somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উনিশ শো একাত্তর ৬

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লাঞ্চের আগে সিও(অধিনায়ক) লেফ্টেনেন্ট কর্নেল মাসুদুল হকের সালাম পেয়ে (ডাক) মেজর শফিউল্লাহর মনে হল, ঘটনা আর একটু খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে। মার্চ মাসটা মোটেও ভালো যাচ্ছে না।১০ তারিখে তাঁর শশুরের মৃত্যু হলো আচমকাই।১৯ তারিখে পাঁচ জন সৈনিককে মারধর করে কালিয়াকৈর বাজার থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে গেলো সিভিলিয়ানরা। আওয়ামীলীগের দু’জন নেতার সহযোগিতায় তিনদিন পর গফরগাঁও থেকে উদ্ধার করা হলো সে অস্ত্র। তদন্ত শেষ হবার আগেই পাঁচ জন সৈনিক ৪টি রাইফেল, ১টি এসএমজি (সাবমেশিন গান)আর গুলিসহ পালিয়েছে কাল রাতে। সিও সম্ভবত এই কারণেই ডেকেছেন। তাও সিও’র কাছে যাবার আগে তিনি ময়মনসিংহ আর টাঙ্গাইলের কোম্পানি ওসিদের (অফিসার কমান্ডিং) সাথে কথা বললেন। আলফা কোম্পানি নিয়ে মেজর কাজেম কামাল আছে টাঙ্গাইলে। টুআইসিকে (উপঅধিনায়ক) ধন্যবাদ দিলেন অভিনন্দন জানালেন তিনি অস্ত্র ফিরে পাবার জন্যে। বললেন, ‘Thank you Sir, for getting those weapons back. Otherwise I might have to go for high jump; I am not going to leave those coward soldiers’. শফিউল্লাহ বললেন, ‘Court of Inquiry is not yet over, but I think you need to be more careful while sending vehicles in future’. কাজেম আরও কিছু বলতে চাচ্ছিলেন।এই পাঞ্জাবি অফিসারটির স্বভাব শফিউল্লাহ’র জানা আছে। কালিয়াকৈরে বাঙালি সৈনিকদের বিপর্যয় তাঁকে স্পর্শও করেনি।তিনি বললেন, তোমার সাথে আবার পরে কথা বলব আগে শিশুর সাথে কথা বলে নি’।

মেজর নুরুল ইসলাম শিশু খবরের কাগজ হাতে বসেছিলেন। কাগজে আজ স্বাধীন বাংলার পতাকার ছবি ছাপা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এই পতাকার নকসা তৈরি করেছে। ভিতরে ভিতরে ছাত্ররা এতদূর এগিয়েছে দেখে মনে মনে খুশি হয়ে উঠলেন তিনি। টুআইসির ডাক পেয়ে বিস্তারিত পড়া হলো না। তিনি দ্রুত ওয়্যারলেস রূমে হাজির হলেন। শফিউল্লাহ বললেন, কালকের খবর শুনেছো? আরও পাঁচটা ওয়েপন হারিয়েছে, সাথে পাঁচজন ভাগুড়া(পলাতক)।সৈনিকদের মধ্যে এ ব্যাপারে কানাঘুষা চলছিলো বলে লেফটেন্যান্ট মান্নান আগেই জানিয়েছিলেন শিশুকে। তিনি কাউকে কিছু বলেননি। এসব ব্যপারে আলোচনা কম হওয়াই ভাল। টুআইসির কাছে একই কথা শুনে খুব একটা ভাবান্তর হলোনা তার। তিনি বললেন,
- স্যার, ব্যাপারটা একটু ভাসা ভাসা শুনেছি
- কার কাছে শুনলা, আমাকে বল নাই কেন?
- সৈনিকদের মধ্যে গুণ গুণ হচ্ছিল, ভেবেছিলাম সামনা সামনি দেখা হলে বলবো।
- তোমরা কবে সিরিয়াস হবা বলতো, ৪ দিনের মধ্যে দুইবার অস্ত্র হারালো, জেনেও তোমরা জানাবা না!ওই দিকে কী অবস্থা তোমাদের?
- আছি তো ইপিআরের সাথে, চলে যাচ্ছে। স্যার আজকের পেপার দেখেছেন?
শফিউল্লাহকে একটু তাড়াহুড়োর মধ্যে মনে হলো। তিনি বললেন তোমরা আছো ভাল। পেপার দেখার সময় পাইনি।

