somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিবারানী কোম্পানী লিমিটেড

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিবারানী কোম্পানী নামকরণের ইতিহাসটা একটু পরে ব্যাখ্যা করি। তার আগে বলে নিই , আজ আমার বেস্টফ্রেন্ড, একমাত্র ছোটবোন, কুটনামি করার একমাত্র পারফেক্ট পার্টনার, একমাত্র উপদেশদাতা যার উপদেশ শুনলে আমার মনে হয় খুব একটা ভুল বলেনাই, সেই দিবার জন্মদিন। এই মেয়েটা যখন জন্মায় , দেখতে একটা ছোট্ট পাখির বাচ্চার মত হয়েছিল, এতই ছোট হয়েছিল যে সবাই দেখে ভয় পেয়েছিল। তিন বছর চারমাসের আমি দিবাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনার পর মাকে নাকি বলেছিলাম, "পাতালিহাস ( হাসপাতাল) থেকে এর চেয়ে বড় বাবু আনতে পারলে না?এই বাবুটা এখনো তো হাঁটতেই পারেনা, আমার সাথে তাহলে খেলবে কিভাবে? "



আমি নাকি ভোরবেলা হয়েছিলাম, খুব সুন্দর একটা সকাল হওয়ার আগে, এজন্য বাবা আমার নাম রেখেছিলেন সুষমা , যদিও নামটা এই হিসেবে রাখা হয়েছিল ( সু+ সমা= সুন্দর সময়) , কিন্তু সুসমা বানানটা দেখলেই মনে হয় ভুল বানান, তাই বাবা বাধ্য হয়ে সুষমা নামটাই রেখেছিলেন, যদিও এর অর্থ আলাদা। আর দিনের বেলা সগর্বে কাঁদতে কাঁদতে দিবা হয়েছিল দেখে ওর নাম রাখা হয়েছিল দিবা। কিন্তু সমস্যা হল, দিবা নামটা একটু বেশি সহজ, তাই ওর চেয়ে ছোট কেউ আর আপু বলে ডাকার কষ্ট করেনা ওকে, দিবা বলেই ডাকে। দিন যত বাড়তে থাকে, দিবার দুষ্টুমি ততই মাত্রা ছাড়াতে থাকে। ছোটবেলায় আমাদের পাড়ায় দিবার সমবয়সী বাচ্চা তেমন কেউ ছিলনা, দিবা মূলত আমার খেলার সাথীদের সাথেই খেলত, খেলত বলা ভুল হবে। খেলায় ডিস্টার্ব করত। একসময় সবাই রেগে গিয়ে ওর সাথে আড়ি নিতাম।তখন ও নিজে নিজেই অফিসের বস সাজত আর এমন ভাব দেখাত আমরা বাকি সবাই ওর অফিসের কর্মচারী। আমাদের সবার কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে অফিস থেকে ছাঁটাই করে দিয়েছে। ভাল কথা, দিবা তার কোম্পানীর নাম রেখেছিল- " দিবারানী কোম্পানী লিমিটেড।" দুইটা ছড়া বলে ওকে ক্ষেপাতাম, ছড়াটা শুনলেই সে রেগে যেত, এখন আর মনে নাই ছড়া দুইটার আবিষ্কারক কে। ছড়া দুইটা ছিল-



"দিবা বুচি

একলাই খেলে খোলাম কুচি,

বাঁশতলা তে ঘর

বাঁশের পাতা মাথায় দিয়ে

আল্লাহু আকবর কর !! "



আরেকটা ছিল-



"দিবারানী এন্ড কোম্পানী

খেলায় নেয়না কেউ

সেই দুঃখে সারাদিন

করে ভেউ ভেউ"



