somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার লাল, নীল, গোলাপী (ভালোবাসার গল্প)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




পর্ব ৭ থেকে ৯..

৭.
শুভ্র আর চৈতি খুব আগ্রহ নিয়ে শুভ্রর বাবা হাসান সাহেবের মুখ দিয়ে তার আর চৈতির বাবা সিদ্দিক সাহেবের পুরনো দিনের ঘটনাবলী শোনায় ব্যাস্ত।
ট্রেন প্রায় ময়মনসিংহ ষ্টেশনের কাছাকাছি চলে এসেছে। দুই পুরনো বন্ধুর মধ্যে কথা চলছে।
আচ্ছা, হাসান! আরো কথা পরেও বলা যাবে। এখন প্রায় ষ্টেশনের কাছাকাছি চলে এসেছি। তুই ভাবির সাথে এখনো পরিচয় করিয়ে দিলিনা!
হাসান সাহেব শুভ্রকে ডেকে শুভ্রর আম্মুকে ডেকে আনাতে পাঠালেন। চৈতিকেও সিদ্দিক সাহেব পাঠালেন চৈতির আম্মুকে ডেকে আনতে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই "মিসেস জাহানারা" শুভ্রর আম্মু আর "মিসেস রাবেয়া" চৈতির আম্মু উভয়ই এক জায়গাতে এসে উপস্থিত হলেন। পরিচয় পর্ব চলছে।
হাসান সাহেব তার স্ত্রীকে চৈতির আম্মু "মিসেস রাবেয়া" এবং আব্বু "সিদ্দিক সাহেব" দুজনের সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দিলেন।
"মিসেস জাহানারা" সিদ্দিক সাহেবকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,
ওনার মুখে আপনার কথা অনেক শুনেছি তবে আজকে প্রথমবার আপনাকে দেখলাম! "মিসেস রাবেয়াও হাসান সাহেবের অনেক প্রশংসা করলেন। কথা বার্তার এক পর্যায়ে "সিদ্দিক সাহেব" বললেন,
ভাবী আপনাকে বলছি, আগামি ১৬ তারিখে আপনাদের আমাদের বাসায় দাওয়াত রইলো।
দোস্ত! সব কথা যদি আজকেই শেষ হয়ে যায়? তবে পরের দিন গুলোর জন্য আর কি বাকী রাখবি? ১৬ তারিখে আমার বাসায় আসবি, সেদিন জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে। আমাদের ছেলে-মেয়েরাও তো জানবে আমরা কেমন বন্ধু ছিলাম!
হাসান সাহেব উচ্চস্বরে হেঁসে দিয়ে জবাব দিলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই বন্ধু! অনেক কথা হবে সেদিন। তার আগেও অনেক কথা হবে, তুই ভাবী আর আমার এই ছোট্ট আম্মুকে নিয়ে মামুনের বিয়েতে অবশ্যই আসবি। ১৫ তারিখে।
সবাই দেখবেনা আমার এই পুরনো বন্ধুকে!!
হা, হা, হা, ঠিক আছে দোস্ত, আসবো আসবো।

দুই পরিবারের মধ্যে কথা চলছে। এদিকে শুভ্র আর চৈতি দুজন দুজনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শুভ্র চৈতিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো সেখান থেকে সরে অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য। চৈতি ইশারা করে জানালো "বাবা" ঠিক পেয়ে যাবে। শুভ্র আবার ইশারা করে সেখান থেকে আস্তে আস্তে সরে গেলো। কিছুক্ষন বাদেই চৈতি ওর আম্মুকে বলল, আম্মু আমি একটু আসছি। একথা বলে চৈতিও সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো।
তিন, চারটা বগি পার হয়ে একটা দরজার সামনে শুভ্র দাড়িয়ে আছে। চৈতিও কিছুক্ষনের মধ্যে সেখানে এসে উপস্থিত হলো।
কি হয়েছে? এতো জরুরী তলব দিলেন কেন? জলদি বলেন ওদিকে আব্বু, আম্মু চিন্তা করতে পারে।
শুভ্র চৈতির মুখের কথা শুনে কেমন যেনো আকাশ থেকে পড়লো! একটু আগেও যে মেয়ে বাবা মায়ের টেনশন বাদ দিয়ে শুভ্রর সঙ্গে সময় পার করছিলো, আর এখন আত্মীয়তা জানার পর যেখানে আরো নরম ভাবে কথা বলবে? সেখানে আরো চটাং চটাং কথা বলছে!! ব্যাপার কি? এই কি সেই মেয়ে? চিনতেও কষ্ট হচ্ছে শুভ্রর।
মনে মনে চিন্তা করছে শুভ্র "মনিষীরা" শুধু শুধু বলে যাইনি, "তুমি একটা মানুষের সঙ্গে কয়েকদিন চললেই তার সম্পর্কে সব কিছু জানতে পারবে। তাকে বুঝতে তোমার বেশীদিন লাগবেনা! তবে তুমি যদি কোন মেয়ে মানুষের সঙ্গে সারাটা জীবনও কাটিয়ে দাও! তবুও তাঁর মন তুমি বুঝতে পারবেনা!!

