“বাবা, বড় আদরের মাইয়া আমার, ওরে তুমি দেইখ্যা রাইখো........। কোনদিন কোন কষ্ট দেই নাই, বড় আহ্লাদী মাইয়া আমার, ওরে তুমি সুখে শান্তিতে রাইখো..........।”
“পারবো না.....এত বড় দামড়া মেয়েকে আমি দেখে রাখতে পারবো না। তারে আমি কষ্টে রাখবো। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এক চড় আর সকালে ঘুম থেকে উঠে আর এক চড় মারব। আর দুপুরে গোসল করার আগে মুখের উপর কিল-ঘুষি মারব। ইচ্ছা হয় মেয়েকে আমার সাথে দেন! না হয় না দেন! দুনিয়ায় কি মেয়ের অভাব পড়ছে! টাকা হলে হাজার হাজার মেয়ে পাওয়া যায়!”
সবাই কান্না থামিয়ে ফেলল। একে অন্যের দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকাতাকি করছে। মামা পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করে ফেলার জন্য বলল, “বাবা জয়, দুষ্টুমী করে না। মুরব্বীদের সাথে দুষ্টুমী করতে নেই।” আবার সকলের দিকে তাকিয়ে বলল, “ছেলে আপনাদের কান্না থামানোর জন্য একটু দুষ্টুমী করেছে এই আরকি। আপনার কিছু মনে করবেন না। ঠিক বলেছি না বাবা জয়?”
“না, ঠিক বলেন নাই। আমি দুষ্টুমী করি নাই। সত্যি সত্যিই বলেছি।“
সে আবার পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করতে বিশেষজ্ঞ। সে কুকুরদের মধ্যকার বিবাদও মেটাতে পারে! কুকুকের ঝগড়া দেখলে মাটিতে হাত দেয়......। ওমনি কুকুক ভো-দৌড় মারে। ছোট বেলায় ব্যাপারটা খুবই কৌতুহল লাগতো। বড় হয়ে জানতে পারলাম যে, মাটিতে হাত দিলে কুকুর মনে করে লাঠি বা ঢিল-টিল তুলছে!
পরিস্থিতি মোটামুটি ঠাণ্ডা। বর-কনে পাশাপাশি বসা। এখনই গাড়ি স্টার্ট দিবে। তখনই জয় চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, “আব্বা.... এই মেয়ে আমি বিয়া করব না। এর মুখে গন্ধ। সে মনে হয় দাতঁ মাজে না! আমি রিয়া’রে বিয়া করব। আমি মাহির ভাইয়ের কথামত বিবাহ করতে এসেছি। এসে ফাইস্যা গেছি। আমি বিয়া করব না। করলে মাহির ভাই করুক।“
জয়’র কথা শুনে আমি লজ্জায় মোটামুটি লাল হওয়ার উপক্রম। এখনো বিয়ের সুযোগ আসে নাই। ভাবলাম এইটাই সুবর্ণ সুযোগ। একদম বিনা পয়সায় বিয়ে করার এমন সুযোগ আর কখনো আসবে না। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে লাফ দিয়ে দাড়িয়ে বললাম, “আমি রাজি, আমি রাজি। আমি বিবাহ করতে রাজি আছি!”
সবাই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, এই পোলারও মাথায় সমস্যা আছে। হওয়া বিয়ে ভেঙ্গে গেল।
বাড়ি নিয়ে জয়ে’র মাথায় গোবর মিশ্রিত পানি ঢালা হলো। গোবর মিশ্রিত পানি ঢাললে পাগলামী ভাল হয়ে যায়। পাগলের দ্বিতীয় ঔষুধ হচ্ছে গোবরের পানি। আর প্রথম ঔষুধ হচ্ছে বিয়ে। বউ শুধু পাগলকেই নয় সন্ত্রাসীকেও ভাল করে দেয়! বউকে মোটামুটি সর্বরোগের মহৌষধ বলা যায়।
গোসল-টোসল করে জয় আমাদের বাড়িতে আসলো। আমার মা তাও ফুফু হয়। সে অর্থে আমি তার ফুফুতো ভাই। বয়সে প্রায় আমার সমান তারপরেও আমারে “মিয়াভাই” ডাকে। আমি জয়কে জিগাইলাম,
“কিরে জয়, হঠাৎ রিয়া’র নাম বললি! মাইয়াডা কেডা রে?”
