somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গাজীপুরের আতংক!!!!যেভাবে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে শিক্ষাসফরে গিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের আক্রমনের শিকার হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র ও শিক্ষক (ছবি+ভিডিও)

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষাসফর আমাদের শিক্ষার একটা অন্যতম অংশ তাই প্রতিবছরই ডিপার্টমেণ্ট থেকে সারা দেশের নানা স্থানে শিক্ষাসফরের আয়োজন করা হয়।এবার ডি্পার্টমেণ্টের বার্ষিক পিকনিক আর প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য তাদের প্রথম শিক্ষাসফরের আয়োজন করা হয়েছিল গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে।ইচ্ছা ছিল শালবনের ছায়ায় বন্যপশুর বিচরন দেখে আর সুশোভিত বাগানে ঘুরে বন্ধু আর ছোট বা বড় ভাই বোনের সাথে আড্ডা দিয়ে দিনটা সুন্দরভাবে কাটিয়ে দেব।সেই সাথে শিক্ষকদের কাছ থেকে ছোটরা চিনে নেবে অচেনা সব উদ্ভিদ আর আমরাও এই ফাঁকে নিজেরদের জ্ঞানটা সমৃদ্ধ করে নেব।



এই উদ্দেশ্যে চারটি বাসে ডিপার্টমেন্টের প্রায় ২২০ জন ছাত্রছাত্রী সেই সাথে দশজন শিক্ষক তাদের পরিবারের কিছু মানুষ(শিশুসহ) এবং কয়েকজন অফিস সহকারী মিলে সকাল দশটার দিকে ক্যাম্পাস থেকে গাজীপুরের দিকে রওনা হলাম।প্রায় দুইঘন্টার বাস জার্নি শেষ করে দুপুর ১২টার দিকে আমরা সেখানে পৌঁছায়।বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই সাফারী পার্ক।অনেক মানুষে এখানে বেড়াতে আসে তা বুঝলাম অনেক স্কুল ড্রেস পড়া ছাত্রছাত্রী এবং অনেক সাধারন মানুষ আর বাস দেখে।আমাদের দুইটি বাস ক্যাম্পাসের আর দুইটি ছিল ভাড়া করা।এলাকায় পৌঁছে আমরা সবাই বাস থেকে নেমে এদিকে সেদিকে ঘুরে দেখছিলাম।এই সুযোগে আমাদের স্যার এবং বন্ধুরা ভেতরে প্রবেশের টিকিটের ব্যবস্থা করতে কাউন্টারে গেলেন।

এটাই মূল প্রবেশ পথ।এর ওপাশে রয়েছে বাগান।তারপর আসল পার্ক।







আমাদের কাছে বন অধিদপ্তরের একটা ছাড়পত্র ছিল।সেটা দেখিয়ে স্বল্পমূল্যে ছাত্রদের জন্য প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করার কথা ছিল।এই ফর্মে সচিবের সাইন ছিল কিন্ত সিল ছিল না।সেটা অবশ্যই আমাদের ভুল নয়।এই অযুহাতে কাউন্টারের লোকজন আমাদের টিকিট দিতে চাইছিল না।তখন আমাদের টিচার এবং ছাত্ররা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে।কিন্ত তারা কোনো কথাই শুনতে চাইছিল না এবং আমাদের সাথে তাদের আচরন দেখে মনে হচ্ছিল আমরা দেশের অন্যতম একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ থেকে নয় বরং গ্রাম্য কোনো পাঠশালা থেকে বেড়াতে এসেছি।আমাদের স্যারদের সাথে তারা অসম্ভব উদ্ধত ব্যবহার করছিল।তবুও যথেষ্ট নম্র ভাষায় তাদের বলা হচ্ছিল যে আপনারা বন অধিদপ্তরে ফোন দিয়ে কথা বলে নিশ্চিত হন কিন্ত তারা কোনো কথাই শুনছিল না।এ পর্যায়ে তারা আমাদের একজন শিক্ষকের বুকে ধাক্কা দিয়ে বাজে কথা বলে।স্বাভাবিক ভাবেই তখন উপস্থিত ছাত্ররা উত্তপ্ত হয়ে উঠে বলে যে আপনি জানেন যে আপনি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে কথা বলছেন।তখন তারা এমন ভাব দেখায় যেন এটা কোনো বিষয়ই না।আমাদের একজন ছাত্র তখন রেগে উঠে দরজায় একটা লাথি দেয়।এরপরেই আশেপাশের কয়জন সহ কাউন্টারের লোকজন লাঠি নিয়ে এগিয়ে এসে সবাইকে ঘেরাও করে এবং এলোপাথারী আঘাত করা শুরু করে।এখানে উল্লেখ্য যে বাঁশের লাঠির একটা বোঝা কাউন্টারেই জমা করা ছিল!!!লোকগুলো এগিয়ে এসে সেখান থেকেই লাঠি তুলে নেয়।এসময় তারা বুকের কলার ধরে আমাদের একজন সিনিয়র শিক্ষক কে ভেতরে টেনে নিয়ে যায় এবং অন্য ছাত্রদের সাথে মারামারি শুরু করে।এত গন্ডগোল দেখে আমাদের বাঁকি ছাত্ররাও সেখানে ছুটে যায়।

