somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাদা রঙ্গের স্বপ্নগুলো.........

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“হ্যালো, তুমি কোথায়?”
“বিল্ডিং এর ছাদে। লাফ দিব?”
“মানে!”
“লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যেতে চাই। তুমি কি বল?”
“লাফ দিলে নিচে পড়বে না, একদম সোজা উপরে উঠে যাবে। যাই হোক তোমাকে একটা জরুরী কথা বলার জন্য ফোন করেছি।“
“বলে ফেল। দেরী করো না।“
“এখন কথাটা বললে তুমি সত্যি সত্যি লাফ দিয়ে ফেলতে পার। বিল্ডিং এর ছাদ থেকে লাফ দেয়াটা তোমার জন্য অস্বাভাবিক কিছু না।“
“আসলে বেঁচে থাকাটা সুখকর কিছু না। তাছাড়া আমি মনে করি আত্নার মৃত্যু নেই। সে অন্য কোন ভিন্ন মাত্রার গ্রহে আবার জীবিত হয়। অনেকটা প্যারালাল ওয়ার্ল্ড এর মতো। সেখানে সবই আছে। তোমার মতো একজন রিমিও আছে......।“
“তুমি কি দয়া করে একটু থামবে এখন? বিকেলে চোরাস্তার মোড়ে এসো......... জরুরী কথাগুলো সেখানেই বলবো।“

ছাদের উপর হাটাহাটি করার আনন্দই আলাদা। আমি এখন রেলিং এর উপর দিয়ে হাটছি। চোখবন্ধ করছি না। চোখবন্ধ করলে শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রাখা যায় না। চোখ বন্ধ করছে হঠাৎ পা ফসকে পড়ে গেলে নিচে পড়ে মৃত্যুটা বড়ই মজাদার হবে। হঠাৎ করে মরার মাঝে একটা আভিজাত্য আছে।

নিচে নেমে আসলাম। একটা সিগারেট ধরাতে বড়ই ইচ্ছা করতেছে। সিগারেট এমন একটা জিনিস যা ধরাতে কোন কারণ লাগে না। যখন কিছু করার না থাকে তখন সিগারেট টানা যায়। পানসিগারেট বিক্রেতা মামাকে ডেকে একটা সিগারেট চাইলাম, “মামা এক পিস গোল্ডলিফ।” গোল্ডলিফে নিকোটিন বেশি থাকে। যারা নিয়মিত গোল্ডলিফ টানে....... তাদেরকে যক্ষা রোগীর মত কাশতে দেখা যায়।

মামা একটা শেইখ এর প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। বেটা তো ভয়ংকর বেয়াদব! আমি শেইখ খাওয়ার পাবলিক! ধমকের স্বরে বললাম,
“আমি গোল্ডলিফ চাইছি”।
“মামা, গোলডিফের প্যাকেট শেষ। এক পিস গোলডিফ ছিল। এই জন্য ওই প্যাকেটে রেখে দিয়েছিলাম”।

সিগারেটের আগে প্যাকেট শেষ হয়ে যায়! বড়ই আজব এই সমাজ। সিগারেটটা হাতে নিলাম। মুখে নিয়ে লাইটার চাইলাম। মামা বলে উঠলো,“মামা ম্যাচ নাই। শেষ হইয়্যা গ্যাছে।”

পাশে কয়েকজন দাড়িয়ে কথা বলছিল। কিভাবে লাইটার চাওয়া যায় বুঝতে পারছি না। এমন বললে কেমন হয়, “ওই শালার পো শালা লাইটার দে। সিগারেট ধরাব”। যদি বলে যে ভাই লাইটার নাই। সাথে সাথে ঠাশ ঠাশ করে দুইটা চড় মেরে দিলে মন্দ হয় না। লাইটার কেন থাকবে না! আর লাইটার না থাকলে এইখানে দাড়িয়ে আছিস কিসের জন্য!

যাহোক ওদের পাশে গিয়ে বললাম, “এক্সকিউজ মি, ভাই লাইটারটা প্লিজ”। ওরা দুইজনই কাপুনি দিয়ে উঠলো। মনে হয় কঠিন ভয় পাইছে। কি আশ্চর্য ভয় পাওয়া কি আছে। আমার চুলটা না হয় হালকা বড়। দাড়িতো মাত্র এক মাস আগে শেইভ করেছি!