“ঘটনা আছে। তোমারে পরে একদিন বলব।“
“নির্বাচনের সামনে তোকে বিয়ে দেয়ার কারণ ঠিক বুঝলাম না। মামা এবার কি চেয়ারম্যান ইলেকশন করছে না? বিয়ে-শাদী নির্বাচনী কাজে ব্যাঘাত ঘটাবে না?”
“বিয়েটা হলে ওনার নির্বাচনের লাভই হতো।“
“কেমন......?”
“পাত্রীর বাবা এন্টিপার্টির মেম্বার। ওনার সাথে আত্নীয়তা করতে পারলে অনেক ভোট নিশ্চিত হয়ে যেত। এইবারও বাবা চেয়ারম্যান হয়ে যেত।“
“তোর বাবা চেয়ারম্যান হলেতো তোরই ভাল। না’কি?”
“বললে তুমি বুঝবে, পরে একদিব বলব। এখন চল নদীর পারে চল। নদীর ঠান্ডা বাতাস খেয়ে আসি। আজকে তোমাকে একটা জিনিস দেখাব? তুমি আশ্চর্য হয়ে যাবে।“
ওদিকে মা আমাকে বলে উঠলো, “মাহির তোর বাপ তোরে সাইডে যেতে বলেছে। আজ উনার শরীরডা ভাল না। বেশিক্ষণ ওই ক্যাচক্যাচানীর মধ্যে থাকতে পারবেন না।“
“ওই দিকেই যাইতেছি মা.......। তুমি কোন চিন্তা করো না।“
আমি আর জয় হাটতে হাটতে নদীর পারে চলে গেলাম। আমি বললাম,
“কিরে আশ্চর্য জিনিস দেখাবি না?”
“দেখাবো না......”
“আচ্ছা ঠিক আছে।“
তাকিয়ে আছি পদ্মার পানিতে। ধু ধু করছে। শুধু পানি আর পানি। জয়ে’র চোখে পানি। চোখ দিয়ে ঝড় ঝড় করে পানি পড়ছে। আমি বললাম,
“কিরে জয়, কি হইছে? কোন সমস্যা? আমাকে বল।“
“মিয়াভাই, যাদের বাড়ি ঘর নদীতে ভেঙ্গে নিয়ে যায় তাদের কত কষ্ট হয় তাই না?”
“হুম, অনেক কষ্ট হয়। এইসব আল্লাহ পাকের পরীক্ষা। তিনি বান্দার ধৈর্য্য পরীক্ষা করেন।“
“আগুনে পুরে গেলেও ভিটেমাটি কিছু থাকে। নদীতে ভেঙ্গে নিলে আর কিছুই থাকে না।“
“তুই এত কষ্ট পাস কেন!”
হটাৎ ছপ করে একটা শব্দ হলো। কয়েক বিঘা জমি পানির নিচে চলে গেল নিমিষেই। ফসলি জমি। অনেকগুলো স্বপ্ন ধুসর হয়ে গেল। কিছু বাচ্চার ঈদের আনন্দ জলে চলে গেল। কিছু বিবাহযোগ্য মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে গেল। অবশ্য যাদের স্বজনরা বিদেশে আছেন তাদের কথা ভিন্ন। বিদেশ থেকে টাকা পাঠাবে। আবার নতুন করে জায়গা কিনে বাড়ি বানাবে। ঈদের সামনে বোনাসের টাকা পাঠাবে। বাচ্চা-কাচ্চারা অনেক অনন্দ করে ঈদ কাটাবে।
প্রথমে ফাটল ধরে এরপর আস্তে করে নিচে নেমে যায়। নিচে নেমে যাওয়ার পর “ছপ” করে একটা শব্দ হয়। আশ্রয়কেন্দ্রের পরিবারের সংখ্যা বাড়ে। সরকার থেকে বড় অংকের বাজেট হয়। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বাড়িতে দালান ওঠে!
অনেক মানুষের ভিড় এই পদ্মার পাড়ে। কাপলরা আসে পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য । এরা শুধু পদ্মা সৌন্দর্যই দেখতে পায়, পদ্মার নির্মমতা এরা কখনো অনুভব করতে পারে না। পদ্মার প্রতি ফোটা পানিতে মানুষের চোখের পানি মিশে আছে।
ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম একটা বাড়ির দিকে দৃষ্টি পড়লো। জয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, “দেখ দেখ, আশে পাশের সব বাড়ি পানির নিচে চলে গেছে। ঐ বাড়িটা কেমন করে যেন টিকে আছে।”
“টিকে থাকার কারণ আছে।“
“কী কারণ?”
