somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইমাম মাহদির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে হাদিস ও দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের বর্তমান কার্যক্রম

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রের কুরায়শি শাসক (হাদিসে যাকে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে) ইমাম মাহদির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার সংশ্লিষ্টতা এসেছে, তাতে বুঝা যায় যে, এগুলো শেষ জামানার অংশ হিসাবে হতে হবে। আসুন, আমরা একটু মিলিয়ে নেই, হাদিসের ধারাবাহিকতায় আমরা কোন জামানায় বসবাস করছি। অন্যথায়, সিরিয়া থেকে বনুকাল্ব গোত্রের যে কুরায়শি শাসকই বের হোক না কেন, আর যত ঘটনা ও যুদ্ধই হোক না কেন, তার গুরুত্ব অনুধাবন করা যাবে না।

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“নবুওয়াত ব্যবস্থা তোমাদের মাঝে ততদিন থাকবে, যতদিন আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা, তখন তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর) তোমাদের মাঝে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে এবং তা আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (খুলাফায়ে রাশিদিন এর যুগ)। অতঃপর তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর হানাহানির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা আল্লাহ তাআলার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (রাজতন্ত্র)। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তার বিলুপ্তি ঘটবে। তারপর জবর দখল তথা আধিপত্য বিস্তারের রাজত্ব কায়েম হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে কিছুকাল বিরাজমান থাকবে (নানা ভূখণ্ডে বর্তমান একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকগণ) । তারপর যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, তখন এরও অবসান ঘটবে। অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত রাষ্ট্র-ব্যবস্থা কায়েম হবে। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন”।

(মুসনাদে আহমদঃ ৪/২৭৩)

আর তাছাড়া অপর হাদিসে, হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) এবং মু’আজ বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“ইসলামের সূচনা হয়েছে নবুওয়াত ও রহমতের শাসনের মাধ্যমে। এরপর হবে খেলাফত ও রহমতের শাসন। এরপর হবে অত্যাচার লুটেরা বাদশাদের শাসন। এরপর হবে অহংকারী প্রভাবশালী বাদশাদের শাসন, তখন জমিনে অন্যায়, অবিচার, ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। সেকালের লোকেরা রেশম (সিল্ক), ব্যভিচার (পরকীয়ার পাশাপাশি বয়ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ডের নামে চলমান বহুল প্রচলিত সামাজিকভাবে স্বীকৃত উঠতি বয়সী অবিবাহিতদের জেনা) এবং মদকে হালাল করে ফেলবে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পর্যন্ত এর মাধ্যমেই তাদেরকে রিজিক দেওয়া হবে এবং সাহায্য করা হবে”।

(শুয়াইবুল ঈমান আল বায়হাকি, ৫/১৬)

উপরের হাদিসদ্বয়ের প্রেক্ষিতে আমরা যে যুগের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি, তা হচ্ছে অন্যায়, অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়ার যুগ। আল্লাহ তা’আলার জমিনে সর্বোচ্চ শাসন ব্যাবস্থা (sovereignty) একমাত্র আল্লাহর হওয়া উচিৎ। যদি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর কানুন ব্যতীত মানুষের তৈরি কোন কানুন বাস্তবায়নের অপচেস্টা চালানো হয়, তবে অবশ্যই জমিনে অন্যায় অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদে ভরে যাবে।

১৯২৪ সালে উসমানি খেলাফতের ভেঙ্গে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ ৫৭ টি ভূখণ্ডে বিভক্ত হয়ে বর্তমানে একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকদের দ্বারা শাসিত। ‘অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে’ - মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তিই প্রমাণ করে সারা বিশ্বে ইসলামী শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজত্বের লাগাম মুসলিমদের হস্তগত হবে। কখনো এর ব্যতিক্রম হবে না। কারণ, বিভিন্ন বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা যথা সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতিহাসে তার বহু প্রমাণ রয়েছে। এবং আমরা সেই রকমই একটি ‘ট্রাঞ্জিকশন ফেজ’ এ আছি।

আল আকামা ইবনে মাসুদ বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন,

“আমি তোমাদেরকে সাতটি মারাত্মক ফিতনার ব্যাপারে সাবধান করছি যা আমার পরে আসবে, একটি ফিতনা যা মদিনা থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা মক্কা থেকে আসবে, একটি ফিতনা ইয়েমেন থেকে আসবে, একটি ফিতনা বৃহত্তর সিরিয়া থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা পূর্বদিক থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা পশ্চিম দিক থেকে আসবে এবং একটি ফিতনা যা সিরিয়ার পাহাড়ি উপত্যাকা থেকে আসবে যা হল সুফিয়ানি (সিরিয়ায় বনু কাল্ব গোত্রের কুরায়শি শাসক)”।

ইবনে মাসুদ বলেন, ‘আমাদের ভিতরে অনেকে প্রথমগুলো দেখেছি আর বাকিগুলো আমাদের পরবর্তী পজন্ম দেখবে’।

(মুসতাদরাকে হাকিম, আল ফিতান)

এখন আমরা একটু সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থার ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে নেই।

মূলত খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০০ বছর থেকে সিরিয়ার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। ইসলাম আসার সময়, সিরিয়া মূলত ‘শাম’ নামে পরিচিত ছিল এবং এর বৃহত্তর অংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমান জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, প্যালেস্টাইন ও দখলদার ইসরাইল। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতের সময় সিরিয়া রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। এরপর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) ও হযরত আবু ওবায়দা (রাঃ) এর নেতৃত্বে একে একে পুরো বৃহত্তর সিরিয়া (শাম) ইসলামিক খেলাফতের অধীনে আসে এবং দলে দলে সেখানকার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। খুলাফায়ে রাশেদিনদের পরে ১০৯৮ সাল পর্যন্ত জাজিরাতুল আরব ভিত্তিক উমাইয়াদ, আব্বাসিয়াসহ মিশরভিত্তিক কয়েকটি রাজতন্ত্রের অধীনে শাসিত হয়। ১০৯৮ থেকে ১১৮৯ সাল পর্যন্ত ক্রুসেড যুদ্ধের সময় বর্তমানের মূল সিরিয়াসহ বৃহত্তর সিরিয়ার বিভিন্ন অংশ জার্মান, ইংরেজ, ইতালি ও ফ্রান্সের দ্বারা শাসিত হয়। পরবর্তীতে সেলজুক, আইয়ুবি, মামলুকদের হাত ঘুরে এই ভূখণ্ড ১৫১৬ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর মূলসিরিয়াসহ বৃহত্তর সিরিয়া ব্রিটিশ ও ফ্রান্স সেনাবাহিনীর অধীনে আসে। এবং এই দুই সাম্রাজ্যবাদী জাতি তখন একটা চুক্তির মাধ্যমে এর উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে। যদিও ১৯২০ সালে হাশেমি পরিবারের ফয়সাল নামক একজন তল্পিবাহককে আমীর করে একটি কয়েকমাসের ক্ষণস্থায়ী ‘সিয়িয়ান রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু তা পরে আবার ‘ফ্রান্স ম্যান্ডেট’ এর অধীনে চলে আসে।

এমনিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত ফ্রান্স সেনাবাহিনী এবং সিরীয় জাতিয়তাবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে দফায় দফায় কয়েকটি যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং ১৯৩৬ সালে সিরীয় জাতীয়তাবাদীদের ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাধীনতা চুক্তি সম্পাদিত হয়। এবং হাসিম আল তাসিকে প্রথম রাষ্ট্রপতি করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে তা আবার ফ্রান্স সেনাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং ১৯৪৬ সালে এপ্রিল মাসে সেনা প্রত্যাহার করে প্রজাতন্ত্রী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।

১৯৪৬ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত শুধু আরব ইসরাইল যুদ্ধ (১৯৪৮) আর ঘন ঘন সামরিক অভ্যুত্থানের ইতিহাস। এর মাঝে সুয়েজ খাল নিয়ে ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় আরব ইসরাইল যুদ্ধের পরে সিরিয়া রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) এর সাথে মৈত্রী চুক্তি করে। এর ফলে সিরিয়া রাশিয়া থেকে সমর সরঞ্জাম এর সাথে সমাজতন্ত্রের চেতনাও আমদানী করতে সক্ষম হয়। ১৯৫৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সিরিয়া এবং মিশর ‘সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র’ এর ঘোষণা দেয় এবং ১৯৬১ সালে তা ভেঙ্গে যায়। এর মাঝে সিরিয়াতে আরব জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক মতবাদ ‘বাথিজম’ এর উত্থান ঘটে এবং একে কেন্দ্র করেই সিরিয়ায় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হতে থাকে। ১৯৬৬ সালে সালেহ জাদিদ (হাদ্দাদিন গোত্রের), মুহাম্মদ উমরান (খাইয়্যাতিন গোত্রের) এবং হাফিজ আল আসাদ (কাল্বিয়্যা বা বনু কাল্ব গোত্রের) মিলে আরেক দফা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা হাতে নেয়। এবং আশ্চর্যজনকভাবে তিনজন অফিসারই শিয়া নুসাইরিয়া আকিদার। এরমাঝে ১৯৬৭ সালে সিরিয়া আবারও ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং গোলান মালভূমি হাতছাড়া হয়। এই বিষয়কে ভিত্তি করে যুদ্ধকালীন সামরিক প্রধান হাফিজ আল আসাদ ও অপর সামরিক শাসক সালাহ জাদিদের সাথে মতপার্থক্য প্রকট হয়। যার ফলস্বরূপ, এক রক্তপাতহীন সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আল আসাদ ক্ষমতায় আসীন হয় এবং ২০০০ সালে তার মৃত্যুর পর ৩০ বছরের শাসন শেষে তার ছেলে বাশার আল আসাদ ক্ষমতায় আসে। উল্লেখ্য, এ নুসাইরিয়া সম্প্রদায় সিরিয়ার মাত্র ১৩% শিয়ার একটি অংশ।

মূলত ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আসাদের ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে সিরিয়া নামক গোটা ভূখণ্ডে ইসলাম আসার পরের ইতিহাসে প্রথম কোন ব্যক্তি সিরিয়ার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল যে কিনা আরবদের গোত্র পরিচয়ের দিক থেকে বনু কাল্ব গোত্রের এবং আকিদাগত দিক থেকে শিয়া নুয়াইরিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং জন্মগতভাবে পাহাড়ি উপত্যাকার একটি গ্রাম কারদাহা থেকে ।

২রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ সালে হামা শহরে বনু কাল্ব গোত্রীয় প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার সহোদর কর্নেল রিফাত আসাদের নেতৃত্বে সিরিয়ান সেনাবাহিনী আহলে-সুন্নাহ, বিশেষ করে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের উপর যে আক্রমণ ও গণহত্যা পরিচালনা করে নিকট অতীতে তার কোন নজির নেই। সে গণহত্যায় গুম, গ্রেফতার ও দেশত্যাগীদের ছাড়া শুধু হত্যার শিকার-ই প্রায় ৪০-হাজার সাধারণ লোক।

বিভিন্ন দেশের সংবাদ পত্রে প্রকাশ, সিরিয়ার আসাদ সরকার বিদ্রোহ ও আন্দোলন দমনের জন্য সেনাবাহিনীকে যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করে। পৈশাচিক এ দমন অভিযানের বিরুদ্ধে জাতিগত প্রতিবাদ ও বহির্বিশ্বের চাপ ঠেকানোর জন্য আন্তঃ ও বহিঃ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়াসহ সংবাদ পত্রের উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। হামা শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সব রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। শহর থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হয় নি। বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ কেটে দেয়া হয়, ফলে হামলার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাতেই পুরো শহর বিভীষিকাময় অন্ধকারে পতিত হয়। বহু মসজিদ ও গির্জা ধ্বংস করা হয়, অলিতে-গলিতে হত্যাযজ্ঞ চলে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, বহু কবরস্থান গুড়িয়ে দেয়া হয়। অবশেষে স্বৈরশাসক ও তার বাহিনীর হাতে [২-২৮ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ই.] লাগাতার ২৭-দিন অব্যাহত গণহত্যা ও বাড়ি-ঘর ধ্বংসের পর হামা শহরের এক তৃতীয়াংশ নিঃশেষ হলে এ ধ্বংস যজ্ঞের সমাপ্তি ঘটে।

গণহত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বর্ণনা:
o পরিকল্পনাকারী: প্রেসিডেন্ট হাফেজ আসাদ নুসাইরি, আলাবি।
o বাস্তবায়নকারী: কমান্ডার রিফাত আসাদ, সিরিয়ান সেনাবাহিনী, সিরিয়ান এরাবিক এয়ার ফোর্স, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনী, সাধারণ গোয়েন্দা বিভাগ, বুদ্ধিজীবী, সরকার দলীয় সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ বাহিনী এবং সিরিয়ান সেনাবাহিনীর সবক’টি ইউনিটসহ পুরো সরকার যন্ত্র হামাবাসীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
o হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র: সাজোয়াযান, ট্যাংক, কামান, রাইফেল, বিমান ও বুলডোজার।
o ভিকটিম: সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী, তথা ইখওয়ানুল মুসলিমিন।


