somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরাপদ ডেটিং স্পট

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন আকাশ মেঘলা ছিল। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টিতে রাস্তা কর্দমাক্ত। তাই খালি পায়ে ছাতা নিয়ে হাটছিলাম।
খোলা মাঠের মধ্য দিয়ে রাস্তা চলে গিয়েছে। রাস্তায় দুই-একজন পথচারি করছিল। একটু এগোতেই দেখতে পেলাম একটি মেয়ে হেটে আসছে।

হঠাৎ দেখি মেয়েটি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। লজ্জার হাত থেকে বাচার জন্য বৃথা চেষ্টা করলো। কিন্তু দাড়াতে পারলো না।

কাছে যেতেই দেখতে পেলাম মেয়েটি পাশের গ্রামের চেয়ারম্যানের মেয়ে। নাম কণা। সে ক্লাস নাইনে পড়ে।

আমি সাহায্য করার জন্য হাত ধরে ওঠাতে চাইলাম। কিন্তু কণা দাড়াতে পারলো না। মনে হলো পা মচকে গেছে।

কোনো উপায়ান্তর না দেখে তাকে কোলে ওঠাতে হলো। এই প্রথম কোনো যুবতী ললনার স্পর্শ পেলাম।

কণাকে বাসায় পৌছে দিলাম এবং ওর আম্মুর ধন্যবাদ নিয়ে চলে এলাম।

এরপর তিন-চার দিন কণার দেখা পেলাম না। হৃদয়ে শূন্যতা অনুভব করলাম এই কয়দিন।

একদিন সন্ধ্যায় কণার বাসায় গিয়ে জানতে পারলাম, সে কাল থেকে স্কুলে যাবে। এ কথা শোনার পর মনে শান্তি পেলাম।

মনে মনে চিন্তা করলাম, কণার জন্য আমার এমন লাগছে কেন! তবে কি আমি কণার প্রেমে পড়েছি? তাই পরদিন কণা যখন স্কুলে এলো তখন আমার ভালো লাগার কথা কণাকে জানালাম। কিন্তু কোনো উত্তর পেলাম না।

পরদিন স্কুলে এসে চিরকুটের মাধ্যমে জানতে পারলাম, সেও আমাকে ভালোবাসে।

এটাই আমার প্রথম প্রেম।



বেশ কয়েক মাস স্কুলেই দেখা হতো, কথাবার্তা হতো।

এবার আমরা ডেটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম। নিরাপদ ভেবে যমুনার পাড় ডেটিংয়ের স্থান হিসেবে ঠিক করলাম।

নির্ধারিত দিনে আমরা ডেটিংয়ে গেলাম।

ওই দিন কণা আমার কাছে একটি গিফট চাইলো।

আমি না শুনেই দিতে রাজি হলাম।

কণার কথা শুনে তো আমি অবাক! কারণ সে আমার কাছে একটি চুমু উপহার চায়।

গিফট দিতে রাজি হয়েছিলাম। তাই চুমু দেয়ার জন্য জায়গা খুজছিলাম।

নদীর ঘাটে ফাকা একটা নৌকা বাধা ছিল। ওই নৌকাতে দুজনে উঠলাম। আশপাশে লোকজন না থাকায় আমরা দুজন সামনাসামনি দাড়ালাম। দুজনের মুখ খুব নিকটবর্তী। দুজনের গরম নিঃশ্বাস একে অপরে অনুভব করছিলাম। কেমন যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতিতে আমার চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

চোখ খুলতেই দেখি কণার আব্বু আমার সামনে দাড়ানো। কোথায় যেন কাজে গিয়েছিলেন। নৌকা থেকে এই মাত্র নামলেন। আর নামতেই আমাদের দেখে ফেলেছেন।

আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কোনোদিকে না তাকিয়ে দিলাম এক দৌড়।

ভয়ে কয়েকদিন বাড়িতে যাইনি।

পরে আমি আর কখনো কণার সঙ্গে মিশতে পারিনি। কারণ ওই ঘটনার পর থেকে কণা আমাকে এড়িয়ে চলে। হয়তো বা মনে কষ্ট পেয়েছে অথবা তার আব্বুর চাপে।