“ঐ পরিবাড়ের কেউ বিদেশে থাকে না। মা আর মেয়ে বাস করে ওখানে। ওদের কোথাও যাওয়ার নাই। আশ্রয়কেন্দ্রে ওদের জায়গা হবে না। কারণ ঐ বাড়ির কর্তা বিরোধীদলের মেম্বার ছিল।“
“এখন কি মেম্বার নাই?”
“এখন বেচেঁ নাই। গত নির্বাচনে মেম্বার হওয়ার পরপরই তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।“
“তুই কিভাবে এত কিছু জানস?”
“ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে জেনেছি।“
“বাবা তার লোকজনকে অর্ডার দিয়েছিল আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনেছি।”
“ভয়ংকর ব্যাপার তো!”
“চলো আজকে ওদের বাড়িতে বিকেলের নাস্তা করবো।“
“শত্রুর বাড়িতে যাবি? ওরা যদি তোকে বটি দিয়ে কোপায়!”
“কোপাবে না, ওর মূল হত্যাকারীকে জানে না। মৃত্যর পর বাবা এসে পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়ে গিয়েছিল।“
জাগার সাথে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার অপেক্ষমান বাড়িটির দিকে গেলাম। বাড়িতে একটা মসজিদ। মনে হয় এই মসজিদটার জন্য আল্লাহ বাড়িটিকে রক্ষা করছেন। মধ্যবয়সী এক মহিলা বের হয়ে আসলো,
“বাবা তোমারা কারা? কার কাছে এসেছো?”
জয় উত্তর দিল, “কাকি, আমি চেয়ারম্যানে ছেলে জয়, রিয়া’র ক্লাসমেট ছিলাম। স্কুলে আমরা একই ক্লাসে পড়তাম।”
“ওহ আচ্ছা, তোমরা বসো। রিয়া, ওই রিয়া, দেখতো কারা এসেছে?”
রিয়া বের হয়ে এলো। এলোমেলো চুল। এসেই বলল, “আরে জয় তুই! কেমন আছিস? তোর ভার্সিটি কি বন্ধ দিছে?”
“হুম, ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ তো। হাতে এখন লম্বা ছুটি। এই জন্য বাড়িতে আরকি।“
“ওহ্ আচ্ছা ভালই হয়েছে।“
আমার দিকে আঙ্গুল দিয়ে জয় বলল,
“মাহির ভাইকে চিনস?”
“ঢাকায় পড়াশুনা করে, শহীদ কন্ট্রাক্টরের ছেলে, আমাদের সময় ঝাউবন উচ্চবিদ্যালয়ের ফার্স্টবয় ছিল!”
“জানি......... উনাকে চিনি।”
আমি বললাম,“আমি কিন্তু তোমাদের সমবয়সী........... জয় এমনিতেই মিয়া ভাই মিয়া ভাই করে।“
“ওহ্ আচ্ছা........।”
আমরা দু’জনে দু’টা ভাঙ্গা চেয়ারে বসে আছি। বেশি নড়াচড়া করতে পারছি না। যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে! যেকোন পরিবারের আসবাবপত্রে তাদের দারিদ্রতা ফুটে ওঠে। গরীব মানুষের আসবাবপত্র সাধারণত জোড়াতালি দেয়া থাকে। যত বড়লোক হবে আসবাবপত্র তত চকচকে ঝকঝকে হবে।
রিয়া আমাদের সামনে একটা জলচৌকিতে বসা। কাকি মুড়ি আর খেজুরের গুড় নিয়া আসলো একটা প্লেটে। একটা এক পা ভাঙ্গা টুল এর উপর রাখলো। টুল’এর চার পা থাকে। এক পা ভেঙ্গে গেলে তার কোন সমসা হয় না। দুই পায়ে টুল দাড়িয়ে থাকতে পারে না। নাস্তা করে বিদায় হলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি রিয়া জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি ঘুরে তাকাতেই বন্ধ করে দিল।
রিয়া ম্যাট্রিকের পর আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে নি, যেদিন রিয়া’র বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হল সেদিন এই বাড়িতে মন্ত্রী এসেছিল। বলেছিল যে, মেয়ের পড়াশোনা শেষ হবার পর চাকরী দিয়ে দিবে। আর পড়াশোনা ও সংসার চালানোর জন্য প্রতিমাসে দশহাজার করে পাঠিয়ে দিবে।