বিভিন্ন পরিসংখ্যান মতে মৃত ও ধ্বংসের পরিমাণ:

o ব্রিটিশ সাংবাদিক ‘রবার্ট ফিসক’ বলেন, যিনি হামার গণহত্যার কয়েকদিন পরে সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন: মৃতদের সংখ্যা প্রায় ১০-হাজার।
o দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী: মৃতদের সংখ্যা প্রায় ২০-হাজার।
o কমান্ডার রিফাত আসাদ গর্ব করে বলেছে: আমরা সেখানে ৩৮-হাজার লোক হত্যা করেছি।
o ‘সিরিয়ার মানবাধিকার সংস্থা’ বলেছে: মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩০-থেকে ৪০-হাজার। তাদের সবাই শহরবাসী। তাদের অধিকাংশকে যৌথভাবে ব্রাশ ফায়ার করে গণকবর দেয়া হয়।
o কতক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সেখানের মৃতের সংখ্যা নির্ণয় করা খুব কঠিন, কারণ ঘটনা শুরু থেকে ১০-১৫ হাজার শহরবাসী গুম ও গ্রেফতারের শিকার হয়, এখনো পর্যন্ত যাদের সম্পর্কে জানা যায়নি, তারা সেনাবাহিনীর কারাগারে জীবিত, না মৃত।

মৃত ও ক্ষতির ব্যাপ্তি:
o মৃতের সংখ্যা ১০-৪০ হাজার, যাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছে।
o অধিকন্তু ১৫-হাজার গুম ও গ্রেফতারের শিকার হয়েছে, যাদের সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।
o শহরের এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস হওয়ার কারণে প্রায় ১-লাখ লোক শহর ত্যাগ করে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়।

o হামার কয়েকটি এলাকা ধ্বংসের বেশী সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী এ শহরের মধ্যাঞ্চল।
o সেনাবাহিনীর দমন পীড়নে ৮৮-টি মসজিদ, ৩-টি গির্জা এবং স্মৃতিবিজড়িত ও ঐতিহাসিক অনেক এলাকা ধ্বংস হয়।

“হামা”র গণহত্যা তার অধিবাসীদের এখনো কম্পিত করে, দীর্ঘ ৩০-বছর পরও তারা সে বিভীষিকা ভুলতে পারে নি। সেই থেকে তারা সর্বদা সরকারের ভয়ে ভীত ও শঙ্কিত জীবন পার করছে। সেখানে এমন কোনো পরিবার নেই, যার কোনো সদস্য হত্যা অথবা গুম অথবা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয় নি।

এ গণহত্যার পরও সিরিয়ার সরকার সে এলাকাকে পরিত্যক্ত ও অবহেলিত রেখে দিয়েছে, সেখানে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এ ঘটনার বিভীষিকা এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, হামার অধিবাসীরা যখন কোনো ঘটনা বর্ণনা করে, তখন বলে এটা গণহত্যার পরের ঘটনা বা তার কিছু পূর্বের ঘটনা, জন্ম অথবা মৃত্যু; বিয়ে অথবা কোনো ঘটনায় তারা গণহত্যার কথা স্মরণ করে। সেই থেকে ২০১১ই. পর্যন্ত সিরিয়ায় সরকারের সমালোচনা করে কোন প্রতিবাদ সভা হতে দেখা যায় নি।
মক্কাতে ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের সাথে সাথে সর্বপ্রথম যেই আরব শাসকটি মাহদির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে সে হবে সিরিয়া নামক ভূখণ্ডের একজন অত্যাচারী শাসক যে কিনা হবে বনুকাল্ব গোত্রের কুরায়শি ব্যক্তিত্ব। এতে এও বুঝা যায় যে, ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের আগেই সে সিরিয়াতে শাসকরূপে আসীন থাকবে যার কারণে, ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের সাথে সাথেই সে ইমাম মাহদির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে যাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘কাল্বের যুদ্ধ’ নামে আখ্যায়িত করেছেন।

কোন কোন হাদিসে এই শাসককে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে অবিহিত করা হয়েছে। এর কারণ, হিসাবে হযরত আলী (রাঃ) বলেন,

“সুফিয়ানি – যে লোক শেষ যুগে সিরিয়াতে দখল প্রতিষ্ঠা করবে সে বংশগতভাবে খালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের বংসদ্ভুত হবে। তার সহচরদের মধ্যেও "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। দামেস্কের দিক থেকে তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তার মাথা বড় হবে এবং মুখে শ্বেত রোগের দাগ থাকবে। এক চোখে একটি সাদা দাগ থাকবে। মানুষের রক্ত ঝরানো তাদের বিশেষ অভ্যাসে পরিণত হবে। যে লোকই বিরোধিতা করবে, তাকেই হত্যা করা হবে। এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। যখন হারাম শরীফে ইমাম মেহেদী (আঃ) এর আগমনের খবর প্রকাশ পাবে তখন এই শাসক ইমাম মেহেদী (আঃ) এর বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করবে”।

(মাজাহিরে হক জাদিদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৩)

২০০০ সালে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত বনু কাল্ব গোত্রের অপর শাসক বাশার আল আসাদের জন্ম দামেস্কে। ২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে নুসাইরিয়াদের অবস্থান আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ এর বিরুদ্ধে এতই নিষ্ঠুর যে, “এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে” – হাদিসের এই লাইনটিকে পর্যন্ত তারা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত করছে। আর মহান আল্লাহ আজ প্রযুক্তির মাধ্যমে তা সারা বিশ্বে জানিয়ে দিয়েছে।

ব্রিটিশ ডাঃ ডেভিড নট, যিনি কিনা সিরিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঁচ সপ্তাহ ধরে সেচ্ছায় চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, তার বরাত দিয়ে গত অক্টোবর ২০১৩ সালে সিএনএন, ডেইলি মেইল, ডেইলি টেলিগ্রাফসহ বহু আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এই খবর প্রচারিত হয় যে, আসাদের স্নাইপাররা গর্ভবতী মহিলাদের পেটকে লক্ষ্য করে গুলি করে গর্ভস্থিত সন্তানদের হত্যা করছে। গুলিবিদ্ধ গর্ভস্থিত শিশুর এক্স রে রিপোর্টসহ এই খবর দেখতে ইন্টারনেটে “Is this the most sickening image of the war in Syria so far? Snipers 'target unborn children in chilling competition to win cigarettes” লিখে সার্চ দিলে http://www.dailymail.co.uk এর একটি নিউজ পাওয়া যেতে পারে।

এমনকি সিরিয়ার এই বনু কালব গোত্রীয় শাসক বাশার আল আসাদ গত ২১ শে আগস্ট ২০১৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে দামেস্কের আলগুতা শহরে। এই ‘আলগুতা’ হাদিসের বর্ণনা হিসাবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, সিরিয়ার দামেস্কের “আল গুতা" নামক স্থানটি রাসূল (সাঃ) এর বর্ণিত "মালহামা" (মহাযুদ্ধে) একটি বড় ভূমিকা রাখবে, যেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন ইমাম মেহেদী।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে সিরিয়ার সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে”।

(সুনানে আবি দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৬৯)

আলগুতা সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী এর হাতে থাকবে।

সমস্ত দাজ্জালি মিডিয়া এই রাসায়নিক অস্ত্রের বিষয়টিকে এমনই বিতর্কিত করে তুলেছে যে, আল্গুতা তো দূরের কথা, রাসায়নিক অস্ত্র আদৌ বাশার আল আসাদ এর বাহিনী মেরেছে কিনা সেটাই এখন ধোঁয়াশা হয়ে গেছে। আর এই বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদকে তো ইতিমধ্যেই পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া এবং বিভিন্ন ভূখণ্ডের দালাল মিডিয়া একে “যৌন জিহাদ” বলে অপপ্রচার করে অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের পথ ভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“সুফিয়ানির আবির্ভাব হবে হবে দামেস্কের দিক থেকে। তার সহচরদের মধ্যেও "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। সে মানুষদেরকে এমনভাবে হত্যা করবে যে এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। ফলে বনু কায়েস গোত্রের লোক তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে তাদের সবাইকে হত্যা করে ফেলবে। আমার ঘরের (আহলে বাইতের) এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) মক্কাতে আসবে এবং এ খবর তার কাছে পৌঁছবে। তখন সে (সুফিয়ানি) একটি সৈন্য বাহিনী পাঠাবে এবং পরাজিত হবে। এরপর সে আরেকটি বাহিনী পাঠাবে এবং মরুভূমিতে ভূমিধ্বসে ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধুমাত্র একজন লোক বেঁচে থাকবে যে কিনা (ভূমিধ্বসের) এই সংবাদ পৌঁছে দিবে”।

(ইবনে হিব্বান, তিরমিজি, আবু ইয়েলী, তাবরানী, আল ফিতান, মুসতাদরাকে হাকিম)

দামেস্কে জন্মগ্রহণকারী এই বাশার আল আসাদদের অনুগত ও অনুসারী প্রশাসনিক ও সামরিক বাহিনীর বেশির ভাগই “নুসাইরিয়া”/ “আলাভি” তথা “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। আজ তারা “আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআ”দের সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত। উল্লেখ্য, হাফিজ আল আসাদের মুখে শ্বেত দাগ ছিল।

২০১১ তে যুদ্ধ শুরু হবার পর বনু কাল্ব গোত্রের বিরুদ্ধে বনু কায়েসের অবস্থান বের করতে না পারলেও পিছনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, উমাইয়াদ খেলাফতের সময় বনু কাল্ব গোত্র ২য় মারওয়ানের বিরোধিতা করলে বনু কায়েস গোত্রই সর্বপ্রথম বনু কাল্ব গোত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন খুযায়ী (রাঃ) দাঁড়িয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘আমরা এই সুফিয়ানিকে কিভাবে চিনব?’

উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন,

“তার গাঁয়ে দুটি কাতওয়ানির চাদর থাকবে। তার চেহারার রং ঝলমলে তারকার মতো হবে। ডান গালে তিলক থাকবে। আর বয়স চল্লিশের কম হবে”।

(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১১০)

ঝলমলে চেহারার অধিকারী বাশার আল আসাদ ৩৫ বছর বয়সে সিরিয়ার শাসনভার গ্রহণ করে। দুটি কাতওয়আনির চাদর বলতে যদি দুটি জাতিকে সাহায্যকারী হিসাবে বোঝানো হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা বর্তমানে ইরান (পারস্য) ও রাশিয়া (পেছনের দিকের শত্রু)-কে দেখছি। আর হাদিসেও ইমাম মাহদির আগমনের পরে যুদ্ধের সিরিয়ালে কাল্ব যুদ্ধের পরে এই দুই জাতির সাথে যুদ্ধের ইঙ্গিত এসেছে। এই দুই জাতির সাথে যুদ্ধের পরেই মহাযুদ্ধের বর্ণনা এসেছে।

বর্তমানে সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রের এই শাসকের সাথে রাশিয়া ও ইরানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে। এই দুই ভূখণ্ড সরাসরি কূটনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি এই বাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। এমনকি এই দুই ভূখণ্ডের সৈন্যরা সরাসরি তার পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। কুয়েতের আরবী সংবাদপত্র আস-সিয়্যাসসার বরাত দিয়ে অনলাইন নিউজ পেপার http://www.kavkazcenter.com গত ২২ শে নভেম্বর ২০১৩ তারিখে Russians participate in battle for Syrian district নামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর রয়টার্সের অন লাইন সংস্করণ http://www.reuters.com এ গত ৪ ঠা নভেম্বর ২০১৩ তারিখের Iran Revolutionary Guards commander killed in Syria নামক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

অপর বর্ণনায়,

“শুরুর দিকে তারা ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে, পরে যখন শক্তি ও ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়ে যাবে, তারা অত্যাচার-অবিচার ও অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে”।

(ফয়জুল কদির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১২৮)

অর্থাৎ প্রথমে তাদেরকে মুসলমানদের মাঝে মহান নেতা বা হিরো হিসাবে উপস্থাপন করা হবে, কিন্তু পরে তাদের আসল রূপ প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠের কারণে বেশির ভাগ মুসলিমরা এই পরিবারকে হিরো মনে করে। আজ ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে তাদের আসল রূপ প্রকাশ পেয়েছে।

আসুন এবার আমরা একটু বনু কাল্ব গোত্রের ইতিহাসের দিকে তাকাই।

রাসুল (সাঃ) এর সময়ে বনু কাল্ব আরবদের একটি গোত্র ছিল এবং নিজেদেরকে ইয়েমেনি বংশদ্ভুত বলে দাবী করত। হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) কে তৎকালীন সময়ে দামাতুল জান্দালে পাঠানো হয়েছিল এই গোত্রকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। তখন এর গোত্র প্রধান ছিল আসবাগ বিন আমর কাল্বি। সে খ্রিস্টিয়ান ধর্মালম্বী ছিল। সে ইসলামকে দ্বীন হিসাবে কবুল করে এবং পরবর্তীতে গোত্রের অধিকাংশ লোক ইসলাম গ্রহণ করে।

ইসলামের প্রথম যুগে এই গোত্রের বেশ কিছু সন্মানিত ব্যক্তিত্বের ইতিহাস এখনও বিদ্যমান।
হযরত জায়েদ বিন হারিসা (রাঃ) ছিলেন বনু কাল্ব গোত্রের।
হযরত জিব্রাইল (আঃ) প্রায়ই সুদর্শন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী সাহাবী হযরত দিহইয়্যা আল কাল্বি (রাঃ) এর রূপ নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর কাছে ওহী নিয়ে আসতেন।
হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর মৃত্যুর পর হযরত আলী (রাঃ) যেই মহিলাকে বিয়ে করেন, উনিও ছিলেন বনু কাল্ব গোত্রের। উনার নাম ফাতিমা কাল্বিয়্যা। “উম্মুল বানিন” নামে তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন।

