somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনে প্রথম পাত্রী দেখা আর বাস্তবতা ( ভাইয়াদের কাজে লাগতে পারে, আপুরা দূরে থাকুন)

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধু বলল তার ওখানে ঘুরার মতো অনেক জায়গা আছে। আমি যেন একবার হলেও বেড়াতে যাই। ভাবির(বন্ধুর স্ত্রী) উৎসাহ দেখি আরেকটু বেশি।বললেন আসেন আপনার সাথে দেখাও হবে আর এইখানে একটা পাহাড় আছে দেখে যেতে পারবেন। ও আর একটা মেয়ে আছে দেখতে পারেন। প্রবাসে একা একা বোরিং লাইফ লিড করছি। কেউ ঘুরতে জাওয়ার কথা বললে না করতে পারিনা। নিজের গাড়ি না থাকায়(ডাইভিং পরীক্ষায় ফেল করতেছি)ঘুরে খুব একটা মজা পাচ্ছিনা।

তিন ঘণ্টা জার্নি শেষে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছানোর পর এক ভদ্রলোক(পাত্রীর বাবা) এবং ভাবি পুরাতন একটি মারসিডিস গাড়ি করে নিতে এসেছেন। ভাবি অনেক বেশি পর্দানশীল তার চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না কিন্তু তার কথা এবং বলার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তিনি অমায়িক ভদ্র একজন মানুষ। আমার মনের মধ্যে যে ভয়, জড়তা এবং লজ্জা ছিল মুহুতেই উরে গেল।

পাত্রীর বাসায় তার ছোট বোন(ক্লাস এইটে ছাত্রী) এবং ছোট দুই ভাই (ক্লাস ফোর ফাইভ হবে)এর সাথে বসে গল্প করছি। তার ছোট বোন খুব সুন্দর করে মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে হাত মুখ নেরে গল্প করছে। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে গল্প শুনছি। মাঝে মাঝে ইংরেজিতে কথা বলছে। প্রথমে কিছুটা খারাপ লাগলেও পরে মনে হল ওর জন্ম বেড়ে ওঠা এখানে পড়ছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে।ও যে বাংলা বলতে পারছে এতেই আমি অনেক খুশি।ছোট দুই ভাই চুপচাপ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমাকে নিখুঁত ভাবে দেখছে। [ছোটরা ছোট হলেও তাদের সিক্সথ সেন্স যে অনেক বেশি সেটা বুঝেছিলাম আমার কেজি টু পড়ুয়া ভাগ্নির কাছ থেকে। আমি যখন ওকে নিয়ে বেড়াতে যেতাম তখন ও কোন মেয়ে কে দেখেই বলত কাকে মামী বানান যাবে আর কাকে বানান যাবে না। এতো ছোট মানুষের বুদ্ধি দেখে সত্যিই আচার্য হয়ে যেতাম। যাক সে মজার গল্প আরেকদিন লিখব।]

ছোট বোন গল্পের মাঝে আমাকে একটা ভয়ঙ্কর তথ্য দিল যে সে বাঙালি হিসাবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে। এতো ছোট মানুষের কি ভহঙ্কর কথা। আমি কারন জানতে চাইলে বলল এক বাংলাদেশী দাওয়াত দিয়ে এক পাঠানকে বাড়ি ডেকে নিয়ে খুন করছে এবং তার লাশ কয়েক টুকরা করে বিভিন্ন যায়গায় ফেলে রাখছে। আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বীভৎস ঘটনার কারন কি জানতে চাই। আমি দেশে এমন ঘটনা অনেক শুনেছি। আমি যখন এই ধরনের খবর পেপারে হেডিং দেখতাম ওই পেজে ভুলেও যেতামনা।টিভিতে হলে সাথে সাথে চ্যানেল চেঞ্জ করতাম। পাঠান বাঙ্গালির কাছে কিছু টাকা পেতো এইজন্য তাকে খুন করেছে। এক বাংলাদেশী আরেক বাংলাদেশিকে খুন করছে। এক জোড়া স্যান্ডেলের জন্য নিজেদের মধ্যে মারামারি করে তিন বাংলাদেশী খুন।এদেশে জেলখানায় ৭০% ই বাংলাদেশী।এধরনের অনেক গল্প বলল। আফসোস... কবে বাঙালি মানুষ হবে ??