সে যাই হোক, দিবার মারের হাত কিন্তু বড় সাংঘাতিক ছিল। দেখতে ছোটখাট ছিল ঠিকই কিন্তু একেবারে মনের খায়েশ মিটিয়ে মারত আমাদের সবাইকে। সাইজে পিচ্চি , হাড় জিরজিরে দিবাকে অথবা ওর মায়া মায়া চেহারা দেখেই কিনা জানিনা আমি ওকে মারতে পারতাম না।যদিও কালের বিবর্তনে অথবা বংশের ফুটবল সাইজের ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এখন দৈর্ঘ্য প্রস্থ প্রায় একইরকম। তাই বলে ছোটবেলায় কিন্তু মা ওকে ছেড়ে দিত না। সকাল বিকাল অনেকটা রুটিন করেই মার খেত। তবে এই ধারাবাহিকতা রক্ষার পিছনে পুরা কৃতিত্বটাই কিন্তু দিবার ছিল। দুই একটা ঘটনা বললেই পরিষ্কার হবে। দিবাকে প্লেটে ভাত দেয়ার সময় অল্প ভাত দিলে সে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিত, “আমি অল্প ভাত নিব ( মানে আরো ভাত দিতে হবে, তার ডিকশনারিতে অল্প মানে বেশি) , তখন আবার প্লেটে ভাত দিলে বলবে, “ না, আমি বেশি ভাত নিব( বেশি মানে অল্প) ” । আবার ভাত তুলে নিলে কান্না শুরু। “আমার প্লেট থেকে ভাত নিলে কেন? আমি ভাত ই খাব না”। বেলায় বেলায় এরকম অত্যাচার করলে যে ভাতের বদলে মার খাওয়া জুটবে কপালে এ আর নতুন কি !



একদিন কি কারণে বাবা অনেক ব্যস্ত। তাড়াহুড়া করে কোন একটা কাজ করছিল কিন্তু দিবা বারবার গিয়ে বিরক্ত করছিল। এটা কি ,ওটা ওরকম কেন এইসব হাবিজাবি প্রশ্ন। আবার কিছু একটা জিজ্ঞেস করাতে বাবা রেগে গিয়ে বলে, এটা ঘোড়ার ডিম, খাবি? দিবা সাথে সাথে সোৎসাহে বলা শুরু করল, সে ঘোড়ার ডিম খাবে। রীতিমত কান্না শুরু করে দিল ঘোড়ার ডিম খাওয়ার জন্য। দাদী একটা হাঁসের ডিম এনে দেয়াতে সে বলে, " এটা তো ঘোড়ার ডিম না, ঘোড়ার ডিম আরো বড়। আমি ঘোড়ার ডিমই খাব।" দিবার অবিরাম কান্নার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাবা আবার বাজারে গিয়ে বড় বড় শাক আলু এনে দিয়েছিল। শাক আলু খেয়ে দিবা বিশেষজ্ঞের মত তার মতামত দিয়েছিল, "ঘোড়ার ডিমে কুসুম থাকে না" !!



আরো একটা কাজ দিবা তুমুল আনন্দের সাথে করত এবং প্রতিবার ই মার খেয়ে বলত আর করবেনা। কোথাও কোন ব্লেড বা কাঁচি পেলেই সোফার কাভার, মামনির শাড়ি, আমার জামাকাপড়, যতকিছু কাটাকটি করা যায়, প্রবল উৎসাহে করত। এমনকি মার বিয়ের শাড়িটা পর্যন্ত বাদ দেয়নি সে ! কাটার পর সেটা কিন্তু খোলা জায়গায় রাখত না সে মার খাওয়ার ভয়ে। খাটের নিচে লুকিয়ে ফেলত। দুই একদিন পর সেগুলো উদ্ধার হত আর সেই একই মারের ইতিহাস ! দিবা অবশ্য বলে, মায়ের মার খেয়েই নাকি মার দেয়ার অভ্যাস হয়েছিল তার।একদিন মা মারার আগে ওয়ার্ম আপ ঝাড়ি হিসাবে বলে যে, “দিবা, ভাত খাও ,তা না হলে কিন্তু অনেক মারব” । দিবা তখন বলে কি, “এহ ! আমার কি হাত নাই? তুমি মারলে আমিও মারব” ! এই কথা যেন আর দ্বিতীয়দিন না বলে, সেইজন্য মা কি করেছিল, তা সহজেই অনুমান করা যায়।



