somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপেন্দ্রকিশোর রায়ের ছেলে সত্যজিৎ রায়ের বাবা সুকুমার রায়

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একদম ছোট বেলায় যে বইটা পড়তে পড়তে আমার মুখস্ত হয়ে গেছিল সেটা হল আবোল তাবোল। আমারা যখন ছোট তখন একটু বানান করে পড়তে শিখলেই হাতে তুলে দেয়া হত আবোল তাবোল। এগুলোকে যে ননসেন্স রাইম বলা হয় তখন ও কিন্ত জানি না, কিন্ত ততদিনে কাঠবুড়ো, বকচ্ছপ, ট্যাঁশগরু কিংবা হ্যাংলামুখো হ্যাংলারা আমার প্রিয় হয়ে উঠছিল, বইর দিকে তাকালে ই মনে হত ছবিগুলো যেন লাফাতে লাফাতে বইর পাতা থেকে বের হয়ে আসবে, আসলে ছড়াগুলোর সাথে সাথে ছবি গুলোকেও ক্রমশ হজম করে ফেলতাম।

অথচ কেউ লেখা তো দুরের কথা আকাটাও কিন্ত সুকুমারকে হাতে ধরে শেখায়নি। দুটোই বলতে গেলে পেয়েছিলেন পারিবারিক সুত্রে। বাবা ঊপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন এক ভার্সেটাইল জিনিয়াস। লেখা, আঁকা, গানবাজনা, মায় আধুনিক ছাপাখানাও চালু কর ছিলেন নিজের হাতে। এর ফ্লে বাড়ীতে তৈরি হয়েছিল এক আদর্শ সৃজনশিল পরিবেশ, যার জোরে ৫০ বৎসর বয়সে ঊপেন্দ্রকিশোর রায় একটি মাসিক পত্রিকা বের করে ফেলেন তার নাম “সন্দেশ”, প্রকাশের তিন বছরের মাথায় উপেন্দ্রকিশোর মৃত্যু বরন করলে সুকুমার হাল ধরেন পত্রিকার, চলতে থাকে তেত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত, নিজের অকাল মৃত্যু পর্যন্ত। সন্দেশের চতুর্থ সংখ্যায় কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায় এর সরস গল্প “ভবম হাজাম” এর সঙ্গে প্রথম আকা ছাপা হয় সুকুমারের ইলাষ্ট্রেশন, সাদা কালো হাফ টোনে আমরা দেখতে পাই নাপিত সাহেবের হতবম্ভ চেহারা কি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

আকার দক্ষতার যে অভাব ছিল সুকুমারের মধ্যে তা তিনি পূরন করেছেন অসাধারন পর্যবেক্ষন ক্ষ্মতা এবং অফুরান কল্পনা শক্তির মাধ্যমে – এ কথা নিজের বাবা সন্মধ্যে নিজেই বলে গেছেন সত্যজিৎ রায় (কি অসাধারন বাবার অসাধারন পুত্র, মৃত্যু আগে সত্যজিতের আকা একটা ছবি দেবার লোভা সামলাতে পারলাম না, খেয়াল করুন ১১ জন ম নিষীর ছবি দেয়া আছে গাছটির মধ্যে)।


ইলাষ্ট্রেটর হিসাবে উনি ওনার শ্রেষ্ট কাজ গুলো করছেন আবোল তাবোল সিরিজের ছড়া আর “হেসোরাম হুঁশিয়ার” এর ডায়রির সাথে, অবোল তাবোল প্রকাশ হবার মাত্র কয়েকদিন আগে তার মৃত্যু হয়। সুকুমার চলে গেছেন ঠিকই কিন্ত আবোল তাবোল, হযবরল, হেসোরামের মত লেখা সঙ্গে ছবি গুলো আজ ও পুরানো হয়নি। রামগরুর ছানা, হুকোমুখো হ্যাংলা, ল্যাগব্যাগার্নিসার কথা মনে আছে? গোমড়ামুখো রামগরুর বাসার সামনে ছোট্ট একটা বোর্ড বসিয়ে যে ইলাসট্রেসন টা সুকুমার ফুটিয়ে তুলছিলেন, পাচশো পাতার ছড়া লেখেও ওটা ফুটিয়ে তুলতে পারবেন না। এখানেই সুকুমার এক মে দ্বিতীয়ম।




হযবরল এর মোটাসোটা সেই বিড়ালটার কথা মনে আছে? যে কানা একচোখ বুজে ফ্যাস ফ্যাস করে হাসছে? পেন্সিলের মাত্র কয়েকটা টান কি অসাধারন? যারা কার্টুন শিল্পী তাদের এখনও অনেক কিছু শেখার আছে এইসব ছবি থেকে।