কালের বিবর্তনে এই গোত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং বর্তমানে বনু কাল্ব গোত্রের অধিকাংশ লোক উত্তর পশ্চিম সিরিয়াতে বিশেষ করে হোমস এবং লাটাকিয়ার পাহাড়ি উপত্যকার গ্রাম কারদাহাতে বসবাস করে এবং শিয়াদের নুসাইরিয়্যা আকিদার অনুসারী। আর নুসাইরিয়া আকিদার উদ্ভব হয় শিয়াদের ১১ তম ইমামের দাবীদার হাসান আসকারী (মৃত্যু ৮৭৪) এর ছাত্র ইবনে নুসাইর (আল খাসিবি নামে পরিচিত, মৃত্যু ৯৬৯) এর থেকে। ১০৩২ সালে আল খাসিবির নাতী (ছেলের ছেলে) এবং তার ছাত্র আল তাবারানি লাটাকিয়া এসে তার লিখনীর মাধ্যমে সিরিয়ার উপকূলবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলের পাদদেশে অবস্থিত জনগোষ্ঠীর মাঝে এই আকিদার বিস্তার ঘটায়। (মূলত এই সময় থেকেই তাদের সহিহ ইসলামী আকিদা থেকে পদস্খলন শুরু হয়)। পরে এই পাহাড়ি অঞ্চলটিও “নুসাইরিয়া পার্বত্য অঞ্চল” নামে পরিচিত হতে শুরু করে। হযরত আলী (রাঃ) এর অনুসারে নিজেদেরকে তারা “আলাভি” হিসাবে পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করে।

সিরিয়াতে নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ৪ টি গোত্র। যথাঃ মাতাউইয়া, হাদ্দাদিন, খাইয়্যাতিন ও কাল্বিয়্যা (অর্থাৎ বনু কাল্ব গোত্রের যারা এই সম্প্রদায়ের আকিদাকে গ্রহণ করেছে)।

‘আল আসাদ’ পারিবারিক নামের শুরু ১৯২৭ সালে যখন হাফিজ আল আসাদের বাবা আলী সুলায়মান তার নামের সাথে ‘আল আসাদ’ (অর্থ সিংহ) ব্যবহার শুরু করে। আলী সুলায়মানের বাবা (হাফিজ আল আসাদের দাদা) সুলায়মান আল ওয়াহিশ (জন্ম ১৮৭৫) সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমে লাটাকিয়ার পূর্বপাশে নুসাইরিয়া পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি উপত্যকার গ্রাম কারদাহাতে বাস করত। হাফিজ আল আসাদও এই একই গ্রামে ১৯৩০ সালে জন্ম গ্রহণ করে। আর বাশার আল আসাদ দামেস্কে জন্মগ্রহণ করে।

কিন্তু আরবদের বিভিন্ন পশ্চিমা দালাল মিডিয়াতে নিজের "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব" গোত্রের পরিচয়কে গোপন করে কুরাইশ বংশের পরিচয়কে বাশার আল আসাদ বার বার সামনে আনছে (হাদিসে এসেছে কালব গোত্রের কুরায়েশী ব্যক্তি) এবং রাসুল (সাঃ) এর কুরাইশ বংশের ধোঁয়া তুলে বর্তমান মুসলিম জাহানের অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের সহজেই পথ ভ্রষ্ট করছে।

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘হে আল্লাহর রাসুল, সুফিয়ানির বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করা কিভাবে জায়েজ হবে, তারা তো তাওহীদে বিশ্বাসী হবে?’

উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

“শোন হুজায়ফা, সে সময় সে মুরতাদ অবস্থায় থাকবে। সে বিশ্বাস করবে, মদ হালাল। সে নামাজ পড়বে না”।

(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১১০)

হাফিজ আল-আসাদ এর সময় ১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ এর মুসলিমরা বিদ্রোহ করলে এই নুসাইরিয়া সম্প্রদায় হামা শহরে তাদের সেনাবাহিনী নিয়ে যে শ্লোগান নিয়ে হামা শহরের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে বলছিল, তা কখনও হামার অধিবাসীরা ভুলতে পারবে না, তারা বলছিল, “নাও অস্ত্র, ধর অস্ত্র, মুহাম্মাদের দ্বীন পশ্চাতে ও তিরোহিত”(আল-ইসলাম ফী মুওয়াজিহাতিল বাতিনিয়্যাহ, পৃ. ১১০)

আসুন, আমরা সিরিয়ার বর্তমান বনুকাল্ব গোত্রের কুরায়শি শাসক বাশার আল আসাদ শিয়া আকিদার যে নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, তাদের আকিদাগত দিকে একটু দৃষ্টি দেই এবং বুঝতে চেষ্টা করি তারা কি আদৌ ইসলামের গণ্ডির ভিতরে আছে কিনা।

তাদের সম্পর্কে জানার জন্য “আল-হাফতুশ শরিফ” কিতাবখানা পড়ুন, যা তাদের বর্তমান যুগের আলেমদের ব্যাপক সম্পাদনা, পর্যালোচনা ও নিরীক্ষার পর মুদ্রিত।তাদের পবিত্র কিতাব “আল-হাফতুশ শরিফ” থেকে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করছি, যা থেকে তাদের পথভ্রষ্টতার ধারণা হবে:

১। “হুসাইন যখন ইরাকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল, তখন আল্লাহ তার শরীরে অন্তরীণ(লক্ষ্য করুন হুসাইনের শরীরে অন্তরীণ আল্লাহ জিবরীলকে ভাই বলে সম্বোধন করছে!) হলেন। তিনি যেখানে অবতরণ করেছেন, জিবরীল সেখানে তার নিকট এসেছে ও কথা বলেছে। যখন যুদ্ধের দিন উপস্থিত হল, বিরোধী সৈন্য তাকে ঘিরে ধরল, ঘোড়াগুলো সারিবদ্ধ দাঁড়াল ও যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল, তখন আমাদের মাওলা হুসাইন জিবরীলকে ডেকে বলেন: হে ভাই! আমি কে? তিনি বললেন: আপনি আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরজাগ্রত, জীবন-মৃত্যুর মালিক। আপনি আসমানকে নির্দেশ করেন, ফলে সে আপনার আনুগত্য করে। আপনার নির্দেশে জমিন স্থির দাঁড়ায়, পাহাড় আপনার ডাকে সাড়া দেয়, সমুদ্রসমূহ আপনার আনুগত্যে দ্রুত ছুটে আসে। আপনি সে সত্তা, যার নিকট ষড়যন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্র ও অনিষ্টকারীর অনিষ্ট পৌঁছুতে পারে না”।

২। আল-হাফতুশ শরিফের” গ্রন্থকার অন্যত্র বলেন: জিবরীল উমাইয়্যাদের সেনাপ্রধান সাদ ইবনে ওমরকে লক্ষ্য করে বলেন: “তুমি ধ্বংস হও, তুমি দু’জাহানের রব, পূর্বাপর সকল মাখলুকের রব, আসমান-জমিন ও তার মধ্যবর্তী সবকিছুর স্রষ্টাকে হত্যা করছ? ওমর ইবনে সাদ এ ঘোষণা শোনে ভয়ে কম্পিত হয়”।

৩। “আল-হাফতুশ শরিফের” লেখক ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে গাল-মন্দ করে বলেন:

“তিনি হুসাইনের যুগে পুনর্জন্ম বিধান মতে ভেড়ার আকৃতিতে ছিলেন, আল্লাহ ফিদিয়া হিসেবে হুসাইনকে তা প্রদান করেন। তিনি ওমরকে জবাই করেন, যার নাম ছিল “দালামাহ” বা “আদলামা”। তিনি মুফাদ্দাল থেকে বর্ণনা করেন, সাদেক তাকে বলেছেন: “হে মুফাদ্দাল, যে ভেড়াটি হুসাইনকে ফিদিয়া হিসেবে দেয়া হয়েছিল, তার নাম আদলাম, কুরাইশদের আদলাম। ওমর তখন বৃদ্ধাবস্থায় ভেড়ার আকৃতিতে ছিল”। অতঃপর তিনি বলেন: তার শিং দু’টি কাবার সাথে ঝুলন্ত রয়েছে।“হে মুফাদ্দাল, বায়তুল হারামে ঝুলন্ত শিং দু’টি তুমি দেখনি? আমি বললাম: হ্যাঁ, হে আমার মনিব। তিনি বললেন: শিং দু’টি ভেড়ার, যা হুসাইনকে ফিদিয়া হিসেবে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর সাদেক হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দেখা গেল। আমি বললাম: হে আমার মাওলা, হাসলেন কেন? তিনি বললেন: হে মুফাদ্দাল, মানুষেরা যখন হজের মৌসুমে মক্কায় সমবেত হয়, তারা ভেড়ার শিং দু’টি উৎসুক হয়ে দেখে, তারা ভাবে এগুলো জান্নাত থেকে এসেছে, তাই আশ্চর্যের দৃষ্টিতে তার প্রতি তাকায়। আর আমরা সেদিকে তাকাই এ হিসেবে যে, এ শিং দু’টি “দালামার”। বস্তু একই, মানুষেরা আশ্চর্য হয় এক হিসেবে, আমরা আশ্চর্য হই অন্য হিসেবে”।--“আল-হাফতুশ শরিফ”: (৯৪)

৪। খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের ন্যায় এক সত্তা তিন সত্তার মধ্যে দেহধারণ করার মতবাদ নুসাইরিদের ধর্মে রয়েছে। তারা মনে করে এ তিন সত্তা মূলত এক সত্তা ও চিরস্থায়ী।নুসাইরিদের তিন সত্তার নীতি খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের সমতুল্য। তারা তিন সত্তার জন্য তিনটি শব্দ ব্যবহার করে, যথা: (ع.م.س) তারা বলে: এ তিন সত্তার মধ্যে আল্লাহ দেহধারণ করেছেন। এক. আলি, তার জন্য তারা (المعنى) শব্দ ব্যবহার করে। দুই. মুহাম্মদ, তার জন্য তারা (الاسم) শব্দ ব্যবহার করে। তিন. সালমান, তার জন্য তারা (الباب) শব্দ ব্যবহার করে।

(হাসান ইবরাহীম হাসান, “তারিখুল ইসলাম, আস-সিয়াসি, ওয়াদ দীনি, ওয়াস সাকাফি, ওয়াল ইজতেমায়ি”: (পৃ.৪/২৬৫, ২৬৭), দেখুন: আল-আলাবিউন: (পৃ.৫৪,৫৫))
৫। তাদের আকিদা মতে আলির মধ্যে আল্লাহ প্রবেশ করেছেন, আর আলি মুহাম্মদকে নবী হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা কুফরির শেষ প্রান্তে পৌঁছে বলেছে: আলি মুহাম্মদকে সৃষ্টি করেছে, মুহাম্মদ সৃষ্টি করেছে সালমান ফারসিকে, সালমান ফারসি সৃষ্টি করেছে পঞ্চ ইয়াতীমকে, যাদের হাতে আসমান-জমিনের নিয়ন্ত্রণ। তারা হলেন:

o মিকদাদ: তিনি মানুষের রব ও সৃষ্টিকর্তা। তার দায়িত্বে রয়েছে বিদ্যুৎ চমক, মেঘের গর্জন ও ভূমিকম্প।
o আবুদ দার: (আবুযর গিফারী), তিনি নক্ষত্র ও তারকারাজির কক্ষপথসমূহ নিয়ন্ত্রণ করেন।
o আব্দুল্লাহ ইব্‌ন রাওয়াহা আল-আনসারী: তিনি বাতাসের নিয়ন্ত্রক ও মানুষের রূহ কব্জাকারী।
o উসমান ইব্‌ন মায‘উন: তিনি শরীরের জ্বর, পেট ও মানুষিক রোগ নিয়ন্ত্রণকারী।
o কুন্বর ইব্‌ন কাদান: তিনি মানুষের শরীরে রূহ সঞ্চারকারী।

৬। এসব আকিদা লালন করে তারা নিজেদের অগ্নিপূজারী প্রমাণ দেয়, তারা ইসলামের নাম ব্যতীত কিছুই গ্রহণ করে নি। এসব আকিদা কুফরির চূড়ান্ত পর্যায়ের আকিদা, এর যে কোনো একটিই আল্লাহর দীন থেকে বের করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। “তায়েফাতুন নুসাইরিয়্যাহ”: (পৃ.৪৭)

৭। আলি মৃত্যুবরণ করে অর্থাৎ তাদের ভাষায় মানবীয় পোশাক ত্যাগ করে কোথায় প্রবেশ করেছেন, এ নিয়ে তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে: কেউ বলে: তিনি চাঁদে প্রবেশ করেছেন, তাই তারা ইবাদতের সময় তার দিকে মুখ করে, বরং চাঁদ নিজেই আলি। তাদেরকে শিমালিয়্যাহ বলা হয়।কেউ বলে: তিনি সূর্যে প্রবেশ করেছেন, তাই তারা ইবাদতের সময় তার দিকে মুখ করে, বরং সূর্য নিজেই আলি। তাদেরকে কালাযিয়াহ বলা হয়। “আল-আলাবি”: (পৃ.৫৭)

