somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আসুন সিরিয়া দেশটি সম্পর্কে জানি না

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিরিয়া এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র। একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আরবি ভাষা সিরিয়ার সরকারী ভাষা। এখানকার প্রায় চার-পঞ্চমাংশ লোক আরবি ভাষাতে কথা বলে। আয়তন : ৭১,০৬২ বর্গমাইল। দামেস্ক সিরিয়ার রাজধানী ও প্রধান শহর। মোট জিডিপি : ১০৭ দশমিক আট বিলিয়ন (ডলার) মাথাপিছু জিডিপি : ৫,১০০ ডলার ।৬৭'র যুদ্ধ পরবর্তী জরূরী অবস্থার ভেতর ক্ষমতায় আসে সামরিক বাহিনী'র হাফিজ আল আসাদ, বর্তমান প্রেসিডেন্টের পিতা। হাফিজ আল-আসাদ ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৭১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর। তাঁর মৃত্যু হয় ২০০০ সালে। ক্ষমতায় বসানো হয় তাঁর পুত্র বাশার আল-আসাদকে।

বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় দেওয়া ১৪০টি দেশের মধ্যে সর্বশেষ স্থানে রয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। খ্রীষ্টপূর্ব ৮০০০ সাল থেকে এই নগরীর ইতিহাস সমৃদ্ধ।সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ হল সূন্নী। শতকরা মাত্র ১৩ ভাগ আলাভী শিয়া এবং শতকরা ১০ ভাগ খৃষ্টান। অথচ ফরাসীদের শাসনামলে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সংখ্যাগরিষ্ঠ অফিসার রূপে যাদের নিয়োগ দেয়া হয় তাদের অধিকাংশই হল আলভী শিয়া,এবং পরিকল্পিত ভাবে দূরে রাখা হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সূন্নীদের।

৭ম ও ৮ম শতাব্দীতে ইসলামী উম্মাহর শাসনকালে দামেস্ক রাজধানীর মর্যাদা পায়। ১২ শতকে এসে সিরিয়ান মুসলিম জেনারেল সালাহ আদ দ্বীন আল আইয়ুবী খ্রিস্টানদের ক্রুসেডের যুদ্ধে পরাজিত করে। আধুনিককালের সিরিয়া অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে চলে যায়। ১৯৪৬ সালে ফ্রান্সের উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে ১৯৬১ সালে সংযুক্ত আরব রিপাবলিক থেকে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করে। ১৯৬৩ সাল থেকে বাথ পার্টি ক্ষমতা দখল করে সিরিয়ার শাসনভার গ্রহণ করে।

ইসলামী বিশ্বে সিরিয়া বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এই জন্য যে সিরিয়ার ব্যাপারে মহানবী (স) অনেক ভবিষ্যৎ বানী করে গিয়েছেন। সিরিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য অতি সমৃদ্ধ । আরবদের কাছে সিরিয়ার এলাকা “বালাদে শাম” বলে পরিচিত। পবিত্র কোরআনের সুরা রুমের সেই “ফি আদনাল আরদি” বা নিকটতর নিম্ন এলাকার দেশ হল সিরিয়া। সিরিয়াতে মানব ইতিহাসের প্রধান প্রধান সভ্যতার চূড়ান্ত সংঘাতগুলি হয়েছে। সেটি যেমন ইরানীদের সাথে গ্রীক ও রোমানদের, তেমনি খৃষ্টানদের সাথে মুসলমানদের। সিরিয়ার ভূমিতেই মুসলমানগণ তৎকালীন বিশ্বশক্তি রোমানদের পরাজিত করে প্রধান বিশ্বশক্তি রূপে আবির্ভূত হয়। মুসলিম বীর সালাউদ্দিন আয়ুবী এ ভূমিতেই ইউরোপীয় ক্রসেডার বাহিনীকে পরাজিত করে মুসলিমদের হৃতগৌরব উদ্ধার করেছিলেন।

অনেকে মনে করেন- ৪০ বছর ধরে চলা পারিবারিক শাষনতন্ত্র এই ২০১২ সালে কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য না। এর অবসান প্রয়োজন!!! সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ১১ হাজার বন্দীকে নির্যাতন ও হত্যার। এ অভিযোগের পর তীব্র সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সিরিয়ার সেনাবাহিনীর জনবল প্রায় ৪ লাখ। ইতিমধ্যে তিন লাখ সিরিয়ান উদ্বাস্তু রূপে আশ্রয় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী জর্ডান, তুরস্ক, লেবানন ও ইরাকে। প্রতিদিন শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছে হাজার হাজার মানুষ।

