somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমার ছেলে মেয়ে তোমার বৃদ্ধবয়সে তোমাকে বাসা থেকে বের করে দিলে সইতে পারবেতো ? বৃদ্ধাশ্রমে একা থাকতে কষ্ট হবে না ?

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলে-মেয়েদের ওপর মাতা-পিতার অধিকার ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। এই পৃথিবীতে সন্তান তথা ছেলে-মেয়েদের অস্তিত্ব লাভের কারণই হচ্ছে মাতা-পিতা। সুতরাং সন্তানের উপর তাদের অধিকার যে কত বড়, কত ব্যাপক তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভূমিষ্ট লাভের পর সন্তানকে তারাই লালন-পালন করেন। সন্তানের আরামের জন্য ক্লান্তি বহন করেছেন, তাদের নিদ্রার জন্য নিজেরা জাগ্রত থেকেছেন। তোমার মা তোমাকে তার উদরে ধারণ করেছেন। যেখানে দীর্ঘ নয় মাসাধিক সময় তারই খাদ্য ও স্বাস্থের উপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করেছ। এ দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ্ তা‘আলা তার বাণীতে বলেন,
﴿حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ وَهۡنًا عَلَىٰ وَهۡنٖ ﴾ [لقمان: ١٤]
‘তাকে তার মা দুর্বল থেকে দুর্বলতর অবস্থার মধ্য দিয়ে পেটে ধারণ করেছেন।’ [সূরা লুকমান: ১৪]
অতঃপর সে মা-ই আরো দু’বছর পর্যন্ত অসীম কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করে তাকে দুধ পান করিয়েছেন, তার সেবা যত্ন করেছেন।
শৈশব থেকে নিজের পায়ে দাড়ানোর পূর্ব পর্যন্ত পিতা তার সন্তানের জীবন ধারণ, তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও খাদ্য-বস্ত্রের জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়েছেন। তার শিক্ষা-দীক্ষা এবং পরিচালনার যাবতীয় ব্যবস্থা সে পিতাই করেছেন। অর্থাৎ এমন অবস্থায় পিতা-মাতা তাদের সন্তানের জন্য সকল প্রকার দায়-দায়িত্ব বহন করেছেন যখন তুমি তোমার ভালো-মন্দ এবং কল্যাণ-অকল্যাণের কোনো ক্ষমতাই রাখতে না। আর এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা সন্তানকে মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার ও কৃতজ্ঞতার আচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ وَهۡنًا عَلَىٰ وَهۡنٖ وَفِصَٰلُهُۥ فِي عَامَيۡنِ أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡكَ إِلَيَّ ٱلۡمَصِيرُ ١٤ ﴾ [لقمان: ١٤]
‘আর আমরা লোকদেরকে আমার এবং তাদের মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য উপদেশ দিয়েছি, তার মা তাকে দুর্বল থেকে দুর্বলতর অবস্থার মধ্য দিয়ে পেটে ধারণ করেছে এবং দু’বছর পর্যন্ত দুধ পান করিয়েছে-আর তাদেরকে আমার নিকটই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ [সূরা লুকমান: ১৪]
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন :
﴿وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٣، ٢٤]
‘আর মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের কোন একজন অথবা উভয়ই যখন তোমাদের কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের কোন একজন অথবা উভয়ই যখন তোমাদের কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাদের বেলা উফ (উহ) এই শব্দটিও উচ্চারণ করো না এবং রূঢ় ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের দূরে সরিয়ে দিও না। বরং তাদের উভয়ের সাথেই ভদ্রভাবে কথাবার্তা বলো। তাদের জন্য তোমার আনুগত্য ও দয়ার হস্ত প্রসারিত করে দাও এবং আমার নিকট এই বলে প্রার্থনা কর: হে রব ! তাদের অনুরূপ দয়া করো যেমনটি তারা করেছেন আমার সাথে আমার শৈশবে।’ [সূরা আল-ইসরা: ২৩-২৪]
মাতা-পিতার অধিকার এই যে, কথা ও কাজে এবং শারীরিক ও আর্থিক উভয় দিক দিয়েই ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের সাথে সদ্ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কথায় নম্রতা ও চেহারায় সদাহাস্যভাব বজায় রাখতে হবে। ছেলে-মেয়েকে তাদের যে কোনো আদেশ যা সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে এবং তাদের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত নয়-তা পালনে তৎপর থাকতে হবে। বার্ধক্য, অসুখ-বিসুখ ও দুর্বলতায় আক্রান্ত হলে তাদের প্রতি খিটখিটে আচরণ ও ক্রোধ প্রকাশ করা যাবে না। ঠিক হবে না তাদের এ করুণ অবস্থাকে নিজেদের উপর বোঝা স্বরূপ মনে করা। কেননা, কিছু দিনের মধ্যেই ছেলে-মেয়েদেরকেও সে অবস্থায়ই উপনীত হতে হবে। অর্থাৎ সন্তানগণও স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তাদের পিতা-মাতার সারিতে পৌঁছে যেতে বাধ্য।
মোটকথা, মাতা-পিতা যেমন সন্তানের জীবদ্দশায় বাধ্যক্যে উপনীত হয়ে থাকে, তেমনিভাবে সন্তানগণও একদিন তাদের সন্তানগণের সম্মুখে অনুরূপ বার্ধক্যে উপনীত হবে। তখন তারাও ঠিক মাতা-পিতার মতোই তাদের ছেলে-মেয়েদের সদ্ব্যবহারের তীব্র প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করবে- যেমন করছেন বর্তমানে তাদের মাতা-পিতা।
কাজেই সন্তানগণ যদি তাদের পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করে তা হলে তাদের জন্যও তার বিনিময় রয়েছে অফুরন্ত পূণ্য ও সম প্রতিদান। মনে রাখা প্রয়োজন যে, যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতার সাথে সদ্ধ্যবহার করবে তার সন্তানগণ থেকেও সে অনুরূপ আচরণ আশা করতে পারে। আর যে ব্যক্তি তার মা বাবার সাথে অবাধ্য আচরণ করবে সে তার ছেলে-মেয়েদের দ্বারা লাঞ্ছিত হবে-এটাই স্বাভাবিক। কারণ, ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’।
আল্লাহ্ তা‘আলা পিতা-মাতার অধিকারকে সুমহান উচ্চে স্থান দিয়েছেন। আল্লাহ ও রাসূলের অধিকারের পরেই হচ্ছে এ অধিকারটি। তাই তো আল্লাহ বলেন:
﴿ ۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗا﴾ [النساء: ٣٦]
‘হে লোক ! তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর তার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করো না এবং পিতা-মাতার সাথে ইহসান (সদ্ব্যবহার) করো।’ ‘আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: ‘আমার এবং তোমাদের পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ [সূরা আন-নিসা: ৩৬]
আরও বলেন,
﴿أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡكَ إِلَيَّ ٱلۡمَصِيرُ ١٤ ﴾ [لقمان: ١٤]
“যাতে তুমি আমার জন্য কৃতজ্ঞ হও এবং পিতা-মাতার প্রতিও” [সূরা লুকমান: ১৪]
রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহারকে আল্লাহর পথে জিহাদের উপরে স্থান দিয়েছেন। এই মর্মে ইবনে মাস‘উদ রা. থেকে একটি হাদীসও বর্ণিত হয়েছে। ইবনে মাস‘উদ রা. বলেন,
سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «الصَّلَاةُ لِوَقْتِهَا» قَالَ: قُلْتُ ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «بِرُّ الْوَالِدَيْنِ» قَالَ: قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ» «الصَّلاَةُ لِوَقْتِهَا، وَبِرُّ الوَالِدَيْنِ، ثُمَّ الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ»
“‘আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল ! কোন কাজটি আল্লাহর কাছে সব চেয়ে বেশী প্রিয়। তিনি বলেন- সঠিক ওয়াক্তে নামাজ আদায়। আমি বললাম তার পর কোনটি। তিনি বললেন : মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার। আমি বললাম : তারপর কোনটি। তিনি বললেন ; আল্লাহর পথে জিহাদ। (বুখারী ও মুসলিম)।’
উপরে বর্ণিত এই হাদীসটি পিতা-মাতার অধিকারের গুরুত্বের কথাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বৈ কি! অথচ আমাদের সমাজের অনেক লোকই মাতা-পিতার প্রতি অন্যায় আচরণ এবং সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের সে প্রাপ্য অধিকারটিকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। আমাদের সমাজে এমন লোকের সংখ্যা কম নয়, যারা না তাদের পিতার আর না তাদের মাতার অধিকারের প্রতি বিন্দুমাত্র যত্নবান হচ্ছে। অধিকন্তু তারা তাদের অবাধ্য আচরণের মাধ্যমে তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমাণিত করে থাকে। সুতরাং যারা এরূপ মন্দ আচরণ করে তারা আজ হোক আর কাল হোক এর প্রতিফল ভোগ করবেই।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×