somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাসপোর্ট অফিস এর দুর্নীতি সবার জানা কিন্তু গোপন কথা

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাসপোর্ট অফিস নিয়ে গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতা…………

আমার এক ভাই কয়েকদিন আগে ফোন দিল
- কোথায় আছিস?
- রুমে আছি ভাই ।
-ভার্সিটি খুলছে তোর?
-হ্যা ভাই খুলসে ।
-কালকে বিকেলে তোর কাছে যাব । পাসপোর্ট বানাতে হবে তাই । ১টু খোজ খবর নিস ।
- ঠিক আছে ভাই ।
দুপুরে ভার্সিটি তে ক্লাশ শেষ করে পাসপোর্ট অফিস গেলাম । তখন দুপুর ১.৩০ টা । কোথায় গিয়ে কি করতে হবে জানার জন্য তথ্য কেন্দ্রে গেলাম কিন্তু অনেক বড় লাইন । কর্মরত এক আনসার ভাই কে জিজ্ঞেস করলাম তিনি ভাব দেখিয়ে বলে ফেললেন যে দুপুর ১টা’র আগে এসে জেনে যেও । পরে পাসপোর্ট করতে আসা এক ভাইয়ের কাছে জানলাম যে কি কি করতে হবে । ভাই এর কাছ থেকে জানতে পারলাম যে দালাল দের ১২০০-১৫০০টাকা দিলে পাসপোর্ট এর কাজ তাড়াতাড়ি হবে তানা হলে ঘুরতে হবে ।
পরদিন ভাই আসলো । অনলাইনে ফরম পূরণ করল । পরদিন ফরম সত্যায়িত করতে করতে আর টাকা জমা দিতে গিয়ে দুপুর ১২.৩০ টা বাজল । পাসপোর্ট অফিস গেলাম । বলল যে আজ আর ফরম জমা নেওয়া হবে না ।

ফরম টা ঠিকঠাক আছে কিনা দেখানোর জন্য তথ্যকেন্দ্রে গেলাম । তথ্যকেন্দ্রে বলল ফরম পূরণ ভুল হয়েছে । সে সবাই কে তথ্য দেই কিন্তু জানেই না অনলাইন এ ফর্মটা কিভাবে দেওয়া থাকে, তাহাকে বুঝাতেই পারলাম না যে আমরা টেক্সট ফিল্ড এ লিখি। পরে ওরা পিডিএফ দেয়। কিন্তু তথ্যকেন্দ্রের ছেলেটির এক কথা, প্রিন্ট যেমন অনলাইন এ তেমন।

ভাই বলল যে কালকে এসে আগে জমা দেওয়ার পর দেখব যে কোথায় ভুল আছে । পরেরদিন সকাল ৯টায় যেতে বলল ।
আমি আর আমার ভাই সকাল ৮ টার মধ্যেই পাসপোর্ট অফিসে গেলাম । ১০টা থেকে ফরম জমা নেওয়া শুরু হলো । যিনি এই ফর্ম জমা নিচ্ছে আর তার চেকিং পারফরমেন্স অতি উত্তম যে লাইন সামনে আগায় না, এর মাঝে সে আবার ২০ মিনিট করে চা বিরতি নিতে যায়।

যাইহোক ভাইয়ার আগে ৫-৬ জন এর চেক করে বলল যে ভুল আছে । কারো ফরম ঠিক হয়নি ।
প্রথমে ভাইয়ার ফরম দেখে বলল যে ভুল কিন্তু ভাইয়া যখন বুঝিয়ে বলল যে আমি অনলাইনে ডাটা পুরণ করেছি তারপর তারাই এইটা পিডিএফ আকারে দিয়েছে ।
তারপর ও তিনি ভুল ধরলেন যে সত্যা্যিত শীল ১টু ট্যারা; এইটা সোজা করে মেরে নিয়ে আসুন ।
[সত্যা্যিত শীল ট্যারা আর সোজা কি । সত্যা্যিত করা আছে কিনা এইটাই মেন ব্যাপার । কিন্তু তারা ত্রুটি ধরবে ]
ভাই গেল আবার সত্যা্য়িত করতে আর আমি লাইনে দাঁড়িয়ে । প্রতিটি ফরম ই ভুল । এখন দেখেন যে ভুল গুলো কি কিঃ
১. আপনার পাসপোর্ট ছবি টা তুলা ঠিক হয় নি, নাক কান গলা থকবে কিন্তু ঘাড় বেশি চলে আসছে।
[ আরে অফিসার সাহেব আপনারা পাসপোর্ট এ যে ছবি দিবেন সেটা তো তুলেই নিবেন । ফরম এর সাথের তা তো আর দিবেন না ]

