somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সেকালের মেধাবী ছাত্রীরা!!!!

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০০ সালের কথা।মাত্র অনার্স এ ভর্তি হয়েছি।পড়াশোনা এক বারেই ভালো লাগে না।আড্ডাটাই বেশী ভালো লাগে।এইটা নিয়ে বাবা খুব রাগ করতেন।বলতেন আমার পিছনে শুধু শুধু উনি টাকা নষ্ট করছেন।এসব কথা শুনলে তখন এমন রাগ লাগতো।এক সময় আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বাবার উপর রাগ করে ঠিক করলাম বাবার উপর আর নির্ভরশীল নয়।টিউশনি করবো।নিজের রোজগার নিজে করবো।বাবা আর কিছু বলতে পারবে না।কিন্তু কোথায় পাবো টিউশনি?কে দিবে?সেই বিপদের সময় সেই যে কিছু টিউশনি পেয়ে ছিলাম তাদের আমি সারাজীবনেও মনে হয় ভুলতে পারবো না।সবাই ছাত্রী।তাদেরই কিছু মজার ঘটনা নিয়েই আজকের লেখাটা।
বুশরা হোসেন বুশরা।ওকে পেয়ে ছিলাম ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারীতে।আমার টিউশনি জীবনের ২য় ছাত্রী।তখন সে মতিঝিল আইডিয়েল স্কুলে ক্লাস টু তে পড়ে।যেদিন প্রথম ওর বাসায় যাই নীল একটা ফ্রক পরে ছিলো।আমার কাছে মনে হয়েছিলো ছোট্র একটা নীল পরী।চোখে কাজল দেয়া ছিলো।ফর্সা গায়ের রং।সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিলো ওর বাবাকে দেখে কেউ বলবে না উনি ওর বাবা। :) ওর বাবা ব্যায়াম বীর।এক সময় ছিলেন বডী বিল্ডিংয়ে পুরষ্কার প্রাপ্ত।ভদ্রলোকের শরীরের দিকে খুব মনোযোগ থাকায় বয়স একবারে কম মনে হতো।সন্ধ্যায় বুশরাকে পড়াতাম।বুশরা ছিলো ওর মা বাবার বড় মেয়ে।তাই মা বাবার মার কম খেয়েছে।খুবই আদুরে ছিলো বুশরা।আমার সামনে পড়তে বসতো একটা গেঞ্জি আর হাফ পেন্ট পরে।পড়ার সময় ওর কাজ ছিলো গেঞ্জিটাকে টেনে হাটু পর্যন্ত লম্বা করা।এভাবে টেনে টেনে ও সব গেঞ্জি গুলোকে লম্বা করেছে!!!বুশরা পড়া শোনায় মাঝারী মানের।আমি যেদিন প্রথম মারলাম সেদিন সে এমন কান্না করলো!!তার আম্মুকে ডেকে আনলো কেন আমি ওকে মেরছি।ওর আম্মু হাসে আর ওর কান্না ততো বাড়ে।আমি হাসবো না কি করব বুঝতে পারছিলাম না।বুশরার রাগটা ছিলো কম।একটূ বোকা হওয়াতে সহযে সব কিছু ভুলিয়ে দেয়া যেতো।
তার মা বাবা দুই জনেই ছিলেন মাষ্টার্স পাশ করা।বাবা ব্যবসায়ী আর মা চাকরীজীবি।দুই জনেই সারা দিন বাসায় থাকতেন না।সাকালে বুশরার আম্মু বুশরা এলে তাকে ঘরে রেখে বাহিরে তালা দিয়ে অফিসে যেতেন।ফলে বুশরা সকালে স্কুল করে এসে দুপুরে পুরাই একা থাকতো আর পড়াতে ফাকি দিতো।১ম সাময়িক রেজাল্ট একটু খারাপ হলে তখন ওর মা বাবা আমাকে ঘরের চাবি দিয়ে দিলেন।বল্লেন দুপুরে আমি যেনো এসে পড়িয়ে যাই।আমার প্রতি তাদের খুব বেশী বিশ্বাস ছিলো।সেই থেকে বুশরাকে আমি দুপুরে পড়িয়ে যেতাম।যাবার সময় আবার তালা দিয়ে যেতাম।যদিও নিরাপত্তায় কোন সমস্যাই ছিলো না তবুও মাঝে মাঝে ওকে এইভাবে একা রেখে যেতে খুব ভয় হতো।যদি ওর কিছু হয়!!বুশরা ছোট বেলা থেকেই দেখতাম দুনিয়ার সব বিষয়ই তারা জানা চাইই চাই।তার শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন।আমাদের মা বাবারা সব সময় আমাদের এডাল্ট প্রশ্নের ভুল উত্তর দিতেন কিন্তু বুশরার বাবা মা তাকে কখনোই ভুল উত্তর দিতো না।অনেক ধৈর্য্য ধরে তার প্রশ্নের উত্তর দিতেন।