সিগারেট টানছি। হাসপাতালের দিকে হাটছি। বাবা গত ছয় মাস যাবৎ হাসপাতালে। আমি প্রতিদিন বিকেলে রিমি’র সাথে দেখা করার আগে একবার দেখে যাই। বাবা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। খুব বেশি কথাবার্তা বলেন না। খুবই সুখে আছি এই ছয়মাস যাবত। আগেতো শুধু চাকরী কর চাকরী কর বলে চিল্লাইতো.....।

আজকে বাবা ইশারায় আমাকে পাশে বসতে বলল। বেচারার কথা বলার খুব একটা শক্তি নাই। স্কুলশিক্ষক মানুষ। কথার ভান্ডার মনে হয় শেষ হয়ে গেছেন। অনেক কষ্ট করে কথা বলছে।
“বাবা, মাহির। আমি মনে হয় আর বেশি দিন আর থাকবো না। আমার এক ছাত্র ছিল। নাম রফিক। অনেক বড় কোম্পানীর মালিক। ওর কাছে গিয়ে আমার পরিচয় দিলে তোমার একটা ব্যবস্থা করে দিবে নিশ্চয়ই”।
“আচ্ছা বাবা। আমি যোগাযোগ করবো”।

অনার্স পাশ করে বেকার। বৃদ্ধ হসপিটালাইজড বাবার চিন্তুার শেষ নেই যেন। বিকেল হয়ে এলো। চৌরাস্তার মোড়ে যেতে হবে। সেখানে রিমি আসবে।

চৌরাস্তায় যাওয়ার পথে নজরুলদের বাসা হয়েই যাই। নজরুলের সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে হালকা দেরি হয়ে গেল। চৌরাস্তায় পৌছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে এক ঘন্টা দেরী! রিমি অগ্নিমূর্তি হওয়ার কথা। কিন্তু তাকে খুব স্বাবাবিক দেখাচ্ছে। অনিয়ম দীর্ঘদিন চলতে থাকে সেটাই নিয়ম হয়ে যায়! আমি আগে কথা বললাম,
“কেমন আছো রিমি?”
“খুব একটা ভাল না। কয়েকদিন যাবৎ মনটা খুব খারাপ”।
“কেন কি হইছে? কোন সমস্যা?”
“ঐ যে তোমাকে আমার এক কাজিনের কথা বলেছিলাম না। অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। সে দেশে এসেছে”।
“সেটাতো খুশির খবর হওয়ার কথা”।
“হুম, খুশির খবর হতো যদি সে আমাকে বিয়ে করতে না চাইতো”।
“বাহ্, সে তো খুব ভাল পাত্র....। তুমি রাজি হয়ে যাও।“
“তুমি একটা রাম-ছাগল!”

বুঝতে পারছি চাকরী একটা না করলে আর চলে না। এই সপ্তাহে বিরোধীদলের ডাকা কর্মসূচি বানচাল করতে সরকার দলীয় হরতাল চলছে। গাড়ি ঘোড়া বন্ধ। কিন্তু অফিস আদালত খোলা!

বাবার রেফারেন্সে রফিক ভাইয়ের অফিসে গেলাম। কয়েকটি টেক্সটাইল ফার্মের মালিক সে। অফিস বনানীতে। পরিচ্ছন্ন আর জাকজমকপূর্ণ এক অফিস। ঢুকে মনে হলো নিউ ইয়র্কের কোন ভবনে এসেছি। যদিও আমি কখনো নিউ ইয়র্কে যাই নি। মুভি-সিনেমায় দেখেছি।

নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে রফিক সাহেবের কক্ষে যেতে হল। আমি আর রফিক সাহেব সামনাসামনি বসা। বাবার কথা বলতেই আদর আপ্যায়নের রেখা উর্ধ্বগামী হয়ে গেল। আমার হাতে এককাপ কফি আর রফিক সাহেবের হাতে রং চা।
“স্যারের শরীরের অবস্থা কেমন এখন?”
“খুব একটা ভাল না, যায় যায় অবস্থা”।
“সময় করে একবার দেখে আসতে হবে.......। তুমি তোমার সি.ভি’টা রেখে যাও, ভ্যাকান্সি হলে ডাকবো। কোম্পানীর অবস্থা খুব একটা ভাল না। দেশে সরকারী দল আর বিরোধীদলের হরতালে কোন ওয়ার্কিং ডে পাচ্ছি না।”

কয়েকদিন ধরে দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। এর মধ্যে মানুষ বিয়া-শাদী কিভাবে করতে চায় সেটাই বুঝতে পারি না। দিন দিন মানুষের দেশপ্রেম শূণ্যের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসীদের আবার দেশে বিয়ে করার কি দরকার। বেটার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিলে মনে শান্তি শান্তি লাগতো!