কি হলো? কি ভাবছেন?
কিছু বলছেন না কেন? আমি কি চলে যাবো?
না.. কিছু ভাবছিনা। তবে চৈতি তুমি এমন আচরন করছো কেন? আমরা তো এখন আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম। এখন তো আমরা খুব কাছের লোক তাইনা?
হ্যাঁ, সেটা ঠিক আছে তবে এখন আম্মু-আব্বু জেগেই আছেন। এজন্য চিন্তা করতে পারে, কিছুই তো বলে আসিনি।
শুভ্র এক ধ্যানে চৈতির চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। তারপর একটা আবেগ নিয়ে শুভ্র চৈতিকে বলছে,
চৈতি একটা কথা বলবো?
হুম বলেন?
তুমি কি কেউকে পছন্দ করো?
কি বলেন? না না আমি কাকে পছন্দ করবো? এখনো ওসব নিয়ে ভাবিনি।
চৈতি, আমি তোমাকে স্পষ্ট করে বলতে চাই! জানিনা তুমি কোন নজরে দেখবে? তবুও বলবো। আমাকে যে বলতেই হবে! একটু পরই আমরা পৌঁছে যাবো। তারপর..
হ্যাঁ আমাদের দেখা এরপর থেকে প্রায়ই হবে। তবে চৈতি এখন আমাদের মাঝে যে আত্মীয়তার সুত্রপাত ঘটেছে, এটা নাও ঘটতে পারতো। আর না হলেও আমি তোমাকে "ভালোবাসি" আর তোমাকেই ভালবাসতাম!
প্রথম বার ট্রেনে তোমাকে যখন দেখি, তখন থেকেই তোমাকে ভালোবেসে ফেলি। অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি তবুও বলতে পারিনি। আওয়াজ গলা পর্যন্ত এসেই থেমে গেছে কিন্ত মুখ ফুটে বাহির হইনি।
এখনি আমরা চলে যাবো। তাই যাওয়ার আগে আমার মনের কথা তোমাকে জানিয়ে যেতে চাই। "আই লাভ ইউ চৈতি" আই লাভ ইউ।। "আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। আমি কখনোই কোন মেয়েকে ভালোবাসিনি চৈতি! জানিনা প্রথম কোন মেয়েকে কি ভাবে প্রপোজ করতে হয়। মনে হলো তাই প্রপোজ করে দিলাম! অতো নিয়ম কানুন আমি জানিনা। এখন তোমার উত্তর কি চৈতি? আমি এখনি জানতে চাই! প্লিজ ভালো, খারাপ একটা জবাব দিয়ে দিবে এক্ষুনি।।
চৈতি কিছুক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে জবাব দিলো,
আমিও এসব বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ। কি করে জবাব দিতে হয় সেটাও জানিনা। তবে যেভাবে মনে আসলো সেভাবেই বলে দিলাম, "আই লাভ ইউ টু" আপনাকে ভালো লাগে বিধায় আপানার সঙ্গে সময় দিয়েছি! আমিতো ভেবেছিলাম আপনি যে "বোকা" কখনো আপনার মুখ থেকে এই কথা শুনতে পারবো কিনা সন্দেহ। তবে না
এখন মনে হচ্ছে...
