somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মন্টু মিয়া মাল খোঁজে, হুইপ খোঁজে ক্যাশ!

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মন্টু মিয়া ধোলাই খালের একজন পুরোনো লোহা ব্যবসায়ী। পুরোনো লোহার ব্যবসা করে বেশ টাকা জমিয়েছেন তিনি। তাই তার বন্ধুবান্ধব এমনকি আত্মীয়-স্বজনরাও উপদেশ-পরামর্শ দিলো শেয়ার ব্যবসা করার জন্য। তারা মন্টু মিয়াকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করলো, পুরোনো লোহায় আর কয় টাকা ব্যবসা! এখন সব ব্যবসা তো ওই শেয়ার মার্কেটেই।
৯৬ সালের কথা। তখন ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিলের দিকে হেঁটে আসা বেশ দুঃসাধ্য কাজ ছিলো। চারিদিকে মানুষ আর মানুষ। গুলিস্তানের ফুটপথের দোকানদাররা যেমন কেউ গলা ফাটিয়ে, কেউ সুর করে পণ্যের দাম হেঁকে খরিদ্দার আকর্ষণ করে। ঠিক তেমনি স্টক এক্সেঞ্জ বিল্ডিংয়ের সামনের ফুটপথে শেয়ার ব্যবসায়ীরা হাঁক-ডাক দিয়ে শেয়ার বিক্রি করতেন।তখন ছিলো কাগজের শেয়ার।ইলেকট্রনিক শেয়ার আসলো তো এই সেদিন। তখন টাকা দিয়ে মানুষ কোম্পানীর শেয়ার নামের কাগজই কিনতো এবং বেঁচতো। ফুটপথ ছাড়িয়ে প্রায়ই ভিড় রাস্তায় গিয়ে পড়তো। কখনও কখনও ভিড় এমন হতো যে রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যেতো।
লোহা ব্যবসায়ী মন্টু মিয়ার একাডেমিক শিক্ষা ছিলনা মোটেই। শেয়ার ব্যবসা সম্পর্কে কোন ধারণাও ছিলো না তার। সবার কাছ থেকে শুনতো, কোম্পানী কিনে আবার কোম্পানী বেঁচতে হয়। অনেক বড় ব্যাপার-স্যাপার মনে হতো তার। আস্ত এক একটা কোম্পানী কিনে আবার সেটা বেচতে হবে- শেয়ার ব্যবসা সম্পর্কে এরকমই একটা প্রচ্ছন্ন ধারণা জন্মেছিলো মন্টু মিয়ার। তারপরও শিক্ষিত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের অবিরাম পরামর্শ ও উপদেশের ঠেলায় পড়ে শেয়ার ব্যবসা করার মন নিয়ে একদিন মতিঝিল চলে আসলেন মন্টু মিয়া। সাথে হালি দুয়েক শেয়ার ব্যবসায়ী আত্মীয়-বন্ধুও আছে। মন্টু মিয়া যখন ডিএসই-এর সামনে পৌঁছালেন তখন তো তার চক্ষু চড়ক গাছ। এত মানুষ?
কিন্তু একটা বিষয় মন্টুর মোটেও মাথায় আসছে না! মাল কোথায়? হাক-ডাক করছেন সবাই। টাকা গোনাগুনিও হচ্ছে ফুটপথে দাঁড়িয়েই। কিন্তু মাল কই?? মন্টু মিয়া তার পাশে থাকা পাকা শেয়ার ব্যবসায়ী এক আত্মীয়কে জিজ্ঞাসা করলেন, এরা সব রাস্তায় খারাইয়া ফাল পারতাছে, কিন্তু মাল কই??
আত্মীয় একটা শেয়ার ধরায়ে দিলো মন্টু মিয়ার হাতে। বললো, এই যে মাল! মন্টু মিয়া তো থতো-মতো! নিজে পড়তে পারে না ঠিকই কিন্তু পড়তে পারলেই কি? কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে সে কি এই কাগজ কেনার জন্যই এখানে এসেছে?
মন্টু মিয়া খুব বিনয়ের সাথেই সাথে থাকা সবাইকে বুঝায়ে বললো, না ভাই এইটা আমার কাম না। চটের ব্যাগ দেখায়ে বললো আমি এই টাকা নিয়া আইছি মাল কিনবার জন্য। কাগজ কিনাবার জন্য না। আসার সময় কয়জন লেবারও ঠিক করে আসছি। ভাবছিলাম একটা কোম্পানীতে তো ম্যালা মাল থাকে। ক্যামনে কি করুম। এখন দেখছি হুদাই কাগজ। এই টেকা দিয়া কাগজ কেনা ব্যবসা আপনারাই করেন। আমি যাই গা!
