আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিতের ঘোষণা দিলেও তা গ্রহণ না করে সেই সঙ্গে সান্ধ্য কোর্স বাতিলের দাবিতে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
Published : 01 Feb 2014, 10:41 AM
দাবি আদায়ে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর মিছিল বের হয় ক্যাম্পাসে, তারা বিভিন্ন ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
এর মধ্যেই দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক মিজান উদ্দিন ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরার আহ্বান জানান।
তবে শিক্ষার্থীদের অন্য দাবি সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে তিনি বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশে সিন্ডিকেটে অনুমোদন হওয়ায় তা প্রত্যাহার করা সম্ভবপর নয়।
উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
প্রশাসনের ওই ঘোষণাকে আন্দোলন ঠেকানোর ‘কৌশল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা আহসান হাবিব রকি। ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত নয়, বাতিলের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাদের দুই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান, আইন ও কলা অনুষদের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স চালু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ফি দুই থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এরপর গত ১৬ জানুয়ারি থেকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। ‘বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকোর্স বিরোধীশিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই আন্দোলন বৃহস্পতিবার ধর্মঘটে গড়ায়।
ধর্মঘটের কারণে শনিবার কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। সকালে আবাসিক হলগুলো থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বরে জড়ো হয় তারা।
সেখান থেকে ৬-৭ হাজার শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। স্লোগানের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র ও গানের সেই মিছিল পুরো ক্যাম্পাস ঘোরে।
আন্দোলনে অচল বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বাণিজ্য অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ডিন কমপ্লেক্স ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য অনুষদের ডিন আমজাদ হোসেন যে কোনো মূল্যে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রাখার ঘোষণা দেন।
একইসঙ্গে শিক্ষকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ‘অশোভন’ আচরণের অভিযোগ তুলে অনিদিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আনসার উদ্দিন।
এরপর দুপুর সোয়া ১টার দিকে সিনেট ভবনে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিন।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, “নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্ধিত ফি স্থগিত ঘোষণা করা হল।”
এটা কি প্রত্যাহার কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনি প্রত্যাহার নয়।
সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “এটা একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশক্রমে সিন্ডিকেটে অনুমোদন করা হয়েছে। এটা প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়।”
প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত জানার পর রোববারও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করে।