এখন কি মনে হচ্ছে?
এখন মনে হচ্ছে একটু একটু বুদ্ধি আপনার মাথায় আছে!!
হ্যাঁ!! একটু একটু?
না তারও কম... হা হা হা, এক মুখ হাঁসি নিয়ে চৈতি দৌড় দিলো।।
এই চৈতি, দাঁরাও...

৮.
ট্রেনের হুইসেল বাজা শুরু হয়েছে। ষ্টেশনের একেবারই কাছাকাছি চলে এসেছে ট্রেন। হুইসেল শুনতে পেয়ে চৈতি দাড়িয়ে পড়লো। মনের মধ্যে একটা বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করেছে। শুভ্রকে ছেড়ে হঠাৎ যাওয়ার কথা মনে পড়াতে, দু চোখ কেমন ভারী হয়ে উঠলো চৈতির।
কি হলো? দাড়িয়ে গেলে যে? এখন বলো আমি বুদ্ধিমান! নাকি বোকা?
শুভ্রর চোখের দিকে তাকালো চৈতি। চৈতির চোখ দুটো ছলছল করছে। এটা লক্ষ্য করলো শুভ্র।
এই? তুমি কি কাঁদছো?
না, কাঁদছি না। চোখে কি যেন পড়লো!
আমার সামনে লুকানোর চেষ্টা করোনা। সত্যি করে বলো কি হয়েছে?
না, কিছুনা। আমরা তো চলেই এসেছি প্রায়। এখান থেকে যাওয়ার পর আপনি যদি আমাকে ভুলে যান??
কি বলছো এসব? তোমাকে ভুলবো? এখন কি আর সেই লাইন আছে? ভুলেই যদি যাবো, তবে কি আর প্রপোজ করতাম? আর তোমার জন্যই কিন্ত নতুন করে আরেকটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন করলে যে?
না মানে, জানিনা..হঠাৎ মনে হলো আপনি আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন! আমরা দুজনে এখন দুই দিকে চলে যাবো। পরে যদি আর দেখা না হয়? আপনি যদি আমাকে ভুলে যান?
কি সব বলছো? বাদ দাও এসব। চলো আমার হবু শুশুর, শাশুড়ি মানে তোমার আব্বু-আম্মু ওয়েট করছে বোধহয় তোমার জন্য।
হুম, চলেন...

ষ্টেশনে ওদিকে আগে থেকেই শুভ্রদের জন্য অপেক্ষা করছে, শুভ্রর মামাতো ভাই মামুন। মামুন একা আসেনি! পুরা বাহিনী নিয়ে চলে এসেছে। অনেক দিন পর শুভ্র আসছে একটা অন্যরকম ব্যাপার স্যাপার।
শুভ্র আর চৈতি ওদের বাবা, মায়ের সামনে এসে উওস্থিত হলো।
কিরে এতক্ষন কোথায় ছিলি? জিজ্ঞেস করলো চৈতিকে ওর আম্মু।
এইতো আম্মু, পাশেই ছিলাম।
যা সব ব্যাগ ট্যাগ যা আছে এখানে নিয়ে আই। আমরা সবাই এখান থেকেই নেমে যাবো।
ঠিক আছে আম্মু। নিয়ে আসছি।
শুভ্রর বাবা শুভ্রকে ডেকে,
আমাদের মালসামানা গুলোও নিয়ে আই। আর চৈতির সঙ্গে যা, ও মেয়ে মানুষ সব কিছু কি ও ধরে আনতে পারবে? তুই একটু সাহায্য করিস।
ওকে আব্বু যাচ্ছি।
শুভ্র মনে মনে বলছে, ওকে তো আমি সর্বদায় সাহায্য করতে চাই। তুমি কি সেটা বুঝবে আব্বু!
শুভ্র ওর ব্যাগ গুলি গুছিয়ে নিয়ে চৈতির সঙ্গে হাঁটছে। চৈতির সঙ্গে ওদের ব্যাগ গুলো নেওয়ার জন্য ওদের বগির দিকে যাচ্ছে শুভ্র। দুজনেই পাশাপাশি হাঁটছে, কিন্ত চুপচাপ। কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছেনা। দুজনই মনে মনে চিন্তা করছে কি বলবে? কি দিয়ে শুরু করবে? প্রথমে শুভ্রই শুরু করলো,
তোমাদের কামরাটা কোথায় যেন?
