পদ্মা সেতু ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ ছয়টি প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্য ঠিক করেছে শেখ হাসিনার নতুন সরকার।
Published : 22 Jan 2014, 09:21 PM
অন্য চারটি প্রকল্প হচ্ছে- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা গণপরিবহন উন্নয়ন প্রকল্প (মেট্রো রেল), কক্সবাজারে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া শেখ হাসিনা বুধবার প্রকল্প মনিটরিং কমিটির এক সভায় এই অগ্রাধিকার ঠিক করে দেন বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের নতুন সরকারের প্রকল্প মনিটরিং কমিটির প্রথম সভায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
“আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু, রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ছয়টি মেগা প্রকল্প প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প হিসেবে নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশ দেন।”
মুহিত বলেন, “নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ আমরা চার বছরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি।”
প্রায় ২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু নির্মাণে এডিবি, জাইকা ও আইডিবিরও ঋণ দেয়ার কথা ছিল। কিস্তু বিশ্ব ব্যাংক বাদ হয়ে যাওয়ার পর তারাও সরে যায়।
নিজস্ব অর্থায়নে এগোলেও উন্নয়ন সহযোগীদের আসতেও বাধা নেই বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
“এডিবি, জাইকাসহ অন্য কোনো উন্নয়ন সংস্থা যদি পদ্মা প্রকল্পে ফিরে আসে, তাহলে তাদের অর্থায়ন নেব। তবে আমরা তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাইনি।”
পদ্মা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নদীভাঙন রোধে খনন ও উদ্ধার করা জমিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরুর ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে দেশের বামপন্থী দলগুলো ও পরিবেশবাদীরা ইতোমধ্যে বিরোধিতা তুলেছে।
সুন্দরবনের কাছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যাংগ্রোভ বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে তাদের দাবি। তবে সরকার বলে আসছে, ঝুঁকি এড়াতে সব ব্যবস্থাই থাকছে এই প্রকল্পে।
ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর দিকে জোর দিতেই কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জোর দিচ্ছে সরকার।
সেইসঙ্গে রাশিয়ার সহায়তায় দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে গত সরকারের সময়ই চুক্তি করা হয়।
মুহিত বলেন, “রূপপুর পারমাণবিক ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার বহুমুখী উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছে।”
মুহিত বলেন, “এবার আমরা শুরু থেকেই আমাদের উন্নয়ন কাজের গতি বাড়াতে চাই। আশা করছি আমরা এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে আরো বেগবান করতে সক্ষম হব।”
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব বিজন লাল দেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ এই ছয় প্রকল্পের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বৈঠকে যোগ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ওয়াহিদ-উজ-জামান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।