ইস্যুতে ঢেকে যায় ইস্যু
গত দুদিন ধরে আমরা যখন আল জাওয়াহিরির ফেইক ভিডিও বার্তা নিয়ে চারিদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ করছিলাম তখন সরকার হঠাৎ করে বাংলাদেশের অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ভারতীয় কোম্পানী ওএনজিসি 'র সাথে চুক্তি করে ফেলেছে। সমুদ্রে তেল- গ্যাস থাকলে তা উত্তোলন করে দেশের ও জনগনের প্রয়োজনে ব্যাবহার করা হবে জেনে নিশ্চয় আনন্দিত হবার কথা। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে ইন্ডিয়া বা ইন্ডিয়ান কোম্পানীর সাথে এ পর্যন্ত যে সকল গোপন ও প্রকাশ্য চুক্তি হয়েছে তাতে করে আমরা কোন ভাবেই আনন্দিত হতে পারি নাই। কারন চুক্তি গুলোতে খুব অশালীন ভাবে বাংলাদেশ ও এর দরিদ্র জনগন তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ঠিক তেমনি আরো একটি এক তরফা চুক্তি সরকার ভারতীয় কোম্পানী ওএনজিসি'র সাথে করে ফেললো আমাদেরই চোখের সামনে। উল্লেখ্য ওএনজিসি ভারতের মিনিস্ট্রি অব পেট্রোলিয়াম আ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস এর আওতাধীন একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান।
চুক্তির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো
একটু দেখে নিই, এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো। শুরুতেই বলে দিচ্ছি আমি কোন টেকনিক্যাল কেউ নয়। অল্প বিস্তর পড়াশুনা করে যা উদঘাটন করেছি তা নিচে তুলে ধরলাম।
১. সংশোধিত পিএসসি ২০১২-তে বিদেশি কোম্পানির অধিকতর মুনাফার স্বার্থে গ্যাসের ক্রয়মূল্য আগের চুক্তির তুলনায় শতকরা ৬০-৭০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে।
২. প্রতিবছর গ্যাসের দাম শতকরা ৫ ভাগ হারে বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
৩. ব্যয় পরিশোধ পর্বে বিদেশি কোম্পানির অংশীদারিত্ব শতকরা ৫৫ ভাগ থেকে বৃদ্ধি করে শতকরা ৭০ ভাগ করা হয়েছে।
৪. যথেচ্ছ দামে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
৫. আমদানি করা গ্যাসের চাইতেও বেশি খরচ হবে নিজ দেশের গ্যাস ক্রয়ে। উপরন্তু চুক্তির কারনে বাংলাদেশের আর্থিক বোঝাও সীমাহীন হবে।
৬. চুক্তির আওতায় কোম্পানিগুলো ১৪ হাজার ২শ’ ৯৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় লাইন টু ডি সিসমিক সার্ভে করতে হবে ও দু’টি কূপ খনন করবে।
৭. তেল-গ্যাস পাওয়া গেলে মোট গ্যাসের ৫৫ শতাংশ (কস্ট রিকভারি) পাবে ওএনজিসি। বাকি অংশের মধ্যে তেল ও কনডেনসেটের ৭০ থেকে ৯০ শতাংশে এবং গ্যাসের ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৮৫ শতাংশ পাবে পেট্রোবাংলা।
৮. পুঁজির অভাবের কথা বলে এরকম চুক্তি করা হচ্ছে, অথচ এতে ওএনজিসি যে বিনিয়োগ করবে তার দ্বিগুণ অর্থ গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে অলস পড়ে আছে।
৯. এইরকম মডেলে চুক্তি স্বাক্ষর করলে বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ যে শুধু বিদেশি কোম্পানির দখলে চলে যাবে তাই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পায়নের জন্য গ্যাস সম্পদকে কাজে লাগানোও সম্ভব হবে না।
আসুন জিঘাংসার আগুনে পুড়াই কাঠমোল্লাদের
আসুন আমরা সবাই জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তাটা নিয়ে আরো একবার মেতে উঠি। চেতনার কুইনাইন গলধগরন করে সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে কাঠমোল্লাদের চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করি।
কৃতজ্ঞতা:
১. ওএনজিসি ও কনোকো-ফিলিপসের সাথে আত্মঘাতী সর্বনাশা চুক্তি করবেন না
২. দু’টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি
৩. তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি