somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু গল্পঃ ২

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- আমি পুরো পেমেন্ট ছাড়া কাম করি না , বাজারে আমার নাম ডাক আছে । ট্যাকা নিছি আর কাম হয় নাই এই রেকর্ড মাজু কসাইয়ের নাই ।

- বললাম তো , কাজ হবার পরে আপনাকে আরো ১ লক্ষ টাকা বাড়তি দিবো । এখন পাবেন ১ , আর কাজ শেষে ২ ।

- এক কাম করেন , এহন ২ লাখ দেন , কাম শেষ হইলে বাকী এক লাখ দিয়েন । রাজি হইলে মাল ফেলেন নাইলে রাস্তা মাপেন ।

মুন প্রাইভেট কোম্পানীর ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তার সামনে বসে থাকা মানুষ টি কে লক্ষ্য করছে । শীত পড়ে নি তারপরও মানুষটি মাফলার দিয়ে মাথা ও গলা ঢেকে রেখেছে । চোখ দুটো উজ্জ্বল , বেশীক্ষন তাকিয়ে থাকলে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে , মনে হয় চোখের দিকে তাকিয়ে ভিতর টা পড়ে ফেলবে । তবে মধ্য বয়স্ক মানুষটির আত্ববিশ্বাস স্বস্তিদায়ক ।

- আচ্ছা আজ ১ রাখুন , একটা ঠিকানা দিচ্ছি কাল বেলা ৩ টায় চলে আসুন । যাকে শেষ করতে হবে তার বিস্তারিত ও আরো এক লক্ষ টাকা নিয়ে আসবেন ।

মাহমুদুল হাসান পকেট থেকে একটা রিসিট বের করে তার পিছনে ঠিকানা টা লিখে মাজু কসাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিলো ।

-মনে থাকবে তো , বেলা ৩ টায় ।

-আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন , মাজু কসাই এক কথার মানুষ ।


এপার্টমেন্টের সামনে একটি হলুদ টেক্সি ক্যাব থামলো । মাজু কসাই তার বুক পকেটে থাকা ঠিকানা মিলেয়ে দেখছে , হুম ঠিকানা ঠিক আছে । ফ্লাট নাম্বার লেখা আছে সিক্স বি ।

- কামাল , তুই একটু দূরে গিয়া গাড়ির ভিতর বইসা থাক । আমার বেশীক্ষন লাগবো না ।

এই বলে টেক্সি ক্যাব থেকে নেমে সোজা গেটের দিকে পা বাড়ায় মাজু কসাই । দারোয়ান কে ঠিকানা লেখা কাগজ টা দেখাতেই লিফট দেখিয়ে দেয় ।

বেল বাজাতেই দরজা খুললেন মাহমুদুল হাসান ।

-ভিতরে আসুন , আমরা আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি ।

-আমরা মানে ?

- দেখুন , আপনি যে কাজে এসেছেন সেটাই করুন , এরচেয়ে বেশী কিছু জানা আপনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না ।

মুহুর্তে নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাজু কসাই বিব্রত বোধ করতে থাকে । চার পাশে চোখ বুলায়, পুরো ঘরে এক সেট সোফা ছাড়া আর কিছুই নেই । তার মানে এইখানে কেউ স্থায়ী ভাবে থাকে না ।
এর মাঝে ভিতরের রুম থেকে এক সুন্দরী ভদ্র মহিলা বের হয়ে এলো । মাজু মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে , কত হতে পারে তার বয়েস ৩০ কিম্বা ৩৫ ।

- বসুন , আপনাকে নিশ্চই হাসান সব কিছু বলে দিয়েছে ?

- না , সব কিছু বলে নাই , শুধু বলছে একজন কে খতম করতে হইবো । এহন আপনে কন কিভাবে কি করন লাগবো ?

- আপনি প্রোফেশনাল , আপনিই ভাল বুঝবেন কিভাবে করলে ভাল হয় । আমার দরকার এই মানুষটি কে পৃথিবী থেকে বিদায় দেয়া ।

এই বলে ইয়াসমিন একটি ছবি মাজু কসাইয়ের দিকে বাড়িয়ে দেয় । মাজু ছবি থেকে চোখ না সরিয়ে বলে উঠে

- ঘটনা হইবো ছিনতাইকারীর হাতে মৃত্যু , ঢাকা শহরে প্রতিদিন ছিনতাই হয় । পুলিশ এইটা নিয়া মাথা ঘামায় না ।

মাহমুদুল হাসান প্রায় উচ্ছাসে বলে উঠে
- চমৎকার ! ম্যাডাম আপনি এর উপর ভরসা রাখতে পারেন , এই কাজে মাজু কসাইয়ের নাম-ডাক আছে ।

মাজু ইয়াসমিনের দিকে তাকায় ,

- এই লোক এখন দেশের বাহিরে , দুইদিন পর দেশে ফিরবে ।

ইয়াসমিন সব বুঝিয়ে বলে , কথার মাঝে মাঝে মাজু কসাই ও জিজ্ঞেস করে তার প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিচ্ছিল ।
কথা শেষ হবার পর হাসান টাকা ভর্তি একটি খাম মাজু কসাইয়ের দিকে বাড়িয়ে দেয় ।

- দশদিন সময় নিলাম , নাকে তেল দিয়া ঘুমান । দশদিনের আগেই কাম হইয়া যাইবো । মাজু কসাই এক কথার মানুষ ।

কাক ডাকা ভোর, হেমন্তের হিমেল হাওয়া বইছে । পূর্বদিকে সুর্যমামা লালচে কিরন বিলাচ্ছে । মাজু কসাই সস্তা সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে আকাশ দেখছে । তার সঙ্গী কুনই দিয়ে খোচা দেয় ।

-ওস্তাদ ঐ যে আইতাছে ।

মাজু কসাইয়ের স্নায়ু জেগে উঠে , সে দেখতে পেল একজন মধ্যবয়স্ক লোক ট্রাকসুট পড়ে জগিং করতে করতে এইদিকেই আসছে । ৩ জনের দল টি হাটা শুরু করে ।

মধ্যবয়স্ক লোকটি কিছু বুঝে উঠার আগেই ৩ জন তাকে ঘিরে ধরে , চেংড়া মত একটি ছেলে ছুরি বের করে বলে

-যা আছে বাইর কর ।

আকস্মিক ঘটনায় যখন মধ্যবয়েসি লোকটি নির্বাক , এর মাঝেই মাজু কসাই চাদরের ভিতর থেকে তার প্রিয় ছুরি টি বের করে লোকটির পেটের উপরিভাগে বিদ্ধ করে দেয় । তার কাছ থেকে মানিব্যাগ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় নি ।

মাজু কসাই তার নিরাপদ আস্তানায় এসে মানিব্যাগ টি তার হাতে নেয় , খুলেই একটি সাদাকালো ছবি দেখতে পেল । আজকের খুন হয়ে যাওয়া মানুষটির পাশে লজ্জায় অবনত একটি তরুনী । তরুনী টি কে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে । হটাৎ সে ইয়াসমিন কে চিনতে পারলো ।


বিঃদ্রঃ পরদিন পত্রিকায় আসলো , ছিনতাইকারিদের হাতে বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ছুরিকাঘাতে খুন ।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×