৮। নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের আকিদার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় পুনর্জন্মে বিশ্বাস করা। তারা এ বিশ্বাসের অন্তরালে কিয়ামত, পরকাল, প্রতিদান ও হিসান-নিকাশ অস্বীকার করে। আল্লামা নওবখতি পুনর্জন্মে বিশ্বাসীদের নিকট তার অর্থের বর্ণনা দিয়ে বলেন: “পুনর্জন্মে বিশ্বাসীরা এ দুনিয়ায় বারবার জন্ম নেয়ার আকিদা পোষণ করে, তাদের নিকট কিয়ামত, পুনরুত্থান ও হিসাব বলতে কিছু নেই। দুনিয়া ব্যতীত অন্য কোনো জগত নেই। কিয়ামত হচ্ছে রূহের শরীর থেকে শরীরে স্থানান্তর হওয়া। ব্যতিক্রম শুধু ভালো হলে ভালো, আর খারাপ হলে খারাপ শরীরে প্রস্থান করা। তারা পার্থিব শরীরেই নিয়ামত ভোগ করে বা শাস্তি পায়। তাদের নিকট শরীরই জান্নাত বা জাহান্নাম। তারা সুন্দর, সুখী ও ভালো শরীরে প্রস্থান করে শান্তি পায়; আর কুৎসিত, দুঃখী ও খারাপ শরীরে প্রস্থান করে শাস্তি ভোগ করে, যেমন কুকুর, শূকর, সাপ, বিচ্ছু ও গুবরেপোকা। তারা এক শরীর থেকে অপর শরীরে প্রস্থান করে শাস্তি ভোগ করে। এভাবে চিরজীবন শরীরই তাদের জান্নাত বা জাহান্নাম, এ ছাড়া কিয়ামত, পুনরুত্থান, জান্নাত, জাহান্নাম বলতে কিছু নেই। নেক আমল, বদ আমল, ইমামদের অস্বীকার করা ও গুনাহের পরিমাণ বিচারে রূহসমূহের পরবর্তী শরীর নির্ধারিত হয়”।“ফেরাকুশ শিয়াহ”: (৫৭, ৫৮)

৯। নুসাইরিদের বিশ্বাস অনুযায়ী পুনর্জন্মের চারস্তর। তাদের তথাকথিত ঈমান থেকে কাছে বা দূরে অবস্থানজনিত ত্রুটি, ইমামদের আনুগত্য ও নাফরমানির উপর ভিত্তি করে প্রতিটি স্তর নির্ধারিত হয়। চারটি স্তর: নাসখ, মাসখ, ফাসখ ও রাসখ।
§ নাসখ: অর্থাৎ এক ব্যক্তির শরীর থেকে অপর ব্যক্তির শরীরে রূহের প্রস্থান করা।
§ মাসখ: অর্থাৎ মানুষের শরীর থেকে জানোয়ারের শরীরে রূহের প্রস্থান করা।
§ ফাসখ: অর্থাৎ মানুষের শরীর থেকে জমিনে বিচরণকারী কীটপতঙ্গ ও বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের শরীরে রূহের প্রস্থান করা।
§ রাসখ: অর্থাৎ মানুষের শরীর থেকে গাছ-পালা, উদ্ভিদ ও জড়বস্তুর দেহে রূহের প্রস্থান করা।দেখুন: “তায়েফাতুন নুসাইরিয়া”: (পৃ.৮৮)

ড. আব্দুর রহমান বাদাবি লিখেছেন, ছোট্ট এক বইয়ে নুসাইরিদের আকিদা ও মৌলিক শিক্ষা পাওয়া যায়, যার শিরোনাম: (كتاب تعليم ديانة النصيرية) এ কিতাবটি হস্তাক্ষরে লেখা প্যারিসের স্থানীয় লাইব্রেরীতে রয়েছে, [নাম্বার:৬১৮২]। এ বইটি প্রশ্নোত্তর আকারে। তাতে একশ একটি প্রশ্নোত্তর রয়েছে। নমুনাস্বরূপ এখানে কয়েকটি উদ্ধৃত করছি:

প্রশ্ন: আমাদের কে সৃষ্টি করেছে?
উত্তর: আমিরুল মুমেনিন আলি ইব্‌ন আবু তালিব।

প্রশ্ন: কিভাবে জান আলি আমাদের ইলাহ?
উত্তর: মিম্বারে দাঁড়িয়ে তার দেয়া বক্তব্য খুতবাতুল বয়ানে থেকেই জানি তিনি ইলাহ, তিনি সেখানে বলেছেন: “আমি সকল রহস্যের রহস্য, আমি নূরের বৃক্ষ... আমি প্রথম ও আমি শেষ। আমি বাতেন, আমি জাহির”...।

প্রশ্ন: আমাদের মাওলা আমিরুল মুমেনিনের বিভিন্ন ভাষায় কি কি নাম রয়েছে?
উত্তর: আরবদের নিকট তার নাম আলি। তিনি নিজের নাম রেখেছেন আরাস্তুতালিস। ইঞ্জিলে তার নাম ইলিয়া (ইলিয়াস), যার অর্থ আলি, হিন্দুরা তাকে বলে ইব্‌ন কানকারাহ...

প্রশ্ন: আমাদের মাওলাকে আমরা কেন আমিরুন নাহাল বলি?
উত্তর: সত্যিকার মুমিনগণ নাহালের মত, যারা সবচেয়ে সুন্দর ফুল থেকে মধু আহরণ করে, এ জন্য তাকে আমিরুন নাহাল বলা হয়।

প্রশ্ন: পৃথিবীর ছোট জগতে ‘নুজাবা’দের নাম কি?
উত্তর: পঁচিশটি নাম রয়েছে প্রথমটি আবু আইয়ূব, সর্বশেষ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন সাবা।

প্রশ্ন: কুরআন কি?
উত্তর: আমাদের মাওলার মানব আকৃতিতে বিকশিত হওয়ার সুসংবাদ

প্রশ্ন: আমাদের সত্যিকার ভাইদের নিদর্শন কি?
উত্তর: ع.م.س.

প্রশ্ন: নাওরোজের দোয়া কি?
উত্তর: মদের পাত্রকে সম্মান করা।

প্রশ্ন: পবিত্র মদের নাম কি, যা মুমিনগণ পান করবে?
উত্তর: আব্দুন নূর।

প্রশ্ন: কেন?
উত্তর: কারণ আল্লাহ তাতে বিকশিত হন।

প্রশ্ন: মুমিনগণ কেন সালাতের সময় সূর্যের দিকে মুখ করে?
উত্তর: কারণ সূর্য সকল নূরের নূর।

উক্ত কিতাবে একশ একটি প্রশ্ন রয়েছে, আব্দুল হুসাইন আল-আসকারি তার “আল-আলাবিউন” গ্রন্থে সবক’টি প্রশ্নোত্তর উল্লেখ করেছেন। তার শিক্ষার সারাংশ হচ্ছে: আলি ইব্‌ন আবু তালিবের প্রভুত্ব ও উলুহিয়্যাত, পুনর্জন্ম ও মানুষের দেহে আল্লাহর প্রবেশ করার আকিদা, মদকে সম্মান করা, তারা যার নাম দিয়েছে আব্দুন নূর, কারণ আল্লাহ তাতে প্রবেশ করেন, নাসারা ও অগ্নিপূজকদের উৎসবগুলোকে সম্মান করা, তারকাদের সম্মান করা ও তাদের উপর ভরসা করা, সূর্যের ইবাদত করা, তাদের অগ্নিপূজা মূর্তিপূজা শিক্ষার রহস্য গোপন করার নানা উপদেশ।“আল-আলাবিউন”: (৯৬), ড. বদাওয়ি লিখিত: “মাজাহেবুল ইসলামিয়্যিন” থেকে সংকলিত: (২/৪৭৪-৪৮৭)

নুসাইরিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার ঈদ-উৎসব পালন করে, যেমন ঈদুল গাদির, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আদহা, ঈদুল আশুরা, মোবাহালার দিন ঈদুল গাদিরিস সানি, ঈদুন নওরোজ, ঈদুল মেহেরজান, ঈদুস সালিব, ঈদুল গাত্তাস, ঈদুস সা‘ফ, ঈদুল উনসুরাহ, ঈদুল কাদিসাহ সেন্ট বারবারা ও ঈদুল মিলাদ ইত্যাদি। তাদের আরো ঈদ রয়েছে। তাদের এসব ঈদ মুসলিম, খ্রিস্টান ও মূর্তিপূজক সবার থেকে সংগৃহীত।ড. হালবি রচিত “তায়েফাতুন নুসাইরিয়াহ”: (পৃ.৭১) গ্রন্থে আরো ঈদের উল্লেখ রয়েছে।

যেসব মুসলিম মনীষী নুসাইরিদের সংস্কার ও তাদেরকে ইসলামে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন, তাদের ক’জন নিম্নরূপ:

সালাহ উদ্দিন আইয়ূবি রাহিমাহুল্লাহঃ তিনি ক্রুসেডদের তাড়িয়ে মসজিদ নির্মাণ করেন, সেখানে নুসাইরিদের সালাত আদায়, সিয়াম পালন ও অন্যান্য ইসলামি আমলগুলো সম্পাদনের নির্দেশ দেন। এ কারণে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা তার অনুসরণ করে, কিন্তু তার মৃত্যুর পর সবত্যাগ করে ও মসজিদগুলো জীব-জন্তুর আস্তাবল বানায়।

জাহের বাবরসঃ তিনি তাতারিদের হটিয়ে নুসাইরিদের গ্রামে গ্রামে মসজিদ নির্মাণ করেন ও তাতে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন। তারা গ্রাম থেকে দূরে মসজিদ নির্মাণ করে পরিত্যক্ত ফেলে রাখে। অনেক সময় কোন পথিক তার পাশ দিয়ে যাতায়াতের সময় যখন আযান দিত, তারা বলত: উটের ন্যায় আওয়াজ কর না, কিছুক্ষণ পরই তোমার ঘাস চলে আসছে। পর্যটক ইব্‌ন বতুতা এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

উসমানি খলিফা সালিমঃ তিনি নুসাইরি এলাকায় মসজিদ নির্মাণসহ অনেক সংস্কারমূলক কাজ করেছেন, কিন্তু তার পরে তারা পূর্বের অবস্থানে ফিরে যায়।

মিসরের গভর্নর ইবরাহিম পাশা ইব্‌ন মুহাম্মদ আলি পাশাঃ তিনি নুসাইরিদের বাতিল আকিদা-বিশ্বাস থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য সংস্কারমূলক অনেক কাজ করেন, কিন্তু যখনি তারা নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ও শক্তিশালী দেখেছে, পশ্চাতে ফিরে গেছে।

উসমানি সুলতান আব্দুল হামিদঃ তিনি নিজের বিশেষ ব্যক্তি জিয়া পাশাকে বারবার প্রেরণ করে নুসাইরিদের হিদায়েতের চেষ্টা করেন ও তাকে লাটাকিয়া অঞ্চলের গভর্নর নিযুক্ত করেন। তিনি তাদের জন্য মসজিদ নির্মাণ ও মাদ্রাসা তৈরি করেন, ফলে তারা ইলম হাসিল, সালাত আদায় ও সিয়াম পালন করা আরম্ভ করে, তারা খলিফাকে বুঝায় যে, তারা মুসলিম। তারা খলিফার কোনো নির্দেশ অমান্য করে নি, কিন্তু যখন সে ক্ষমতা ত্যাগ করে তারা মাদ্রাসাসমূহ ধ্বংস করে ও মসজিদগুলো জ্বালিয়ে নাপাক করে দেয়।দেখুন: ইব্‌ন বতুতা রচিত: (تحفة الأنظار في غرائب الأمصار وعجائب الأسفار) (পৃ.৬৫), সম্পাদনায়: আহমদ আল-আওয়ামেরি ও মুহাম্মদ আহমদ যাদুল মাওলা, প্রকাশের স্থান: কায়রো। আরো দেখুন: মুহাম্মদ কুরদ আলি রচিত: (خطط الشام) (/২৬০, ২৬৩) ও (৩/১০৫), الحركات الباطنية في العالم الإسلامي (পৃ.৩৩২, ৩৩৩), দেখুন: “তায়েফাতুন নুসাইরিয়াহ”: (পৃ.৬৫)

শায়খুল ইসলাম ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহঃ নুসাইরিদের হিদায়েতের জন্য অনেক আলোচনা ও যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুসলিমদের নিয়ে “জাবালে কাসরাওয়ান” নামক স্থানে তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন ও তাদের শহর দখল করেন। অতঃপর সুলতানকে লিখে পাঠান যে, তাদের পণ্ডিতদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, যারা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করছে। তাদের এলাকায় ইসলামের বিধান কায়েম করুন ও সুন্নতের ব্যাপক প্রচার করুন।মারয়ি আল-কারমি রচিত: (الكواكب الدرية) (পৃ.৯৭ ও্র ১২৬), এবং ইব্‌ন আব্দুল হাদি রচিত: (العقود الدرية) (পৃ.১৯৭)


আব্দুল্লাহ ইবনে হাওয়ালাহ (রাঃ) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, যে উনি বলেছেনঃ

“পরিস্থিতি তার কাজের ধারা অনুযায়ী চলতে থাকবে যতক্ষণ না তোমরা তিনটি বাহিনীতে পরিণত হওঃ একটি বাহিনী সিরিয়ার, একটি বাহিনী ইয়েমেনের আর আরেকটি ইরাকের”।

ইবন হাওয়ালাহ (রাঃ) বললেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি সেই দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি তবে আমার জন্য একটি বাহিনী নির্ধারন করে দিন’।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন,

“তোমার সিরিয়া যাওয়া উচিত হবে কারন এটি আল্লাহর ভূমিদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম, এবং উনার শ্রেষ্ঠ বান্দারাই সেখানে জড়ো হবে! এবং যদি তুমি তা না চাও তবে তোমার ইয়েমেনে যাওয়া উচিত এবং সেখানকার কূপ থেকে পানি পান করা উচিত। কারন আল্লাহ আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে, উনি সিরিয়া এবং তার মানুষের উপর খেয়াল রাখবেন”!

