somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায় হায়..... যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে তেহরান রেডিওকে একি বললেন শফিক রেহমান ?

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ কেলেঙ্কারি সংলাপ ফাঁস, সরকারের ভূমিকা নিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিক্রিয়া এবং ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেখতে তুরস্কের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর নিয়ে বাংলাদেশে আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। এসব নিয়ে রেডিও তেহরান গত ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক শফিক রেহমানের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সাক্ষাৎকারটি নিম্নে দেয়া হল:

রেডিও তেহরান : ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং বেলজিয়ামে বসবাসকারী আইনজীবী ড. আহমদ জিয়াউদ্দিন অশোভন ও নীতিবিবর্জিত কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক)। সেইসঙ্গে তারা এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে। ঘাদানিকের এই দাবির মূল কারণ কি?

শফিক রেহমান : দেখুন! সরকারের প্রতি ঘাদানিকের এই দাবির মূল কারণটা কী সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। এ বিষয়টি বাইরে থেকে অনুমান করাটা ঠিক হবে না। তবে ঘাদানিককে আমরা প্রশ্ন করতে পারি, গতবার যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল তখন কেন এই মামলাটি করা হয়নি? প্রথম থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম এই মামলার নামের মধ্যেই একটা ভন্ডামি বা মিথ্যা জড়িত আছে। যেমন International Crimes Tribunal. কিন্তু এটা যে কিভাবে International’ হলো তা আমি অনেককেই বুঝাতে পারিনি। আমি জানি যুদ্ধাপরাধের বিচারে অভিযুক্তদের পক্ষে বৃটেন থেকে একজন আইনজীবী আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে আসতে দেয়া হয়নি। যদি তাকে আসতে দেয়া হতো সেক্ষেত্রেও হয়ত বলতে পারতাম এটা একটা International Tribunal.

আপনাদের হয়তো মনে থাকবে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার হচ্ছিল তখন পাকিস্তান সরকার টমাস উইলিয়ামসনকে লন্ডন থেকে আসতে দিয়েছিল। সে রকম কোনো চিত্র কিন্তু এবার আমরা দেখতে পেলাম না। ফলে কী করে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল ‘আন্তর্জাতিক' হলো এটা তো আমরা বুঝি না! সুতরাং ঘাদানিকের এই বিবৃতির কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে নিজেরাই অভিযুক্ত হতে যাচ্ছে কারণ আওয়ামী লীগ সরকার দু'বার ক্ষমতায় থেকেও যুদ্ধাপরাধের বিচার করেনি। সেজন্য তারা অবশ্যই অভিযুক্ত হবে। দেশের মানুষ তাদেরকে অভিযুক্ত করবে। সবাই যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় কিন্তু identify করতে হবে কারা সত্যিকার অপরাধী ছিল এবং তা দ্রুত নিত্তি করতে হবে।

এখানে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, কিউবায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো যখন বিপ্লব করেন তার দু'মাসের মধ্যে বিচারের রায় এবং তা কার্যকর করা হয়েছিল। তবে আমার মনে হয়, আজকে ঘাদানিকের যেটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি হচ্ছে- তারা বুঝতে পারছে যে, এই বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত ধোপে টিকবে না। আর সেজন্যেই তারা এখন থেকেই সরকারকে দায়ী করছে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার কথা বলছে। আমি এ ব্যাপারে ঘাদানিককেও দায়ী করছি।

রেডিও তেহরান : যুদ্ধাপরাধের বিচারের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকার এ বিচারের পরিসমাপ্তি টানতে পারবে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে। এ সংশয় প্রকাশ করাটা কি যৌক্তিক নাকি সরকারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে? কারণ বিচার প্রক্রিয়া তো সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী চলবে না, এটা চলবে আইনের নিজস্ব গতিতে।

শফিক রেহমান : আইনের নির্দেশনায় চলতে হবে এবং এটা স্বচ্ছভাবে হতে হবে, জবাবদিহিতা থাকতে হবে। দেশের মানুষের কাছে যাতে এটা গ্রহণযোগ্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে মানুষ মনে করছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে বিচার করা হচ্ছে, দেশের কারণে নয়। রাজনৈতিক কারণে বিচার হচ্ছে বলেই মানুষ মনে করে। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দলীয ফায়দা লোটার জন্য এই বিচারের আয়োজন করেছে।