২.আপনি পেশা প্রাইভে্ট জব দিলেন কেন, আপনি তো কৃষক।
[ আরে শালা হারামি রা ওইটা কেটে দিয়ে কৃষক লিখে দিলেই তো হয় ]
৩. আপনার ভোটার কার্ড এ বাপের নাম এ মোহাম্মদ আছে, তাই যান আবার সব নতুন করে লিখে সত্যা্য়িত করে নিয়ে আসেন।
[ আরে দালালের ব্যাটা এই ছোট্ট জিনিসটা নামের আগে লিখে দিলেই তো হয় । এর জন্য বেচারা টাকে আবার গ্রামের বাসায় পাঠাবি]
৪. ফর্মে টাকার পরিমাণ বাংলাতে লিখেছেন কেন? আবার নতুন করে লিখে নিয়ে আসেন ।
[আরে মাদারী তোর কি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে । আর মানি রিসিপ্ট তো আছেই ]
৫. ভোটার আইডি বা জন্মনিবন্ধন একটার সত্যায়িত কপি দিলেই হয়। না উল্লেখ করলে ২ টাই দিতে হবে।
[তাহলে ওইখানে অথবা লিখা আছে ক্যান]
৬. নতুন, নবায়ন, অনলাইন, বৃদ্ধ, যুবক সবার একই লাইন [লাইন ১টা ভালো কথা কিন্তু তোর এত ঘন ঘন চা এর বিরতি লাগে ক্যান রে]

ইত্যাদি ইত্যাদি

এতো গেল চেকিং ম্যানের কাজ । আনসার বাহিনী আর গেটম্যান দের কথা বলি ।
১. বাইরের কেও ভেতরে প্রবেশ করিবেন না ।
[ দালাল রা ভেতরে বাইরে সর্বত্র বিরাজমান । তাদের জন্য কোন বাধা নাই ।]
২. ( পাসপোর্ট কারীর সাথে সাহায্যকারী কেও থাকলে ) তুমি এইখানে কি কর? পাসপোর্ট কারী আর স্টাফ ছাড়া কেউ ভেতরে থাকবেনা ।
[ হালার পুতরা দালাল গুলা কি তোদের স্টাফ ]
৩. যাদের ভুল হয়েছে তাদের কে সরাসরি বলে দিচ্ছে যে বাইরের টেবিলে চলে যান তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে ।
[লটি’র ব্যাটা তথ্যকেন্দ্র ক্যান রাখা হয়েছে ???? তথ্যকেন্দ্রে না পাঠিয়ে বাইরের টেবিলে ক্যান???]

ইত্যাদি ইত্যাদি

যাইহোক এত কিছু দেখা’র পর ভাই আবার সোজা করে সত্যা্য়িত শীল মেরে নিয়ে আসল । ফরম জমা নিল তখন বাজে ১১.৩০ । বলল যে ১টা’র দিকে আপনাকে ছবি তোলার জন্য ডাকবে । ভাই বলল যে মাত্র ৫টা ফরম জমা হয়েছে ।

ছবি তোলার লাইনে গিয়ে দেখি শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে । ফরম অ্যাপ্রোভড হল মাত্র ৫টা ছবি তোলার লাইনে মানুষ ২০০ জনের মত ।
তখন দেখলাম যাদের ফরম কাটিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা ছবি তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে । তারা কেও দালাল কে ১৫০০, কেও ১২০০, কেও বা ১৩০০ টাকা নিয়ে অফিসের অন্য দরজা দিয়ে ওই কাটা/বাতিল করা ফরম ই অ্যাপ্রোভড করিয়ে নিয়েছে । আমরা ছবি তোলার জন্য ৫ জন বসে আছি কিন্তু আমাদের ডাকছে না । দালালদ্বারা অ্যাপ্রোভড কৃতদের ছবি তোলা হচ্ছে । ১টা বাজল তবুও ডাকলনা , ১.৩০ এও ৫ জনের কাওকে ডাকল না এবং বলল যে আজকের আর কোন ফরম নাই । তারপর

legal form approved হওয়া ৫ জন বলল যে আমাদের ফরম কোথায়? তখন তারা ১টু খোজাখোজি করে বলল যে পরিচালক স্যারের রুমে । স্যার লাঞ্চে । লাঞ্চ শেষে ফরম আসল ২.১৫ তে এবং বলা হলো যে আপনাদের আরো ৭ দিন পর ছবি তোলা হবে ; আপনারা ৭ দিন পর আসেন । সাথে সাথে ১ দালাল এসে বলল যে ৫০০-৬০০টাকা দিলে আজকেই ছবি তূলার ব্যবস্থা করতে পারব । আমরা বললাম যে ৭ দিন পরে এসে ছবি তুলব ।
বাতিলকৃত ফরম গুলো’র কোন সংশোধন না করে একই দিনে ছবি তোলা হচ্ছে মাত্র ১২০০-১৫০০ টাকার বিনিময়ে । আর সঠিক ফরমগুলো’র ক্ষেত্রে অর্থাৎ যাদের ফরমে কোন অতিরিক্ত টাকা পাইনি তাদের ৭ দিন পর ডাকা হচ্ছে । বাতিলকৃত ফরম গুলো সংশোধনের জন্য Informatiom booth এ না পাঠিয়ে অফিসের বাইরের দালালদের টেবিলে পাঠানো হচ্ছে টাকার দর কষাকষির জন্য । এই হচ্ছে আমাদের পাসপোর্ট অফিসের অবস্থা যেখানে ঘুষ খাওয়ার সর্বাত্নক চেষ্টা করা হয় ।
বি.সি.এস দেওয়া স্যারগুলোর পরিবর্তে দালালগুলোকে Checking man, info man , Director এর জব দিলেই ভালো হবে । সরাসরি টাকা চাইলে হয় । এত ফরমালিটি maintain এর তো কোন কারণ নাই ।

৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×