সিরিয়াতে আজ যে বিপ্লব শুরু হয়েছে সেটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে না গিয়ে দিন দিন রক্তাক্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চক্র ব্যস্ত দেশটিকে আরও দুর্বল করা নিয়ে। এ বিষয়টি আরব বিশ্বের ইসলামের পক্ষ শক্তি যেমন বুঝে তেমনি ইসলামের শত্রুপক্ষও বুঝে। তাই সিরিয়ার চলমান লড়াইটি আজ আর শুধু সিরিয়ানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দেখা যায় পাশের দেশের মুসলিম যুবকরাও এসে শামিল হচ্ছে এ সংগ্রামে। সিরিয়া দেশে উর্বর উৎকৃষ্ট সমতল ভূমি আছে আবার ঊষর মরুময়, পাথুরে, বেলেপাথরময় অঞ্চল আছে। আছে পাহাড়ের সারি। আছে গাছপালা।

সিরিয়ায় দারিদ্র্য প্রকট নয়। বৈদেশিক বিনিয়োগ স্বল্প, বেকারত্বের হার অধিক। গ্যাসের রিজার্ভ ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। অর্থনীতির ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৫ দশমিক ৭।তেল উৎপাদন : ৩৩৯,৯০০ ব্যারেল/প্রতিদিন। ১,৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরীয়রা বিদেশি শাসকশ্রেণিকে উচ্ছেদ করে এবং ফেরাউন সিরিয়া দখল করলেন। এ আমলে বহু সিরীয় শামিত মিশরে পাড়ি জমাল। আমরা ইয়াকুবের (আঃ) পুত্রগণের মিশরে গমনের গল্প, মিশরে ইউসুফ-জোলেখার কাহিনী জানি।

খ্রিস্টপূর্ব ৬৪ অব্দে রোমানেরা সিরিয়া অধিকার করে। তখন হেরদ নামে এক রোমের দালাল ইহুদি জেরুজালেমের রাজা হন। হেরদ ছিলেন হেলেনীয় তমদ্দুনের ধামাধারী। পরে রোম জেরুজালেম সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এ আমলে সিরিয়ায় গ্রিক ছিল সংস্কৃতির ভাষা, রোমান ছিল প্রশাসনের, আর আরামি ছিল জনগণের ভাষা। হজরত মুহাম্মদের (দঃ) মৃত্যুর পর খলিফা আবু বকর (রঃ) ও পরে উমরের (রঃ) আমলে মুসলমান বাহিনী সিরিয়া আক্রমণ করে। অল্পদিনেই খলিফার বাহিনী রোমের সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে গোটা সিরিয়া অধিকার করে। উমর (রঃ) নির্দেশ দিলেন মুসলমানেরা যেন সিরিয়ায় চাষবাসে জড়িয়ে না পড়ে। স্থানীয় খ্রিস্টান অধিবাসীদের থেকে যেন আলাদা থাকে।

মঙ্গল ও তৈমুরের পর মধ্য এশিয়া থেকে এল ওসমানি তুর্কিরা ষোড়শ শতকে মামলুকদের পরাজিত করে সিরিয়া দখল করে। ওসমানি সিরিয়ায় প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায় আলাদা আলাদা মিল্লাত হিশাবে ক্রিয়া করত। বেদুইন, আলবি, ইসমাইলি, প্রভৃতি গোষ্ঠী নিজ নিজ ব্যবস্থায় চলত। ১৯০৮ সালে তুরস্ক থেকে সিরিয়া হয়ে মদিনা অব্দি হিজাজ রেলওয়ে চালু হয়। সুয়েজ খাল চালুর ফলে সিরিয়া হয়ে যাওয়া মরুপথগুলোর গুরুত্ব হ্রাস পায়। অবাধ আমদানির ফলে দেশীয় শিল্প আরো দুর্বল হয়।

প্রথম মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে সিরীয়রা আরব জাতীয়তাবাদী জায়গা থেকে সংগঠিত হতে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৫৫
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×