প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশ গড়তে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
Published : 29 Jan 2014, 07:08 PM
বুধবার উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি জিয়াউর রহমানকেও স্মরণ করেন।
বিএনপিবিহীন দশম সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হওয়া জাতীয় পার্টি দলীয় চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের স্ত্রী রওশনকে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত করেছে।
দশম সংসদে সামনের সারিতে রওশনের পাশের আসনেই বসেন এরশাদ। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছিলেন অধিবেশনে।
নতুন স্পিকারকে অভিনন্দন জানাতে দাঁড়িয়ে রওশন বলেস, “দেশ গড়ার জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য, জনগণের মঙ্গলের জন্য আসুন একসাথে-একযোগে কাজ করে যাই।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখায় ‘প্রচেষ্টার’ কারণে জাতীয় পার্টি সংসদে আসতে পেরেছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
নবম সংসদে খালেদা জিয়ার আসন দশম সংসদে নেয়া রওশন বিএনপিকে নির্বাচনে না পেয়ে হতাশাও প্রকাশ করেন।
“বিএনপি নির্বাচনে এলে ভালো হত। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।”
সেই সঙ্গে নবম সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের ভূমিকার সমালোচনাও করেন নতুন বিরোধীদলীয় নেতা।
“দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করবে এটা সবারই প্রত্যাশা। কিন্তু যে ধারা বিরাজ করছিল, তা গণতন্ত্রের সহায়ক ছিল না। এজন্য সরকারি দল ও বিরোধী দল কখনো একসঙ্গে বসেনি, জাতীয় স্বার্থেও না।”
সরকারের তিনজন মন্ত্রী থাকার পরও জাতীয় পার্টির কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা পালন নিয়ে ইতোমধ্যে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার উত্তরও দেন রওশন।
“অনেকেই এটা নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু এটা নতুন কনসেপ্ট। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না, ওটাই তো নতুন কনসেপ্ট ছিল।”
“মন্ত্রী আছে ঠিকই, তবে বিরোধী দলের ভূমিকা সঠিকভাবেই পালন করতে চাই। কতটুকু সফল হব, জানি না। তবে আন্তরিকতার ঘাটতি থাকবে না।”
স্পিকার হিসাবে শিরীন শারমিন চৌধুরী পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে রওশন বলেন, “আপনার একাডেমিক ক্যারিয়ার আছে। এটা আপনাকে সম্মানিত করেছে, এখানে নিয়ে এসেছে।
“একজন পারফেক্ট লেডি আমাদের স্পিকার হয়েছেন। আমরা আনন্দিত-গর্বিত। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
স্পিকারকে অভিনন্দন
স্পিকার পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়া শিরীন শারমিনকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রথম অধিবেশনে বক্তব্য রেখেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা।
নতুন করে নির্বাচিত হয়ে সংসদে শিরীন শারমিন সভাপতির আসন নেয়ার পরপরই উঠে দাঁড়ান প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ।
তিনি বলেন, “প্রথমবার স্পিকার নিযুক্ত হয়ে আপনি ছিলেন অনভিজ্ঞ। কিন্তু আপনি প্রমাণ করেছেন, বিজ্ঞ বিজ্ঞ স্পিকারের চেয়েও আপনি বিজ্ঞ।”
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “সংসদ পরিচালনার ক্ষেত্রে আশা করব, সমভাবে বিবেচনা বোধ ও আপনার পরিশীলিত মানসিকতা দিয়ে সংসদকে সমৃদ্ধ করবেন।”
জাসদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল স্পিকারকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শেখ হাসিনোকেও অভিনন্দন জানান।
“একটি নির্বাচন সমগ্র দেশের পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। একটি নষ্ট পরিস্থিতি থেকে আধা-খেঁচড়া নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।”
জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আগামী পাঁচ বছরে বাস্তবায়নের আশাবাদও ব্যক্ত করেন নাসিম।
বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার স্পিকারকে অভিনন্দন জানান।
“আপনি সবার আস্থা অর্জন করেছেন। আপনার যোগ্যতা বলেই আপনি এখানে এসেছেন।”
সংসদে আসীন দলীয় চেয়ারপারসন এইচ এম এরশাদকে দিকে তাকিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, “তিনি এসেছেন, তাকে দলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি দোয়া করবেন যেন ইতিবাচক রাজনীতি করতে পারি।”
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, এই নির্বাচনে সরকারের সকল সংস্থা অভিন্নভাবে কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে।
“শক্তি ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় না। প্রধানমন্ত্রী শান্তি চান বলেই শক্ত হাতে সব কিছু মোকাবেলা করেছেন।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের দেশের বাইরে বন্ধু আছে, প্রভু নেই। আর ওদের (বিএনপি) প্রভু আছে দেশের বাইরে, গত ছয় মাস ধরে আমরা তা দেখেছি।”