কয়েকমাস তারা দুই’হাজার করে পেয়েছিল বটে। এরপর আর কোন খোজখবর কেউ নেয় নি। কথাগুলো বলতে গিয়ে জয়ের চোখের পানি নিচে পড়ে যাচ্ছিল। চোখের পানি বালুর উপর পড়ছিল। বালুর উপর পানি ঢাললে তা সাথে সাথেই বিলীন হয়ে যায়।
জয় ওর বাড়িতে খবর পাঠিয়ে দিল যে, সে আজকে ফুপুদের বাড়িতে থাকবে। যদিও এই বাড়িতে আসার ব্যাপারে তার বাপের নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু তার বাপ আজকে বাড়িতে তাই নমিনেশনের ব্যপারে কথা বলতে ঢাকায় গেছে। নতুনরা নমিনেশন চাইতেছে। এই জন্য সে অনেক দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্ত।
খাবার ঘরে আমরা সবাই একসাথে। আমার একপাশে জয় আর অন্যপাশে ছোটবোন টুম্পা। আমি যতক্ষণ বাড়িতে থাকি টুম্পা সাথেই থাকে। আগেতো রাত্রেও আমার সাথে ঘুমাতো! এখন বড় হয়েছে.... এখন আমার সাথে ঘুমায় না। তারপরও শুধু ঘুমানোর সময় ওর রুমে যায়। তাছাড়া সবসময় আমার সাথে থাকে। সে এখন ক্লাস এইটে পড়ে। সে আমার কাছ থেকে ভার্সিটির গল্প শোনে। তার অনেক স্বপ্ন ভার্সিটিতে পড়েব। সে জয়’কে কিঞ্চিত ভালবাসে। আমাকে বলে বলে দিতে।
আমি বললাম, “নিজেরটা নিজেই বল।” সে বলে, “আমার লজ্জা লাগে!” আমি বলি, “লজ্জা থাকলে প্রেম করা যায় না। প্রেমের প্রথম শর্ত নির্লজ্জ হতে হবে।” সে অনেকবার জয়ের কাছে গিয়েছে বলতে। কিন্তু যাওয়ার পর বলেছে, “ভাইয়া আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসবে।” আর জয় প্রতিবারই চকলেট নিয়ে এসেছে। সে চকলেট অবশ্য আমার পেটেই গেছে!
খাবার টেবিলে বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোর ছুটি আর কয়দিন আছে মাহির?”
“এই্তো, আর মাত্র এক সপ্তাহ আছে।“
“দেশের অবস্থা ভাল না, অবস্থা ভাল না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতেই থেকে যা।“
“না পারবো না, আমি কয়েকটা বাচ্চা পড়াই। ওদের পড়াশোনায় ক্ষতি হবে।“
জয় আমার রুমেই থাকবে। তারাতারিই শুয়ে পড়লাম। ছেলেটা শুধু কথা বলে। এবার বলে,
“জানো মিয়াভাই?”
“কী?”
“স্কুলে থাকতে রিয়া আমাকে প্রপোজ করেছিল।“
“কিভাবে প্রপোজ করেছিল?”
আমার কাছে হেটে হেটে আসছিল। হাতে একটা চিঠি। এসেই বলল, “জয় আমি তোকে খুজে খুজে প্রায় মরে যাচ্ছি।” আমি বললাম, “যা বলার চট করে বলে ফেল।”
জয় দীর্ঘ্যশ্বাসের সাথে বলল, “আর এমন সময় খবর আসলো রিয়ার বাবাকে কুপিয়ে মেরে ফেলে রেখেছে।“
“পরে কি কিছু বলেছিল?”
“এরপর থেকে সে কথাবার্তা খুবই কম বলতো। কারো সাথে খুব একটা মিশতেও চাইতো না। নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে ফেলে সে।“
“খুবই দু:খজনক ব্যাপার।“
আমরা প্রায় প্রতিদিনই পদ্মার পাড়ে হাটতে যাই। মোটামুটি রুটিন হয়ে গেছে। রিয়াদের বাড়ি পাড় হয়ে যেতে হয়। প্রতিদিনই দেখি মেয়েটা জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি পিছনে তাকালেই বন্ধ করে দেয়!