এক দিনের মজার ঘটনা।তাদের বাসায় সেদিন ছিলো জনকন্ঠ পত্রিকা।সেখানে গর্ভবস্থায় বিভিন্ন জটিলতা ও বাচ্চা জন্ম নেয়ার সময়ের ছবি নিয়ে কলাম ছিলো।বুশরা তার বাবাকে সেগুলো পড়েই প্রশ্ন করা শুরু করে।বুশরার বাবা তাকে সুন্দর ভাবে সত্যিকার উত্তর দিয়ে তাকে সব বুঝিয়ে বলেন।তখন সে ক্লাস টুতেই পড়তো।যা হোক আমি গেলাম দুপুরে তাকে পড়াতে।তাকে পড়া দিয়ে আমি পত্রিকা পড়ছিলাম।পড়তে পড়তে যখন পত্রিকার ওই পেজে আসলাম তখন বুশরা হঠাত বল্ল স্যার আপনি কি জানেন আমরা কিভাবে হয়েছি।আমিতো একটু বিব্রত!!আমি তাকে আমাদের মা বাবার মতোই ভুল একটা উত্তর দিলাম।সে তখন বল্ল আমি ভুল বলেছি।আসলে আমরা এভাবে এসেছি ব্লা ব্লা ব্লা।আমিতো ওর উত্তর শুনে থ।এইটুকু বাচ্চাকে এই সব কে বল্লো।তাকে জিজ্ঞেস করাতে সে বল্লো তার বাবাই তাকে সব বলেছে।তারপর পত্রিকাটি নিয়ে ছবি গুলো দেখিয়ে সে আমকে বুঝানো শুরু করলো আসলে সে কি কি বুঝেছে।আমি মুচকি হেসে বল্লাম আমি তো কিছুই জানি না।এতে সে আরো জোরালো ভাবে আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করলো।আহারে ওর সরলতা!!!কোন কিছু নিয়ে ও কখনো লুকানোর চেষ্টা করতো না।ও কতো যে এডাল্ট প্রশ্ন করতো।সব উত্তর ওর জানা চাইই চাই।ওর এই সব প্রশ্ন বুঝার বয়স ছিলো না,অনুভুতিও ছিলো না কিন্তু ও সহজভাবে সব জানার চেষ্টা করতো।ভুল উত্তর দিলে বা উত্তর লুকাতে চেষ্টা করলে এমনভাবে ও হাসি দিতো যেনো ও সব জানে।
বুশরার মা বাবা দুইজনেই ব্যাস্ত থাকায় ওর ছোট্ট মনের গল্পগুলো শোনার কেউ ছিলো না।তাই ওর সব গল্প সব জমে থাকতো আমার জন্য।আমিই ছিলাম ওর গল্পের শ্রোতা।বাসায় গেলেই ও পাশে বসে পড়তো।আর শুরু করতো ওর জমানো কথা।আজ সে স্কুলে কি করেছে?কোন বান্ধবীর সাথে কি হলো?ওর গল্প আর শেষ হতে চাইতো না।দুনিয়ার জটিলতা তাকে তখনো স্পর্শ করে নাই।
আমার প্রধান কাজ ছিলো তার পড়ার যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেটা দেখা।পর পর কয়েক দিন পড়া না পারায় একদিন প্রচন্ড মার দিলাম।সেদিন ওর আমার উপর সেকি রাগ আর অভিমান।ওর ছোট্ট শরীরে সেদিন বেতের দাগ পরে গিয়ে ছিলো।কয়েক জায়গা কেটে গিয়েছিলো।মারার সময় বিষয়টা খেয়াল করি নাই।কিন্তু মারা শেষে ওর ছোট্ট শরীরটা দেখার পরে কোনভাবে ওর সামনে নিজেকে সামাল দিয়েছিলাম।বাসায় এসে রাতে নিজের কান্নায় বালিশ ভিজিয়ে ছিলাম।খুব মনে হতো যদি পারতাম বুশরাকে দুনিয়ার সব চাইতে সুন্দর পুতুলটা কিনে দিতাম!!
