কি করি, কি করি চিন্তা ঢুকলো মাথায়। এতটুক মাইয়া কই রাখি, কার কাছে রাখি। পরে যদি কোন বিপদ হয়। পুলিশের ঝামেলা রাস্তা ঘাটে অনেক সামলাইছি। কতো কেস খাওয়া থাইকা বাইচা গেছি। টাকায় কি না হয়। কিন্তু এত রাস্তা ঘাট না। কেউ যদি ছেলেধরার কেস কইরা দেয়। মাইয়াডা যদি বড়লোকের মাইয়া হয়, তাইলে তো জেল খাইটা কুল পামু না। সারা জনম জেলের ঘানি টানতে হইবো। মাথা আর কাজ করে না।
সিগারেট ধরাই। চিন্তা করতে থাকি। আমার সাগরেদরাও কাজ সাইরা চইলা গেসে। আজ অগোর ছুটি। বিকাল হয়ে আসছে। একটু পরেই রাইত নামবে। তখন কি হইবো!
হঠাত মাথায় বুদ্ধি খেলে। আমার পরিবারের মলিন মুখটা মনে পড়ে। আট বছর বিয়া করছি। কোন বাচ্চা কাচ্চা নাই। দুইবার পোয়াতি হইছিলো। কিন্তু বাচ্চা হয় নাই। দুই তিন মাসের বেশী পেটে থাকে না। নষ্ট হইয়া যায়। আমার মনে হয়, এই রকম একটা মাইয়া যদি আমার থাকতো আমার বউয়ের মুখটা আরেকটু হাসি খুশী থাকতো। আচ্ছা, এই মাইয়াডারে বস্তিতে নিয়া আমি লালন পালন করি না কেন। আমারে বাবা ডাকবো আর মর্জিনারে মা ডাকবো। আমি সিদ্ধান্ত নিয়া ফালাই। মাইয়াডারে নিয়া রিক্সায় উঠি। হুডটা তুইলা দেই। কেউ যাতে না দেখে। সন্ধায় বস্তিতে পৌছাই। মর্জিনা শুইয়া ছিলো। ডাইকা উঠাই। সুমিরে দেইখাই সে জিগায়, এইডা কেডা। তুমি কি আবার বিয়া করছো নি।
চোখ দিয়া পানি গড়াইয়া পড়ে মর্জিনার। আমি কোন রকমে তারে থামাই। মাইয়াডারে যে রাস্তায় পাইছি তা প্রমান করতে অনেক কষ্ট হয়। মর্জিনার মনে তাও সন্দেহ । একই কথা বারে বারে জিগায়- তুমি সত্য কথা কইতাছ তো? মর্জিনা মনে হয় একটু খুশীও হয়। কত চেষ্টা করে বাচ্চা হয় নাই! আল্লায় মনে হয় মুখ তুইলা চাইলো। রাতে মাইয়াডারে নিজের হাতে ভাত খাওয়াইলো। বুকে নিয়া ঘুম পাড়াইলো। বস্তির মানুষ আর রাইতে বুঝতে পারে নাই, এইখানে নতুন কেউ আইছে।
কিন্তু পরদিন সকাল বেলায় বস্তির সবাই জাইনা গেলো।
(চলবে......)