আপনি একটি বিষয় শুনলে হাসবেন। বিষয়টি এ রকম- কিছু দিন আগে বাংলাদেশে একটা ভূমিকম্প হয়ে গেল। তখন দেশের মানুষ বললো- নিশ্চয়ই এখন আওয়ামী লীগ বলবে যে, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে এই ভূমিকম্প হয়েছে।' আজকেই আমি আরেকটি বেশ হাস্যকর কথা শুনতে পেলাম। কথাটি এ রকম আপনি জানেন যে ঢাকায় অনেক ট্রাফিক জ্যাম হয়। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে পুরো এয়ারপোর্ট রোড পর্যন্ত ভীষণ জ্যাম ছিল। ওই সময় বাসের মধ্যে এক ভদ্রলাক চিৎকার ও চিল্লা-পাল্লা শুরু করে বললেন, এইসব জ্যামের কারণ কি জানেন? এই যে বাস, ট্রাক, বেবিট্যাক্সি, সিনএনজি বা ট্যাক্সির যত ড্রাইভার আছে তাদের কারণে এই জ্যাম হচ্ছে। এ সব ড্রাইভারের কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না বলেই জ্যাম হচ্ছে। দেখুন! দেশে এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গটি নিয়ে এ রকম জোকস তৈরি হয়েছে। আজকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে একটি হাস্যকার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য, জোকসে পরিণত করার জন্য সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী এবং তারা জানে মুক্তিযুদ্ধের নামে ব্যবসা করে তাদেরকে এভাবে ক্ষমতায় থাকতে হবে। তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মুক্তিযুদ্ধে যাননি। আমার প্রশ্ন- তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন? তার বাবার কথা নাইবা জিজ্ঞাসা করলাম। তার স্বামীও মুক্তিযুদ্ধে যাননি। সবচেয়ে হাস্যকর কথা হচ্ছে- তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করছে যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল। আওযামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল তাদেরকে ‘পাকিস্তানের চর' বলা হচ্ছে। তো এই যে দলীয়করণ, মিথ্যাচার ও অসভ্য ভাষায় কথাবার্তা তারা বলছেন- আমি রেডিও তেহরানের মাধ্যমে এসবের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান : আচ্ছা, সম্প্রতি তুরস্কের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে এবং এর সদস্যরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছেন। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের বিষয়ে নানা খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তাদের এ তৎপরতাকে আপনি কিভাবে দেখছেন? তুরস্কের প্রতিনিধিদলের সফরের মূল কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

শফিক রেহমান : দেখুন, এখানে ইকোনমিস্ট বলেছে যে, কেন তারা স্কাইপের কথোপকথন প্রকাশ করেছে। ইকোনমিস্ট বলেছে, এই বিচারে জুরিরা নেই-এটা একটি বিষয়। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, এই বিচারের ওপর কিছু লোকের জীবন-মৃত্যু নির্ভর করছে। অর্থাৎ কিছু লোকের প্রাণদন্ড হতে পারে এবং তা কার্যকরও হতে পারে। সুতরাং এখানে মানবতার প্রশ্নটি খুব বড় একটি বিষয়। আর সে জন্যেই ইকোনমিস্ট মনে করছে, মানবতার স্বার্থেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করা উচিত। আর সেইভাবেই আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি বলতে চাচ্ছি- তুরস্ক থেকে যে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে- তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করতে গিয়ে মানবতার বিষয়টি ঠিকমতো রক্ষিত হচ্ছে কি না তা দেখা। আর এ বিচারের বিষয়টি তো অবশ্যই স্বচ্ছ হওয়া উচিত।

