; তাবিজ করা ব্যাপারটা আমার জানা ছিল না। আমি ভাবতাম গলায় পুড়িয়া'র মত যে জিনিষটা নিয়ে মানুষ ঘোরে তার নাম তাবিজ। কিন্তু বিষয়টা যে আরও গভীর, সে বিষয়ে আমি আগেও জানতাম না এখনও খুব বেশি জানি না। আমার খুব কাছের একজন, পেশায় তিনি একজন ডাক্তার, তবু 'প্রেমে ধরা' খেয়ে যে যা বলে তিনি তাই করেন। তারই ধারাবাহিকতায় তাবিজ ব্যাপারটা আমার গোচরে আসে।
যিনি তাবিজ তাকে এনে দেন তিনি বেশ বয়স্ক এক মহিলা। তিনি ফরিদপুরে কোন এক তাবিজ ওস্তাদের মুরিদ। সেই মানুষটিকে হাজার তিনেক টাকা দেয়া হল এবং প্রেমিকাকে বশীভূত করণের তাবিজ আনার দায়িত্ব দেয়া হল। মহিলাটি আমার পরিচিতজনের জন্য ফরিদপুর থেকে তাবিজ এনে দেন। আমি ভেবেছিলাম ঘটনা শেষ। আমার বন্ধু গলায় একখান পুড়িয়া দিয়া ঘুরবে, কয়দিন পর মানুষ ঠাট্টা করলে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না। ঘটনা অনেক বাকি।
তাবিজ ছিল তিনটি। সাথে ছিল একটা কড়ি। তিনটি তাবিজের দুইটা তাবিজ কোন এক কবরস্থানে গিয়ে একই কবরে ১৫ দিন অন্তর অন্তর পুঁতে দিতে হবে। আর একটি তাবিজ কোন এক চার রাস্তার মোড়ে মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। কড়িটা কোন এক নদীতে ফেলে দিতে হবে। কাজ কর্মের বিবরণে আমি সহ আমার বন্ধু ব্যাপক চিন্তিত। কিন্তু প্রেমের কাছে পরাজিত সৈনিক আর 'মুসা ইব্রাহিমের' মাঝে কোন তফাত নাই। অনন্ত জলিলের মত সে অসম্ভব কে সম্ভব করল। আজিমপুর কবরস্থানে দুইটি তাবিজ পুঁতে দিল আর একটি দোয়েল চত্বর মোড়ে। কড়িটি ফেলা হল ধানমণ্ডি লেকে।
তাদের ভাঙ্গা সম্পর্ক আর জোড়া লাগেনি। আমি তার এহেন কষ্ট ও পরিশ্রম দেখে মন খারাপ করলাম। মানুষ অবলীলায় ভালবাসা পাওয়ার জন্য কতকিছু করে! কিন্তু যে জিনিষ বান্দার জন্য আল্লাহ পচ্ছন্দ করেন না তিনি তাকে তা কখনওই দেন না। যত কিছুই হোক।