একবার জয়কে বললাম,
“তোকে মনে হয় রিয়া এখনো অনেক ভালবাসে।”
“তুমি কেমনে বুঝলে?”
“তোর জন্য জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে।“
জয় লজ্জা পায়। সে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। বেশিরভাগ মানুষই লজ্জা পেলে মাথা নিচু করে। যে যত বেশি মাথা নিচু করবে তার লজ্জা তত বেশি!
“জয়, তুই রিয়াকে বিয়ে করে ফেল।“
“হুম, তাই করবো ভাবছি। কিন্তু আব্বুতো কোনদিনই মেনে নিবে না।“
“বুদ্ধি আছে।“
“কী?”
“নির্বাচনের আগের রাত্রে বিয়ে করে ফেলবি। ওদিন মামা ভোট নিয়া টেনশনে থাকবে। তোর দিকে খুব একটা নজরদারি করতে পারবে না। তুই কয়েকজন বন্ধুবান্ধাব নিয়া বিয়া করে বাড়িতে উপস্থিত হবি।“
“বুদ্ধিডা খারাপ না, মাহির ভাই, তাই করতে হবে মনে হয়।“
আগামী মাসেই নির্বাচন। নির্বাচনী আমেজ চারদিকে। দেখতে দেখতে উৎসবের মধ্য দিয়েই কেটে গেল একটা মাস। আগামী কালই নির্বাচন। আজকে জয়ের বিয়ে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। জয় বাইক নিয়ে আমাদের বাড়িতে উপস্থিত। এসেই বলল,
“এখন কি করবো মিয়াভাই?”
“বিয়া যে করবি পাত্রী কি কিছু জানে?”
“না...তো........!”
“একটান দিয়া জানিয়ে আয়। রাত ১০টার দিকে রেডি থাকতে বলবি।“
জয় চলে গেল। কিছুক্ষণপর খবর পেলাম, সন্ত্রাসীরা জয়’কে গুলি করে ফেলে গেছে। স্পট ডেড। হাসপাতালে নেয়ার সময় হলো না! এলাকায় শোকের মাতম নেমে আসলো। নির্বাচনী আমেজ নিমিষেই নি:শেষ হয়ে গেল। মামা স্ট্রক করেছে। তাকে হাসপাতালের আই.সি.ইউ তে রাখা হয়েছে।
নির্বাচন হলো। প্রতিটি কেন্দ্রেই মামা এগিয়ে আছে। সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হবে। মামা আই.সি.ইউ তে । আমি, মা, বাবা সবাই হাসপাতালে মামার পাশে আছি। মামার অবস্থা আশঙ্কাজনক। লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে। মামা জিতে গেল। কয়েকদিন পর মামা রিলিজ পেল।
মামা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। সে রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে সমাজ সেবায় মনযোগ দিয়েছেন। বাবার ঠিকাদারি ভালই চলছে। পদ্মার পানি হঠাৎ করে নেমে গেছে। নতুন চড় পড়তে শুরু করেছে। রিয়াদের ফসলি জমিগুলো জেগে উঠেছে। রিয়া এবার কলেজে ভর্তি হয়েছে।
পড়ন্ত বিকেল। জয়ে’র কথা মনে পড়ছে। হাটতে হাটতে চলে গেলাম সেই জায়গাটায়। পদ্মার পাড়ে। জানালা খোলা ছিল। অপলাক দৃষ্টিতে রিয়া দাড়িয়ে।
পদ্মার পানির দিকে তাকিয়ে আছি। উত্তাল ঢেউগুলো কেমন যেন শান্ত হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে শুশুকরা লাফ দিয়ে উঠে। কে যেন আমাকে ডাকলো, “মাহির ভাই।” আমি ভ্রুক্ষেপ করলাম না। আবার একই ডাক পেয়ে পিছনে ফিরে দেখি, রিয়া দাড়িয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।”
“বলো.......”
একটা পুরোনো কাগজ আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ছয় বছর আগে আপনার কাছে লিখেছিলাম। কিন্তু.........”
আমি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি। চোখের সামনে দিয়ে কিছু প্রজাপ্রতি উড়ে গেল। তাদের গায়ে কত্ত রঙ। এতো রঙ এরা কোথায় পায়!