"নাম কি তোমার ? তাড়াতাড়ি বললাম -ফুসমন্তর" একটা কবিতা থেকে ধার করা।ভাগ্যিস কবিতাটা পড়া ছিল।তাই আমতা আমতা করতে হয়নি।যা দেখলাম তাতে নিজের নাম চেন্জ ছাড়া উপায় ছিল না।কৈশোরে সিনেমা হলের সেকেন্ড শো মেরে(!!) রাতে বাড়ি ফিরলে যেমন মুখটা কাচুমাচু করে ফিরতাম অনেকটা সেরকম অবস্থায় আজ অনেকদিন পর।পার্থক্য একটাই শুধু আজ টিকিট কাটতে হয়নি।ফ্রি-ই দেখলাম,সাথে ডিনারও ছিল।অনুভব করলাম বড্ড সেকেলে রয়ে গেছি।এত উপরে উঠে এরকমটা সত্যিই বেমানান।একজনতো বলেই বসল ফুসমন্তর বড্ড কনজারভেটিভ।আমি অবাক হলাম এরই মধ্যে এরা কে কোন ভেটিভ ধরে ফেলছে।আমরা সত্যই বড়ই ইন্টালেকচুয়াল জাতি।কারো সাথে দুই মিনিট কথা বলার পরই আমরা বলে দিতে পারি মানুষটা আওয়ামীভেটিভ,জামায়াতভেটিভ,বি এন পি ভেটিভ কিংবা এরশাদভেটিভ।আর কনজারভেটভ,সবচেয়ে নিকৃষ্ট ভেটিভ বলতে বোধহয়এটাই বুঝানো হয়।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল,এই অসামান্য প্রোগ্রামে একজন অসামান্য ব্যক্তির দেখা মিলল,যাকে প্রায়ই বিভিন্ন মন্চে আত্মপরিচয় সচেতনতা নিয়ে মহামূল্যবান কথা বলতে দেখা যায়!!!যাক আমার কথা বলি।সিনেমা হলের থার্ডক্লাস দর্শকের তকমা ত্যাগের আপ্রাণ চেষ্টায় লিপ্ত তখন।হঠাৎ এক ফ্রেন্ড বলল, চল্ মজা দেখে আসি।গা থেকে তখনও বসন্তের হলুদ রং মুছে যায়নি।এই রংটা নিয়ে মেঘলার সাথে আমার যত রাজ্যের ঝগড়া।
হলুদ রংটা আমার অপছন্দের তালিকার প্রথম রং।তারপরো দূর থেকে সহ্য হয়।কিন্তু পাশে একজন হলুদ রংয়ের শাড়ি পরে আমার হাতটা ধরে আছে এটা ভাবতেই কেমন লাগে।তারপরও নাক মুখ বন্ধ করে হাসি হাসি মুখ করে গতকাল ঘুরেছি।নিজেকে বাঙালি পরিচয় দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।বসন্তকে হাত নেড়ে বলেছি আমি সত্যিই বাঙালি।যাইহোক মজা দেখতে এসে নিজেই মজার উৎস হয়ে যাচ্ছি।
বন্ধুর কথায় আজ এসেছি ভালবাসা দিবস উদযাপন করতে।আমার গায়ে ঐ হলুদ রংটা আজ আমাকে খুব ভেংচি কাটছে।বারবার মুছার চেষ্টা করছি।কিছুতেই যাচ্ছে না।আমার সামনে একজন স্বল্পবসনা নারী সবাইকে মোহগ্রস্থ করে রেখেছে।কে জানে গতকাল গতকালও হয়ত এই মেয়েটির গায়ে হলুদ রংছিল।আর আজ।তবে তার শারীরিক কসরত দেখে আমার খুব করুণা হচ্ছিল।
