হাতবোমা হামলা হলেও তাতে ছন্দপতন হয়নি রোডমার্চের, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণজাগরণের এই অভিযাত্রা চলছে ঠাকুরগাঁওয়ের পথে।
Published : 18 Jan 2014, 07:19 PM
শুক্রবার শুরু হওয়া এই রোডমার্চ সন্ধ্যায় বগুড়ায় তিন দফা বোমা হামলার মুখে পড়ে। শনিবার দিনাজপুরে ঢোকার পথে হয় আরেক দফা হামলা।
তবে এই হামলার মধ্যেই বিপুল সংখ্যক মানুষের সাড়া নিয়ে চলছে রোডমার্চ। আগের দিনের মতো শনিবার বিভিন্ন স্থানে পথসভাগুলো স্থানীয়দের ব্যাপক অংশগ্রহণে পরিণত হয় জনসভায়।
তিন দিনের রোডমার্চের দ্বিতীয় দিনে সকাল সাড়ে ৮টায় বগুড়া থেকে বের হয় জাগরণকর্মীরা।
সাড়ে ৯টার দিকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দিনের প্রথম পথসভায় বক্তব্য রাখেন ইমরান, যেখানে মঞ্চ করে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল স্থানীয় গণজাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
নিরাপত্তা ও সময় বাঁচাতে গাড়িতে থেকেই দ্বিতীয় দিনের পথসভাগুলোতে ইমরানের বক্তব্য দেয়ার কথা থাকলেও স্থানীয়দের চাপে তাকে গাড়ি থেকে নিচে নামতে হয়।
স্থানীয়দের দাবির মুখে স্লোগান ধরতে হয় লাকি আক্তারকেও, যিনি যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলন শুরুর পর ‘স্লোগানকন্যা’ হিসেবে পরিচিত।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রোডমার্চ গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে পৌঁছালে শত শত মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে জাগরণকর্মীদের স্বাগত জানায়।
পলাশবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে নেমে জাগরণকর্মীরা উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান। সেখানেই হাজারো মানুষ ভবিষ্যতে পলাশবাড়ীকে যে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা থেকে রক্ষার অঙ্গীকার করেন।
সেখানে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর জামায়াত-শিবিরের জ্বালিয়ে দেয়া দুটি বাড়ি পরিদর্শন করেন ইমরানসহ জাগরণমঞ্চের নেতারা।
সেখানে পৌঁছার পর রাস্তা থেকে গাড়ি বহরকে স্বাগত জানিয়ে স্কুল মাঠে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। সেখানেও হাজার হাজার ছাত্র-যুবক-জনতার অংশগ্রহণে জনসভা হয়।
পথসভার পরবর্তী নির্ধারিত স্থান মিঠাপুকুর শাপলা চত্বরে রাস্তার পাশেই মঞ্চ করে অপেক্ষায় ছিলেন সেখানকার মানুষ। সেখানেও গাড়ি থেকে নেমে পথসভায় বক্তব্য দিতে হয় জাগরণমঞ্চের নেতাদের।
এই পথ সভায় মানুষের বিপুল উপস্থিতিতে সেখানে রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন হয়।
মিঠাপুকুরের এ পথসভায় ইমরান বলেন, “জামায়াত-শিবির-যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়স্থল পাকিস্তান। তারা পাকিস্তানের হয়ে এদেশে ব্যবসা করতে এসেছে।
“ব্যবসা করে মুনাফা লুটে আবার আমাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, মানুষ হত্যা করে, ধর্ষণ করে। এরা এই দেশের শত্রু, এদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে।”
এরপর গণজাগরণ মঞ্চের বহর এগিয়ে চলে রংপুরের দিকে, যেখানে শহরের উপকণ্ঠে মোটর সাইকেল বহর নিয়ে স্বাগত জানানো হয় গাড়িবহরকে।
গাড়িবহর যায় মঞ্চের মুখপাত্র ইমরানের এক সময়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রংপুর মেডিকেল কলেজেও। সেখানেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থী স্বাগত জানায় রোডমার্চকে।
গণজাগরণ মঞ্চের দ্বিতীয় এই রোডমার্চের শুরু থেকে দুএকটি ব্যতিক্রম বাদে প্রতিটি পথসভাতেই রোডমার্চে উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে বেড়েছে।
দিনভর কোনো অঘটন না ঘটলেও সন্ধ্যার পর দিনাজপুরের রানীর বন্দর উপজেলার দশ মাইল এলাকায় রোডমার্চের গাড়ি লক্ষ্য করে একটি হাতবোমা হামলা হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
আগের দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে বগুড়ার শেরপুরের শেরুয়া বটতলা, বনানী বাইপাস ও শাহজাহানপুরের পটকি ব্রিজ এলাকায় হাতবোমা হামলায় পড়েছিলেন গণজাগরণের কর্মীরা, যাতে আহত হন পাঁচজন।
শুক্রবার রাতের যাত্রায় দফায় দফায় হামলা হওয়ায় রোডমার্চের কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে পৌঁছে দ্বিতীয় রাতযাপনের কথা থাকলেও সিদ্ধান্ত পাল্টে রাতে দিনাজপুরেই থাকছে রোডমার্চের বহর।
সময় বাঁচাতে পথে তারাগঞ্জের পথসভা ও কর্ণিয়ায় আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন না করেই দিনাজপুরে যান গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। তবে দিনাজপুরের পথে পেরিয়ে আসা কর্ণিয়ার আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন ও পথসভা রোববার সকালে হবে বলে জানিয়েছেন মঞ্চের সংগঠকরা।
এদিকে পথসভার নির্ধারিত কর্মসূচি না থাকলেও যাত্রাপথে দিনাজপুরের কাহারুলে জনতার সমাবেশে বক্তব্য দেন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। সেখানে মঞ্চ করে রোডমার্চের অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয়রা।
দিনাজপুর সদরের বাঁশেরহাটে স্থানীয় ছাত্র-জনতা সড়কে অবস্থান নিয়ে রোডমার্চের জন্য অপেক্ষা করেন। জাগরণ মঞ্চের কর্মীরা গাড়ি থেকে না নামলেও তাদের পক্ষে স্থানীয়দের ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন ইমরান।
এরপর নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে রোডমার্চের বহর দিনাজপুর ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে জনসমাবেশস্থলে পৌঁছায়।
গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার পর তা প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে এর আগে যশোরের অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়া অভিমুখে রোডমার্চ করে গণজাগরণ মঞ্চ, যাতেও স্থানীয়দের ব্যাপক সাড়া মিলেছিল।