somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জার্নি বাই মেমোরি (গল্প)

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু আগেই ঘুম থেকে উঠেছে অর্ক। এত সকালে সাধারণত ঘুম থেকে ওঠে না সে। রুমমেট অর্নবের খুঁটখাট শব্দ উঠতে বাধ্য করেছে অর্ককে। অর্নব নীল জিন্স আর অফ হোয়াইট পাঞ্জাবী পড়ে অর্কের অস্ট্রেলীয় খালার পাঠানো বডি স্প্রে টা খালি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আজ ভালোবাসা দিবস। অর্নব ঘুরতে যাবে। সাথে থাকবে গোল গাল চেহারার রক্তশূন্য মেয়েটি। কি যেন নাম মেয়েটার? অর্পিতা! মনে পড়েছে অর্কের। দু’বছরের রিলেশন ওদের। গত বছরও ওরা ঠিক এভাবে ঘুরতে বেড়িয়েছিল। ব্রহ্মপুত্রের পাড় ধরে হেঁটে হেঁটে অনেক দূর গিয়েছিল। ‘আমার খাবার অফ করে দিস! গেলাম...’ মোবাইল টা চার্জ থেকে খুলে তড়িঘড়ি করে চলে যায় অর্নব। বকুলতলায় ওর জন্য অপেক্ষা করছে অর্পিতা।

অর্কও আজ ঘুরবে। ঠিক গত বছরের মত। দরজাটা লাগিয়ে লকার থেকে ল্যাপটপ বের করে অর্ক। তারপর ওর লুকিয়ে রাখা সম্পদ গুলো বের করে। আর্কাইভ করে রাখা অনুর পাঠানো হাজার হাজার এসএমএস! প্রতিবার শেষ থেকেই ভ্রমণ শুরু করে অর্ক।

শেষ দিন (৩০ আগস্ট, ২০১০):

“কাল যাচ্ছি।

জানি। ভোরে যাবে।

তোমার কি খারাপ লাগছে?

না। আমি আনন্দে নৃত্য করছি

মন খারাপ করো না

কেন করব না?

করবে? তো করো!

করেই তো আছি

তোমাকে টেক্সট করাটা আর আমার উচিৎ হবে না

করিও না

বিয়ে কবে?

১৯ অক্টোবর

মনে হয় মিস করব

কি মিস করবে? বিয়ে নাকি আমাকে?

বিয়ে

তোমার সামনে ফাইনাল না?

হুম

কাল যেয়ে চোখ-কান বন্ধ করে পড়া শুরু করে দেবে। আমি আর বিরক্ত করব না।

তাই নাকি? আচ্ছা প্রথম টেক্সটা কি মনে করে করেছিলে?

তোমাকে মনে পড়ছিল তাই। কেন?

না এমনিতেই। বলছিলাম ব্যাপারটা কেমন যেন। এইযে তোমার সাথে আমার কোন যোগাযোগ ছিল না। হঠাৎ টেক্সট এল। আস্তে আস্তে আমরা কত ক্লোজ হয়ে গেলাম। বিচ্ছেদের সময়টাও হঠাৎ করেই চলে এল। ডিউরেশনটা খুব কম তাই না?

হ্যা খুবি কম। তোমার কি আমার কথা কখনো মনে হয়েছিল?

সত্য বললে কষ্ট পাবে

সহ্য করতে পারব

আমার ড্রিম গার্লের কথা বলেছিলাম। মনে পরে? গার্ল টা তুমি ছিলে!

পরেছে

উত্তর পেয়েছো?

পেয়েছি

কি মনে হচ্ছে? সবাই একি রকম?

না

তবে?

কিছু না। তোমার কথাগুলো কি ভুলে যাব?

শর্ত তো এমনই ছিল মনে হয়

গেলাম

আমার কুৎসিত পরিচয়টা তোমাকে জানিয়ে দিলাম। হঠাৎ কখনো মনে পরলেও আর যোগাযোগ করার ইচ্ছে করবে না।

যদি খুব বেশী মনে পরে তখন কি করব?

বেশী মনে পরার তো কোন কারণ দেখি না।

পৃথিবীতে কারণ ছাড়াও অনেক কিছু ঘটে অর্ক

আমাকে মাফ করতে পারবে নাকি পারবে না?

কেন?

অনুমতি না নিয়ে কারো হৃদয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা কি অপরাধ নয়?

এতদিন ছিল না তবে এখন অপরাধ

তুমি সত্যিই অনেক ভালো একটা মেয়ে। দেখিও তোমার বরও অনেক ভালো হবে।

থ্যাঙ্কস। তুমিও অনেক ভালো

মনে হয় না

বললাম আর বিশ্বাস হল না? এ জন্যই তো বলতে চাই না

আর বলারও সুযোগ পাবে না। তোমাকে অনেক মিস করব রে

আমি কাউকে মিস করব না

আমার গাইতে ইচ্ছে করছে- “চলে যদি যাবি দূরে স্বার্থপর... তবে কেন জোছনা দেখালি...??”

আমি তোমাকে জোছনা দেখাইনি

তবে টেক্সট করেছিলে কেন?

আমি কি জানতাম কুসুমেও কীট থাকে?

আরে এমনিতেই মজা করলাম। কে আগে বাই বলবে তুমি না আমি?

তুমি

শুরুটা তুমিই করেছিলে, শেষটাও তুমিই করবে

বিশ্বাস করো আমি এমন শেষ চাইনি অর্ক। পৃথিবী তোমার আমার ইচ্ছায় চলে না। স্বার্থপরকে পারলে ক্ষমা করে দিও। সব কলি ফুল হয় না অর্ক। তবে কষ্টে কষ্টে কাটাকাটি হয়। ভালো থেকো... বাই ”

সেদিন শেষ বাই টা ইচ্ছে করেই বলেনি অর্ক। বাই মানে শেষ! কিন্তু অর্কের তো কিছু শেষ হয়ে যায় নি! অণু তো আর্কাইভে সেই আগের মতই আছে! আজো চোখ বন্ধ করলে সে অণুর ভেংচি কাটা মুখ দেখতে পায় সে। না, অর্কের প্রথম পছন্দ, প্রথম ভালোলাগা হারিয়ে যায়নি। হয়তো একসাথে হাতে হাতে রেখে নদীর পাড় ধরে হাঁটার সৌভাগ্য তার কোন কালেই হবে না, কিন্তু সে তার নিজের সাজানো জগতে আজীবন সেই অনুর সাথেই ঘুরবে। সে মিছেমিছি বাই বলবে কেন?

পরের ফাইল ওপেন করে অর্ক। ২৯ আগস্ট, ২০১০ ইং: … … …
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×