রিমির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। ফোন বন্ধ...........। আরো ৩ বার চেষ্টা করেও রিচ করতে পারলাম না। বুঝতে পারছি না বাসায় কোন সমস্যা হলো কি’না! দু:শ্চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে একটা চকরীর জন্য পরীক্ষা আছে। সকাল সকাল উঠতে হবে।

ঘুম ভাঙ্গলো আম্মুর বকাবকিতে। আমার চাকরীর জন্য আম্মু বড়ই অস্থির। এত অস্থির হওয়ার কি আছে। আমি কি না খেয়ে মারা যাচ্ছি? সবই তো ভালই চলছে। ছোটবোন টুম্পা নাস্তা নিয়ে উপস্থিত। নাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চলে যায়। আজকে দাড়িয়ে আসে। একটা মেয়ে দাড়িয়ে থাকবে ব্যাপারটা ভাল দেখায় না। বললাম,
“কিরে কি বলবি বলে ফেল।“
“তোমার তো আজকে চাকরীর জন্য পরীক্ষা আছে তাই না?”
“হুম, সেতো নতুন কোন ঘটনা নয়। প্রতি মাসেই থাকে।“
“তুমি চাকরী পেলে আমাকে কী দিবে?”
“তুই কী চাস?
“১০০ টাকা।“
“কি করবি ১০০ টাকা দিয়ে?”
“একটা গিফট কিনবো?”
“কাকে দিবি। সাব্বিরকে দিবি? সাব্বিরকে কি তুই ভালবাসিস?”
“তুমি না ভাইয়া.......একটা”।
“আজকে রিমিদের বাসায় একটু যাবি। দেখে আসবি কে কেমন আছে। গতকাল থেকে সে ফোন ধরছে না। হয়তো কোন সমস্যা হয়েছে। ওর এক অস্ট্রেলিয়া ফেরত কাজিন ওকে বিয়ে করার পায়তারা করতেছে। আর এই নে বিশ টাকা....... কিটক্যাটের দাম।“

টুম্পা আমার একজন বার্তা বাহক। সে বার্তাবহনে খুবই এক্সপার্ট। সে আমার খুবই আস্থাভাজন মানুষ। তার চাহিদা খুব বেশি নয়। চকলেট, আইসক্রিম বা চিপস্....... এইগুলাই যথেষ্ট। কিন্তু সে আজকে ১০০ টাকা দাবি করলো। আমার কাছে এটাই তার সর্বোচ্চ দাবি। কি করবে সে এই টাকা দিয়ে!

চাকরীর জন্য পরীক্ষাটা দিয়েই আসি। ১০ টি আসনের বিপরীতে ৫০০ ক্যান্ডিডেট লড়ছে। চাকরী হওয়ার সম্ভাবনা খারাপ না। আমার আসন পড়েছে উদয়ন স্কুলে। রিক্সা চেপে পৌছে গেলাম। সবার হাতে একটা ব্যাগ নয়তো একটা ফাইল। কারো সাথে আব্বু আম্মুকে দেখলাম। সবাই এমনভাবে পড়তেছে যেন চাকরীর অভাবে তার বিয়ে হচ্ছে না!

হঠাৎ করে বলতে ইচ্ছে করতেছে যে, “ওই....... আজকে পরীক্ষা হবে না। কেবলমাত্র বিবিসি নিউজে শুনলাম।“ দেখা যাবে অর্ধেক লোক বাসায় ফিরে যাওয়া শুরু করছে। বিবিসি’র প্রতি এদেশের মানুষের বড়ই আস্থা। বিবিসি যদি রিপোর্ট করে যে, বাংলাদেশের মানুষ সবাই মারা গেছে তাহলে দেখা যাবে সবাই কবরে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যাবে!