একদিন ওর মা বাবা আমাকে চাইনিজ রেষ্টূরেন্ট এ নিয়ে গেলেন খাওয়ানোর জন্য।ওর মা বাবা এক রিকশাতে ,আমি আর বুশরা আরেক রিকশা তে।ওতো রিকশাতে বসেই শুরু করে দিলো ওর গল্প আর আমি ওর গায়ের উপর দিয়ে রিকশার আরেক পাশ ধরে রেখে ছিলাম পাছে না ও রিকশা থেকে ছিটকে পরে।কতটুকু আদরও আমার পেয়েছিলো ও হয়তো তা ভুলেই গেছে।
আরেক দিনের মজার ঘটনা।ও তখন ক্লাস সেভেনে পড়তো।ওদের গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইতে মেয়েলী বিষয় নিয়ে সামান্য পাচ ছয় লাইনের লিখা ছিলো।আমি হয়তো কোন দিনই বিষয়টা জানতাম না।ওইদিন ওদের ক্লাস ক্যাপ্টেন ক্লাসে এসে নাকি বল্ল এই সবাই গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ের ৪১ পৃষ্ঠা খুল। সবাই খুল্ল।আর লাইন কয়টা পড়লো।সেটা নিয়ে পুরো ক্লাসের সবাই হাস হাসি করেছে।আমি বুশরার সরলতা দেখে মনে মনে হাসতাম।
ওর সামাজিক জ্ঞানটা খুব ভালো।সহযে সবার সাথে সে মিশতে পারে।অহংকারটা খুব কম।কেউ খারাপ ব্যাবহার করলে পাল্টা খারাপ ব্যাবহার সে করতে পারে না।বাসায় ওর চাইতে ছোটরা আসলে ও ওর সব খেলার সামগ্রী ওদের দিয়ে দিতো।কখনোই কাউকে সে হিংসা করতো না আজো করে না।বাবা মা দুই জনেই ইনকাম করাতে অভাব দেখে নাই কোন দিন।তাই টাকা পয়সা কেউ চাইলে জমানো টাকাই সে দিয়ে দিতো।ফোনে নিয়মিত কথা বলি কিন্তু বাসায় আরা যাওয়া হয়ে উঠে না।
অনেক দিন পরে বুশরাকে ২০০৯ সালে দেখতে গেলাম।সামনেই আর আসে না।ওর মা রীতিমতো তাকে ধাক্কিয়ে আমার সামনে হাজির করলো।ছোট্র পরীটা দেখি বড় পরীতে পরিণত হয়ে গেছে।কি সুন্দর গোছানো কথা।ওর আম্মু জোর করে বসালো।আর উঠতে দিলো না।ওমা!!একি অবস্থা আমার নিজের!!আমার ছাত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি নিজেই কথা বলতে পারছি না।একেই কি আমি ছোট বেলায় পড়াতাম।এর সাথেই কি ফোনে কথা বলতাম?ওই ছোট বুশরাই এখন অনার্স এ উঠে গেছে।এতো সুন্দর হইছে!!কিন্তু বোকাই রয়ে গেলো।এখন আর ওদের বাসায় আগের মতো যাওয়া হয় না।কোন দিন যে বিয়েই হয়ে যাই আমার এই ছোট্র পরীটার।সেদিন থেকে হয়তো আর দেখবো না।

নুসরাত চৌধুরী প্রিয়া।আমার প্রথম ছাত্রী।২০০০ সালে ওকে পেয়েছিলাম মাত্র ৪ বছর বয়সে।তখন মতিঝিলের আরামবাগের রয়াল একাডেমিতে সে মাত্র নার্সারীতে পড়তো।আমার প্রথম ছাত্রী।খুবই সরল প্রকৃতির।এতো সুন্দর ছিলো আমার কাছে মনে হতো ও একটা পুতুল।গায়ের রং ফর্সা।ওকে যেদিন প্রথম পড়ালাম তখনই বুঝেছিলাম ও খুব ঠান্ডা প্রকৃতির আর ভালো ছাত্রী।যা বলতাম ওই বয়সেই সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো।