এরপরে চার থেকে পাঁচ দফায় তারা আমাদের ছাত্রদের ধাওয়া করে এবং তাদের আহত করে।বেশির ভাগ শিক্ষকের গায়েও লাগে লাঠির আঘাত।ভাগ্যক্রমে আমাদের ম্যাডাম এবং ছাত্রীরা মূল প্রবেশদ্বারের কাছেই ছিল তাই তারা দ্রুত ওপাশে নিরাপদ আশ্র্য়ে যেতে পেরেছিল।কাউন্টার থেকে মূল প্রবেশদ্বারের দুরত্ব একশ গজ মত হতে পারে।সেখান থেকে তাড়া দিয়ে আমাদের ছাত্রদের তারা মূল গেটে তাড়িয়ে আনে।এসময় গেট খুলে দেওয়ায় অনেক ছাত্র গেটের ভেতরে ঢুকে পড়ে আর যারা ঢুকতে পারেনি তাদেরকে প্রচন্ড প্রহার করা হয়।আমাদের ডিপার্টমেণ্টের সবচেয়ে সিনিয়র ব্যচের এক ভাইয়াকে রাস্তায় ফেলে এলোপাথারী বাঁশের লাঠি আর কাঠ দিয়ে পিটানো হয়।

আতংকিত অবস্থায় যখন আমরা পার্কের দেয়ালের মাঝে অবস্থান করছিলাম তখন আমরা জানতাম না যে আমাদের ভাগ্যে কি আছে।শিক্ষকদের ফোন পেয়ে প্রায় ঘন্টা খানেকের মধ্যে গাজীপুরের ডিসি সাহেব তার সাথে পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসেন।এর ঘন্টা দুয়েক পর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে তিন ভ্যান পুলিশের পাহারায় আমরা এলাকা ছাড়ি।


এই হলো মূল ঘটনা এবার আসি একটু গভীরে।আমরা উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী।আমাদের শিক্ষার খাতিরেই দেশের নানা এলাকার বন জঙ্গলে প্রতি বছরই তিন থেকে চারটা শিক্ষাসফর থাকে এক একটা ব্যাচের।আমরা অনেক দূর্গম এলাকাতেও ভ্রমন করি আর এই জন্য উচ্চতম প্রশাসনের ছাড়পত্র আমাদের দরকার হয় বিষয়টাকে সহজ এবং সুলভ করার জন্য।তাই এবিষয়টা নতুন কিছু নয়।গাজীপুএর সাফারী পার্ক ঠিক শিক্ষাসফরের উপযুক্ত জায়গা না হলেও পিকনিকের জন্য এটাকে আদর্শ বলে আমরা মনে করেছিলাম।আর প্রথম বর্ষের ছাত্রদের শিক্ষা দেবার মত উপকরন আছে বলেই আমাদের এখানে আসা।