“হেসোরামের হুশিয়ারি” ডাইরিতে ছবি মিলিয়ে দেখুন কি অসাধারন হ্যাংলাথেরিয়াম, গোমড়াথেরিয়াম, চিল্লানোসরাস বসে আছে? এর থেকে ভালভাবে কি আপনি কল্পনায় এদের আনতে পারেন? পারেন না, এখানেই সুকেমার রায়। আমার কিন্ত পছন্দ “বেচারেথিয়াম” ইশ নিরিহ, গোবেচার্ গোলগাল চেহারা।

শুধু সাদাকালো নয় পাশাপাশি অনেক রঙ্গিন ছবিও একেছেন, মনে করে দেখুননা টিকেওয়ালা একজন বসে মন দিয়ে সন্দেশ পরছে, পিছনে এক প্রকান্ড বাঘ, তার পিঠে সারস সামনে একটা ছোট্ট ব্যাঙ। গোটা ছবিতে কি অসাধারন রংয়ের ব্যাবহার।

বিলেত থেকে ফিরে সুকুমার রায় গড়েছিলেন আর একটি ক্লাব, নাম ‘মানডে’ মানে সোমবার! এখানে লেখা পাঠ ও আলোচনার সঙ্গে থাকতো ভূরিভোজের আয়োজনও। তাই রসিকতা করে অনেকেই একে মন্ডা ক্লাব বলতো। এই নামটির মতোই সুকুমার রায়ের বিচিত্র সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে পাওয়া যায় ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ ও কৌতুকরস। মন্ডার মতোই উপাদেয় সেইসব লেখা! চলুন দেখি মান্ডে ক্লাবের কয়েক টি আমন্ত্রন পত্র

সম্পাদক বেয়াকুব
কোথা যে দিয়েছে ডুব-
এদিকেতে হায় হায়
ক্লাবটি তো যায় যায়।
তাই বলি সোমবারে
মদগৃহে গড়পারে
দিলে সবে পদধূলি
ক্লাবটিরে ঠেলে তুলি।
রকমারি পুঁথি কত
নিজ নিজ রুচিমত
আনিবেন সাথে সবে
কিছু কিছু পাঠ হবে
করযোড়ে বারবার
নিবেদিছে সুকুমার।

কেউ বলেছে খাবো খাবো,
কেউ বলেছে খাই
সবাই মিলে গোল তুলেছে-
আমি তো আর নাই।
ছোটকু বলে, রইনু চুপে
ক’মাস ধরে কহিল রূপে!
জংলি বলে “রামছাগলের
মাংস খেতে চাই।”
যতই বলি “সবুর কর” -
কেউ শোনে না কালা,
জীবন বলে কোমর বেধে,
কোথায় লুচির থালা?
খোদন বলে রেগেমেগে
ভীষণ রোষে বিষম লেগে-
বিষ্যুতে কাল গড়পারেতে
হাজির যেন পাই।

শনিবার ১৭ ই
সাড়ে পাঁচ বেলা,
গড়পারে হৈ হৈ
সরবতী মেলা।
অতএব ঘড়ি ধরে
সাবকাশ হয়ে
আসিবেন দয়া করে
হাসিমুখে লয়ে।
সরবৎ সদালাপ
সঙ্গীত – ভীতি
ফাঁকি দিলে নাহি মাপ,
জেনে রাখ-ইতি।

আমি,অর্থাৎ সেক্রেটারি,
মাসতিনেক কল‌কেতা ছাড়ি
যেই গিয়েছি অন্য দেশে
অমনি কি সব গেছে ফেঁসে।
বদলে গেছে ক্লাবের হাওয়া,
কাজের মধ্যে কেবল খাওয়া!
চিন্তা নেইক গভীর বিষয়
আমার প্রাণে এসব কি সয়?
এখন থেকে সম্‌ঝে রাখ
এ সমস্ত চলবে নাকো,
আমি আবার এইছি ঘুরে
তান ধরেছি সাবেক সুরে।
শুনবে এস সুপ্রবন্ধ
গিরিজার বিবেকানন্দ,
মঙ্গলবার আমার বাসায়।
(আর থেক না ভোজের আশায়)

আসলে সাহিত্য চর্চার সাথে ভিস্যুয়াল আর্টের জগৎটাও সুকুমারকে ভীষন ভাবে টানত। ছিল পরিচ্ছন্ন রুচি, আধুনিকতার ছোয়া, আর সর্বোপরি ছিল হিউমার সেন্স। বড়ই অকালে চলে গেছেন সুকুমার।বেচে থাকলে আমরা কত মজাদার ছবি সহ লেখা পেতাম তার কোন ইয়াত্তা নেই। যার সম্পর্কে নিজেই বলেছেন
ছবির টানে গল্প লিখি নেইকো এ তে ফাঁকি
যেমন ধারা কথায় শুনি হুবহু তাই আঁকি

হ্যা সুকুমার রায়ই পেরেছিলেন এমন ছবি আকতে যেখানে দেখা যায় হাবু পরীক্ষায় গোল্লা পেয়েছে শুনে আলহাদে আটখান হওয়া পাসের বাড়ীর ছেলের শরীরটা সত্যি সত্যি আটখানা টুকরো হয়ে গেছে।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:৪২
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×