ও একটু ব্যাতিক্রম ছিলো।ও বসতো টেবিলের উপর আর আমি বসতাম চেয়ারে।ওকে পড়াতাম বিকেল বেলায়।সব সময় আমি গেলে ও ঘুম থেকে উঠতো।মুখ ধুয়ে কোন মতে ঘুম ঘুম চোখে সে আসতো।কখনো সে আমার কোলেই বসতো।আমি খাতা দেখার সময় অনেক সময় সে ঘুমিয়ে পড়তো কোলের মধ্যেই।অল্প মারলে সে সহ্য করতো কিন্তু বেশী মারলে যেটা তার সহ্যের বাহিরে তখন সে এমন ক্ষেপে যেতো যে আমাকেই মারার ভান করতো।আমি হেসে দিলেও সে আমাকে মারার ভান করতো।কেজিতে পড়ারই সময় সে ভিকারুন্নিসানুন স্কুলের ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হয়।অবশেষে সে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলে চান্স পায়।।এর ভিতরে স্কুলেও সে ভালোই করতো।ক্লাস ফাইভে বৃত্তিও পেলো।দেখতে দেখতে কেভাবে যেনো ও বড় হয়ে গেলো।প্রিয়ার বড় গুণ সে কখনোই মিথ্যা কথা বলতে পারতো না।পড়া ছাড়া দুনিয়ার কোন বিষয় নিয়ে ওর কোন আগ্রহ কখনোই ছিলো না আজো নেই।ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় ও সব বই কিনলো।সব বই ওর পড়ার টেবিলে থাকলেও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইটা নেই।আমি তো বুশরারা কাছ থেকে আগেই জানি বইটার সমস্যাটা।ওকে জিজ্ঞেস করলাম ওই বইটা কই?ও বলে সেটা আম্মুর রুমে।আমি বলি যাও ওই বইটা নিয়ে আসো।ওমনি তার মুখ লাল হয়ে গেলো।কোন ভাবেই সে আনবে না।আমি তো ওর অবস্থা দেখে মনে মনে হাসি।বুঝতে পারি মনে হয় ক্লাসের মেয়েরা আগেই মজা করে ফেলেছে।চোরের মনে পুলিশ পুলিশ।
ছাত্রীদের ভিতরে প্রিয়া বাধ্যগত বেশী ছিলো।এইতো সেদিনের কথা।মেয়েদের এখন নখ বড় রাখা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।সেও নখ বড় রেখেছে।তার মা বাবা অনেক বুঝিয়েও কাটাতে পারছেনা।আমি এমনিতেই সেদিন ওদের বাসায় গিয়েছিলাম ওকে দেখার জন্য।ওর মা আমাকে ওর নখের ব্যাপারে বিচার দিলো।কিন্তু আঙ্গুলে ওর শখের নখগুলো আমার কাছে ভালোই লাগছিলো কিন্তু ওর আম্মু পছন্দ করছে না দেখে দিলাম বকা।কাটতে বল্লাম।ঠিকই সে সব নখ কেটে ফেল্লো।এই বছর সে ইন্টার পরীক্ষার্থী।বাহিরের জটিলতা এখনো সে বুঝে নাই।জানি না দুনিয়াতে সে কিভাবে টিকে থাকবে।মাঝে মাঝে সিধা ছাত্রীটিকে দেখতে যাই।পড়ার খোজ নেই।এভাবেই হয়তো সে এক দিন এক বারে বড় হয়ে যাবে।জানি না বড় হলে সে কেমন হবে?এই রকমই রবে না পরিবর্তন হয়ে যায়!!!খুব জানতে ইচ্ছে করে।
সাবরীনা ইসরাত সারা।ওকেও পড়ানো শুরু করি ২০০১ সালের মার্চে।ও বুশরার সাথে মতিঝিল আইডিয়েল স্কুলে একই শেনীতে পড়তো।বুশরারা সাথে একসাথেই খেলার সাথী।সারাও ছিলো হলুদাভ সাদা আর সবার চাইতে লম্বা।দৌড়ে ওর সাথে ওর কোন বান্ধবীরা পারতো না।পড়তে বসতো ফ্রক পরে।কখনো গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরতো।আমার ছাত্রীদের ভিতরে প্রিয়া না সারা কে যে বেশী মেধাবী আমি আজো বুঝি না।