আজ আমরা তিন শ্রেণীর দর্শক এই হল ঘরে টিনএজ বাট প্রাপ্ত বয়স্ক,আমার মত আত্মপরিচয়ের দ্বন্দ্বে ভোলা কতিপয় দুর্ভাগা আর নৃত্য দেখে অতীতের জৌলুসের গোফে তা দেয়া অর্ধমৃতের দল।অবাক হয়েছি অন্য আরেক শ্রেণীর দর্শক দেখে।সিনেমা হলে বিশেষ কিছু শোর (!)জন্য লেখা থাকত অপ্রাপ্তবয়শ্কদের জন্য নয়।আজকের এই শোটা ঐ ক্যাটাগরিতে পড়ার যথেষ্ট বৈশিষ্ট অর্জন করার কথা।কিন্তু আনাড়ি হল মালিক এদেরকেও এ্যালাও করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে সভ্য কিংবা আধুনিক করার পথ সুগম করেছেন।
কতগুলো বাচ্চাছেলেমেয়ে হা করে আমাদের নষ্টকদাচারগুলো গিলছে।কতিপয় সচেতন মা আবার তাদের সন্তানের চোখের সামনে বারবার হাত ধরছে।কিন্তু তাতে কি?নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি সহজাত টানেই সন্তানেরা সেই হাত সরিয়ে দিচ্ছে।এরই মাঝে নৃত্যরত নারীটার আহবানে বেশ কয়েকজন দর্শকও মন্চে।
বাহ চরম!সভ্য হবার কি উন্মত্ত প্রয়াস।
ছেলেবেলায় একবার দেখলাম আমাদের গ্রামে একটা সিনেমা হল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।সিনেমা হল বলতে একটা ভিসিডি প্লেয়ার,একটা টেলিভিশন আর কতিপয় মুনমুন,ময়ূরীর বিখ্যাত মুভি।তখন আবার সেই মুনমুনদের খাইছি তোরে কিংবা যাবি কই মুভির যুগ।সেই সময়টাকে বলা হত বি এফ ডি সি-র অন্ধকার যুগ।সবাই জানত সবচেয়ে খারাপ মানুষগুলো ঐ সিনেমা হলে যেত।লোক লজ্জার ভয়ে আমার কখনো যাওয়া না হলেও আজ আমি যা দেখছি এর চেয়ে খুব বেশি আধুনিক কিছু ছিলনা বোধ হয়।তবে আজ যারা এই শোর দর্শক তাদের কেন খারাপ মানুষ বলা যাবে না।সমাজের
উচুস্তরে বসে এয়ার কন্ডিশন্ড রুমে কারো দিকে ঘুষের জন্য হাত বাড়ানো আর রাস্তায় দাড়ানো রোদেপোড়া ট্রাফিক পুলিশটার হাত বাড়ানো শুধু আমদের দেশেই এককথা নয়।কারনটা খুব সোজা।দেখবেন এরকম একজন ট্রাফিকের এই অপরাধে খুব সহজেই চাকরি যেতে বাধ্য।কিন্তু ঐ মানুযটা।এখানে আমাদের তরুণ রাজনীতিবিদ পার্থের থিওরি-"আইন কিছুটা কার্ভ করে যাবে"
যাইহোক মুভি নিয়ে বলছিলাম।তখন ক্লাস টেনে পড়ি।সবজায়গায় কাপায়া "আশিক বানায়া আপনে" গান বাজে।একদিন পত্রিকায় গানটার ব্যবচ্ছেদ করা হলো এই বলে েরকম অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করে নায়ক এবং নায়িকা উভয়ই চরম দুঃসাহস দেখিয়েছেন।বাহ অশ্লীল ইংগিতের কত শ্লীল অংকন।একই পত্রিকায় আমাদের বাংলা মুভিকে অশ্লীল বলে নিয়মিত নিষিদ্ধের আহবান জানানো হত।কি হচ্ছিল তখন এফ ডি সি -তে?নিশ্চয়ই পর্ন বানানো হচ্ছিল না।তবে একি জিনিস কেন উহারা গিললেন না?