কয়েক মাস পর আমি এসএসসি পরীক্ষা দিলাম। ভালো জিপিএ নিয়ে পাসও করলাম।

পরে ভর্তি হলাম পলিটেকনিকে।

পলিটেকনিকে যখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন আমার এক বন্ধুর বোনের সঙ্গে পরিচয় হলো এভাবে :

আমি আমার বন্ধুর কাছে মেয়ে নাম দিয়ে একটা এসএমএস পাঠিয়েছিলাম। বন্ধু আমাকে ফোন দিতো। আমি মেয়েদের মতো কথা বলতাম। আমার সঠিক তথ্য জানার জন্য বন্ধু তার বোনকে দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলাতো।

এভাবে ওর সঙ্গে পরিচয়। নাম তমা। এসএসসি পরীক্ষার্থী।

তমা ও আমি গোপনে কথা বলতাম।

বেশ কিছুদিন এভাবে কথা বলার পর আমরা দেখা করলাম। দেখে একে অপরের পছন্দ হলো।

এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর আমরা একে অপরের প্রেমে পড়লাম।

এক বছর ফোনে কথা ও অল্প সময়ের জন্য দেখা হতো।

এভাবে আমাদের প্রেম চলতো।

একদিন আমরা দুজন ডেটিংয়ে গেলাম ওয়ান্ডার ল্যান্ড-এ।

দুজনে পাশাপাশি বসে মনের না বলা কথাগুলো বলছিলাম। কথায় কথায় যে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে তা বুঝতেই পারিনি।

হঠাৎ কে যেন আমার কাধে হাত রাখলো।

ভাবলাম তমা। কিন্তু না। তমা আমার পাশে বসা।

একটু ভয় পেলাম। পেছন ফিরেই দেখি তমার চাচাতো ভাই মাসুদ।

তমাকে মাসুদ পছন্দ করে এবং ভালোবাসে। কিন্তু তমা তাকে ভালোবাসে না। কারণ মাসুদ, গু-া ও নেশাখোর।

তারপরের ঘটনা আমার মনে নেই। কারণ সাত দিন হসপিটালে ছিলাম।

মোটামুটি সুস্থ হওয়ার পর তমার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে ভুলে যাওয়ার পরামর্শ পেয়েছি এবং তার ফোন এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে।

পলিটেকনিকে বাকি সময় নিঃস্ব ও একাকী কাটালাম।



ডিপ্লোমা শেষ করার পর মহা যুদ্ধ করে ঢাকা প্রকৌশল ইউনিভার্সিটি (ডুয়েট)-এ ভর্তি হলাম। এখানেও ডেটিংয়ের ভালো কোনো জায়গা নেই। ক্যাম্পাস ছোট হওয়ায় সুন্দর জায়গা থাকলেও নিরাপদে কোথাও ডেটিং করা যেতো না।

এভাবে মনের মধ্যে একটা ব্যথা রয়েই গেল যে, কোথাও সফল ভাবে ডেটিং করতে পারলাম না।



অবশেষে একটা নিরাপদ জায়গা খুজে পেলাম। এখানেই আমি এখন আমার প্রিয়াকে নিয়ে ডেটিং, গল্প করি, ঘুরে বেড়াই।

কেউ দেখেও না, কিছু বলেও না। এমনকি এখানে অত্যন্ত অন্তরঙ্গ ভাবে মেলামেশাতেও কোনো বাধা নেই।

আপনারা কি জানতে চান, জায়গাটা কোথায়?

জায়গাটি হচ্ছে মনের বাগান।

এখন থেকে মনের বাগানই আমার কাছে নিরাপদ ডেটিং স্পট।

আমার মতো ভুক্তভোগীদের বলছি, মনের বাগানে ডেট করুন, আপনার ডেটিং সুন্দর ও সার্থক করুন।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×