এইতো সাম্নেই।
ও আচ্ছা। তো চুপচাপ থাকবে নাকি কিছু বলবে?
কোই চুপচাপ? কি বলবো তাই ভাবছি। আচ্ছা আপনি কি আমাকে সত্যিই পছন্দ করেন?
চৈতি তোমার এখনো সন্দেহ হয়? তাহলে শোনো, আমি তোমাকে শুধু পছন্দই করিনা! আমি তোমাকে বিয়ে করবো বলেও চিন্তা করছি। এমনকি বিয়ের পর কইটা ছেলে, মেয়ে নেবো? এসবও পরিকল্পনা করা হয়ে গেছে।
শুভ্রর এসব কথা শুনে চৈতি তাঁর হাঁসি থামিয়ে রাখতে পারলোনা। চৈতি উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো, হা হা হা হা...
কি ব্যাপার হাসছো কেন? আমি কি হাঁসির কিছু বললাম?
না হাঁসির কিছুই বলেন নি। তবে বিয়ের পর কইটা ছেলে মেয়ে নিবেন এগুলোও চিন্তা করে ফেলেছেন? এসব শুনে আর হাঁসি চাপিয়ে রাখতে পারলাম না।
শুভ্র মনে মনে চিন্তা করছে, কি আশ্চর্য! এই মেয়ে একটু আগেও মন খারাপ করে হাঁটছিলো। আমাদের সম্পর্ক নিয়ে টেনশনে ভুগতেছিল। সম্পর্কটা আদৌ টিকবে কিনা এটা যার চিন্তার প্রধান কারন ছিল। সেই মেয়েকে আমি ভবিষ্যতের পরিকল্পনা গুলো বলে যেখানে ওর চিন্তা মুক্ত করলাম! সেখানে কিছু না বলেই হো হো করে হেঁসে উঠলো? সত্যিই অদ্ভুত! মেয়েদের মন বোঝা আসলেই অদ্ভুত ব্যাপার।
তা কি নাম রাখবেন বলে চিন্তা করলেন?
মানে?
আরে আমাদের ছেলে-মেয়ে হলে কি নাম রাখবেন, এগুলো কি চিন্তা করেননি?
না মানে, হ্যাঁ..চিন্তা করবোনা কেন? অবশ্যই চিন্তা করে রেখেছি।
বলবো?
আচ্ছা, আচ্ছা শুনছি। আগে ব্যাগ গুলো নামাতে হবে। ঐযে উপরের তাকে ওই লাল আর নীল ব্যাগ, ওই দুইটা আমাদের। পারবেন নামাতে?
চৈতি! তুমি কি আমাকে ছোট মানুষ ভেবেছো? এরকম দশ, বারোটা ব্যাগ নামানো আমার পক্ষে একেবারেই মামুলি ব্যাপার।
চৈতি মুখের হাঁসি এক হাত দিয়ে চেপে রেখে,
হ্যাঁ বাবা বুঝেছি আপনি সবই পারেন! আগে ব্যাগ দুটো নামান।
শুভ্র এক হাত দিয়ে ব্যাগ নামাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে, কি ব্যাপার? এই মেয়ে তো আমার সব কথাই হেঁসে উড়িয়ে দিচ্ছে! আমি কি কোন হাঁসির কিছু বলছি? কি জানি বাবা' আজকাল কি হচ্ছে কিছুই তো বুঝতে পারছিনা। এভাবে সব কথাই যদি মেয়েটা হেঁসে উড়িয়ে দেই? তাহলে আমার তো ইজ্জত, মান কিছুই টিকবেনা!
এই যে মিঃ? ব্যাগ ধরে কি এভাবে বলদের মত দাড়িয়ে থাকবেন? নাকি সাম্নের দিকে হাঁটা শুরু করবেন? ওদিকে ট্রেন কিন্ত দাড়িয়ে গেছে সে খেয়াল কি আছে আপনার?