(ইমাম আহমেদ ৪/১১০, আবু দাউদ ২৪৮৩)

এই হাদিসের প্রথম লাইনের বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। আজ এই মুহূর্তে এই তিন ভূখণ্ডে এরকম তিনটি বাহিনী অবস্থান নিয়েছে।
ইতিমধ্যে “ইরাকঃ ইমাম মাহদির হাতে বাইয়াত ও যুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে হাদিস ও সেখানে দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের বর্তমান কার্যক্রম” লিখাতে ইরাকের বাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এবং সিরিয়ার বর্তমান যুদ্ধরত বাহিনীর সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে। ইনশাল্লাহ “ইয়েমেনঃ ইমাম মাহদির আগমনের পূর্বে ও পরে যুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে হাদিস ও সেখানে দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের বর্তমান কার্যক্রম” এ ইয়েমেনের বাহিনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে ।
“তোমার সিরিয়া যাওয়া উচিত হবে কারন এটি আল্লাহর ভূমিদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম, এবং উনার শ্রেষ্ঠ বান্দারাই সেখানে জড়ো হবে!” – হাদিসের এই লাইনটি যেন এখন অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ইসলামের ১৪০০+ বছরের ইতিহাসে যেমন এই প্রথম সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রের কোন শাসক আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, একই ভাবে এর বিপরীতে উম্মতের শ্রেষ্ঠ বান্দারা সেখানে পবিত্র দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসছে। আর এদের একটা বড় অংশ ইউরোপিয়ান ধর্মান্তরিত আল্লাহর সরাসরি পছন্দ করা বান্দারা। এই সব ইউরোপিয়ান দেশসমূহের মধ্যে ফ্রান্স, জার্মানি, ইউ কে, বেলজিয়াম, স্পেন, ডেনমার্ক, বসনিয়া, অষ্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, ইতালি, সুইডেন উল্লেখযোগ্য (ওয়াশিংটন পোস্ট, ২৭ শে নভেম্বর ২০১৩)। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যে তাদের যুদ্ধরত নাগরিকদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। ১৮ ই মে, ২০১৩ তে প্রেস টিভিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাশার আল আসাদ ২৯ টি দেশের বিদেশি যোদ্ধার কথা দাবী করে। আর তার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ২রা অক্টোবর ২০১৩ তে জাতিসংঘের অধিবেশনে ৮২ টি দেশের কথা দাবী করে। এমনকি ইসরাইলের গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল আভিভ কোচাভি ২৪ শে জুলাই ২০১৩ সালে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এর নতুন অফিসারদের গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে বলতে বাধ্য হয়ঃ “Right before our eyes a center of global jihad is developing on a scale that may affect not only Syria and the borders of the state of Israel, but also Lebanon, Jordan, and Sinai. ”
সিরিয়াতে বনু কাল্ব গোত্রের শাসক আসাদ বিরোধী যোদ্ধারা মূলত দুই ধরনের।
একঃ জাতীয়তাবাদী, যারা আসাদের অপসারণের পরে নতুন এক গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের স্বপ্ন দেখে।
দুইঃ ইসলামপন্থী, যারা একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক খেলাফতের স্বপ্ন দেখে।
সিরিয়ার যে যোদ্ধারা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছেন, তাদের প্রতি বাংলাদেশের অনেক ভাইদের ভুল ধারনা আছে। সবাই মনে করছেন তারা আমেরিকার সাথে যুক্ত বা তাদের জন্য কাজ করছেন।
এটা ঠিক যে বাশারের বিপক্ষে এই যুদ্ধের প্রথম দিকে বিদ্রোহীরা কি চায় বা তারা একই উদ্দেশ্য নিয়ে এগোচ্ছে কিনা সেটা বুঝা যায় নি। কিন্তু কয়েকদিন যেতে ব্যাপার গুলো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে - আসলে সিরিয়ার সব বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথম ভাগের গ্রুপগুলো যারা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এদের মাঝে সবচেয়ে বড় ব্রিগেডের নাম হচ্ছে জাহাবাত আল-নুসরাহ। এছাড়াও আনসার-খিলাফাহ , আল-মুহাজিরিন ইত্যাদি বড় ছোট অনেক গ্রুপই আছে।
দ্বিতীয় ভাগে আছে তার বাশারের পতন চায় কিন্তু তারা সেক্যুলার রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে চায়।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে যখন আমেরিকা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সাহায্য করছে -এমন খবর ছাপে তখন অনেকে ধরেই নেনে যে এই সাহায্য সকলকে করা হচ্ছে।
এর মাঝে গত ৩০ শে মে ২০১৩ তে জাহাবাত আল-নুসরাহকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ "আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী" হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে।

কিন্তু আমেরিকা এই সব সাহায্য সেক্যুলার বিদ্রোহীদের করে আসছে প্রথম থেকেই এবং এই সাহয্যের সাথে প্রথম গ্রুপের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা সবাই জানি আমেরিকা তার সাম্রাজ্যবাদকে প্রচার করার অন্যতম মোক্ষম অস্ত্র হল মিডিয়া। এই মিডিয়ার মাধ্যমে তারা খবরগুলোকে তিল কে তাল হিসেবে উপস্থাপন করে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরাও সেগুলো অকপটে বিশ্বাস করেন। যারা ইসলামের পুনর্জাগরনকে আটকাতে শত বছর ধরে পরিকল্পনা করছে তারাই ইসলামের বিপ্লব কে সাপোর্ট দিবে এই চিন্তা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কজরতে পারে না।
দেখুন অস্ত্র সাহয্যের ব্যাপারে নিউ ইয়র্ক টাইমস অনেক আগেই বলেছেঃ
“The New York Times confirmed: “The weapons’ distribution has been principally to armed groups viewed as nationalist and secular, and appears to have been intended to bypass the jihadist groups whose roles in the war have alarmed Western and regional powers."
আল্লাহ মুমিনদেরকে যে কোন ধরনের ধোঁকা থেকে রক্ষা করুন।
উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,

“জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি হবে। তখন মদিনার একজন লোক পালিয়ে মক্কা চলে আসবে (এই আশঙ্কায় যে, পাছে মানুষ আমাকে খলীফার পদে অধিষ্ঠিত করে কিনা)। মক্কার লোকেরা তাঁকে খুঁজে বের করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুকুন এবং মাকামে ইব্রাহিমের মাঝামাঝি স্থানে বাইয়াত গ্রহণ করবে।
বাইয়াতের খবর শুনে সিরিয়ার দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে। মক্কা মদিনার মাঝামাঝি বায়দা নামক স্থানে এসে পৌঁছানোর পর এই বাহিনীটিকে ভূগর্ভে ধসিয়ে দেওয়া হবে। বাহিনী ধ্বসের সংবাদ শুনে সিরিয়ার ‘আবদাল’ (শ্রেষ্ঠ মুসলমানগণ) ও ইরাকের ‘আসাইব’ (সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ) মক্কায় এসে তাঁর (ইমাম মাহদির) নিকট বাইয়াত হবে। অতঃপর সিরিয়ার বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। সিরিয়ার দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে পরাস্ত করবেন, যার ফলে তাদের উপর বিপদ নেমে আসবে। এটিই হল ‘কালবের যুদ্ধ’। যে ব্যক্তি কালবের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে, সে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে। তাঁরপর তিনি ধনভাণ্ডার খুলে দেবেন, মাল দৌলত বণ্টন করবেন এবং ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন। এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে সাত বছর কিংবা (বলেছেন) নয় বছর”।

(আল মু’জামুল আওসাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস ৬৯৪০; ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬৭৫৭; আল মু’জামুল কাবীর, হাদিস ৯৩১)

যদিও সে সিরিয়ার শাসক হবে তারপরেও সে হক্কপন্থিদের সাথে মোকাবিলা করতে করতে সংঘাতের ঘটনা পরিক্রমায় ইরাকের কুফাতে এসে হাজির হবে।

উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,

“বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী শাসক সিরিয়াতে আত্মপ্রকাশ করবে। তার পর সে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা করবে। সে সময় মদিনা আক্রমণের জন্য সে একটি বাহিনী প্রেরণ করবে। তারা আল্লাহপাকের ইচ্ছানুপাতে যুদ্ধ করবে। এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানটিকে পর্যন্ত সে হত্যা করবে। এই গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফাতেমার কিংবা বলেছেন আলীর বংশের এক আশ্রয় গ্রহণকারী (ইমাম মাহদি) হারামে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তখন তাকে ধরার জন্য উক্ত বাহিনী তার কাছে ছুটে যাবে। বাহিনীটি বায়দা নামক স্থানে উপনীত হওয়ার পর তাদের ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। শুধু সেই লোকটি রক্ষা পাবে, যে মানুষকে সতর্ক করে বেড়াবে”।

(ইলাল, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪২৫)

হযরত আলী (রাঃ) বলেন,

“সুফিয়ানি সিরিয়াতে ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে। এরপরে তার বাহিনীর সাথে পেছন থেকে (তুরস্ক থেকে) আসা বাহিনীর সাথে ‘কিরকিসিয়্যা’তে এমন যুদ্ধ হবে যে যুদ্ধের ধ্বংস হওয়া (মৃত বা আহত) লোকদের জন্য আকাশ পাখিতে ভরে যাবে আর জমিনের হিংস্র পশুরা একত্রিত হবে। এরপর তাদের থেকে একটি বাহিনী বের হবে যতক্ষণ না তারা খোরাসান পর্যন্ত না পৌঁছে। এরপরে সুফিয়ানির বাহিনী খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে এবং কুফাতে রাসুলের বংশীয়দেরকে হত্যা করবে। তখন খোরাসানবাসিরা ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের জন্য খুব আশা করতে থাকবে”।

(নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ, আল ফিতানঃ ৬৪)

কিরকিসিয়্যা হল বর্তমান সিরিয়ায় ফোরাত নদীর উপকুলে বুসায়রা নগরীর নিকটবর্তী একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন শহর।


হযরত আরতাত (রাঃ) বলেন,

“সুফিয়ানি কুফায় প্রবেশ করবে। তিনদিন পর্যন্ত সে দুশমনদের বন্দীদেরকে সেখানে আটকে রাখবে এবং সত্তর হাজার কুফাবাসীকে হত্যা করে ফেলবে। তারপর সে আঠার দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তাদের (কুফাবাসীদের) সম্পদগুলো বণ্টন করবে। সুফিয়ানির কুফায় প্রবেশ করার ঘটনাটি তুরস্ক ও পশ্চিমাদের সাথে ‘কিরকিসিয়্যা’ এর ময়দানে যুদ্ধের পর ঘটবে। তাদের মধ্যে একদল খোরাসানে ফেরত যাবে। সুফিয়ানির সৈন্যবাহিনী আসবে এবং কুফার বিল্ডিংগুলো ধ্বংস করে সে খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে। খোরাসানের একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, যারা ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে। এরপর সুফিয়ানি মদিনার দিকে সৈন্য পাঠিয়ে রাসুলের বংশীয় লোকদেরকে বন্দী করবে। বন্দীদের কুফায় নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর মাহদি ও মানসুর (একজন সেনাপতি) উভয়ে উভয়ে কুফা থেকে পলায়ন করবে। সুফিয়ানি উভয়ের তালাশে সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর যখন মাহদি ও মানসুর মক্কায় পৌঁছে যাবে, তখন সুফিয়ানির বাহিনীকে ‘বায়দা’ নামক স্থানে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মাহদি মক্কা থেকে বের হয়ে মদিনায় যাবেন এবং ওখানে বনু হাশেমকে মুক্ত করবেন। এমন সময় কালো পতাকাবাহী লোকেরা এসে পানির উপর অবস্থান করবে। কুফায় অবস্থিত সুফিয়ানির লোকেরা কালো পতাকাবাহী দলের আগমনের কথা শুনে পলায়ন করবে। কুফার সম্মানিত লোকেরা বের হবে যাদেরকে ‘আসহাব’ বলা হয়ে থাকে, তাদের কাছে কিছু অস্ত্র শস্ত্রও থাকবে এবং তাদের মধ্যে বসরা’বাসীদের থেকে একজন লোক থাকবে। অতঃপর কুফাবাসী সুফিয়ানির লোকদেরকে ধরে ফেলবে এবং কুফার যে সব লোক তাদের হাতে থাকবে, তাদেরকে মুক্ত করবে। পরিশেষে কালো পতাকাবাহী দল এসে মাহদির হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে”।

(আল ফিতানঃ ৮৫০, মুহাক্কিক আহমদ ইবনে সুয়াইব এই হাদিসটির সনদকে ‘লাবাসা বিহা’ বা ‘বর্ণনাটি গ্রহণ করা যেতে পারে’ বলেছেন)

হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

“সুফিয়ানির ঘোড়াগুলো (সৈন্যবাহিনী) কুফায় প্রবেশ করবে। সে তার সৈন্যদেরকে খোরাসানবাসীদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করবে। খোরাসানবাসীরা লোকদেরকে ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে (ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের পূর্বে)। তখন সে (সুফিয়ানি) কালো পতাকাবাহী একদল হাশেমীদের মুখোমুখি হবে যার স্মমুখভাগের নেতৃত্ব দিবে শুহাইব বিন সালেহ। সে সুফিয়ানির বাহিনীকে ‘ইস্তাখর এর ফটকে’ ব্যস্ত রাখবে। এই দুই বাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হবে এবং কালো পতাকাবাহী বাহিনী জয়লাভ করবে। কিন্তু সুফিয়ানির ঘোড়াগুলো (সৈন্যবাহিনী) পলায়ন করবে। এটাই হবে সেই সময় যখন লোকজন ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের জন্য খুব আশা করতে থাকবে কারণ, তাঁকে (ইমাম মাহদিকে) তাদের প্রয়োজন”।
(নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ, আল ফিতান)

