; ইহা 'সামহোয়্যার ইন ব্লগে' আমার শততম পোস্ট। আমি ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি খুব বেশি আকৃষ্ট ছিলাম না তাই জানিনা 'সেঞ্চুরি' মারার মজাটা কি! লিখতে গিয়ে শততম পোস্টে আনন্দ হয় ঠিকই, কিন্তু মন খারাপ লাগে তার থেকেও বেশি। নিজের পুরানো লেখা পড়তে আমার ভাল লাগে, সবারই লাগে নিশ্চয়ই। কোন লেখা হয়ত ঝাপসা চোখে লিখেছি, কোনটা হয়ত হাসতে হাসতে লিখেছি, পুরানো লেখাগুলো পড়লেই ঠিক সেই সময়টার কথা মনে পড়ে যায়। ঠিক 'স্যাডিস্ট' টাইপের একটা অনুভূতি। আমি জানি যে কোন পোস্ট লেখার সময় মন খারাপ ছিল তবু ইচ্ছা করে সেই পোস্ট বারবার পড়তে ভাল লাগে। মানুষের ভাল লাগা ব্যাপারটা অদ্ভুত! ব্যাপারটা হয়ত আইয়ুব বাচ্চু বুঝতে পেরেছিলেন তাই 'আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি' গানটার মত চমৎকার একটা গান গেয়েছিলেন। কিছু গান কখনও হারায় না। সময়ের সাথে থেকে যায়। খুব বৃদ্ধ বয়সেও হয়ত আমি এই গানের কলি আওড়াতে থাকব!
আমি আমার সময়গুলোকেও এই গানটার মত হারাতে দিতে চাই না। তাই লিখে রাখি। জার্নাল রাইটিং আর কি! আমার বাবা যে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন, পরে তারা বেশ নামডাকওয়ালা এক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি এখনও সচল। আমি ছোটবেলায় বায়না ধরে বাবাকে নানারকম ভূতের গল্প লিখে দিতাম। এঁকে দিতাম নানাধরনের ছবি। বাবা খুব আগ্রহের সাথে প্রতিদিন তা অফিসে নিয়ে যেতেন। বাসায় আসলে আমি খুব আগ্রহ নিয়ে বলতাম,
বাবা, কালকের পেপারে কি আমার গল্প ছাপা হবে?
বাবা বলতেন, ধুর বোকা! আগে ওরা তোমার লেখা পড়বে। তারপর নিজেরা কাটছাঁট করবে, তারপর ছাপাবে। কয়েকদিন সময় তো লাগবেই।
আমি প্রতিদিন আগ্রহ ভরে পত্রিকাটি উল্টেপাল্টে দেখতাম, কিন্তু কখনওই আমার কোন লেখা বা ছবি ছাপা হয়নি। বাবা বিষয়টা বুঝতে পারতেন। তিনি বলতেন, সবার লেখা তো আর ছাপানো সম্ভব না বাবা। এক পৃষ্ঠা লেখার মত লেখক অনেক আছে, কিন্তু একটা বিশাল বই লেখার মত মানুষ কয়জন আছে? তুমি চেষ্টা করতে থাক।
এরপর নিজের ডায়রি ছাড়া আর কোথাও লিখি নাই। কিন্তু সবার লেখা পড়ে নিজের খুব ইচ্ছা জাগে লিখতে। তাই মাস দশেক ধরে এই প্ল্যাটফর্মে লিখি। ভাল লাগে। বাবা বেঁচে থাকলে বলতাম, যে আমি শততম পোস্ট লিখছি। বাবা বেঁচে নেই। মন ভাল নেই। মনে এত খারাপ যে ফেব্রুয়ারি মাসটাকে জীবনের শেষ মাস মনে হচ্ছে।
কিন্তু না। আমি জানি, এখানেই শেষ না। ভবিষ্যৎটা আরও সুন্দর। আরও লিখব। আবার লিখব। এভাবেই কেটে যাক না জীবন। ভাল আর খারাপ! মানুষের জীবনে তো থাকবেই।