এই যে পুরো ঘটনাটা ঘটে গেল আমরা কিন্ত কোনো সিকিউরিটি ফোর্স দেখিনি।এতবড় এলাকায় মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি থাকবে না এটা কেমন কথা?এমন কি মূল প্রবেশ দ্বারে কিছু পুরুষ আর মহিলা লোকের ব্যাগ চেক করছে এবং কোনো পানি বা খাবার দেখলে তা ছিনিয়ে নিয়ে পাশে জমা করে রাখছে।এছাড়া আলাদা কোনো পাহারার ব্যবস্থা আছে বলে মনে হলো না।এদের আচরন ও খুবই রূঢ়।এমনকি আশেপাশে অনেক লোক থাকলেও কেউ আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।টিকিট ছাড়া মূল গেটে ঢোকা যায় না তাই ঝামেলা শুরু হলে মেয়েরা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল।একজন শিক্ষক ধমক দিয়ে তাদের ভেতরে না ঢোকালে তাদের সাথে জঘন্য কাণ্ড হয়ে যেত অবলীলায়।তবে অন্য জায়গাতে তো দেখেছি ঝামেলা বাধলে আশেপাশে যারা থাকে তারা মেয়েদের আগে নিরাপদ স্থানে সরে আসতে পরামর্শ দেয়।এখানে তা হয়নি।বরং মেয়েরা যখন গেটের কাছে পাংশু মুখে প্রিয়বন্ধুর জন্য দুঃশ্চিন্তায় নীল হয়ে অপেক্ষা করছিল তখন গেটে থাকা মানুষ গুলো কর্কষ ভাষায় গেট থেকে সরে যাওয়ার জন্য আদেশ দিচ্ছিল বারবার যাতে তাদের অন্য কাস্টোমারদের ভেতরে যাওয়া সুবিধা হয়।


এখন আসি সব চেয়ে বড় প্রশ্নে।সেটা হচ্ছে কেন ঐ টিকিট কাউন্টারে বাঁশের লাঠি জমা করা ছিল?আর কেনই বা এত তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তারা মারামারী করতে এগিয়ে এল?এবং কেন কথা কাটাকাটি শুরু হওয়া মাত্র আশেপাশে থেকে ১৫-২০ জন লোক এগিয়ে আসল এবং নির্দ্বীধায় লাঠি তুলে ছাত্র শিক্ষকদের আঘাত করল?উত্তরগুলোও দিয়ে দিচ্ছি।যতটুকু জেনেছি এই সাফারী পার্কটা সরকারি নয় অর্থাৎ লিজ দেয়া।অবশ্যি লিজ নিয়েছে এলাকার কিছু ক্ষমতাশালী সন্ত্রাসীর দল।তারা কাউন্টারে লাঠি জমা এই জন্যই নিশ্চয় রাখে যাতে অযথা কিছু করে একটা ঝামেলা বাঁধানো যায় এবং এই মারামারির সুযোগে ঘুরতে আসা মানুষদের কাছে থেকে মুল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেয়া যায়।শুনেছি সাফারী পার্কের মূল অংশে(যেটা অনেক ভেতরে এবং পুরোটা ঘুরে দেখতে বাস লাগে।এখানে আমরা প্রবেশ করতেই পারিনি।তাড়া খেয়ে আমরা তার আগের বাগানের মত অংশে আশ্রয় নিয়ছিলাম) ছিনতাই হয় নিয়মিত।ছাত্রীদের নিয়ে ঘুরতে আসা একজন স্কুল শিক্ষকের কাছে শুনলাম আগের দিনও নাকি এখানে কয়জনকে মেরে মাটিতে শোয়ানো হয়েছে এবং এমন ঘটনা নাকি প্রায়ই হয়।আমি ভেতরের একজন খালাকে বিষয়টা জিগাসা করলে তিনি কিন্ত এটা একদমই স্বীকার করেননি।