হ্যাঁ, হ্যাঁ..ট্রেন দাড়িয়ে গেছে? চলো চলো, জলদি চলো সবাই ওয়েট করছে বোধহয়।
হুম, আমিতো যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। আপনি চলা শুরু করলে হয়।
এই যে চৈতি! আমি কিন্ত দেখছি সেই কখন থেকে, তুমি আমাকে বার বার অপমান করার চেষ্টা করতেছো? একটু আগে কি বললা? আমি বলদ?
চৈতি আবারো হেঁসে উঠলো শুভ্রর কথা শুনে। না... আপনি বলদ হবেন কেন? ঐযে? ব্যাগ হাতে বলদের মত দাড়িয়ে ছিলেন, তাই বললাম।
না চৈতি, এভাবে তুমি আমাকে বলদ বলতে পারোনা..
আচ্ছা সরি। আর বলবোনা ওকে?
হুম ওকে। মনে থাকে যেন।
আচ্ছা মনে থাকবে। এখন বলেন, ছেলে-মেয়েদের নাম কি রাখবেন বলে চিন্তা করে রেখেছেন?
শুভ্র মনে মনে বলছে, এই মেয়ে তো নাছোড় বান্দা! সেই কখন এই কথা বলেছিলাম এখনো মনে নিয়ে বসে আছে। না বলা পর্যন্ত রেহাই নাই!
হ্যাঁ বলছি, যদি মেয়ে হয়? তবে, তবে "স্বর্ণা" আর ছেলে হলে "শাকিল"
শুভ্রর কথা শুনে এবার আর চৈতি কোন ভাবেই তাঁর হাঁসি চাপিয়ে রাখতে পারলোনা। উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো। আর বলতে লাগলো,
আমি আগেই বলেছিলাম, আপনি একটা "বোকা" বলদ! দুইটাই। হা হা হা হা...
কি বললা? দাঁরাও... কেন আমি বলদ আর বোকা? জবাব দিয়ে যাও?
দুটি ছেলেমেয়ের নামই আপনি আপনার নামের সাথে মিলিয়ে রাখছেন! এজন্য আপনি আবার "বলদ"
শুভ্র মনে মনে চিন্তা করছে, তা তো ঠিক। ইশ' কি ভুল করে ফেললাম! উফ" এই মেয়েটা তো আমাকে...
আর "বোকা" বললে কেন? সেটা তো বলে যাও?
চৈতি দৌড়াচ্ছে আর বলছে, আয়নার সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন আপনি নিজেকে, তাহলে উত্তর পেয়ে যাবেন।।
শুভ্র দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিজের চুল নিজে ছিঁড়ছে। এ কোন পাগলীর সাথে প্রেম করছি?
এ তো সুযোগ পেলেই আমার দুর্বল সাইড গুলাতে ভালো ভাবেই
আঘাত করতে থাকে। মাথা গরম করার কোন কিছুই তো বাকী রাখলোনা এই মেয়ে!

৯.
ট্রেন থেকে নামার জন্য প্রস্তুত শুভ্র এবং চৈতির বাবা-মা। চৈতি এবং শুভ্র দুজনই তাদের সামনে এসে উপস্থিত হলো।
কিরে শুভ্র? এতো লেট করলি কেন তোরা দুজন? তোদের জন্য কখন থেকে ওয়েট করছি! বলল, শুভ্রর বাবা শুভ্রকে।
না বাবা, লেট হলো কোথায়? আমাদের আর আঙ্কেলদের লাগেজ গুলো নামাতে নামাতে একটু দেরী হলো, এই আর কি...
হ্যাঁ হয়েছে, এখন দ্রুত নেমে দেখ কেউ রিসিভ করতে আসলো কিনা?
জি বাবা, দেখছি।
শুভ্র লাগেজ গুলো রেখে বাইরের উদ্দেশ্যে নামবে, সেই মুহূর্তে একবার চৈতির মুখের দিকে তাকালো। চৈতি ওর মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রর তাকানো দেখে মুখ চেপে হাসছে অন্য দিকে তাকিয়ে।
শুভ্র মনে মনে গুনগুন করতে লাগলো, নাহ! এই মেয়ে তো আচ্ছা পাগলী! আমাকে দেখে এখনো হাসছে? সবার সামনে তো এই মেয়ে আমাকে হাঁসির পাত্র বানিয়ে ছাড়বে!