তবে সারা কে পড়াতে সবচেয়ে কম কষ্ট হয়েছে।আর ওকে দিতাম সব চাইতে বড় বড় নোট।কিভাবে যে ও এতো বড় বড় নোট গুলো মুখস্ত করে ফেলতো জানি না।এমন বড় বড় রচনা ওকে শিখাতাম যেটা ওর বয়সে আমি নিজে কখনোই পারতাম না।কিন্তু ওর কোন কষ্টই হতো না।কিভাবে যেনো ও মনে রাখতে পারতো।সারা ছিলো আমার ছাত্রীদের ভিতরে সব চাইতে বুদ্ধিমান আর রাগী।খুব রাগ ছিলো ওর।বেশী রাগলে কেদেই ফেলতো।তবে ওর হাসিটা ছিলো সব চাইতে সুন্দর।এতো সুন্দর করে ও হাসতে পারতো!!হাসলে মুখে সুন্দর একটা টোল পড়তো।আমার এখনো ওর ছোট বেলার হাসি মুখটা খুব ভাসে।সারা কথা বলতো খুব দ্রুত।ও প্রশ্ন করতো খুব কম।এমন কি পড়া বুঝানোও লাগতো না।এমনি এমনি সে কিভাবে যেনো নিজে পড়েই সব বুঝতো।পড়া দিলেই ওর পড়া শেষ।সিলেবাস শেষ করতে ১০ দিনই যথেষ্ট ছিলো ওর জন্য।পড়ার বাহিরে অন্য বিষয় নিয়েও তার কোন প্রশ্ন থাকতো না।হাসহাসিও তেমন করতো না।
কোন বিষয় একেবারেই না বুঝলে কেবল সে প্রশ্ন করতো।ওর আম্মা সব সময় চাইতো ওকে যেনো আমি খালি শাষণ আর শাষণ করি।ক্লাস পরীক্ষায় ১০ এ ৮ পেলেও সেটা ওর মায়ের নিকট খারাপ রেজাল্ট।কিন্তু এতো সামান্য রেজাল্ট খারাপের কারণে তো কাউকে মারা যায় না।ও এমনিতেই কথা শুনতো।যতো বাড়ীর কাজ দিতাম সবই সে করতো।তাই ওকে শাষণ আর করবো কি?তাই ১০ এ ৮ পেলে বকা দিয়েই শেষ করতাম।কদাচিত স্কেল দিয়ে অল্প মারতাম।ওর যাতে কোন কষ্ট না হয় তাই আমি ওকে সব বিষয়ে নিজ হাতে নোট করে দিতাম।এতো কিছুর পরেও একদিন অংকে ও পরীক্ষায় ৮৮ নাম্বার পেলো।আরেকটা বিষয়েও ও ৯০ এর নিচে পেলো।ওর আম্মু আমাকে অনেক কথা শুনিয়ে দিলো।আমিই নাকি ওকে মাথায় তুলে রেখেছি।মার না দেয়ার কারণেই নাকি স্কুলের পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে।কিন্তু রেজাল্টটা আমার কাছে এমন কোন খারাপ ছিল না।কিন্তু ওর আম্মু কথাগুলো আমার মনের ভিতরটা এলোমেলো করে দিলো।তাই মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বেত হাতে নিলাম।প্রথম যেদিন ওকে বেত দিয়ে মারি সেদিনটা আজো মনে আছে।ওকে বেত দিয়ে দুহাতে প্রচন্ড জোরে একের পর এক মেরেছি।ব্যাথায় ওর মুখটা নীল হয়ে যাচ্ছিলো।আমার ভিতরটা ফেটে যাচ্ছিলো।উফ!!!এতো ব্যাথা ছোট মেয়েটা কিভাবে সহ্য করে যাচ্ছিলো আমি জানি না।হয়তো এর চাইতে বেশী মার ও খেয়েছে।কিন্তু আমি ওর আম্মুকে শুনিয়ে বকা দিয়ে যাচ্ছিলাম আর মারছিলাম।ও শুধু মার খেয়েই গেলো।নীরবে চোখের পানি ফেল্লো।একটুও চিতকার করলো না।বিষয়টা আমার জন্য এতো কষ্টের ছিলো যে সেটা আজো মনের ভিতরে গেথে আছে।সারাটা দিন আমার মন খারাপ হয়ে ছিলো।তারপর থেকে ওকে পড়ানোর শেষ দিন পর্যন্ত ওকে অনেক মেরেছি।সামান্য কারণেও মেরেছি তাও টিউশনিটা আমার টিকে নাই।