প্রথম দিকে তারা ২০ জন আর আমাদের ছেলেরা অনেক বেশি থাকায় দফায় দফায় মেরে আহত করা ছাড়া তেমন কিছু করতে পারেনি।কিন্ত আমরা যদি সংখ্যায় কম হতাম তবে সেখানে কারো প্রান যাওয়া অসম্ভব ছিলনা।ছাত্রদের কেউ কেউ বলেছে তারা নাকি এলাকার অন্য লোকদের ফোন করে ডাকছিল এবং ফায়ার আর্মসের কথা বলছিল।বিষয়টা আমি বিশ্বাস করছি কারন আমি নিজ চোখে দেখেছি যে কি নির্মম ভাবে ছেলেগুলোকে লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছিল।কিন্ত তাদের আসলে কোনো অপরাধ ছিলনা।এবং ঝামেলাটা লোকগুলো অনেকটা ইচ্ছা করেই বাঁধিয়েছিল।আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে স্থানীয় প্রশাসন এখানে নাক না গলালে এবং মন্ত্রী পর্যায়ে খবর না গেলে আমরা সুস্থ দেহে আজ ক্যাম্পাসে ফিরতে পারতাম না।

ডিসি সাহেব এসে অনেক আশ্বাস দিয়েছেন কিন্ত আমরা ফাঁকা বুলি শুনতে চাই না। আমরা চাই অপরাধির সাজা হোক।একটা পার্কে পিকনিক করতে গিয়ে যদি সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের ছাত্রদের প্রানের ঝুঁকি নিতে হয়,যদি আমাদের চোখের সামনে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা হয় তবে কেন আমরা ফাঁকা বুলিতে সন্তষ্ট থাকব?আমাদের দাবী…

১- ঘটনার সাথে যারা জড়িত আমাদের দেয়া ছবি এবং ভিডিও দেখে তাদের সনাক্ত করতে হবে।

২-জড়িতদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত আইনের আওতায় আনতে হবে।

৩-এমন ঘটনার পেছনে কাদের মদদ আছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং দিনের পর দিন কিভাবে তারা এত নির্ভয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে তা খুঁজে বের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪-গাজীপুর সাফারী পার্ক সহ অন্যসব জাতীয় উদ্যান আর এ জাতীয় অন্যসব ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে যাতে সাধারন ভ্রমনকারীর জানমাল রক্ষা পায় এবং তাদের কোনো অ্প্রীতিকর অবস্থায় পড়তে না হয়।

আপনি যদি গাজীপুর সাফারী পার্কে যাওয়ার প্ল্যান করে থেকেন তবে আরেকবার ভেবে দেখুন।আমাদের মত অবস্থা আপনারও হতে পারে কিংবা তার চেয়ে খারাপও হতে পারে।যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াইশ ছাত্রের একটা দলের উপর তুচ্ছ কারনে হামলা করতে দ্বিধা করেনা তারা ছোট একটা দলের সাথে কি করতে পারে একটু ভেবে দেখুন।আমি মোটেও আমার দেশের সাফারী পার্ক,ইকো পার্ক বা ন্যাশনাল গার্ডেন গুলোর বিরুদ্ধে প্রচারনা চালানোর জন্য লিখতে বসিনি।বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ সবসময় আমি খুব পছন্দ করে আসছি কারন দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগুলো খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্ত সেখানে বেড়াতে গেলে যদি নিজের জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্ন ওঠে তবে আসলেই ভেবে দেখার দরকার আছে আমাদের সবার।

প্রশাসনের কাছে আমার প্রশ্ন যে তারা কেন এমন একটা জায়গা খুলে বসবে যেখানে মানুষকে বেড়ানোর লোভ দেখিয়ে ডাকা হবে ঠিকই কিন্ত নিরাপত্তা দেয়া হবে না।গাজীপুরের প্রশাসনের কাছে আমি প্রশ্ন করতে চাই যে, আপনারা কি জানেন না এখানে প্রায়ই এমন ঘটনা হয়?তবে জেনে শুনে চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন কেন?ওখান থেকে পুলিশ ফাঁড়ী খুবই কাছে।ঘটনার সাথে সাথেই যখন আমাদের একজন শিক্ষক ফোন করে সাহায্য চাইলেন তখনই কেন পুলিশ আসলো না।যদি আসত তবে অনেকগুলো ছেলে অযথা মার খাওয়া থেকে বেঁচে যেত আর আমাদের এক লক্ষ বিশ হাজার টাকার আয়োজন পানিতে পড়ত না।সবচেয়ে বড় কথা নিজের বন্ধু, ভাই আর শিক্ষকদের একদল অশিক্ষিত সন্ত্রাসীর হাতে লাঞ্ছিত হতে দেখার দূর্ভাগ্য আমাদের হতো না।

