somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি জুতার আত্মকাহিনী

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ছিলাম একটি ষাঁড় গরুর শরীরের সাথে আটকানো একটি চামড়া , সব লোকেরা তখন আমাকে গরুর চামড়া বলেই ডাকতো । রাখাল প্রায় প্রতিদিনই এসে আমাকে চিমটি কেটে দেখত, আমি কি অবস্থায় আছি , পাতলা হয়েছি না মোটা ? মাঝে মধ্যে সে আমাকে এমন জোরে চিমটি কাটত যে আমার কষ্ট যন্ত্রনাতে গরু মহাশয় লাফালাফি আর ছোটাছুটি শুরু করে দিতেন । দিনে দিনে আমি ( চামড়া) গরুর সাথে বড় হতে লাগলাম, গরু বড় হলে আমিও বড় হই । কিছু দিনের ভিতরে ভালই বড় হলাম ইউরিয়া সারের প্রভাবে । সামনে আসছে কোরবানির ঈদ গরুর রাখাল প্রতিদিন এসে এখান আর চিমটি কেটে যায় না । দিনে ২/১ বার এসে হাত বুলাইয়া আদর করে যায় ।মনে মনে আমি ভাবি এত আদর কেন আমার জন্য ? শুনলাম গরু নাকি হাটে নিয়ে বিক্রি করে দিবে কোরবানি ঈদ উপলক্ষে। কি আর করার মনে মনে আমি সান্তুনা নিলাম গরুর যা হবে আমার (চামড়ারও) তাই হবে । সেদিন বিকালে দেখি আমার সামনে ৪/৫ জন লোক ঘুরাঘুরি করছে, তারা আমাকে নিয়ে যাবে, তারা নাকি গরুর দালাল, কি আর করার গরুর সাথে তো আমার শরীরে জম্মথেকে যোগসূত্র আছে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই আটকানো ছিলাম গরুর সাথে । ঐ দিন আমার শরীরকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে সাবাই গরুকে ট্রাকের উপরে উঠাল। সাথে ছিল আরও ২/৩ টা গরু। তাদের সিং গুল ছিল অনেক বড়বড়। জাতে ইন্ডিয়ান বইল। আমাকে দেখা মাত্রই বইল গরু গুলো দিল কয়েকটা গুতা। আমার শরীর দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল, চুপ করে কষ্ট সহ্য করে ঢাকার গাবতলি হাটে আসলাম। যেই বেপারি গরু গুল কিনেছিলেন সে আমার কটা শরীলে নাপা ট্যাবলেট আর নেবানল পাউডার গুড় মেখে দিলেন। আমার শরীর ৩ দিনে ভাল হয়ে গেল । গরু বিক্রয় হয়ে গেল সাথে আমিও বিক্রয় হয়ে গেলাম। গরু কোরবানিও হয়ে গেল, ধার ছুরী দিয়ে আস্তে আস্তে আমাকে গরুর শরীর থেকে আলাদা করে দেয়া হল। গরুর শরীর থেকে আমাকে আলাদা করার জন্য যাই করা হল না কেন ? আমি অনেক ব্যথা অনুভব করেছি, এই রকম ব্যথা আমি আর কখন পাই নাই । জিবন আছে কিন্তু আমার গায়ে কোন শক্তি নেই । আমার সারা শরীর রক্তে মাখা সেই অবস্থায় এক কিনারাতে আমাকে ভাজ করে রাখা হল । মাঝে মাঝে কুকুর আসে আমাকে খেতে তাদেরকে আবার তাড়িয়ে দেওয়া হয় যেনো আমাকে না খেতে পারে। পাড়ার মাস্তানরা এসেছে আমাকে কম মূল্য কিনে নিতে। তাদের পকেটে ছিল পিস্তল আর হাতে ছিল লোহার পাইপ । আমার দাম তখন শুনেছিলাম কম করে হলেও ২ হাজার টাকা কিন্তু অস্ত্রের মুখে আমার দাম ধরা হয় তখন মাত্র পাচশত টাকা মাত্র । আমাকে নিয়ে যাওয়া হল ভেনগাড়িতে করে কোন এক ট্যানারিতে । ট্যানারির লোকজন আমাকে দেখা মাত্র আমার শরীররে লবন লাগিয়ে দিল যাতে করে আমি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারি । লবণ লাগানর পর আমার শরীরে আমি শান্তি অনুভব করতে লাগলাম । কিন্তু আমার শরীর দিয়ে দূগন্ধ ছড়াতে লাগল । সবার মুখে কাপড় কিন্তু আমার কিছু করার নাই । সেদিন ছিল আমর জিবনের শেষ দিন । টেনে হিঁচড়ে আমাকে বিভিন্ন প্রকার মেডিসিন দিয়ে ধোয়ার পর সেদ্ধ করা হয় এবং আমি সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢুলে পরি । মৃত্যুর পর তারা আমার পুরো শরীর শক্ত করে ফেলে এবং আমাকে অধিক মূল্যে বাটা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া