এক ভিক্ষুক এসে বলতেছে, “বাপজান ১০টা টাহা দিয়্যা যান, আপনার পরীক্ষা ভাল হবে।“ মনডায় চাইতেছে ওরে চটকানা মেরে ফেলে দেই। আমার কাছে আছেই মাত্র ৫ টাকা। একটা গোল্ডলিফ কিনে টানছি। অন্য সবাই পড়ায় ব্যস্ত। সবাই মোটামুটি ভাল ড্রেসে আসছে। আমি এসেছি ট্রাউজার আর গেঞ্জি পড়ে। একবার ভেবেছিলাম লুঙ্গি পড়েই যাই। আজকেতো শুধু পরীক্ষা। হাফপ্যান্ট পড়ে আসলেই কি!

সিগারেট টানতে টানতে মাথায় একটা চমৎকার আইডিয়া আসলো। দোয়া বিক্রি করবো। ১০ টাকা দোয়া, ৫০ টাকার দোয়া আর ১০০ টাকার দোয়। দোয়া করার জন্য জটলা চুলের কয়েকজন পাগল জোগার করতে হবে। ১০০ টাকার দোয়া নিলে নিশ্চিত পাশ! ১০ টাকার দোয়া নিলে প্রশ্ন দেখে জ্ঞান না হারানোর নিশ্চয়তা পাবেন। আর যদি দোয়া না নেন তাহলে পরীক্ষার ঠাশ করে আছাড় খেয়ে দাত ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

ব্যাপারটা খারাপ হয় না। এদেশের মানুষ দোয়ায় বিশ্বাসী। দির্ঘদিন যাবৎ ধর্ম-কর্ম পীর দরবেশের হস্তগত হওয়াতে দোয়ার ব্যাপারটা মানুষের মাথায় ভালমতই সেট হয়ে গেছে। ইশ এই আইডিয়া আগে আসলে আজকে আমি বাড়ি গাড়ির মালিক থাকতাম। যে পরিমান পরীক্ষায় এটেন্ড করেছি ..... পরীক্ষা না দিয়ে দোয়ার ব্যাবসা করলে কোটিপতি হয়ে যেতাম। পরীক্ষার সময় সবারই মনে ভয় থাকে। আর ভিতু মানুষের দোয়ার সবচেয়ে বেশি দরকার হয়। দোয়া ভিতু মানুষের মনে সাহস জোগায়। আর সাহসীদের শক্তির জায়গা তার ভাল প্রস্তুতি।

পরীক্ষার হলে ঢুকলাম। কয়েকজন স্যার প্রশ্ন নিয়ে ঢুকলো। একজনের মাথায় টাক। উনি লেকচার দেয়া শুরু করলো। পরীক্ষার নিয়মাবলী বলছেন....। যদিও নিয়মাবলী প্রশ্নপত্রে লেখা ছিল। তারপরেও উনি লেকচার দিলেন। কারণ উনারা লেকচার দিয়ে আরাম পান। কথার সাথে বোধ হয় মাথার চুলের সম্পর্ক আছে। একটা কথা বললে মাথার একটা চুল পড়ে যাবে। তাই স্যারের মাথায় কোন চুলই নাই।

প্রতিদিনই বিকেলে চৌরাস্তার মোড়ে রিমির সাথে দেখা করি। এরপর বিনা পয়সায় দর্শনীয় জায়গাগুলো ঘুরে বেড়াই। আজকেও রিমির ফোন বন্ধ! আজকে আর চৌরাস্তায় যাব না। বাসায় পৌছে একটা আরামের ঘুম দিলাম। ছোটবোন টুম্পা ডেকে তুললো। ওর হাতে এক কাপ চা।
“ভাইয়া রিমি আপুদের বাসায় গিয়েছিলাম।“
“কি হয়েছে রিমির? বাসায় কোন ঝামেলা হইছে?”
“দেখলাম অনেক গেষ্ট। মনেহয় রিমি আপুর বিয়ের মেহমান ........।“
“ওহ্....... ঠিক আছে তুই এখন যা।“