খাবারের পর্ব শেষ করার পর পাত্রী এবং তার বড় বোন কথা বলতে আসছে।বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছি। পাত্রীর কথায় তার বয়স ১৭ তার আম্মার কথায় তার বয়স ১৮। আমার কাছে ১৩-১৪ বছরের বালিকা। সে এ লাভেল পরিক্ষা দিয়েছে। আমার নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। আমি আগে কোন কিছু না জেনে কেন এসেছি? নিজেই নিজেকে ভৎসনা করছি। জীবনের প্রথম এই পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডা মাথায় বের হওয়ার উপায় খুজছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল হবে মনে মনে ঠিক করছি। আচ্ছা একজন বাবা কেন এতো ছোট মেয়েকে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন, আমার মাথায় আসছে না।আমার মনে হচ্ছে সে তার পাচ সন্তানের শিক্ষার খরচ(এখানে শিক্ষা খরচ খুবই ব্যায়বহুল) দিতে বরই ক্লান্ত। কোন মতে মেয়েকে বিদায় দিতে পারলেই বেচে যান।[একবার আমার বাবা আমার ছোটবোনের বিয়ের কথা বলছিলেন, আমি এতো খ্রিপ্ত হয়েছিলাম যে বাবা আর কোনদিন এই কথাই মুখে আনেনি। আমার ছোট বোন এখন একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে]

পাত্রীর বড় বোন এ লেভেলে রেকর্ড পরিমান মার্ক পাওয়ায় গর্ভমেনট থেকে গোল্ড মেডেল পেয়েছে। এখন সে UAE গর্ভমেনট থেকে ইস্কলারশিপ নিয়ে বিখ্যাত একটি বিশবিদালয়ে BBA তে পড়াশুনা করছেন। যেমন মেধাবি তেমন সুন্দরি। আমার কাছে সুন্দরী দুই ধরনের ১। দেখতে সুন্দর খুবই সুন্দর মুখের দিকে তাকালে কড়া কড়া ভাব। ২। এ ধরনের সুন্দরীরা মায়াবি হয়, মুখের দিকে তাকালে নিজের অজান্তেই মায়া জন্মে যায়। ইনি দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে পরেন। আমার ধারনা ছিল সুন্দরী মেয়েরা বেকুব টাইপের হয় সে ভুল এখানে এসে ভেঙ্গে গেল। তার কথা বলা , পোশাক পরিধান, ভদ্রতা এক কথায় অতুলনীয়। শুনেছি UK প্রবাসি একজনের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। পড়াশুনা শেষ করে বিয়ে করবেন।

[বাঙালিরা অথিতিপরায়ন আর প্রবাসে এটা অনেক বেশি মনে হয়। সবাই মনে হয় সবার কতো আপন। আমি অনেক বাঙালি পরিবারে গেছি কি যে আনান্দ হয় বলে বুঝান যাবে না। বিশেষ করে বাচ্চাদের আনান্দ দেখার মতো।] বিদায় বেলা সবাই গেট পর্যন্ত এসেছে । সবার চোখে এক ধরনের মায়াবি চেহারা। থাক মায়া বাড়িয়ে আর লাভ নাই, আমিতো তাদের কেও নই। বিদায়বেলা আমি পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। যতদূর চোখ যায় পাহাড় উচু থেকে উচুতর হচ্ছে।

জীবন চলুক জীবনের মতো
পিছন ফিরে তাকানোর সময় কই !!
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×