‘ইস্তাখর’ বর্তমানে ইরানের সিস্তান প্রদেশের অন্তর্গত একটি পরিত্যাক্ত ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত শহর। যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের অন্তর্গত।

আরেক বর্ণনায় আছে,

“কুফার অধিবাসীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এক ভাগ বনুকাল্ব গোত্রের সিরীয় শাসকের সাথে যোগ দিবে। এরা আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি হিসাবে বিবেচিত হবে। একভাগ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তারা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা হিসাবে বিবেচিত হবে। আর তৃতীয় ভাগ এই যুদ্ধকালীন সময়ে লুঠতরাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে এবং তারা পাপী হিসাবে বিবেচিত হবে”।

(আন নাজমুস সাকিব ফি বাইয়ানি আন্নাল মাহদি মিন আবদাল আলী বিন আবু তালিব)

কুফা শহরটি ইরাকের বাগদাদ নগরীর ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিনে এবং নাজাফের ১০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে অবস্থিত। এটির অবস্থান ফোরাত নদীর তীরে। নাজাফ, সামারা, কারবালা, কাদিমিয়া এবং নাজাফের মতোই কুফা শিয়া আকিদায় বিশ্বাসী প্রধান একটি নগরী।
রয়টার্সের অন লাইন সংস্করণ http://www.reuters.com এ গত ১৬ ই অক্টোবর ২০১২ তারিখের প্রতিবেদন Iraqi Shi'ite militants fight for Syria's Assad এ ইরাকের এই সব শিয়া আকিদায় বিশ্বাসী প্রধান নগরীগুলো থেকে সিরিয়ায় গিয়ে বনু কালব গোত্রের বর্তমান অত্যাচারী শাসক বাসার আল আসাদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণের খবর নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও ইরান ও লেবাননেরর শিয়া সম্প্রদায় সরাসরি এই যুদ্ধে বনু কালব গোত্রের বর্তমান অত্যাচারী শাসক বাসার আল আসাদের পক্ষ নিয়ে লড়ছে।
অপর বর্ণনায় এসেছে,

“প্রথম বাহিনী বায়দায় ধ্বসে যাওয়ার পর ইমাম মেহেদী মুজাহিদদের নিয়ে সিরিয়ার দিকে এগিয়ে যাবেন, সেখানে অন্য এক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করবেন এবং তাদেরকে পরাজিত করবেন। এই যুদ্ধটি ‘কাল্ব যুদ্ধ’ নামে হাদিসে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই বাহিনীর নেতার উপাধি ‘সুফিয়ানি’ (বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী)। হযরত মেহেদী (আঃ) তারবিয়া হ্রদের কাছে এই শাসককে হত্যা করবেন”।

(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) এর অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“ইমাম মাহদি সিরিয়ায় আসবে এবং সুফিয়ানিকে একটি গাছের নিচে হত্যা করবে, যার ডালপালাগুলো তারবিয়া উপসাগরের দিকে। তারপর সে কাল্ব গোত্রকে হত্যা করবে। যে ব্যাক্তি কাল্ব যুদ্ধের দিন গনিমত থেকে বঞ্চিত থাকবে, সে ক্ষতিগ্রস্থ বলে বিবেচিত হবে। চাই উটের একটি লাগামই ভাগে পাক না কেন”।
(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১১০, আল ফিতান, তাবরানী)

আল ফিতানে একটি আশ্চর্যরকম বর্ণনা এখানে না উল্লেখ করলেই নয়। সেখানে বনু কাল্বের দুই অত্যাচারী শাসকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রথমজন অত্যাচারের চরম মাত্রায় পৌঁছানোর পরে কুফা অধ্যায় শেষ করে মারা যাবে। আর এরপরেই দ্বিতীয়জনের আবির্ভাব হবে যে কিনা ইমাম মাহদির বিরুদ্ধে বাহিনী প্রেরণ করবে।

ইমাম যুহরি বলেছেন,

“সিরিয়ার লোক সুফিয়ানির আনুগত্য মেনে নেবে এবং সে পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে যুদ্ধ করে পরাজিত করবে যতক্ষণ না তারা (সুফিয়ানির বাহিনী) ‘মার্জ আস-সাফার’ (বর্তমান সিরিয়াতে দামেস্কের দক্ষিনে বিশাল সমভূমি) পর্যন্ত পৌঁছে। এরপরে আবার এই দুই বাহিনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে এবং পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে পরাজিত করবে যতক্ষণ না তারা (সুফিয়ানির বাহিনী) ‘মার্জ আস সানিয়্যা’ (বর্তমান সিরিয়াতে দারা প্রদেশের অন্তর্গত আল কারাক শহরের নিকটে একটি জায়গা) পর্যন্ত পৌঁছে। এরপরে তারা আবার যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে পরাজিত করবে যতক্ষণ না তারা (সুফিয়ানির বাহিনী) ‘আল হিস’ (একটি পরিবারের নাম/জায়গার নাম) এর নিকটে পৌঁছে। এরপরে তারা আবার যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে পরাজিত করবে যতক্ষণ না তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন শহর ( সিরিয়ার ‘কিরকিসিয়্যা’) পর্যন্ত পৌঁছে। এরপরে আবার এই দুই বাহিনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে এবং পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে যুদ্ধ করে যতক্ষণ না তারা (সুফিয়ানির বাহিনী) ‘আকার কুফ’ (ইরাকের বাগদাদ প্রদেশের অন্তর্গত একটি স্থান যা বর্তমানে পরিবেশ বিপর্যয়ের স্বীকার ও বসবাসের অযোগ্য) পর্যন্ত পৌঁছে। এরপরে আবার এই দুই বাহিনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে এবং পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে পরাজিত করবে এবং সুফিয়ানি তাদের সকল সম্পদ হস্তগত করবে। এরপরে সুফিয়ানির গলায় একটি ফোঁড়া উঠবে। তখন সে সকালবেলা কুফাতে প্রবেশ করবে আর বিকাল বেলা তার সৈন্যবাহিনীসহ বের হয়ে আসবে এবং সিরিয়াতে প্রবেশ করার পর সে মারা যাবে।

এবার সিরিয়ার লোকরা বনু কাল্বের এক মহিলার পুত্রের আনুগত্য মেনে নেবে যার নাম হবে ‘আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াজিদ ইবনুল কালবিয়্যা, যে কিনা শুষ্ক দৃষ্টি ও রুক্ষ মুখায়ব সম্পন্ন। পূর্বদিকের (খোরাসানবাসীরা) সুফিয়ানির মৃত্যুর খবর শুনে বলবে, ‘সিরিয়ার জনগণের খারাপ দিন শেষ হয়ে গেছে!’ এবং তারা বিদ্রোহ করে বসবে। বনু কাল্বের মহিলার ঐ পুত্র এই খবর শুনবে এবং সে যুদ্ধের জন্য তার বাহিনীকে প্রস্তুত করবে। সে পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে পরাজিত করবে যতক্ষণ না তারা ‘কুফা’ পর্যন্ত পৌঁছে। সেখানে সে তার দুশমনদের হত্যা করবে, মহিলা ও সিশুদেরকে বন্দী করবে এবং কুফাতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে। এরপরে সে হিজাজ (মক্কা মদিনা) এ সৈন্যবাহিনী পাঠাবে”।

(নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ, আল ফিতানঃ ৬৪)

আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) বলেছেন,

“মাহদির আগমনের আলামত হচ্ছেঃ টার্কস (বর্তমান রাশিয়া) তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে। তোমাদের শাসক যে কিনা ধন সম্পদের ব্যাপারে মোহাচ্ছন্ন, মারা যাবে। এবং তোমরা তার পরবর্তী শাসক হিসাবে দুর্বল একজনকে নির্বাচন করবে, সুতরাং শাসক হবার দুই বছর পরে তাকে প্রত্যাহার করা হবে। দামেস্ক মসজিদের পশ্চিমের দিকে একটি ধ্বসের ঘটনা ঘটবে। বৃহত্তর সিরিয়াতে তিনজন ব্যক্তির আবির্ভাব হবে। পশ্চিম দিক থেকে মিশরে আক্রমণ হবে। এটাই সুফিয়ানির আবির্ভাবের শুরু”।

(নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ, আল ফিতান)


ইবনে মাসুদ (রাঃ) বলেছেন,

“যদি জাজিরাতুল আরব ও আজারবাইজানে টার্কস ও খাজার (বর্তমান রাশিয়া ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা)-দের আবির্ভাব হয় এবং আমাক (উত্তর সিরিয়ার একটি এলাকা) ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাতে রোমানরা (খ্রিস্টানরা) এসে পৌঁছে, রোমানরা (খ্রিস্টানরা) কানসারিনে (উত্তর সিরিয়ায় আলেপ্পো প্রদেশের অন্তর্গত একটি এলাকা) বনু কায়েশের এক ব্যক্তির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। সুফিয়ানি ইরাকে পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে আগতদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। প্রতিটি পার্শ্বই শত্রু দিয়ে ঘেরা। সুফিয়ানি চল্লিশ দিন পর্যন্ত যুদ্ধ করার পর কারও কাছ থেকে (কোন মুসলিম ভূখণ্ড থেকে) কোন সাহায্য না পেয়ে রোমানদের সাথে এই মতৈক্যে পৌঁছাবে যে কোন পক্ষই জয়লাভ করলো না”।

(নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ, আল ফিতান)

২০১৩ সালের আগস্টে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের পর যুক্তরাষ্ট্র (আধুনিক রোমানদের প্রতিনিধি ভূখণ্ড) যখন সিরিয়া আক্রমণ করতে চেয়েছিল তখন রাশিয়া জাজিরাতুল আরবের কেন্দ্র বিন্দু সৌদি আরব আক্রমণের ঘোষণা দিয়েছিল। আর ন্যাটো (আধুনিক রোমানদের অগ্রগামী বাহিনী) ইতিমধ্যেই তুরস্কে উপস্থিত আছে ২০১৩ এর মাঝামাঝি সময় থেকে। অর্থাৎ এক পর্যায়ে এটি ত্রিমুখী যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। আর হাদিসেও সেটারই ইঙ্গিত এসেছে।

উপরের বর্ণনা মোতাবেক বোঝা যাচ্ছে, সিরিয়ার চলমান এই সংঘাত ধীরে ধীরে ছড়াবে এবং ধীরে ধীরে অনেক ভূখণ্ড অংশগ্রহণে বাধ্য হবে এবং পরিস্থিতি ধীরে ধীরে চূড়ান্ত ঘটনার দিকে যাবে।

যদিও পশ্চিমা মিডিয়া ও একশ্রেণীর অতি সমঝদার মুসলিম নামধারী বিশ্লেষক যারা ইসলামের ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে জ্ঞানশূন্য, একে তৈলক্ষেত্র দখল, আঞ্চলিক রাজনীতি, এই পক্ষ সেই পক্ষ বিষয়ক ঘটনা হিসাবে সারা মুসলিম জাহানে উপস্থাপন করেছে। অথচ এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে বিশাল সতর্কবাণী।

তাই যেহেতু হাদিসে বর্ণিত বনু কাল্ব গোত্রের সিরীয় অত্যাচারী শাসকের সাথে এখনও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর যুদ্ধ এখনও সিরিয়ার ভূখণ্ডেই বিদ্যমান ও চলমান, সতর্ক বিশ্বাসী পুরুষ ও মহিলা হিসাবে আমরা এই যুদ্ধের দিকে সর্বদাই এক চোখ খোলা রাখব। আরও চোখ রাখব সমগ্র ইরাক, সিরিয়া, খোরাসান ও জাজিরাতুল আরবের ভূখণ্ডগুলোসহ নেতৃস্থানীয় বিধর্মী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সামরিক পরিস্থিতির উপর। (হাদিসে যাকে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে) ইমাম মাহদির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার সংশ্লিষ্টতা এসেছে, তাতে বুঝা যায় যে, এগুলো শেষ জামানার অংশ হিসাবে হতে হবে। আসুন, আমরা একটু মিলিয়ে নেই, হাদিসের ধারাবাহিকতায় আমরা কোন জামানায় বসবাস করছি। অন্যথায়, সিরিয়া থেকে বনুকাল্ব গোত্রের যে কুরায়শি শাসকই বের হোক না কেন, আর যত ঘটনা ও যুদ্ধই হোক না কেন, তার গুরুত্ব অনুধাবন করা যাবে না।

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“নবুওয়াত ব্যবস্থা তোমাদের মাঝে ততদিন থাকবে, যতদিন আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা, তখন তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর) তোমাদের মাঝে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে এবং তা আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (খুলাফায়ে রাশিদিন এর যুগ)। অতঃপর তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর হানাহানির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা আল্লাহ তাআলার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (রাজতন্ত্র)। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তার বিলুপ্তি ঘটবে। তারপর জবর দখল তথা আধিপত্য বিস্তারের রাজত্ব কায়েম হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে কিছুকাল বিরাজমান থাকবে (নানা ভূখণ্ডে বর্তমান একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকগণ) । তারপর যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, তখন এরও অবসান ঘটবে। অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত রাষ্ট্র-ব্যবস্থা কায়েম হবে। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন”।