অনেকেই মন্টু মিয়াকে তখন অশিক্ষিত, বোকা ইত্যাদি মনে করলেন।অস্ফুট স্বরে বলেও ফেললেন কেউ কেউ। কিন্তু তারপরও নিজের টাকা নিয়ে নিজের ঘরেই ফেরত গেলেন মন্টু মিয়া।
এর কয়েক দিন পরই ধ্বস নামলো শেয়ার ব্যবসায়। মন্টু মিয়ার আত্মীয়-বন্ধুদের অবস্থা বারোটা। মন্টু মিয়া তখন সেই অতিবুদ্ধিমানদের দুরাবস্তার কথা চিন্তা করে হাসলেন শুধু।
গল্পটা ছিয়ানব্বই সালের শেয়ার কেলেঙ্কারীর সময়কার বেশ জনপ্রিয় গল্প। কিন্তু আমি ছিয়ানব্বয়ের গল্পের অবতারণা কেন করলাম এই দুইহাজার চৌদ্দতে এসে?
গল্পটা এজন্য বললাম যে, ফিরোজরা শেয়ার ব্যবসায় থাকলেও কখনও ধরা খান না। কারণ তারা সব সময়ই ধরা দেয়ার দলে থাকেন। নিশ্চয়ই বুঝেছেন আমি কোন ফিরোজের কথা বলছি। শিল্প-ব্যবসায় যার অবাধ বিচরণ সেই সরকারদলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের ক্যাশ বাণিজ্যের কথাই বলছি। তবে কথা হলো, হুইপ ফিরোজই যে নেতা-কর্মীদের কাছে প্রথম ক্যাশ চেয়েছেন ঘটনা মোটেও তেমন নয়। ক্যাশ চাইতে, ক্যাশ নিতে এবং ক্যাশ বাগাতে বাংলাদেশের এমপি-মন্ত্রী-উপদেষ্টা থেকে শুরু করে নেতা-পাতিনেতা কারোরই অভিজ্ঞা বিন্দুমাত্র কম নয়। বা প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ক্যাশ চাওয়াটাও খুব বড় কোন ঘটনা নয়। বড় ঘটনা হচ্ছে আসম ফিরোজ সম্মাননা ক্রেস্ট নিতে চান নি। ব্যক্তি কীর্তণ করা কম্পিউটারে প্রিন্ট এক পিচ কাগজ এই সম্মাননা পত্র। স্থানীয় নেতা-কর্মী-সাগরেদরা এই একপিচ কাগজ নিয়ে হুইপ সাহেবের সাথে ছবি তুলতে চেয়েছেন। দল করতে হলে, পয়সা কামাতে হলে, প্রশাসনে খবরদারী করতে গেলে, টেন্ডার বাগাতে গেলে এমনকি ছোটখাটো চাঁদাবাজী করতে গেলেও হুইপ সাহেবের সাথে একটা ফটো থাকা বাঞ্চনীয়। যখন তখন মানিব্যাগ থেকে ঐ এক ফটো বের করেই বছরের পর বছর নিজের ধান্দাটা বেশ জমায়ে রাখার সুযোগ আছে। তাইতো উপজেলা পর্যায়ের শতাধীক ছোট-মাঝারী-বড় নেতারা আসম ফিরোজ সাহেবকে আলাদা আলাদা ভাবে ক্রেস দিতে চেয়েছেন, ফটো তুলতে চেয়েছেন। কিন্তু হুইপ সাহেব এতে যার পর নাই নাখোশ। আমার ফটো দেখাইয়া, আমার নাম ভাঙ্গাইয়া ট্যাকা কামাইবা, সেই ট্যাকার ভাগ আমি পামু ক্যামনে? না, ক্রেস্ট-ফ্রেস্ট কিচ্ছু চাই না, ক্যাশ চাই! ক্যাশ! সোজা-সাপ্টা বলে দিয়েছেন হুইপ ফিরোজ।
সাংগাঠনিক সম্পাদক এক সময়ের তুখোড় বিএনপি নেতা মো. ইব্রাহিম ফারুক, দপ্তর সম্পাদক এক সময়ের জামায়াতের রোকন আবদুস সাত্তার, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক দাশপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো. মাসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ মেম্বর। বুঝলেন কিছু? এটা বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। যে কমিটির সভাপতি হুইপ আসম ফিরোজ। কিন্তু মন্দ লোকেরা শুধু মাহবুবুল আলম হানিফ সাহেবদের দোষটাই দেখেন। ফিরোজ সাহেবরা যে অনেক অগেই আওয়ামী লীগের জামাতী-বিএনপিকরণ শুরু করেছেন সেটা নিয়ে তাই কোন হৈচৈ নেই।
মন্টু মিয়ারা তাই শেয়ার মার্কেটে এসে মাল খোজেন। আর ফিরোজ সাহেবরা মালদের আগেই কমিটিতে ঠাঁই দিয়ে এখন ক্যাশ খোঁজেন। ক্যাশ চাই!ক্রেস্টের দরকার নাই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×