যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে রায়ের পর থেকে সংঘাতময় সাতক্ষীরায় গিয়ে অপশক্তি রুখতে স্থানীয়দের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 20 Jan 2014, 02:43 PM
“আপনারা (সাতক্ষীরাবাসী) নিজেরা শক্তি নিয়ে এ অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপনাদের পাশে আছে,” বলেছেন তিনি।
নির্বাচনের পর সোমবার প্রথম সাতক্ষীরা সফরে গিয়ে এক জনসভায় একথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা।
তিনি বলেন, “যারা সাতক্ষীরাকে রক্তাক্ত করেছে, যারা মানুষ খুন করেছে, তারা কেউ রেহাই পাবে না। প্রত্যেককে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।”
জনসভার আগে সার্কিট হাউসে জামায়াত-শিবিরের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের হাতে অনুদানের চেকও তুলে দেন তিনি। এরপর তিনি যান সাতক্ষীরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভায়।
নাশকতাকারীদের ধরতে সুন্দরবন সংলগ্ন এই জেলায় যৌথ অভিযান চালিয়ে যাওয়া হবে জানিয়ে হাসিনা বলেন, “সাতক্ষীরাকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে যা যা করার করা হবে এবং যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা চলবে। সাতক্ষীরাকে সন্ত্রাসমুক্ত করা হবে।”
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায়ের পর থেকে জামায়াতে ইসলামের তাণ্ডব চলছে সাতক্ষীরায়, যাতে নিহত হন আওয়ামী লীগের প্রায় ২০ জন নেতা-কর্মী।
সাতক্ষীরায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং আসামি গ্রেপ্তারে গত ১৫ ডিসেম্বর রাত থেকে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির যৌথঅভিযান শুরু হয়, যাতে সংঘর্ষে নিহত হন জামায়াতের কয়েকজন।
জামায়াতের জোটসঙ্গী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাতক্ষীরায় এই অভিযানের নিন্দা জানিয়ে আসছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাতক্ষীরা সফরের সময়ই রাজধানীতে এক জনসভায় তিনি বলেন, “সাতক্ষীরায় অভিযানে আদৌ যৌথবাহিনী ছিল কি না, তা সঠিক করে কেউ বলতে পারে না, মানুষের মনে অনেক সন্দেহ।”
সাতক্ষীরায় জনসভায় শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমরা দেশে শান্তি চাই, কিন্তু একজন চান না, তিনি অশান্তি বেগম।”
জামায়াত অংশ নিতে পারছে না বলেই বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, যে নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছেন হাসিনা।
তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সভায় বলেন,“বিএনপি-জামায়াতের কারণে দেশে যে সহিংসতা, মানুষ হত্যা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে, তা কোনো অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না। এটা তো কোনোভাবেই আন্দোলন নয়।
“নির্যাতনকারীরা যেখানেই থাকুক, সরকার তাদের খুঁজে বের করে আইনের হাতে সোর্পদ করবে।”
“বিজিবিকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সরকার তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেবে। এছাড়াও সারাদেশে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সরকার তাদের আর্থিক সাহায্য দেবে।”
জনসভায় হাসিনা বলেন, “দেশের প্রতিটি এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি লুটপাট করা হয়েছে।
“যারা এতে জড়িত, যারা মানুষ হত্যা করেছে, যারা জনগণের জান-মাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তাদের একজনকেও রেহাই দেয়া হবে না।”
সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রুখে দাঁড়াতেও দেশবাসীকে আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
“এদেশ সব ধর্ম, বর্ণের মানুষের। এদেশে সবাই সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। এদেশে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বরদাশত করা হবে না।”
“আপনারা একে অপরকে সাহায্য করবেন, যেন অন্য কেউ ক্ষতি করতে না পারে। সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে,” আহ্বান জানান হাসিনা।
তিনি বলেন, খালেদা যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে চাইলেও তাতে সফল হবেন না।
“কেন আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চান? মনে হয় তিনি এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। তার মন পড়ে থাকে পেয়ারে পাকিস্তানে। তার শয়নে স্বপনে শুধু পাকিস্তান। এজন্যই যুদ্ধাপরাধীদের জন্য তার এত দরদ।”
জনসভায় গত সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন কয়েকটি প্রকল্পও উদ্বোধন করেন তিনি।