মায়ের কড়া নিষেধ ছিল, বাসায় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা যাবেনা। ঠিক এই কারনেই দিবার তুমুল আগ্রহ ছিল আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার। এমন কি পাড়া ঘুরে যত গালাগাল সব তার মুখস্থ তো হয়েছিলই এবং অবশ্যই মায়ের অনুপস্থিতিতে সে সেইটার সফল প্রয়োগ আমার আর ছোটফুপি রশিদার উপর করত। একদিন মা পাশের ঘরে আছে, দিবা আমাকে বলে, “ এ আপু, শোন। আমার না ভাল করি কতা বুলতি ভাল্লাগেনা। আমি একুন থেকি এরাম করিই কতা বুলবু , হবে? তুই আম্মুকে মইমন কুটনির মত বুলিস নি য্যান আবার।তালি কেন্ত তোকে মেরি ফাটি ফেলবু”(এটা মেহেরপুরের খাস আঞ্চলিক ভাষা)। কখন যে মা আমাদের পিছে এসে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনেছে, সেই খেয়াল নেই। ফলাফল আর নাই বা বললাম।



একদিনের ঘটনা আমার এখনো মনে আছে। আমি তখন ক্লাস টু তে পড়ি। স্কুল খুব একটা দূরে ছিলনা। আমি, পিয়াস, প্রিন্স এই বাড়ি, ওই বাড়ির উঠোন পার হয়ে দুই এক পাড়া পরেই আমাদের স্কুলে যেতাম। একদিন স্কুল থেকে আসার সময় কেন যেন আমি একা। আমাদের পাশের পাড়ার কোন একটা ছেলের সাথে পিয়াস আর প্রিন্সের মারামারি হয়েছিল। সেদিন আমাকে একা পেয়েই মনে হয় ওই ছেলেটা আমাকে মারে। আমি ভ্যাবলাকান্তের মত মায়ের শেখানো অহিংস নীতি অনুসরণ করে কিছু না বলে বাড়িতে চলে আসি। এসেই দাদীকে কাঁদতে কাঁদতে বলি, অমুক মেরেছে। দিবা তখনো স্কুলে যায়না। দিবা শুনে বলে, কে মেরেছে তোকে? আমি বললাম ,তুই চিনবি না। ও বলে ,তাহলে চল আমাকে চিনিয়ে দে। আমি আর অতশত বুঝিনি। ওকে নিয়ে সেই ছেলেটার কাছে যেতেই দেখি দিবা কোন কথাবার্তা না বলেই সেই ছেলেটারপিঠে দুমদুম কিল শুরু করে দিয়েছে। ওই ছেলেটা এত হতভম্ব যে উল্টো দিবাকে মারার ব্যাপারটা তার মাথাতেই আসেনি। কয়েকটা কিল দেয়ার পর দিবা সেই ছেলেটাকে শাসিয়ে বলে- " তোর এত বড় সাহস? আমার আপুকে মারিস! আর মারবি কোনদিন?" এই ঘটনাটা আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা। আমার পরিচিত খুব কম মানুষ আছে, যাদের এই ঘটনার কথা আমি বলিনি।