এখানে দেখুন কিভাবে আমাদের এক সিনিয়র ভাইকে পেটানো হয়েছে



এখানে ডিসি সাহেব সকলকে শান্তনার বানী শোনাচ্ছেন



এখানে আতংকিত ছাত্রদের একদল পুলিশ ফোর্সের আশায় অপেক্ষা করছে



পুলিশ প্রহরায় পার্ক ত্যাগ করার সময়





দেখুন কি ভাবে মারামারির পর ছাত্রদের হাত থেকে ক্যমেরা কেড়ে নেয়া হচ্ছে।



গেটের বাইরে একজন ছাত্রকে পিটানো হচ্ছিল তখন একজন শিক্ষিকার প্রতিবাদ এবং ছাত্রীদেরর আতঙ্কিত চিৎকার।


দেখুন কি ভাবে এটি লোক মারার জন্য তেড়ে আসছে।


উত্তেজনার মূহুর্তে সবকিছুর ছবি বা ভিডিও ধারণ করা সম্ভব হয় নি। তবে যা ধারণ করা হয়েছে তার কিছু কিছু অংশ এখানে দেয়া হলো । ঘটনাটি আসলে দুঃখ জনক সাধারণ ভাবে আমরা যা দেখি তাতে ছাত্র গায়ে হাত দেয়া থেকে মানুষ বিরত থাকে কিন্তু একবার ভেবে দেখুন আড়াইশ জন ছাত্রের একটা দলের উপরে মাত্র ২০-২৫ জন যখন হামলা করতে আসে এমন তুচ্ছ কারণে তখন আসলেই আমাদের দেশে মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নতোলা প্রয়োজন হয়েপড়ে । এ বিষয় থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে এই চক্রটি অনেক দিন থেকেই এখানে ও পাশ্ববর্তী ট্যুরিস্ট স্পট গলোতে এই ধরণের আপরাধমূল কাজ করে আসছে। তারা প্রতিনয়তই এই ধরণের কাজ করে বিধায় তাদের কাউন্টারের ভিতরে লাঠি মজুদ থাকত না।কোন অজুহাত না থাকলেও এরা একটা অজুহাত তৈরি করে নিত। যেমন কোন মেয়েকে বিরক্ত করতো বা এধরণের কিছু । উদ্দেশ্যটি স্পষ্ট সাফারী পার্কে ব্যবসার পাশাপাশি এরা ঝামেলার সুযোগে ট্যুরিস্টদের দামী ক্যমেরা , মোবাইল ও অন্যান্য জিনিস-পত্র কেড়ে নেয়।


স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসা করে জানা গেছে এই ধরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে এখানে । কিন্তু প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয় নি। যার ফলে তাদের সাহস এতোটা বেড়েছে যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এতো বড় একটা দলের উপর হামলা করতে দ্বিধা করে নি। আমরা উচ্চ পর্যয়ের শিক্ষার্থী বিধায় আমরা এই বিষয়টি মানুষকে জানাতে পারছি এবং স্খানীয় প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে পেরেছি। কিন্ত অসহায মানুষজন যারা এই ধরণের ঘটনার শিকার হয় তার চুপচাপ মার খেয়ে চলে আসে।

আমার এই লেখাটির উদ্দেশ্য সকলকে সতর্ক করা এবং উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনের কাছে এ আবেদন পৌছে দেয়া যাতে এ ধরণের পার্কে বেড়াতে গিয়ে কারো জানমালের ক্ষতি না হয়। এ বিষয়টি স্পষ্ট যে প্রশাসন এই বিষয়গুলো অবহিত থাকা সত্তেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয় না। এতো বড় এটি স্থাপনায় কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নেই কেন?? এই প্রশ্নটিও আমি তুলতে চা্ই। ঘটনা জানার সথে সাথে নিকটস্থ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে কোন পুলিশ পাঠানো হয় নি কেন?


