somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইসিসির আগে বিসিবির গালি প্রাপ্য!

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"এই রাজীব ভাইয়া, শুনেছো, বাংলাদেশ আর টেস্ট খেলতে পারবে না!"
"হ্যা, আমি শুনেছি যে একটা প্রপোজাল রাখা হয়েছে আইসিসিতে, কিন্তু ওটাতো এখনও পাস হয়নি। ওটা কেবল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর ইন্ডিয়ার দাবী।"
"বাংলাদেশও ওটার পক্ষে ভোট দিবে।"
তারেকের এই কথাটায় আমি এত অবাক হলাম যে কিছুক্ষণ কথাই খুঁজে পেলাম না।
"হ্যালো! হ্যালো! ফোন রেখে দিলা নাকি? হ্যালো! হ্যালো!"
খবরে জানলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মেজরিটি ভোটার এই দাবীর পক্ষে তাঁদের যুক্তি দেখিয়েছেন, "এর ফলে আমাদের আয় বেড়ে যাবে।"
আরেকজনের দাবী আরও মজার। "আগামী দশ বছরেও আমরা আটে উঠবো কিনা জানিনা, কাজেই ওদের দাবীটা মেনে নেয়াই ভাল। বড় ভাইদের বিপক্ষে গেলে যদি ওদের রোষানলে পড়তে হয়! আর তাছাড়া এখনওতো নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে খুব একটা লাভ হচ্ছে না!"
কী হাস্যকর কথা! এরা নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পরিচালনা কমিটির সদস্য!
ভাই, টাকা আয় করার ইচ্ছে থাকলে বাইরে গিয়ে ব্যবসা করেন। পান বিড়ির দোকান দেন, রেস্টুরেন্ট দেন, ব্যাংক দেন, যা খুশি তা করেন; কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডে বসলে শুধু ক্রিকেটের স্বার্থই চিন্তা করতে হবে। এখানে আপনাদের টাকা কামাতে বসানো হয়নি।
যেখানে খোদ বাংলাদেশেরই আগ্রহ নেই, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কেন শুধু শুধু এর বিরোধিতা করতে যাবে?
ক্রিকেটারদের খেলার মান বৃদ্ধি করতে টেস্ট ক্রিকেটের কোনই বিকল্প নেই। উদাহরন দিলেই সবাই বুঝতে পারবেন।
একটা সময়ে আমরা কেনিয়ার সাথে খেলতে গিয়েই হিমশিম খেতাম। ম্যাচের পর ম্যাচ হারতাম। ফাঁকে তালে একটা জিততে পারলেই আনন্দে একেবারে আত্মহারা হয়ে যেতাম! রং খেলাখেলি, রাস্তায় রাস্তায় বিজয় মিছিল! কেনিয়ার সাথে বাংলাদেশের খেলা হলে প্রচার করা হতো "চিরপ্রতিদ্বন্দী" হিসেবে। এর পরেই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পেলাম। কেনিয়া পেল না। এখন কেনিয়ার সাথে আমাদের ক্রিকেটের তুলনা চলে?
জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রেও তাই। মুগাবী সরকারের জন্য তারা টেস্ট ক্রিকেটে অনিয়মিত হতেই তাদের খেলার মানও পড়ে গেল। একটা সময়ে তারা আমাদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে থাকলেও এখন আমাদের কাছে তাদের নিয়মিতই হারতে হয়।
আমরা কী খুব খারাপ খেলি? ঘরের মাঠে আমাদের রেকর্ড কী খুব বেশি খারাপ? ওয়েস্টইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ডকে এসে নাস্তানাবুদ হতে হয় আমাদের কাছে। এবারে শ্রীলংকাকেও পেয়ে বসবো আমরা ইনশাল্লাহ! গত এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে আমরা দুইবারই 'প্রায়' হারিয়েই বসেছিলাম। ইন্ডিয়া আর শ্রীলঙ্কাতো পাত্তাই পায়নি!