দিবা তখন সবেমাত্র স্কুল যাওয়া শুরু করেছে। কিন্তু হোমওয়ার্ক করতে বসানো ছিল রীতিমত আজাবের ব্যাপার। এই হোমওয়ার্ক করতে গিয়েই প্রতিদিন মার খেত দিবা। তবুও একবার জেদ ধরলে সহজে ওকে আর পড়তে বসানো যেত না। মার খেয়ে ওর অভ্যাস হয়ে গেছিল , পরে আর মার দিলে কাজ হত না। কদিন পর মা আবিষ্কার করে, আমাদের বাসায় কন্সট্রাকশন এর কাজের ইট ধোয়ার জন্য ছোট্ট একটা পানির হাউজ বানানো হয়েছিল। ওইটার ময়লা পানি দিবা রীতিমত ঘৃণা করে। মা একদিন বলে, “পড়তে বস নাইলে কিন্তু নোংরা ট্যাঙ্কির পানিতে তোকে চুবাব”। দিবা সুড়সুড় করে ভাল মানুষের মত পড়তে বসে যায়। তবে এই থেরাপি ও সপ্তাহ খানেকের বেশি কাজ করেনা। একদিন সত্যি সত্যিই মা দিবাকে ওই ট্যাঙ্কির পানিতে নামায়ে দেয় জোর করে। আমি মার ঠেকানোর চেষ্টা করে আগেই দুই একটা খুচরা চড় থাপ্পড় খেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওকে ট্যাঙ্কির পানিতে নামিয়ে মা যখন চলে গেল, আমার মনে হল দিবা ডুবে যাচ্ছে। ওকে তুলতে হবে। ট্যাঙ্কির পানি দিবার গলা পর্যন্ত। আমি উবু হয়ে দিবার হাত খুঁজে পাচ্ছিলাম না।কান ধরে টান দিয়ে কাছে এনে পরে ওর হাত টেনে তুলে ফেলি। দিবা উপরে উঠার পর প্রথম যেই কাজটা করেছিল তা হল ,আমাকে একটা থাপ্পড় মারা। কাঁদতে কাঁদতেই আমাকে ঝাড়ি দিয়েছিল, " আমার কান ধরলি কেন তুই” !! তখন বুঝলাম, এইজন্য গুরুজনরা ঠিক কথাই বলে, মানুষের ভাল করতে নেই মোটেই !



ফুপীদের বিয়ের পর একসময় ঘর আলাদা হল আমার আর দিবার। তাতে আমার জ্বালাতন যে বহুগুণ বেড়ে গেল, তা না বললেও সবাই বুঝে যাওয়ার কথা। আমরা ছিলাম আর্লি রাইজার। এইজন্য অবশ্য দশটা বাজার আগে ঘুমাতেও যেতাম! মাঝে মাঝে রাত একটা দুটোর সময় দিবা ঘুম ভেঙ্গে আমাকে গুতোগুতি শুরু করত। জেগে গেলে বলত, "আপু, আয় মারামারি করি। " চোখ কপালে তুলে আমি ধমক ধামক দিয়ে বলতাম, “এত রাতে ! ঘুমা তুই” ।কিন্তু দিবার খায়েশ বলে কথা। সে প্রথমে আমাকে একটা কিল মারত।ব্যথা সহ্য করে আমি চোখ বন্ধ করে আবার ঘুমানোর ভান করতেই দিত আবার কিল। বিরক্ত হয়ে ওকে ঝাড়ি দিলে আবার বলত, “তুই আমাকে বকলি কেন! এই নে মাইর খা”। এই বলে উঠে বসে দুমদুম মার শুরু করত।তখন কি আর আমি ছেড়ে দেই ! আমিও শুরু করতাম মাইর। আর মারামারির শব্দে মামনি পাশের রুম থেকে ঘুম থেকে উঠে এসে ওকে পাজাকোলা করে নিয়ে যেত। সপ্তাহ খানেক যেতে না যেতেই আবার এই কাহিনীর পুনরাবৃত্তি ঘটত। মাঝারাতে মারামারির খায়েশ যে কেন জাগত এর তাৎপর্য বাসার কেউ আজ পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারিনি আমরা !



সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকতাম বলে সবসময়ই চরম্পন্থীদের উৎপাত ছিল, বিশেষত শীতকালে। প্রায়ই শুনতাম অমুক বাড়িতে ডাকাতি, বাজারের বড় দোকানের মাল লুট এইসব। একবার এরকম শীতকালে বাবা অফিসের কাজে বাড়ির বাইরে ছিল। অনেক রাতে দরজার খটখট শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। মা আমাদের দুই বোনকে কোথায় লুকাবে, সেই চিন্তায় দিশেহারা অবস্থা। এর মাঝে একটা টর্চ হাতে নিয়ে দিবা মাকে বলে, মা, তোমরা লুকাও। আমি ছাদে গিয়ে দেখে আসি। যদি ডাকাত হয়, তাহলে মাথায় ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দেব। সোয়েটার ভিজে ঠান্ডা লেগে জ্বর আসবে আর মরে যাবে। এরকম একটা মারদাঙ্গা আইডিয়া অবশ্য মায়ের মনে ধরেনি।দরজার এপাশ থেকে "কে কে" বলে চিৎকার করায় জানতে পারে কয়েক বাড়ি পরের আঙ্কেল দরজায়। উনার বাচ্চা খুব অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ডাক্তার বাবাকে ডাকতে এসেছিলেন।



আমি ক্যাডেট কলেজে চলে যাবার কয়েকদিন আগে থেকে বাবা মার মন খারাপ কিন্তু দিবার খুশি আর ধরেনা! ওকে জিজ্ঞেস করতেই বলে, আল্লাহ বাঁচাইসে। তুই মুটকি না থাকলে আমি পুরা খাটে আরামসে ঘুমাইতে পারব।এই কথা শুনে ব্যাপক মন খারাপ হয়েছিল কিন্তু কলেজে গিয়ে মাকে মিস করার আগে দিবাকে একবার বুকের মধ্যে নেয়ার জন্য বেশি খারাপ লাগত ! দ্বিতীয় টার্মে কলেজে গিয়ে আমার বার্থডের পরদিন একটা চিঠি পেলাম । মায়ের চিঠির সাথে দিবার চিঠি। চিঠিটা এখনো আমি রেখে দিয়েছি। চিঠির পিছনে দিবার আঁকিবুঁকি। একটা টেবিল আঁকা ছিল, টেবিলে একটা বার্থডে কেক, মোমবাতি । চিঠিটাতে লেখা ছিল-



"অনেক বৃষ্টি হয়। আম্মু একটা জামা কিনেছে তোমার জন্য।তোমার জামাটা আমার পছন্দ হয়েছে। বাবা অনেক চকলেট এনেছিল।আমি একটাও নিইনি। তোমাকে সব পাঠিয়ে দেব। আমি তো চকলেট কিনতেই পারি বজলু আঙ্কেলের দোকান থেকে।কিন্তু তুমি তো পাবেনা। তুমি কিনতে বাইরে গেলে তো তোমার স্যাররা মারবে,তাইনা আপু? তুমি কি দুধ খাও এখন? একটা বুদ্ধি আছে । দুধের মধ্যে ময়লা দিয়ে দিবা।তখন স্যারদের বলবা, এই দুধ খেলে অসুখ হবে।তখন আর খেতে হবেনা। আমি একটা কবিতা লিখেছি। তুমি বাড়ি আসলেও পড়তে দিব না । তোমার টেবিলটা আমি নিয়ে নিয়েছি। টা টা । " - পিচ্চি



চিঠিটা পেয়ে কি যে করব বুঝতে পারছিলাম না। একবার পড়ে হাসি, একবার পড়ে চোখ মুছি, একবার রুমমেটদের পড়ে শুনাই ! এতটুকু পিচ্চির এতাল বেতাল ভালবাসা রেখে দেয়ার জায়গা আমার ছিলনা তখন !



আমি তখন প্রথম প্রথম ভার্সিটিতে। ছুটি পেয়ে বাড়িতে গেছি। আসার আগেরদিন দিবা ব্যাগ থেকে ১৫০ টাকা বের করে আমার হাতে দেয়। বলে, “আপু, আমার উপবৃত্তির টাকা। তুই তো হলে থাকিস, অনেক খরচ। তুই রাখ এই টাকাটা । আমার লাগবেনা” । আমার জন্য ১৫০টাকা হয়ত খুবই সামান্য ছিল, কিন্তু, এর ভিতরে যে অসামান্য এক বোনের ভালবাসা লুকিয়ে ছিল, তার মূল্য দেয়া এই জীবনে সম্ভব না হয়ত।