(মুসনাদে আহমদঃ ৪/২৭৩)

আর তাছাড়া অপর হাদিসে, হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) এবং মু’আজ বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“ইসলামের সূচনা হয়েছে নবুওয়াত ও রহমতের শাসনের মাধ্যমে। এরপর হবে খেলাফত ও রহমতের শাসন। এরপর হবে অত্যাচার লুটেরা বাদশাদের শাসন। এরপর হবে অহংকারী প্রভাবশালী বাদশাদের শাসন, তখন জমিনে অন্যায়, অবিচার, ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। সেকালের লোকেরা রেশম (সিল্ক), ব্যভিচার (পরকীয়ার পাশাপাশি বয়ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ডের নামে চলমান বহুল প্রচলিত সামাজিকভাবে স্বীকৃত উঠতি বয়সী অবিবাহিতদের জেনা) এবং মদকে হালাল করে ফেলবে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পর্যন্ত এর মাধ্যমেই তাদেরকে রিজিক দেওয়া হবে এবং সাহায্য করা হবে”।

(শুয়াইবুল ঈমান আল বায়হাকি, ৫/১৬)

উপরের হাদিসদ্বয়ের প্রেক্ষিতে আমরা যে যুগের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি, তা হচ্ছে অন্যায়, অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়ার যুগ। আল্লাহ তা’আলার জমিনে সর্বোচ্চ শাসন ব্যাবস্থা (sovereignty) একমাত্র আল্লাহর হওয়া উচিৎ। যদি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর কানুন ব্যতীত মানুষের তৈরি কোন কানুন বাস্তবায়নের অপচেস্টা চালানো হয়, তবে অবশ্যই জমিনে অন্যায় অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদে ভরে যাবে।

১৯২৪ সালে উসমানি খেলাফতের ভেঙ্গে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ ৫৭ টি ভূখণ্ডে বিভক্ত হয়ে বর্তমানে একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকদের দ্বারা শাসিত। ‘অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে’ - মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তিই প্রমাণ করে সারা বিশ্বে ইসলামী শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজত্বের লাগাম মুসলিমদের হস্তগত হবে। কখনো এর ব্যতিক্রম হবে না। কারণ, বিভিন্ন বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা যথা সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতিহাসে তার বহু প্রমাণ রয়েছে। এবং আমরা সেই রকমই একটি ‘ট্রাঞ্জিকশন ফেজ’ এ আছি।

আল আকামা ইবনে মাসুদ বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন,

“আমি তোমাদেরকে সাতটি মারাত্মক ফিতনার ব্যাপারে সাবধান করছি যা আমার পরে আসবে, একটি ফিতনা যা মদিনা থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা মক্কা থেকে আসবে, একটি ফিতনা ইয়েমেন থেকে আসবে, একটি ফিতনা বৃহত্তর সিরিয়া থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা পূর্বদিক থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা পশ্চিম দিক থেকে আসবে এবং একটি ফিতনা যা সিরিয়ার পাহাড়ি উপত্যাকা থেকে আসবে যা হল সুফিয়ানি (সিরিয়ায় বনু কাল্ব গোত্রের কুরায়শি শাসক)”।

ইবনে মাসুদ বলেন, ‘আমাদের ভিতরে অনেকে প্রথমগুলো দেখেছি আর বাকিগুলো আমাদের পরবর্তী পজন্ম দেখবে’।

(মুসতাদরাকে হাকিম, আল ফিতান)

এখন আমরা একটু সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থার ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে নেই।

মূলত খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০০ বছর থেকে সিরিয়ার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। ইসলাম আসার সময়, সিরিয়া মূলত ‘শাম’ নামে পরিচিত ছিল এবং এর বৃহত্তর অংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমান জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, প্যালেস্টাইন ও দখলদার ইসরাইল। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতের সময় সিরিয়া রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। এরপর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) ও হযরত আবু ওবায়দা (রাঃ) এর নেতৃত্বে একে একে পুরো বৃহত্তর সিরিয়া (শাম) ইসলামিক খেলাফতের অধীনে আসে এবং দলে দলে সেখানকার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। খুলাফায়ে রাশেদিনদের পরে ১০৯৮ সাল পর্যন্ত জাজিরাতুল আরব ভিত্তিক উমাইয়াদ, আব্বাসিয়াসহ মিশরভিত্তিক কয়েকটি রাজতন্ত্রের অধীনে শাসিত হয়। ১০৯৮ থেকে ১১৮৯ সাল পর্যন্ত ক্রুসেড যুদ্ধের সময় বর্তমানের মূল সিরিয়াসহ বৃহত্তর সিরিয়ার বিভিন্ন অংশ জার্মান, ইংরেজ, ইতালি ও ফ্রান্সের দ্বারা শাসিত হয়। পরবর্তীতে সেলজুক, আইয়ুবি, মামলুকদের হাত ঘুরে এই ভূখণ্ড ১৫১৬ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর মূলসিরিয়াসহ বৃহত্তর সিরিয়া ব্রিটিশ ও ফ্রান্স সেনাবাহিনীর অধীনে আসে। এবং এই দুই সাম্রাজ্যবাদী জাতি তখন একটা চুক্তির মাধ্যমে এর উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে। যদিও ১৯২০ সালে হাশেমি পরিবারের ফয়সাল নামক একজন তল্পিবাহককে আমীর করে একটি কয়েকমাসের ক্ষণস্থায়ী ‘সিয়িয়ান রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু তা পরে আবার ‘ফ্রান্স ম্যান্ডেট’ এর অধীনে চলে আসে।

এমনিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত ফ্রান্স সেনাবাহিনী এবং সিরীয় জাতিয়তাবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে দফায় দফায় কয়েকটি যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং ১৯৩৬ সালে সিরীয় জাতীয়তাবাদীদের ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাধীনতা চুক্তি সম্পাদিত হয়। এবং হাসিম আল তাসিকে প্রথম রাষ্ট্রপতি করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে তা আবার ফ্রান্স সেনাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং ১৯৪৬ সালে এপ্রিল মাসে সেনা প্রত্যাহার করে প্রজাতন্ত্রী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।

১৯৪৬ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত শুধু আরব ইসরাইল যুদ্ধ (১৯৪৮) আর ঘন ঘন সামরিক অভ্যুত্থানের ইতিহাস। এর মাঝে সুয়েজ খাল নিয়ে ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় আরব ইসরাইল যুদ্ধের পরে সিরিয়া রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) এর সাথে মৈত্রী চুক্তি করে। এর ফলে সিরিয়া রাশিয়া থেকে সমর সরঞ্জাম এর সাথে সমাজতন্ত্রের চেতনাও আমদানী করতে সক্ষম হয়। ১৯৫৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সিরিয়া এবং মিশর ‘সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র’ এর ঘোষণা দেয় এবং ১৯৬১ সালে তা ভেঙ্গে যায়। এর মাঝে সিরিয়াতে আরব জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক মতবাদ ‘বাথিজম’ এর উত্থান ঘটে এবং একে কেন্দ্র করেই সিরিয়ায় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হতে থাকে। ১৯৬৬ সালে সালেহ জাদিদ (হাদ্দাদিন গোত্রের), মুহাম্মদ উমরান (খাইয়্যাতিন গোত্রের) এবং হাফিজ আল আসাদ (কাল্বিয়্যা বা বনু কাল্ব গোত্রের) মিলে আরেক দফা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা হাতে নেয়। এবং আশ্চর্যজনকভাবে তিনজন অফিসারই শিয়া নুসাইরিয়া আকিদার। এরমাঝে ১৯৬৭ সালে সিরিয়া আবারও ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং গোলান মালভূমি হাতছাড়া হয়। এই বিষয়কে ভিত্তি করে যুদ্ধকালীন সামরিক প্রধান হাফিজ আল আসাদ ও অপর সামরিক শাসক সালাহ জাদিদের সাথে মতপার্থক্য প্রকট হয়। যার ফলস্বরূপ, এক রক্তপাতহীন সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আল আসাদ ক্ষমতায় আসীন হয় এবং ২০০০ সালে তার মৃত্যুর পর ৩০ বছরের শাসন শেষে তার ছেলে বাশার আল আসাদ ক্ষমতায় আসে। উল্লেখ্য, এ নুসাইরিয়া সম্প্রদায় সিরিয়ার মাত্র ১৩% শিয়ার একটি অংশ।

মূলত ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আসাদের ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে সিরিয়া নামক গোটা ভূখণ্ডে ইসলাম আসার পরের ইতিহাসে প্রথম কোন ব্যক্তি সিরিয়ার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল যে কিনা আরবদের গোত্র পরিচয়ের দিক থেকে বনু কাল্ব গোত্রের এবং আকিদাগত দিক থেকে শিয়া নুয়াইরিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং জন্মগতভাবে পাহাড়ি উপত্যাকার একটি গ্রাম কারদাহা থেকে ।

২রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ সালে হামা শহরে বনু কাল্ব গোত্রীয় প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার সহোদর কর্নেল রিফাত আসাদের নেতৃত্বে সিরিয়ান সেনাবাহিনী আহলে-সুন্নাহ, বিশেষ করে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের উপর যে আক্রমণ ও গণহত্যা পরিচালনা করে নিকট অতীতে তার কোন নজির নেই। সে গণহত্যায় গুম, গ্রেফতার ও দেশত্যাগীদের ছাড়া শুধু হত্যার শিকার-ই প্রায় ৪০-হাজার সাধারণ লোক।

বিভিন্ন দেশের সংবাদ পত্রে প্রকাশ, সিরিয়ার আসাদ সরকার বিদ্রোহ ও আন্দোলন দমনের জন্য সেনাবাহিনীকে যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করে। পৈশাচিক এ দমন অভিযানের বিরুদ্ধে জাতিগত প্রতিবাদ ও বহির্বিশ্বের চাপ ঠেকানোর জন্য আন্তঃ ও বহিঃ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়াসহ সংবাদ পত্রের উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। হামা শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সব রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। শহর থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হয় নি। বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ কেটে দেয়া হয়, ফলে হামলার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাতেই পুরো শহর বিভীষিকাময় অন্ধকারে পতিত হয়। বহু মসজিদ ও গির্জা ধ্বংস করা হয়, অলিতে-গলিতে হত্যাযজ্ঞ চলে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, বহু কবরস্থান গুড়িয়ে দেয়া হয়। অবশেষে স্বৈরশাসক ও তার বাহিনীর হাতে [২-২৮ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ই.] লাগাতার ২৭-দিন অব্যাহত গণহত্যা ও বাড়ি-ঘর ধ্বংসের পর হামা শহরের এক তৃতীয়াংশ নিঃশেষ হলে এ ধ্বংস যজ্ঞের সমাপ্তি ঘটে।

গণহত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বর্ণনা:
o পরিকল্পনাকারী: প্রেসিডেন্ট হাফেজ আসাদ নুসাইরি, আলাবি।
o বাস্তবায়নকারী: কমান্ডার রিফাত আসাদ, সিরিয়ান সেনাবাহিনী, সিরিয়ান এরাবিক এয়ার ফোর্স, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনী, সাধারণ গোয়েন্দা বিভাগ, বুদ্ধিজীবী, সরকার দলীয় সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ বাহিনী এবং সিরিয়ান সেনাবাহিনীর সবক’টি ইউনিটসহ পুরো সরকার যন্ত্র হামাবাসীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
o হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র: সাজোয়াযান, ট্যাংক, কামান, রাইফেল, বিমান ও বুলডোজার।
o ভিকটিম: সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী, তথা ইখওয়ানুল মুসলিমিন।


বিভিন্ন পরিসংখ্যান মতে মৃত ও ধ্বংসের পরিমাণ:

o ব্রিটিশ সাংবাদিক ‘রবার্ট ফিসক’ বলেন, যিনি হামার গণহত্যার কয়েকদিন পরে সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন: মৃতদের সংখ্যা প্রায় ১০-হাজার।
o দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী: মৃতদের সংখ্যা প্রায় ২০-হাজার।
o কমান্ডার রিফাত আসাদ গর্ব করে বলেছে: আমরা সেখানে ৩৮-হাজার লোক হত্যা করেছি।
o ‘সিরিয়ার মানবাধিকার সংস্থা’ বলেছে: মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩০-থেকে ৪০-হাজার। তাদের সবাই শহরবাসী। তাদের অধিকাংশকে যৌথভাবে ব্রাশ ফায়ার করে গণকবর দেয়া হয়।
o কতক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সেখানের মৃতের সংখ্যা নির্ণয় করা খুব কঠিন, কারণ ঘটনা শুরু থেকে ১০-১৫ হাজার শহরবাসী গুম ও গ্রেফতারের শিকার হয়, এখনো পর্যন্ত যাদের সম্পর্কে জানা যায়নি, তারা সেনাবাহিনীর কারাগারে জীবিত, না মৃত।

মৃত ও ক্ষতির ব্যাপ্তি:
o মৃতের সংখ্যা ১০-৪০ হাজার, যাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছে।
o অধিকন্তু ১৫-হাজার গুম ও গ্রেফতারের শিকার হয়েছে, যাদের সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।
o শহরের এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস হওয়ার কারণে প্রায় ১-লাখ লোক শহর ত্যাগ করে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়।

o হামার কয়েকটি এলাকা ধ্বংসের বেশী সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী এ শহরের মধ্যাঞ্চল।
o সেনাবাহিনীর দমন পীড়নে ৮৮-টি মসজিদ, ৩-টি গির্জা এবং স্মৃতিবিজড়িত ও ঐতিহাসিক অনেক এলাকা ধ্বংস হয়।