সেই থেকে কলকাতার মুভি জনপ্রিয় হতে লাগল।অবশ্য আগেও ছিল।এবার দর্শক অনেকটা অভিমান ভরেই মুখ ফিরিয়ে নিল।কিন্তু উচু্স্তরে তখন অন্তরংগ দৃশ্যগুলো চলতেই থাকল।পিছিয়ে থাকলাম আমরা,পিছিয়ে পড়ল আমাদের জাতিসত্তা।
উহ আমি ভুলেই গেছি আমি একটা পার্টিতে।কসমোপলিটানের নাম করে আজ আমরা যে নাচ নাচছি,কই ওরাতো আমাদের নাচ একবার চেখেও দেখেনা। গ্লোবাল ভিলেজ কিংবা কালচারে যদি পারস্পরিক বিনিময়টাকেই বুঝানো হয় তবে আমি কেন নিজের সবটা হারিয়ে বারবার আত্ম পরিচয়ের জায়গাটাতে থমকে যাব।
আমরা এমনই এক অদ্ভুত জাতি একই মাসে কখনো হলুদ কখনো স্বল্পবসনা কিংবা শহীদ মিনারে গিয়ে খালি পায়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে টিভি সেটে সামনে বলি একুশ ফেব্রয়ারী দেশ স্বাধীন হয়েছিল!!
আবার পরদিন সেই শহীদ মিনারের পাশ থেকেই আমাকে ধরা হয় প্রেমিকাকে নিয়ে অস্বাভাবিক আবস্থায়।কিন্তু বিশ্বাস করুন আমিতো সেই অন্তরংগ দৃশ্যেরই পূজারী।যারা একসময় বাংলা মুভির দুঃসময়ে প্রান খুলে কথা বলেছেন।এই পাগলু,শিলা,কিংবা মুন্নীর যুগেও কেবল একটা কথাই বলে যাচ্ছেন অন্তরংগ দৃশ্য!!অশ্লীল মুভি যদি নিষিদ্ধ হয় অন্তরংগ দৃশয় নয় কেন?
চোখের সামনে একটা মজার দৃশ্য না বলে পারছি না,সদ্য বিবাহিত এক তরুণীর স্বামী বারবার তরুণীকে অনুরোধ করচিল নাচার জণ্য।কিন্তু মেয়েটি কিছুতেই যাবে না ।বাঙালী সেন্তিমেন্ট কিংবা লোকলজ্জার ভয়েই হোক মেয়েটি শেষ পর্যন্ত গেলনা দেখে ছেলেটি একাই শারীরিক কসরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।আমি যেন চোখের সামনে দেখলাম আমার ড্রয়ীং রুম থেকে কি করে বাংলা চ্যানেলগুলো উবে গিয়ে বিজাতিয় অন্তরংগ দৃশ্য ঢুকে গেল।
সবাই বাহবা দিতে লাগল ছেলেটিকে।নিজের সংগীকে অন্য কারো সাথে নাচতে দেখে মে্যেটি নিশ্চয়ই খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল।
আর ভাললাগছেনা।কোথ থেকে একটা সূক্ষচেতনাবোধ আবার পীড়া দিচ্ছে।আমি সত্যিই কোন কৃষ্টির বিরোধী নই ,কিন্তু যেটা আমার আমিত্বকে কেড়ে নেয় কেন সেটায় আমি বিকিয়ে যাব?
ভাবতেই অবাক লাগছে এই হাফপ্যান্ট পড়া মানুষগুলো আর ৭ দিন পর এক মিনিট নীরবতা পালন করবে স্বদেশপ্রেমের সংগা দিয়ে বাড়াবে,আর আমি আমরা কেবল আত্মবলিদান হব।
চাদের আলোয় আমি আর আমি হাটছি।মেঘলা রয়ে গেছে আত্মপরিচয় খুজে পাওয়ার সেই মন্চে!
গ্রামের ঐ সিনেমা হলে অশিক্ষিত মূর্খগুলো বারাবার পথ হারাতে পারে।কিন্তু পথ দেখানো সেই মানুষগুলো নীল আলোর নীচে কি করে প্রতিনি্যত আমাদের চেতনাগুলো কড়া বিয়ারের গ্লাসে করে গিলে খায়।
আর মেঘলা শোন,আমি তোমার ঐ হলুদ শাড়ীটার পাশে চোখমুখ বন্ধ করে হয়ত একটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারি কিন্তু তোমাদের মত কসমোপলিটান(!) হতে পারিনা,,সত্যিই না।
আমি হাটছি আর আবাক হয়ে দেখছি আমার গা থেকে হলুদ রংটা মুছে যাচ্ছে।আমি আমার বুকটা দুই হাত দিয়ে জাপটে ধরে আছি,অন্তত এই জায়গাটুকুতে থাক।ফুসমন্তররা আর কিই বা করতে পারে??????