আর বাইরের মাঠে আমাদের রেকর্ড নিয়ে কথা বলছে? কারা? ইন্ডিয়া? তাদের নিজেদের রেকর্ডের দিকে একবারও কী খেয়াল করেছে তারা? গত দশ টেস্টের নয়্টাতেই হেরেছে, গত পাঁচ ওয়ানডের চারটাতে। ঘরের মাঠে জিতে জিতে নাম্বার ওয়ান হয়ে বাহাদুরী দেখাতে এসেছে!
বরং আইসিসিতে এই প্রস্তাব দিতে পারতো, যেহেতু বাংলাদেশ এখনও দশ নম্বর দল, কাজেই তার সাথে টেস্ট সিরিজ খেলতে হলে আগামী কয়েকবছর বিশ্বের বড় দলগুলোকে অবশ্যই বাংলাদেশে এসে খেলতে হবে। তাহলে লড়াইটা ব্যালেন্সে আসবে। এবং যখন বাংলাদেশ যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে যাবে, তখন বাইরে সিরিজ খেলতে যাবে। এইরকম অবিরাম হোম সিরিজের আয়োজন করতে থাকলে আমাদের বোর্ড সদস্যদেরও আয় বাড়ত, যেটা তাদের মূল ভাবনা।
একসময়ে আইসিসির লক্ষ্য ছিল ক্রিকেটকে গ্লোবালাইজড করা। এই প্রস্তাব পাশ হলে গ্লোবালাইজড হওয়া বহুদূর, বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের খেলার মানই নেমে যাবে। নেপালের সাথে খেলার জন্য আমাদের সাকিব আল হাসান কতক্ষন প্র্যাকটিস করবেন? কমন সেন্স। এখানেও একটা বাস্তব উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। এই কিছুদিন আগেও অস্ট্রেলিয়া কী দাপটের সাথেই না বিশ্ব শাসন করেছে। নিজেদের ক্রিকেটকে একদম ভিনগ্রহের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। একটা সময়ে তারা উপলব্ধি করলো, তাদের কোনই কম্পিটিশন নেই। ব্যস, এখন তাদের ইন্ডিয়াতে এসে নাকাল হতে হয়। এই অ্যাসেজের আগের দুই দুইটা অ্যাসেজও তাদের হারতে হয়েছিল। এই অস্ট্রেলিয়াকে দেখে কেউ আগে থেকেই হার মেনে বসে না। তারা জানে, এদের হারানো সম্ভব।
কিন্তু এসব বলে কোন লাভ আছে? আমাদের শ্রীনিবাসন দাদার মাথায় এখন ঘুরছে টাকার চিন্তা। তার আরও টাকা চাই! আমাদের বোর্ড পরিচালকদেরও মাথায় ঘুরছে একই চিন্তা। তাদেরও আরও টাকা চাই। বউ আমেরিকায় শপিংয়ে যেতে চায়, ছেলে-মেয়েরা বন্ধু বান্ধবকে দামী দামী রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে চায়, বিএমডব্লিউ ফাইভ সিরিজেও তাদের পেট ভরে না, সেভেন সিরিজ না হলে কী 'কূল' দেখায়? তাদের আরও টাকা চাই! সেই শপিং, ডিনারের বিল, দামী গাড়ি কিনতে হলে হাজার হাজার উঠতি ক্রিকেটারের স্বপ্ন বেঁচতে হবে। ক্ষতি কী?
"হ্যালো! রাজীব ভাইয়া, হ্যালো! আছো? নাকি লাইনটা কেটে গেল?"
"আছি। মনে মনে গালাগালি করছিলাম বোর্ড মেম্বারদের। মানুষ এতোটা মেরুদন্ডহীন কিভাবে হয়?"
"মনে মনে কেন? জোরে জোরেই দাওনা। আমরাও সবাই মিলে একসাথে ওদের গালি দেই!"
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×