রাত্রিভর রিমির ফোনে ডায়েল করলাম। মেসেজ দিলাম গোটা পঞ্চাশেক। কোন রেসপন্স নাই। হঠাৎ একটা অজানা নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসলো, “মাহির, আমি খুবই বিপদে আছি। বাবা-মা জোড় করে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। তুমি রাত ৩টায় আমার বাসান নিচে এসে দাড়াবে।”

বুঝতেছি না একা যাওয়া ঠিক হবে কি’না। কোন চাল-টাল ওতো হতে পারে। বন্ধু বান্ধাব কাউকে সাথে নিলেই মনে হয় ভাল হয়। পেটমোটা পার্থকে ফোন দিলাম। ও পাশেই একটা মেসে থাকে। বড়ই ভাল ছেলে। শুধু পেটটা একটু মোটা। ওজন মাত্র ১১০কেজি। ওরে সাথে নেয়াই ভাল। গুলি টুলি করলে ওর আড়ালে খুব সহজেই লুকিয়ে যাওয়া যাবে।

পার্থ যেতে রাজি হতে চায় না। নীলক্ষেতে তেহারীর লোভ দেখাতে হলো। রাত ৩টা বাজে। নাইট গার্ড মাঝে মাঝে জোড়ে জোড়ে শব্দ করে উঠতেছে। কিছু নেড়ি কুকুরও ডাক দিয়ে যাচ্ছে। রিমির কক্ষের জানালার পর্দা উঠে গেল। আমার এখন সুপারম্যান হতে ইচ্ছে করতেছে। এক লাফে জানালার গ্রিল ধরে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

রিমি একটা কাগজ ছুড়ে মাড়লো। এরপর ইশারায় চলে যেতে বলল। পার্থ’র মেসে গেলাম। শুয়ে শুয়ে চিঠিটা পড়ছি।

প্রিয়,
মাহির।
বাবা-মা অস্ট্রেলিয়া ফেরৎ কাজিনের সাথে আমার বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলেছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বুধবার। এই জন্য বাইরে যাওয়া আমার জন্য বন্ধ। এমনকি আমার মোবাইল নিয়ে নিয়েছে। এই অবস্থা থেকে কিভাবে পালিয়ে বাঁচবো তার কোন বুদ্ধিই আমার মাথায় আসছে না। তবে বিয়ের দিন সকালে আমাকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হবে বলে শুনেছি।
তুমি যা করার করতে পার।
ইতি.....রিমি।

বাবার অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। ব্লাডে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। হাত পা সব হলুদ হয়ে যাইতেছে। ডাক্তার বলেছে নিয়মিত ব্লাড পরিবর্তন করিয়ে নিয়ে যেতে। রোগটা আলটিমেইট ফেইজ এ চলে গিয়েছে।

তিন সপ্তাহ পরে চাকরীর পরীক্ষার ফলাফল বের হলো। পরীক্ষায় টিকেছি। পরীক্ষার আমি সবসময়ই টিকি কিন্তু ফাইভায় বাদ পড়ে যাই। তবে এবার ভাইভায় বাদ পড়লাম না। এপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়ে গেলাম। দুই সপ্তাহের মধ্যে যেকোন দিনই জয়েন করতে পারি।

জয়েনিং লেটার নিয়ে চলে গেলাম সোজা হাসপাতালের দিকে। চোরাস্তার মোড় হয়েই যেতে হলো। হাসপাতালে যেয়ে দেখি কেউ নেই। ওরা জানালো সে একটু আগেই পেশেন্টকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চার্জের অভাবে আমার মোবাইল অফ হয়ে আছে। বাসায় চলে গেলাম অতি দ্রুত। টুম্পার জন্য ১০০ টাকাই আছে পকেটে। হেটে হেটেই বাসায় গেলাম।

হাতে জয়েনিং লেটার। ভাবছি এটা বাবাকে দিয়ে খোলাব। খুবই খুশি হবেন বাবা। তার ছেলে একটা চাকরী পেয়েছে এটা জানলে সব রোগই ভাল হয়ে যাবে। তারপরে আবার সরকারী চাকরী! বাসায় গেলাম। মেইন দড়জা খোলা। বাসায় কিছু আত্নীয়-স্বজন এসেছে। কাকে যেন সাদা একটা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

সাদা চাদরের উপর সাদা জয়েনিং লেটারটা রাখলাম। সাদায় সাদা মিলে একাকার।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×