দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ফাঁসির রায় শুনে আদালতে দাঁড়িয়েই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বিগত চার দলীয় জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর।
Published : 30 Jan 2014, 01:52 PM
তবে জামায়াতে ইসলামীর আমির ও তখনকার শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন অনেকটাই শান্ত, হাতে থাকা বোতল থেকে শরবত পান করতেও দেখা গেছে তাকে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইবুন্যাল-১ এর বিচারক এসএম মজিবুর রহমান বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় জনাকীর্ণ আদালতে দশ বছর আগের চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে চোরাচালানের দায়ে নিজামী ও বাবরসহ ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন তিনি।
রায় শুনেই উত্তেজিত হয়ে উঠতে দেখা যায় এক সময়ের বিএনপি নেতা বাবরকে। তিনি দাবি করেন, এই রায়ে ন্যায়বিচার হয়নি।
“আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছি, যিনি অন্যায়ভাবে রায় দিয়েছেন, তারও যেন বিচার হয়।”
ক্ষমতায় থাকতে ইংরেজি-বাংলা মিশিয়ে নানা অদ্ভুত মন্তব্যের জন্য বার বার সংবাদ শিরোনামে আসা এই সাবেক প্রতিমন্ত্রী জানান, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মামলা করে রায় দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে ‘আখেরে’ আল্লাহর কাছে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাবর বলেন, ‘‘এর উপরও আল্লাহর আদালত আছে।’’
রায়ের পর বাবরের এই উত্তেজনার মধ্যেই এজলাস থেকে বেরিয়ে যান বিচারক। তখনো জামায়াত আমির নিজামীকে দেখা যায় অনেকটা নির্লিপ্ত।
একাত্তরের হত্যা-লুটপাট-নির্যাতনের মতো যুদ্ধাপরাধের মামলায় রায়ের অপেক্ষায় থাকা নিজামী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শান্ত ভঙ্গিতে বলেন, “এর সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে ফাঁসির আদেশ পাওয়া আরেক আসামি চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল) সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক রায় শুনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তিনি অচেতন হয়ে পড়লে ধরাধরি করে তাকে আদালত কক্ষ থেকে বাইরে নিয়ে আসা হয়।
অস্ত্র উদ্ধারের সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) পরিচালক থেকে পরে এনএসআইয়ের মহাপরিচালক হওয়া রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীও এসময় কিছুটা অসন্তোষ দেখান।
তিনি বলেন, “এটি সাজানো রায়। আমার কিছু বলার নেই।”
মামলার বিচার চলাকালীন সময়ে হাসিখুশি থাকা এনএসআইয়ের সাবেক উপ-পরিচালক লিয়াকত হোসেনকে এদিন অনেকটাই বিচলিত দেখা যায়। রায় ঘোষণার পর বিমর্ষ হয়ে পড়েন তিনি।
আদালতের কাঠগড়ায় থাকা অপর সাজাপ্রাপ্ত আসামি এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ তার স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে কথা বলার সময় কেঁদে ফেলেন।
অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হাফিজুর রহমান নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘‘আমি কিছুই করিনি, সব তারা লিখে দিয়েছে।’’
অপর আসামি দীন মোহাম্মদ রায় ‘ঠিক হয়নি’ মন্তব্য করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আদালতে কেউ সাক্ষ্য দেয়নি।তারপরও আমাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।”
রায়ের পর বিমর্ষ সিইউএফএলের সাবেক এমডি মহসিন উদ্দিন তালুকদার সাংবাদিকদের সামনে কোনো কথা বলেননি।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে কর্ণফুলী নদী তীরে সিইউএফএলের সংরক্ষিত জেটিঘাটেই দুটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খালাস করে ট্রাকে তোলার সময় আটক করে পুলিশ।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের সর্ববৃহৎ চালান ধরা পড়ার পর দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
চীনে তৈরি এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমুদ্রপথে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘উলফা’র জন্য আনা হয়েছিল; বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল এই চালান।
ওই ঘটনায় চোরাচালান ও অস্ত্র আইনের দুই মামলায় আসামি ছিলেন মোট ৫২ জন, যাদের মধ্যে ৩৮ জনকে খালাস দিয়েছে আদালত।