লেঃ কর্নেল মাসুদকে একটু অস্থির মনে হচ্ছিল। শফিউল্লাহ অফিসে ঢোকার সাথে সাথে তিনি উঠে দাঁড়ালেন।‘আবরারের জন্যে আর পারা যাচ্ছে না। আমি একবার ব্রিগেডে যাবো ভাবছি’। শফিউল্লাহ কিছু বললেন না। মাসুদ চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, ‘কোন খবর পেলে? কি হচ্ছে এসব বলতো। চা খাবে?’শফিউল্লাহ কি বলবেন মনে মনে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। মসুদ বললেন, বসো।
‘আবরার চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে দেখেছো? ৬৩টি গুলি খরচ হয়েছে কিন্তু ক্যাজুয়ালটি মাত্র একটা কেন! এরা কী মানুষ!’
শফিউল্লাহ বুঝলেন সিও ১৯ তারিখের ঘটনার কথা বলছেন।তিনি বললেন, ‘স্যার সিচুয়েশন তো আপনি নিজ চোখেই দেখেছেন, ভাগ্যিস মইনুল বুদ্ধি করে উপরের দিকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলো। আরও বেশি ক্যাজুয়ালটি হলে কমান্ডার ঢাকায় ফিরতে পারতেন?’ শফিউল্লাহ’র কথা শুনে তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন তাঁর দিকে।প্রেসিডেন্টের ১ তারিখের ভাষণের পর পরস্থিতি যে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছিল তা তিনি জানতেন। ইলেকশনের পর থেকেই পাঞ্জাবিরা বাঙালিদের আলাদা চোখে দেখছে। সাহেবজাদা ইয়াকুব খান চলে যাবার পর পরিস্থিত আরও খারাপ হয়েছে। টিক্কা খান একই সাথে মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটর আর গভর্নর হিসাবে ঢাকায় এসেছেন। বিচারপতি বিএ সিদ্দিকীর দৃঢ়তায় শপথ নিতে পারেননি। বাঙালিদের তিনি সহজে ছেড়ে দেবেন বলে মনে হয়না।
প্রেসিডেন্ট আর তার স্তাবকদের একগুয়েমির কারণে, ইনডাইরক্টলি চাপের মধ্যে আছে সেনাবহিনী। আইএস (অভ্যন্তরিণ নিরাপত্তা) ডিউটি দিতে দিতে দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেনা অফিসার আর সৈনিকরা। তারপর আবার নতুন যোগ হয়েছে ভারতীয় আগ্রাসণের ভয়। কাগজে কলমে অবস্থান জয়দেবপুর রাজবাড়ি দেখানো হলেও, ব্যাটালিয়ন হেড কোয়ার্টার, একটা রাইফেল কোম্পানি আর হেড কোয়ার্টার কোম্পানি ছাড়া এখানে ইউনিটের আর কিছু নেই। সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের অজুহাতে, কোম্পানি গুলিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে এদিক সেদিক। ব্রিগেড থেকে বলা হয়েছে, নজুক আইন শঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগে, সীমান্ত আক্রমণ করে বসতে পারে ভারত। জামালপুর আর হালুয়াঘাট সীমান্তে আগ্রাসন ঠেকাতে টংগাইল আর ময়মনসিংহে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে দু’টি কোম্পানি।