হয়। তারা আমার মৃত দেহকে নানা ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখল যে, আমাকে দিয়ে কি বানানো যেতে পারে জুতা না ব্যাগ না বেল্ট ? অবশেষে, তারা সিধান্ত নেয় যে আমাকে দিয়ে তারা জুতা বানাবে আমি তৈরি হয়ে গেলাম জুতোতে আর আমার নামের ও পরিবর্তন হয়ে গেল জুততে । আমাকে ডিসপ্লে করা হল বাটার শোরুমে, সারাদিন আমাকে সাবাই নাড়েচারে আবার পায়ে পরেও দেখে কিন্তু আমাকে কেও নেয় না কারান আমি ডিসপ্লেতে থাকি । দিনে দিনে আমি দোকানে পুরাতন হতে থাকি। আমি এতটাই পুরান হলাম আমার যে দাম সেই দামে কেউ আর আমাকে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে না । এ জন্য আমাকে রিজেক্ট মাল হিসেবে গোডাউনে আরও অন্যান্য জুতার সাথে বস্তাবন্ধী করে রাখা হল । এরপর , কিছুদিন পরে আমাকে ৬০% ডিসকাউন্টে মার্কেট এ ছেরে দেয়া হল । আমি বিক্রয় হয়ে গেলাম ভার্সিটি পড়ুয়া এক ছাত্রের কাছে । আমি তার পায়ে চড়তে থাকলাম , সে আমাকে টয়লেট, বাজার, ভার্সিটি সব জায়গাতে পায়ে করে নিয়ে যায় । ভালই আমার দিন কাটতে লাগল, বছর ঘুরে আবার ইদ এসে পরলো। সবাই পাড়ি জামালো দেশের বাড়ির দিকে, আমিও আমার মনিবের পায়ের সাথে রওনা দিলাম তার গ্রামের বাড়ি জাওয়ার জন্য । মনিব আমাকে খুলে রেখে আরাম করে দু পা উঠিয়ে চেয়ার এ বসল হঠাৎ করে এক চোর এসে আমাকে নিয়ে যায় এবং সাথে সাথে সেই চোর আমাকে সদর ঘাট নিয়ে বিক্রি করে দেয় । আমার নামে তখন পরিবর্তন আসে সবাই আমাকে বলতে থাকে চোরাই জুতা । আমি তখন মনে মনে হাসলাম আর বোল্লাম আমাকে যে চুরি করল তার নামের কিছু হল না কিন্তু আমার নাম হয়ে গেল চোরাই জুতা । সদর ঘাট লঞ্চ এসে ভিড়ল শত শত মানুষ নামছে আমি দেখছি তাদেরকে, কেও কেও আবার আমাকে দেখছে আবার পায়ে পরে দেখছে নেয়ার জন্য । সবাই আমাকে দেখতে দেখতে হঠাৎ আমি বিক্রি হয়ে যাই এক মুরব্বির কাছে, কত টাকা বিক্রয় হয়েছি সেটা সবার অজানাই থাক, মুরিব্বি আমকে পেয়ে খুব খুশি কম দামে তার একটা বাটার জুত হয়েছে । মুরুব্বি আমাকে নিয়ে মসজিদে যেতেন ওজু করতেন, দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরতেন, জার ফলে দিনে পাঁচ বার মুরুব্বি ওজু করতেন ফলে আমার গোসল ও হয়ে যেত । সে দিন ছিল ৫ মে, মুরব্বি প্রতিদিনের মত ফজরের নামাজ পড়ে কিছু উগ্র বাদি লোকের কথা শুনে, আমাকে নিয়ে হাটা দিলেন মতিঝিলের শাপলা চত্তরে । সেই শাপলা চত্তরে অনেক মানুষ । সারদিন দেখতে দেখতে আমার দিন কেটে গেল । রাতের সোডিয়াম আলোতেও আমি সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে ছিলাম আর মনে করছিলাম কখন মুরব্বির সাথে বাড়ি যাব। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে রাস্তার লাইট গুল বন্ধ হয়ে গেল আকাশ লাল হয়ে গেল । চারদিকে ছোটাছুটি আশেপাশের অলিতে গলিতে সবাই ছুটছে জিবন রক্ষা জন্য । আমরা প্রান রক্ষার তো কোন দারকার নাই কারন আমিতো আগে থেকেই মৃত। আমি নিজের চোখে দেখেছি কি ভাবে একজন মানুষ আরেক জন মানুষকে হত্যা করে । কি ভাবে সঅস্ত্র বাহিনি বাধ্যহয়ে নিরঅস্ত্র মানুষের অপর হামলা আর গুলি চালায় ।তারা সাবাই ত ঈদের আনন্দ একসাথে ভাগ করে নেয়, একই কাতারে নামাজ পরে, এক সূর্যর আলো তে বেড়ে উঠে, সবার পায়ের তালু সমান। আমি এবার ভাবছি একজন মানুষ আরেক জন মানুষকে কি করে হত্যা করতে পারে ? বনের পশু পাখিও তাদের জাত ভাই কে হত্যা করে না কিন্তু মানুষতো আরও সভ্য আধুনিক, কেন তারা একজন আরেক জনকে মারছে ? এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মুরব্বি আমাকে নিয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে গেলেন । আমাকে পায়ে নিয়েই সে পড়ে রইলেন আশেপাশে আরও অনেক লোক-লাশের পাশে । পড়ে রইলেন পিচ ঢালা রাস্তার পাশে । রাতের আঁধারে আমি ডাস্টবিনের ময়লা হয়ে যাই। সিটি করপরেশনের গাড়িতে করে আমাকে ও মুরব্বিকে নিয়ে যাওয়া হয়.............. । মানুষের মৃত্যুর পর আমার হয় জিবন অবসান । আমার জিবন অবসানের একটাই সার্থকতা আমি একজন মানুষের সাথে আমার জিবন অবসান ঘটাতে পেরেছি ।

(বাস্তবতার আচে একটি কাল্পনিক গল্প)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×