তুরস্কের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে কিভাবে এসেছে সেটা বড় কথা নয়, তারা কেন এসেছেন সেটা বড় কথা। তুরস্কের প্রতিনিধি দল বিমানবন্দর থেকে On-arrival Visa নিয়ে এসেছেন সেটা তো তাদের কোন ক্রটি নয়, তারা নিয়ম মেনেই এসেছেন। তারা যেটা পর্যবেক্ষণ করেছেন বা যা দেখেছেন তার ভিত্তিতে যদি তারা বলেন, ‘হ্যাঁ সবকিছু ঠিকভাবে হচ্ছে' তাহলে সেটা তো ভালো কথা। এতে ভয় পাওয়ার তো কিছু নেই। তবে তারা ভয় পাচ্ছে এই জন্যে যে, ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক এবং ব্রাসেলসের আইনজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দীন স্কাইপে যে কথাগুলো বলেছেন তাতে সবকিছু ফাঁস হয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে আমি আরো বলতে চাই, ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিম স্কাইপে যে কথাগুলো বললেন সে ভাষাগুলো আপনারা একটু খেয়াল করে দেখুন তারা তো আসলে কথাই বলতে পারেন না, শুদ্ধ করে বাংলা বলতে পারেন না, বরিশালের দেহাতি বাংলয় তারা হা-হা, হি-হি করে হাসছেন। এই তো তাদের যোগ্যতা। এদের লজ্জা করা উচিত। তুরস্কের প্রতিনিধিদল যদি বিষয়টি দেখে থাকে তাহলে তারা বুঝে যাবেন, আসলে এখানে কি হচ্ছে! আজকে আমি রেডিও তেহরানের মাধ্যমে দেশের তরুণ সমাজকে বলতে চাই- যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে তোমাদেরকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধের বিচার ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই বিএনপি করবে বলে আমি আশা করি। কেননা বিএনপি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের দল। আর তার নেতা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতা। তিনি নয় মাস যুদ্ধ করেছেন। আমি তরুণ সমাজকে অনুরোধ করব তারা যেন এ ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে।

রেডিও তেহরান : এ বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ আছে বলে কোনো কোনো মহল থেকে বলা হয়। অবশ্য, প্রকাশ্য কোনো বক্তব্য নেই। এখন তুর্কি প্রতিনিধিদলের সফরকে কি এ চাপের অংশ মনে করা যায়?

শফিক রেহমান : দেখুন, যখন ১/১১ হয়েছিল তখন আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক চাপ পছন্দ করেছিল। যখন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তখন বৃটেনসহ বহু দেশের এমনকি আমেরিকারও সাহায্য ছাড়া আমরা হয়তো স্বাধীনতা লাভ করতে পারতাম না। কেননা তারা আমাদের স্বাধীনতার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক প্রভাব সৃষ্টি করেছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সাধারণত সহযোগিতা ছাড়া সফল হয় না। আয়ারল্যান্ডেও এ ধরনের আন্দোলন সফল হয়নি। সুতরাং আন্তর্জাতিক একটা প্রভাব থাকবেই কারণ বিশ্ব এখন খুব ছোট হয়ে গেছে। সব খবর সবাই পড়ছে, জানছে। সেক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশও জানছে আমাদের দেশে কি হচ্ছে। এর মধ্যে তো দোষের কিছু নেই বরং এটা ভালো একটা দিক। আর এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ইরান হোক, বৃটেন হোক, আমেরিকা হোক বা ইউরোপের অন্য কোনো দেশ হোক তারা তো কাজ করতে চায়। প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী এখন আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করছে। যদি ওইসব দেশ থেকে কোনো প্রতিনিধিদল এসে বাংলাদেশে কি হচ্ছে জানতে চায় সেটাকে তো আমাদের আনন্দের সঙ্গে বরণ করে নেয়া উচিত। তাদেরকে বলতে হবে, দেখো আমরা কি করছি এবং তোমরা দেখো এর মধ্যে কোনো ভুল-ক্রটি পাও কিনা। যদি ভুল-ক্রটি থেকে থাকে এবং তোমরা দেখে থাক তাহলে সেটা বল আমরা সংশোধন করব। এই মনোভাব আমাদের থাকতে হবে। কিন্তু সেটা আওয়ামী লীগ সরকার বলতে পারবে না। আমি আগেই বলেছি যে, একটা দলীয় প্রক্রিয়ায় এই বিচার চলছে।

রেডিও তেহরান : বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ হওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করেছেন...

