ্ঠীকে দেশের সৃষ্ট প্রতিটি সংঘাতময় ঘটনায় মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। তাদের সংখ্যা কম করে হলেও দেড় কোটি। অথচ বিশাল এই জনগোষ্ঠীর বিপন্নতা নিয়ে দেশ-বিদেশের সংশ্লিষ্ট কোনো মহল থেকে কোনো প্রকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে, বা তেমন কোনো আলাপ-আলোচনা করছে বা ভূমিকা রাখছে বলে দৃশ্যমান নয়। এসব মহল যা নিয়ে ব্যস্ত তা হচ্ছে- নির্বাচন আর নির্বাচন। নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যাপার নিয়ে সবাইকে উচ্চকিত হতে দেখা গেলেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের মুখ থেকে টুঁ শব্দটি পর্যন্তে শোনা যায় না।

বর্তমান সরকারকে দেশের দেড় কোটিরও অধিক ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের দেড় কোটি সংখ্যালঘু মানুষ আর যেন কোনো প্রকার হামলা, অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×