মামুনও তাঁর বন্ধুরা এক এক বগির সামনে গিয়ে দেখছে, শুভ্ররা কোন বগি থেকে নামে। শুভ্রও নামছে আর মামুনও একই সময় ঠিক সামনে এসে উপস্থিত!
আরে! মাম্মা! চইলা আইছো?
হ' মাম্মা! কিন্ত তুই যে আসছিস? একটা ফোন দিয়ে আসবিনা? আমিতো মনে করেছিলাম, তোদের বাসার কাজের ছেলেটা কি যেন নাম? ও "নিজাম" ওই আসবে! কিন্ত তুই চলে আসলি? "হট এ সারপ্রাইজ!!
তুই আসছিস! আর আমি আসবোনা?? এটা কোন কথা? আমার তো রাতের থেকে ঘুম নাই! তোর কথা চিন্তা করতে করতে।
কস কি? দুই দিন পর তোর বিয়া! এখন ভাবীর কথা চিন্তা করবি। এখনো যদি আমার কথা চিন্তা করিস! তাহলে কি হবে মামা??
আরে বাদ দে, কোথায় মাইয়া মানুষ আর কোথায় তুই?? তুই আগে বাকী সব পরে।।
সত্যিই!?
হ্যাঁ সত্যিই! এসব কথা পরেও বলা যাবে। মামা-মামী কোথায়? তাদের নামা! ওদিকে গাড়ি দাড় করিয়ে রেখেছি।
হুম, আই ওপরে আই। লাগেজ গুলা নামাতে হবে।
এই টুটুল, ফিরোজ, নাইম, হিরন! তোরা সবাই ব্যাগ গুলা নামাতে লাগ! আমি মামা-মামীকে নিয়ে আসি। চল শুভ্র..
ভেতরে গোল টেবিলে বসে পুরনো বন্ধুদের মিটিং এখনো চলছে। শুভ্র আর মামুন এসে সেখানে হাজির হলো। হাসান সাহেবকে দেখেই মামুন,
ফুফা "আচ্ছালামুআলাইকুম" ভালো আছেন?
হ্যাঁ, ভালো আছি বাবা! তুমি কেমন আছো? এদিকের অবস্থা কি সব ঠিকঠাক তো? তোমার বাবা আসছে নাকি?
হ্যাঁ, আমি ভালো আছি ফুফা। সব ঠিকঠাক মতোই আছে। বাবা আসেনাই, আমাকে পাঠিয়েছে। আপ্নারা বাইরে আসেন। লাগেজ গুলো সব নামানো হয়ে গেছে।
হুম নামবো।। এনাদের সাথে পরিচিত হও, তোমার আরেক আঙ্কেল-অ্যান্টি।
"স্লামালাইকুম আঙ্কেল, স্লামালাইকুম অ্যান্টি। ভালো আছেন?
"ওয়ালাইকুম আচ্ছালাম" আব্বু! হ্যাঁ ভালো আছি।
শুভ্রর বাবা চৈতির আব্বুকে বললেন,
সিদ্দিক! এটা হচ্ছে আমার সেই সম্বন্ধীর ছেলে, যার বিয়ে হচ্ছে। মামুন।
ও আচ্ছা আচ্ছা, তুমিই মামুন?
জি আঙ্কেল! আপ্নারাও নামুন। বসে আছেন কেন? আপনাদের লাগেজ গুলোও নামাইতে বলি?
না না, বাবা! আমাদের বাসা এখানেই। আমরা বাসাতেই চলে যাবো। তোমার বিয়ের দিন দেখা হবে।
সিদ্দিক সাহেবের কথা শুনে মামুন কিছুই বুঝতে পারলোনা! কেমন আঙ্কেল? আবার বাসা এখানেই? আগে তো কখনো দেখা হইনি? কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে মামুন শুভ্রর দিকে তাকালো।
শুভ্র চোখ দিয়ে ইশারা করে জানালো পরে বলছি ঘটনা কি?