শফিক রেহমান : না, তিনি বিচারকের পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। তিনি ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেছেন কিন্তু তিনি হাইকোর্টের চাকরি ঠিকই বজায় রেখেছেন। এই দেশে খুব কম লোকই পদত্যাগ করে। তারা বাড়ি, গাড়ি, এয়ারকন্ডিশন এগুলো চায়। তাদের নিজেদের কোনো যোগ্যতা নেই।

রেডিও তেহরান : জি, আমি সে কথাই বলছিলাম যে, বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ হওয়ার পর তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচারকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাব দেখেন?

শফিক রেহমান : দেখুন, লন্ডনের ইকোনমিস্ট এবং আমেরিকার ফরেন অ্যাফেয়ার্স এ প্রশ্ন তুলেছে যে, এই বিচার প্রক্রিয়া প্রথম থেকে আবার শুরু হওয়া উচিত কারণ এটা স্বচ্ছ হয়নি। প্রথম থেকেই বিচার প্রক্রিয়া গোলমেলে এবং দলীয় স্বার্থপ্রণোদিত ছিল এবং দেশে ও বিদেশে কিছু অজ্ঞলোক দ্বারা এই বিচার কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছিল। সুতরাং যদি আন্তর্জাতিকভাবে এখন দাবি ওঠে আমি সেটাকে শুভ দাবি বলব।

আমার কথা হচ্ছে, দেশকে আর কতকাল বিভক্ত করে রাখা হবে? আমি চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিচার প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হোক যাতে সবাই একাত্ম হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে পারে। আমি এখানে একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটেন এবং জার্মানি পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। আর ১৯৬৬ তে লন্ডনে যখন বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা হচ্ছিল আমি তখন সেখানে ছিলাম। আমি দেখলাম বৃটিশ ও জার্মান দর্শক একাত্ম হয়ে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা উপভোগ করছে। সেখানে কোনো ভেদাভেদ বা গালিগালাজ ছিল না। তো যুদ্ধাপরাধের ইস্যু নিয়ে আমাদের দেশে এই যে বিভাজন প্রক্রিয়া চলছে সেটাই কিন্তু আওয়ামী লীগের একমাত্র সম্বল। কারণ তাদেরতো কোনো অবদান নেই, এইসব নিয়েই তো তাদের বেঁচে থাকতে হবে। তারা দ্বিতীয় আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কার বিরুদ্ধে তারা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে! আমার মনে হচ্ছে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ রকম একটি ঘোষণা দিয়েছে।

রেডিও তেহরান : গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে অঙ্গীকার করেছিল- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। অর্থাৎ এটা ছিল একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা এবং সে অনুযায়ী বিচার চলছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন। এ অভিযোগকে আপনি কিভাবে দেখবেন? এছাড়া, এমন একটি আইনী প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক এজেন্ডায় পরিণত করা কতটা যৌক্তিক?

শফিক রেহমান : না, এটাকে রাজনৈতিক বলাটা ঠিক হবে না। দেখুন, সেই সময় যার মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন মারা গিয়েছিল তাদের মনে কিন্তু একটা ক্ষোভ থাকবেই। কারণ তাদের মনে হবে আমার মা মারা গেলেন, বাবা মারা গেলেন কিন্তু তার কোনো বিচার হলো না। সুতরাং এটাকে দেশের দাবি বলে মনে করতে হবে। তবে দেশের দাবি মেটানোর জন্য দলীয়করণ করাটা উচিত হয়নি বলে আমি মনে করি। সুতরাং আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টোতে যাই থাকুক না কেন, এটা দেশের একটা দাবি ছিল এবং এখনও আছে। আমরা আশা করি বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে দ্রুত এ বিষয়ের বিচার করবে এবং নিত্তি হবে। তা না হলে দেশ চিরকাল বিভক্ত থেকেই যাবে।
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×