ওদের বাসায় দীর্ঘ সময় পর ২০১০ সালে গেলাম।চার ঘন্টা ছিলাম।সারা চার ঘন্টাই আমার পাশে বসে ছিলো।আমি কোন ভাবেই চাচ্ছিলাম না সে উঠে যাক।এতো সুন্দর হয়ে গেছে সারা।তাকাতেই কেমন জানি লজ্জা লাগছিলো।কিভাবে যেনো দেখতে দেখতে আমার ছোট্ট ছাত্রী সারাই আজ এত্তো বড় হয়ে গেছে!!চোখে বুদ্ধির ঝিলিক দিচ্ছিলো।ওকে মন ভরে দেখলাম।আমি গল্প করছিলাম আর সে শুনছিলো।আজো সে নীরবই রয়ে গেছে। সারাও বড় হয়ে গেলো।ঢাবিতে চান্স পেলো।ফেসবুকে ওর আজব আজব সব কমেন্টস দেখি আর ভাবি এটাই কি সেই ছোট্র সারা!!!সারার ছোট বোন সামিকেও আমি একই সময় পেয়েছিলাম একসাথেই পড়িয়েছিলাম কিন্তু আজো গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরা ছোট্ট সারার চঞ্চল হাসি মুখটাই চোখের সামনে বেশী ভাসে।কেনো যে সারাকে শুধু শুধু অল্প কারণে শেষ মাসটা মেরেছি!!টিঊশনিটা তো আমার মারার পরেও থাকে নাই।ওর মার খাওয়া মুখের নীরব চাহনি আমাকে সারাটা জীবন শুধু কষ্টই দিয়ে যাবে।সারার হাত দুটোকে যদি কোন দিন আদর করে দিতে পারতাম!!!
আমার ছাত্রীদেরকে(বুশরা সারা এবং সামি) তাদের ছোটবেলায় আমি নিয়ে গিয়েছিলাম বাণিজ্য মেলায়।তাদের তিন জনকে সামনে হাটতে দিয়ে পিছনে একটু দূরে আমি থাকতাম আর ওদের দুষ্টামি দেখতাম।অভিভাবক ছাড়া তারা যে আসলে চান্স পাইলে কেমন দুষ্টামি করে সেটা দেখাই ছিলো আমার উদ্দেশ্য।তিন জনে গলায় গলায় হাত দিয়ে যে কতো মজা করলো সেদিন।অকারণে নিজেদের ভিতেরে কানের মধ্য ফিস ফিস করে কথা বলা আর হাসাহাসি করা।আমি হাসার কোন কারণই দেখতাম না কিন্তু তাদের আনন্দ দেখে আমার মনের ভিতরে আনন্দ হতো।সামান্য চকলেট আর আইসক্রিমেই তাদের চাহিদা শেষ।ঈদের দিন পাচ টাকা দিলেই তাদের আনন্দ দেখে কে?আমি বাসায় তাদের জন্য অপেক্ষা করতাম।তারা বান্ধবীসহ একের পর এক আসতো।সালাম করতো।তাদের সবাই কে পাচ টাকা করে দিতাম।তারা আনন্দ করতে করতে যেতো।আরেক দিন তাদের নিয়ে গিয়ে ছিলাম কম্পিউটার মেলায়।বড় বড় কম্পিউটার আর ল্যাপটপ দেখে তাদের কি বিস্ময়!!এখন সারা,বুশরা,প্রিয়া সবার হাতের কাছেই কম্পিউটার,ল্যাপটপ।।এখন সবাই বড়।ফেসবুক আর ফোনেই নিয়মিত যোগাযোগ হয়।মাঝে মাঝে তাদের দেখার যে কি ইচ্ছে হয়!!তারাও সব সময় বলে স্যার বাসায় আইসেন কিন্তু বাসায় যেতেই লজ্জা লাগে।আমি তাদের কখনোই ভুলতে পারবো না।তাদের কেনো এত আপন মনে হয় আমি জানি না।তারা এত বড় হয়ে গেছে কিন্তু আমার কাছে তারা আজো বড় হতে পারলো না।ছোটই রয়ে গেলো।তারাই ছিলো আমার বিপদের দিনের প্রথম টিউশনি গুলো।তারা অনেক বড় হোক এই দোয়া করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:১৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×