যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় কার্যকর না হলে আওয়ামী লীগকে জনগণ ভোট দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বৃহত্তম ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।
Published : 01 Jun 2013, 01:39 PM
শনিবার সকালে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মাসউদ বলেন, “ভোট পাওয়ার জন্য হলেও এ দুটি কাজ করেন। নাহলে ভোটও পাবেন না।”
জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ না করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তারা (সরকার) গাছটারে রেখে বলতেছে এই ফলটারে ধরো, ওই ফলটারে ধরো।”
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে শুধু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত কিছু ব্যক্তির বিচার করে ‘ফল পাওয়া যাবে না’ বলেও মনে করেন মাসউদ।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার রায়ের পর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের শুরুতেই তরুণদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন শোলাকিয়ার এই ইমাম।
জামায়াতে ইসলামীকে ‘বিষবৃক্ষ’ হিসাবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “সবার আগে এই বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে হবে। এই বিষবৃক্ষের সার আর পানির উৎসও বন্ধ করতে হবে। তা না করে শুধু গোলাম আযমরে ফাঁসি দিয়ে যদি আমরা ভাবি যে জিতে গেছি তাহলে ভুল করবো।”
রায় ঘোষিত হলে দেশের মানুষ ‘খুশি হবে, আনন্দিত হবে’ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “গোলাম আযমকে এদেশের মানুষ ততটাই ঘৃণা করে যেমনটা একটা শয়তানকে করে।”
গত ৫ এপ্রিল মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান হটাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান প্রসঙ্গে মাওলানা মাসউদ বলেন, “এদের যদি আগেই সামলানো গেলে এতকিছু হতো না।”
“ধর্মকে হাতিয়ার করে হেফাজত জামায়াতের মতোই দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে।”
হেফাজতের আমির আহম্মদ শফীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “একাত্তরে যারা রাজাকার ছিল তাদের অন্তর পরিষ্কার হইতে অন্তত তিন পুরুষ লাগবে। আমি বুঝি না প্রধানমন্ত্রী এদেরকে কীভাবে বিশ্বাস করেন।”
দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও সনদের সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে সরকারের গঠিত কমিশনের কো-চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। গত বছর গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয় হাটহাজারি দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমাদ শফীকে।
‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াও’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত জামায়াত সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়ে মাওলানা মাসউদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের মূল অর্থনীতির মধ্যে যদি মৌলবাদী অর্থনীতি থাকে তাহলে সরকারের মধ্যে সরকার আছে। রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র আছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের এমন কোনো অংশ নেই যেখানে জামায়াতের লোক পাওয়া যাবে না।”
গত ৩৫ বছরে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ‘৫০ হাজার কোটি টাকার ‘নিট মুনাফা’ সংগঠন হিসাবে জামায়াতকে আরো শক্তিশালী করেছে- জানিয়ে বারকাত বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে ‘থার্ড পার্টি অডিটের’ ব্যবস্থা করতে হবে।
একই সঙ্গে আগামী তিন মাসের মধ্যে যুদ্ধাপরাধের সব মামলার রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর করার দাবি জানান বারকাত।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি এ কে খন্দকার, সিনিয়র সহ-সভাপতি কে এম সফিউল্লাহ, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও অধ্যাপক ড. সোনিয়া নিশাত আমিন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি হায়দার আকবর খান রনো, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন প্রমুখ।