মামুন চৈতির দিকে তাকালো, চৈতি শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে আর মিচকি মিচকি হাসছে! শুভ্রও একেকবার তাকাচ্ছে আর ভ্রু কুচকে চৈতির হাঁসির জবাব দিচ্ছে। মামুন এগুলো লক্ষ্য করে কাহিনী বুঝতে পারলোনা!
আচ্ছা, ফুফু! তোমরা নিচে নামতে লাগো আমি আর শুভ্র বাহিরে ওয়েট করছি। এই বলে মামুন শুভ্রকে ডেকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।
কিরে? ঘটনা কি? এবার খুলে বল?
ঘটনা শুনতে চাস? হুম...তাহলে তো তোকে সবকিছু খুলে বলতে হয়। প্রথম থেকেই স্টার্ট করি। তাহলে শোন... শুভ্র মামুনকে সব কিছু খুলে বলল।।
ওওও তাহলে এই ব্যাপার!! এই জন্যই তো বলি, রাতে যখন ফোন দিয়েছিলাম? তুই অমন পাগলামো কেন করছিলি! আমাকেই চৈতি মনে করে কথা বলা শুরু করেছিলি! ভালো মামা ভালো, তলে তলে এতো কিছু হয়ে গেলো! আর আমাকে ফোন দিয়ে একবারও জানালিনা?? এক রাতেই তো তুই রেকর্ড গইড়া দিছস!
আরে বাদ দে, কি যে বলিস? তোকে তো সবকিছু জানাতামই। ফোনে বলার থেকে সামনাসামনি বললাম, এটাই বেশী ভালো হলোনা?
হুম, তা ঠিক কইছস! সরাসরি বলাতে ভালোই হইছে। তবে আমার মাথায় এটা ঢুকছেনা মামা! যে মাইয়ারে তুই পছন্দ করলি? সেই মাইয়ার বাপ-মা তোর, মানে আমার ফুফার সেই ল্যাংটা কালের দোস্ত হইলো ক্যামতে?? এইটা তো মামা' আমার এই ছোট মেমোরিতে ঢুকতাছেনা!!
আমি কি করে বলবো? হইতো নসিবে এরকম কিছু ছিলো তাই হইছে। যাই হোক তোর কাহিনী বল, ভাবীর সাথে ক্যাম্নে কি? তোদের হিস্টোরি টা খুইলা বল...
হুম, সবই বলবো। আগে চল, যাইতে যাইতে সবকিছু বলা যাবে। অনেক কথা আছে তোর সাথে!

শুভ্রর বাবা-মা, চৈতি আর ওর আব্বু-আম্মু বগি থেকে নেমে বাইরে এসে উপস্থিত হলো। হাসান সাহেব শুভ্র আর মামুনকে ডেকে একটা অটো ডেকে আনতে বলল, চৈতিদের জন্য।
কিছুক্ষনের মধ্যে একটা অটো নিয়ে হাজির হলো ওরা দুজন। বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বন্ধুর সাথে শেষ কোলাকুলি করে নিচ্ছেন "সিদ্দিক সাহেব" বুন্ধুকে ছাড়তে যেন কিছুতেই মন চাইছেনা শুভ্রর বাবা হাসান সাহেবের। তবুও যে যেতে দিতে হবে।
চৈতির মুখে এখন আর কোন হাঁসি নেই! মুখটা কেমন শুকিয়ে আছে। একটু আগেও যে মুখে হাঁসি লেগে ছিল! সেই মুখটা এখন কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে আছে। শুভ্রর চোখে এটা ধরা পড়লো।
শুভ্ররও খুব খারাপ লাগছে এখন। কিছুক্ষন আগেও মেয়েটার কার্যকলাপ দেখে শুভ্রর রাগ লাগছিলো। আর বিদায়ের সময় এসে শুভ্রর বুকের ভেতর একটা চাপা কষ্ট হচ্ছে। চৈতিকে কিছুতেই ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা শুভ্রর।
কেন এতো ভালোলাগা? কেন মাঝে মাঝে রাগ লাগে? কেনই বা এই কষ্ট? এটাই বুঝি ভালোবাসার রং। কখনো লাল! কখনো নীল ! কখনো বা গোলাপি রঙে মনের আকাশটা রাঙিয়ে যাওয়া।

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×