কেন এদের এতো সাহস হবে যে তারা অবলীলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলে। যাদের হাত দিয়ে হাত দিয়ে দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, মন্ত্রী, সচিব এমনকি রাষ্ট্রপতি একসময় শিক্ষা নিয়েছিল এবং এই মানুষ গুলোও তাদের শ্রদ্ধা করে,সালাম করে, তাদের গায়ে কেন একদল গুণ্ডা হাত দিবে? এবং এই ঘটনা ঘটার পরে কেন সুষ্ঠু বিচার হবে না?


আমরা চাই ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরা হোক এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক । আমার এই ঘটনার বিচার করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই যাতে ভবিষ্যতে দেশের আর কোথাও কোন গুণ্ডা-বদমাশের দল ছাত্র্র-শিক্ষকদের উপরে হামলা করার সাহস না করে।

আমাদের দেশে সম্ভবত একটা পার্কও দেখানো যাবে না যেখানে ছিনতাই বা রাহাজানি হয় না। এই ধরণের নিরাপত্তা হীনতায় দেশের প্রত্যেকটি ভ্রমণকারী কখনো না কখনো ভুক্তভোগী। কিন্তু প্রশাসন বরাবরের মতোই নিরব থাকে। আর কতদিন এমন চলবে??? একবার ভেবে দেখুন আমরা এতো বড় দলনিয়ে নিরাপদের বেড়িযে আসতে পারলাম না, সেখানে আপনি যদি শুধু আপনার পরিবার নিয়ে কোথাও বেড়াতে যান তাহলে এই ধরণের পরিস্থিতিতে আপনার কি হতে পারে। আপনি যতই সাবধানে থাকুন তাতে কোন লাভ হবে না কারণ তারা নিজেরাই অজুহাত তৈরি করে নেবে।
বাংলাদেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কম নয়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে সিকিউরিটি ফোর্স না থাকে তবে কেন এসকল জায়গায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। আমি মনে করি এখন সময় এসেছে প্রশাসনের হাজার বছরের নিস্তব্ধতা ভাঙ্গার এবং চোখ মেলে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার।
সারাদেশের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী কখনো না কখনো শিক্ষা সফরে এসব জায়গায় যায় সেখানে আপনার সন্তান বা আপনজনও থাকে।তাদের সাথেও এমন ঘটনা ঘটুক এটা আমাদের কাম্য নয়। তাই আমরা সকলের কাছে নৈতিক সমর্থন চাই যাতে আমাদের আন্দোলন সফল করতে পারি এবং কিছুটা হলেও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে নাড়া দিতে পারি, যাতে তারা এই অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট হয়। আপনাদের কাছে আবেদন এই যে আপনারা আমাদের পাশে থাকুন।

এই বিষয়টি নিয়ে গতকালই স্থানীয় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে । কিন্তু আমরা চাই না ব্যপারটি শুধু মামলা পর্যন্তই থেমে থাক । আমাদের কাছে যে ভডিও ও ছবি আছে সেগুলো দিয়ে খুব সহজেই অপরাধীদের সনাক্ত করা যাবে। এদের সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। এটাই আমাদের একমাত্র দাবি। আজ বিভাগের পক্ষ থেকে ভিসি বরাবর একটি স্মারক লিপি দেয়া হবে এবং দোষীদের শাস্তি দেয়া না পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

সন্ত্রাসীদের বোঝানোর সময় এসেছে যে সকলের সাথে যা ইচ্ছে তাই করে পার পাওয়া যায় না এবং প্রশাসনেরও বোঝার সময় হয়েছে যে সবসময় চোখ বন্ধ করে বসে থাকা যায় না।


আমাদের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়েছে তা এই লিঙ্ককে রয়েছে।আমরা সকলের নৈতিক সমর্থন আশা করছি।এখানে দেখুন
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫১
৪৮টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×