যখন আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বিপর্যস্ত সময় পার করেছি ( চোখ পিটপিট করার কিছু নাই, ঠিকই ধরেছেন, প্রেম ভালবাসা জনিত জটিলতা :P ) , সেই সময় আমার পাশে ছিল দিবা , হঠাত করেই হয়ে উঠেছিল বড় বোন , কখনো বেস্ট ফ্রেন্ড। এই পিচ্চিটা অনেক বড় হয়ে গেছে জানি, কিন্তু কেন যেন আমার চোখে সেই ছেলেবেলার দিবার ছবিটাই বারবার ভেসে ওঠে। এখনো দিবা জ্বরে পড়লে আর মাইগ্রেনের ব্যথায় কষ্ট পেলে বারবার মনে হয়, আহারে, পিচ্চিটা না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে। মা ওর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করলেই বলি, থাক, ছোটমানুষ তো ! বাদ দাও না ।



দিন যায়। আমরা বেড়ে উঠতে থাকি কিন্তু বয়স বাড়েনা আমাদের পুরনো সেই সম্পর্কের। যত খুনসুটি, ভালবাসা, মারামারি, আদর, অভিযোগ সবকিছু ছাপিয়ে অদ্ভুত একটা বন্ধন আমাদের। তাই দুদিন কথা না হলেই হাঁসফাঁস লাগে এই মেয়েটার জন্য। মনের অজান্তেই বারবার প্রার্থনা করি, আমার বোনটা ভাল থাকুক, অনেক অনেক সুখে থাকুক। একজন আলোকিত মানুষ হোক।

আজকের দিনে দুনিয়ার সব শুভকামনা দিবার জন্য। শুভ জন্মদিন পিচ্চি ।
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

EU বাংলাদেশ, আফ্রিকা ও আরবদের সাহায্য করার চেষ্টা করে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১০ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৩



EU বাংলাদেশকে বিবিধভাবে সাহায্য করে আসছে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে; বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে সচল করার জন্য সহযোগীতা করতে চায়। আমাদের দেশে ও আফ্রিকায় ভালো যা ঘটছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে কোকের আতারোট শিল্প অঞ্চলের কারখানা: ফিলিস্তিনি স্টেইটহুড, স্বনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে অসমম্মান করে।

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১০ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:১৭

কোকা-কোলার পূর্ব জেরুজালেমের আতারোট শিল্প অঞ্চলের কারখানাটিকে ঘিরে শুরু থেকেই তীব্র বিতর্ক আছে। এই এলাকাটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অধিকৃত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

জঘন্যতম রেফারির বলি বাংলাদেশ

লিখেছেন অধীতি, ১১ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:২১

আজকে রেফারি খেলছে মূল খেলা। গতকালকে পাকিস্তান লর্ডগিরি করে হারছে কিন্তু এই দিক থেকে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছে। দুইটা ওয়াইড দেয়নি। রেফারি তিনটা আউট দিছে তাড়াহুড়ো করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিপক্ক প্রেম: মানসিক শান্তি

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১১ ই জুন, ২০২৪ রাত ২:৩০






জীবনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে পৌঁছানোর পর, মানুষ যখন পরিপক্ক হয়ে ওঠে, তখন প্রেমের মাপকাঠি বদলে যায়। তখন আর কেউ প্রেমে পড়ার জন্য শুধু সৌন্দর্য, উচ্ছ্বলতা, কিংবা সুগঠিত দেহ খোঁজে না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রবীন্দ্রনাথের শেষ কটা দিন কেমন কেটেছিল?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১১ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:১১




১৯৪১ সালে জীবনের শেষ দিনগুলোয় অসুখে ভুগছিলেন কবি। সারা জীবন চিকিৎসকের কাঁচি থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছেন, এবার বুঝি আর তা সম্ভব নয়। হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি চলছেই। কিন্তু কিছুতেই কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

×