সিও জানেন এগুলি আসলে বাঙালি ইউনিটগুলির শক্তি খর্ব করার একটি চাল। ইউনিটের অন্যন্য বাঙালি সদস্যরা ভিতরে ভিতরে বুঝলেও ১৯ তারিখের আগে ব্যাপারটা এভাবে চোখে পড়েনি।আজ শফিউল্লাহ’র কথা শুনে তাঁর মনে হলো অস্থিরতা প্রতিটি স্তরেই ছড়িয়ে পড়েছে। সরাসরি কথাবার্তা না হলেও সবার মনোভাবই এক। তিনি বললেন, ‘কমান্ডারকে কী বলা যায় বলতো, পুরো ঘটনাটা আর একবার বলবা! দেখি ব্যপারটাকে হাল্কা করার কোন উপায় আছে কি না। সিভিলিয়ানরা ব্যারিকেড দিলো কেন? ক্যান আই ট্রাস্ট য়ু?’ শফিউল্লাহ বললেন, স্যার, ‘আমি বেশ কিছুদিন ধরেই ইউনিটে ছোট খাটো গুঞ্জন শুনছি, ভালো করে খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানাবো ভেবেছিলাম, মাঝে ছুটি যেতে হল...
- ও তোমার ফাদার ইন ল’ তো ইন্তেকাল করলেন..., ভাবিদের কতদিনের জন্যে রেখে এলে
- দেখি স্যার, পরস্থিতি ভাল হোক। কুমিল্লায়ও দেখলাম লোকজন খুব চিন্তার মধ্যে আছে।
- আর দে অল রাইট?
- জী, স্যার
- আচ্ছা বলো, ব্যারিকেড দিলো কেন?
- স্যার আমি যতটুক খবর পেয়েছি, সিভিলিয়নরা ভেবেছিলো, কমান্ডার আসছেন আমাদের ডিসআর্মড করাতে
- ও এই জন্যেই কী তুমি ওই দিন সাপোর্ট ওয়েপন সব লে আউট করেছিলে? শফিউল্লাহ কিছু না বলে মৃদু হাসলেন।
- আবরারের হাবভাব দেখে আমারও কিন্তু মনে হয়ছে, দেয়ার ও’জ সামথিং ফিসি, ডিড ইয়ু মার্ক অল হিজ এন্টোরেজ অয়্যার ওয়েস্ট পাকিস্তানি? আমার মনে হয় আমাদের এলারট দেখেই ওরা কিছু করেনি।
- স্যার আই ইন্টেনশনালি সেন্ট মইনুল ফর ক্লিয়ারিং দ্য ব্যরিকেডস। আসজাদ ছিলো ওকে পাঠালে ম্যাসাকার হয়ে যেত। আপনি কমান্ডারকে বলতে পারেন ইনিশিয়ালি ফায়ার ওপেন করা হয়েছিলো, ক্রাউড সরানোর জন্যে, তখনই বেশি রাউন্ড খরচ হয়েছে।
মাসুদ কী যেন ভাবলেন। তারপর বললেন আর এই যে কালকের ঘটনাটা কী বলবো? অস্ত্র নিয়ে যারা পালিয়েছে সবাই তো বাঙালি অফিসারদের ব্যাটম্যান...
শফিউল্লাহ বললেন আপনি কী আজই যাবেন ব্রিগেডে?
- আই ও’জ থিঙ্কিং সো
- স্যার, খালেদ তো, ইউকে থেকে এসে জয়েন করেছে, ইউ ক্যন মিট হিম, হি মাইট নো কমান্ডার’স প্ল্যান
মাসুদকে এবার চিন্তিত দেখালো, তুমি জানোনা! তাঁকে ১৯ তারিখেই ৪ বেঙ্গলে পোস্টিং করা হয়েছে, উইদাউট জয়েনিং টাইম।
যাই হোক তুমি সাবধানে থেকো, ইউ হ্যাভ টু বি ভেরি কেয়ারফুল। বাই দ্য ওয়ে আজকের পেপারটা দেখেছো?

মাসুদ চলে যাবার পর শফিল্লাহ’র মনে হলো দু’জন অফিসারই তাঁকে পেপারের কথা বললেন কেন? খবরের কাগজ খুলে অবাক হয়ে গেলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ছাপা হয়েছে প্রথম পৃষ্ঠায়।পতাকার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাত করেই অচেনা সাহস বুক ফুলে উঠলো তার।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×