“হামা”র গণহত্যা তার অধিবাসীদের এখনো কম্পিত করে, দীর্ঘ ৩০-বছর পরও তারা সে বিভীষিকা ভুলতে পারে নি। সেই থেকে তারা সর্বদা সরকারের ভয়ে ভীত ও শঙ্কিত জীবন পার করছে। সেখানে এমন কোনো পরিবার নেই, যার কোনো সদস্য হত্যা অথবা গুম অথবা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয় নি।

এ গণহত্যার পরও সিরিয়ার সরকার সে এলাকাকে পরিত্যক্ত ও অবহেলিত রেখে দিয়েছে, সেখানে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এ ঘটনার বিভীষিকা এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, হামার অধিবাসীরা যখন কোনো ঘটনা বর্ণনা করে, তখন বলে এটা গণহত্যার পরের ঘটনা বা তার কিছু পূর্বের ঘটনা, জন্ম অথবা মৃত্যু; বিয়ে অথবা কোনো ঘটনায় তারা গণহত্যার কথা স্মরণ করে। সেই থেকে ২০১১ই. পর্যন্ত সিরিয়ায় সরকারের সমালোচনা করে কোন প্রতিবাদ সভা হতে দেখা যায় নি।
মক্কাতে ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের সাথে সাথে সর্বপ্রথম যেই আরব শাসকটি মাহদির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে সে হবে সিরিয়া নামক ভূখণ্ডের একজন অত্যাচারী শাসক যে কিনা হবে বনুকাল্ব গোত্রের কুরায়শি ব্যক্তিত্ব। এতে এও বুঝা যায় যে, ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের আগেই সে সিরিয়াতে শাসকরূপে আসীন থাকবে যার কারণে, ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের সাথে সাথেই সে ইমাম মাহদির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে যাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘কাল্বের যুদ্ধ’ নামে আখ্যায়িত করেছেন।

কোন কোন হাদিসে এই শাসককে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে অবিহিত করা হয়েছে। এর কারণ, হিসাবে হযরত আলী (রাঃ) বলেন,

“সুফিয়ানি – যে লোক শেষ যুগে সিরিয়াতে দখল প্রতিষ্ঠা করবে সে বংশগতভাবে খালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের বংসদ্ভুত হবে। তার সহচরদের মধ্যেও "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। দামেস্কের দিক থেকে তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তার মাথা বড় হবে এবং মুখে শ্বেত রোগের দাগ থাকবে। এক চোখে একটি সাদা দাগ থাকবে। মানুষের রক্ত ঝরানো তাদের বিশেষ অভ্যাসে পরিণত হবে। যে লোকই বিরোধিতা করবে, তাকেই হত্যা করা হবে। এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। যখন হারাম শরীফে ইমাম মেহেদী (আঃ) এর আগমনের খবর প্রকাশ পাবে তখন এই শাসক ইমাম মেহেদী (আঃ) এর বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করবে”।

(মাজাহিরে হক জাদিদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৩)

২০০০ সালে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত বনু কাল্ব গোত্রের অপর শাসক বাশার আল আসাদের জন্ম দামেস্কে। ২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে নুসাইরিয়াদের অবস্থান আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ এর বিরুদ্ধে এতই নিষ্ঠুর যে, “এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে” – হাদিসের এই লাইনটিকে পর্যন্ত তারা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত করছে। আর মহান আল্লাহ আজ প্রযুক্তির মাধ্যমে তা সারা বিশ্বে জানিয়ে দিয়েছে।

ব্রিটিশ ডাঃ ডেভিড নট, যিনি কিনা সিরিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঁচ সপ্তাহ ধরে সেচ্ছায় চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, তার বরাত দিয়ে গত অক্টোবর ২০১৩ সালে সিএনএন, ডেইলি মেইল, ডেইলি টেলিগ্রাফসহ বহু আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এই খবর প্রচারিত হয় যে, আসাদের স্নাইপাররা গর্ভবতী মহিলাদের পেটকে লক্ষ্য করে গুলি করে গর্ভস্থিত সন্তানদের হত্যা করছে। গুলিবিদ্ধ গর্ভস্থিত শিশুর এক্স রে রিপোর্টসহ এই খবর দেখতে ইন্টারনেটে “Is this the most sickening image of the war in Syria so far? Snipers 'target unborn children in chilling competition to win cigarettes” লিখে সার্চ দিলে http://www.dailymail.co.uk এর একটি নিউজ পাওয়া যেতে পারে।

এমনকি সিরিয়ার এই বনু কালব গোত্রীয় শাসক বাশার আল আসাদ গত ২১ শে আগস্ট ২০১৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে দামেস্কের আলগুতা শহরে। এই ‘আলগুতা’ হাদিসের বর্ণনা হিসাবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, সিরিয়ার দামেস্কের “আল গুতা" নামক স্থানটি রাসূল (সাঃ) এর বর্ণিত "মালহামা" (মহাযুদ্ধে) একটি বড় ভূমিকা রাখবে, যেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন ইমাম মেহেদী।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে সিরিয়ার সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে”।

(সুনানে আবি দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৬৯)

আলগুতা সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী এর হাতে থাকবে।

সমস্ত দাজ্জালি মিডিয়া এই রাসায়নিক অস্ত্রের বিষয়টিকে এমনই বিতর্কিত করে তুলেছে যে, আল্গুতা তো দূরের কথা, রাসায়নিক অস্ত্র আদৌ বাশার আল আসাদ এর বাহিনী মেরেছে কিনা সেটাই এখন ধোঁয়াশা হয়ে গেছে। আর এই বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদকে তো ইতিমধ্যেই পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া এবং বিভিন্ন ভূখণ্ডের দালাল মিডিয়া একে “যৌন জিহাদ” বলে অপপ্রচার করে অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের পথ ভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“সুফিয়ানির আবির্ভাব হবে হবে দামেস্কের দিক থেকে। তার সহচরদের মধ্যেও "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। সে মানুষদেরকে এমনভাবে হত্যা করবে যে এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। ফলে বনু কায়েস গোত্রের লোক তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে তাদের সবাইকে হত্যা করে ফেলবে। আমার ঘরের (আহলে বাইতের) এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) মক্কাতে আসবে এবং এ খবর তার কাছে পৌঁছবে। তখন সে (সুফিয়ানি) একটি সৈন্য বাহিনী পাঠাবে এবং পরাজিত হবে। এরপর সে আরেকটি বাহিনী পাঠাবে এবং মরুভূমিতে ভূমিধ্বসে ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধুমাত্র একজন লোক বেঁচে থাকবে যে কিনা (ভূমিধ্বসের) এই সংবাদ পৌঁছে দিবে”।

(ইবনে হিব্বান, তিরমিজি, আবু ইয়েলী, তাবরানী, আল ফিতান, মুসতাদরাকে হাকিম)

দামেস্কে জন্মগ্রহণকারী এই বাশার আল আসাদদের অনুগত ও অনুসারী প্রশাসনিক ও সামরিক বাহিনীর বেশির ভাগই “নুসাইরিয়া”/ “আলাভি” তথা “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। আজ তারা “আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআ”দের সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত। উল্লেখ্য, হাফিজ আল আসাদের মুখে শ্বেত দাগ ছিল।

২০১১ তে যুদ্ধ শুরু হবার পর বনু কাল্ব গোত্রের বিরুদ্ধে বনু কায়েসের অবস্থান বের করতে না পারলেও পিছনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, উমাইয়াদ খেলাফতের সময় বনু কাল্ব গোত্র ২য় মারওয়ানের বিরোধিতা করলে বনু কায়েস গোত্রই সর্বপ্রথম বনু কাল্ব গোত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন খুযায়ী (রাঃ) দাঁড়িয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘আমরা এই সুফিয়ানিকে কিভাবে চিনব?’

উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন,

“তার গাঁয়ে দুটি কাতওয়ানির চাদর থাকবে। তার চেহারার রং ঝলমলে তারকার মতো হবে। ডান গালে তিলক থাকবে। আর বয়স চল্লিশের কম হবে”।

(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১১০)

ঝলমলে চেহারার অধিকারী বাশার আল আসাদ ৩৫ বছর বয়সে সিরিয়ার শাসনভার গ্রহণ করে। দুটি কাতওয়আনির চাদর বলতে যদি দুটি জাতিকে সাহায্যকারী হিসাবে বোঝানো হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা বর্তমানে ইরান (পারস্য) ও রাশিয়া (পেছনের দিকের শত্রু)-কে দেখছি। আর হাদিসেও ইমাম মাহদির আগমনের পরে যুদ্ধের সিরিয়ালে কাল্ব যুদ্ধের পরে এই দুই জাতির সাথে যুদ্ধের ইঙ্গিত এসেছে। এই দুই জাতির সাথে যুদ্ধের পরেই মহাযুদ্ধের বর্ণনা এসেছে।

বর্তমানে সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রের এই শাসকের সাথে রাশিয়া ও ইরানের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে। এই দুই ভূখণ্ড সরাসরি কূটনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি এই বাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। এমনকি এই দুই ভূখণ্ডের সৈন্যরা সরাসরি তার পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। কুয়েতের আরবী সংবাদপত্র আস-সিয়্যাসসার বরাত দিয়ে অনলাইন নিউজ পেপার http://www.kavkazcenter.com গত ২২ শে নভেম্বর ২০১৩ তারিখে Russians participate in battle for Syrian district নামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর রয়টার্সের অন লাইন সংস্করণ http://www.reuters.com এ গত ৪ ঠা নভেম্বর ২০১৩ তারিখের Iran Revolutionary Guards commander killed in Syria নামক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

অপর বর্ণনায়,

“শুরুর দিকে তারা ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে, পরে যখন শক্তি ও ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়ে যাবে, তারা অত্যাচার-অবিচার ও অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে”।

(ফয়জুল কদির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১২৮)

অর্থাৎ প্রথমে তাদেরকে মুসলমানদের মাঝে মহান নেতা বা হিরো হিসাবে উপস্থাপন করা হবে, কিন্তু পরে তাদের আসল রূপ প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠের কারণে বেশির ভাগ মুসলিমরা এই পরিবারকে হিরো মনে করে। আজ ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে তাদের আসল রূপ প্রকাশ পেয়েছে।

আসুন এবার আমরা একটু বনু কাল্ব গোত্রের ইতিহাসের দিকে তাকাই।

রাসুল (সাঃ) এর সময়ে বনু কাল্ব আরবদের একটি গোত্র ছিল এবং নিজেদেরকে ইয়েমেনি বংশদ্ভুত বলে দাবী করত। হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) কে তৎকালীন সময়ে দামাতুল জান্দালে পাঠানো হয়েছিল এই গোত্রকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। তখন এর গোত্র প্রধান ছিল আসবাগ বিন আমর কাল্বি। সে খ্রিস্টিয়ান ধর্মালম্বী ছিল। সে ইসলামকে দ্বীন হিসাবে কবুল করে এবং পরবর্তীতে গোত্রের অধিকাংশ লোক ইসলাম গ্রহণ করে।

ইসলামের প্রথম যুগে এই গোত্রের বেশ কিছু সন্মানিত ব্যক্তিত্বের ইতিহাস এখনও বিদ্যমান।
হযরত জায়েদ বিন হারিসা (রাঃ) ছিলেন বনু কাল্ব গোত্রের।
হযরত জিব্রাইল (আঃ) প্রায়ই সুদর্শন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী সাহাবী হযরত দিহইয়্যা আল কাল্বি (রাঃ) এর রূপ নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর কাছে ওহী নিয়ে আসতেন।
হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর মৃত্যুর পর হযরত আলী (রাঃ) যেই মহিলাকে বিয়ে করেন, উনিও ছিলেন বনু কাল্ব গোত্রের। উনার নাম ফাতিমা কাল্বিয়্যা। “উম্মুল বানিন” নামে তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন।

কালের বিবর্তনে এই গোত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং বর্তমানে বনু কাল্ব গোত্রের অধিকাংশ লোক উত্তর পশ্চিম সিরিয়াতে বিশেষ করে হোমস এবং লাটাকিয়ার পাহাড়ি উপত্যকার গ্রাম কারদাহাতে বসবাস করে এবং শিয়াদের নুসাইরিয়্যা আকিদার অনুসারী। আর নুসাইরিয়া আকিদার উদ্ভব হয় শিয়াদের ১১ তম ইমামের দাবীদার হাসান আসকারী (মৃত্যু ৮৭৪) এর ছাত্র ইবনে নুসাইর (আল খাসিবি নামে পরিচিত, মৃত্যু ৯৬৯) এর থেকে। ১০৩২ সালে আল খাসিবির নাতী (ছেলের ছেলে) এবং তার ছাত্র আল তাবারানি লাটাকিয়া এসে তার লিখনীর মাধ্যমে সিরিয়ার উপকূলবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলের পাদদেশে অবস্থিত জনগোষ্ঠীর মাঝে এই আকিদার বিস্তার ঘটায়। (মূলত এই সময় থেকেই তাদের সহিহ ইসলামী আকিদা থেকে পদস্খলন শুরু হয়)। পরে এই পাহাড়ি অঞ্চলটিও “নুসাইরিয়া পার্বত্য অঞ্চল” নামে পরিচিত হতে শুরু করে। হযরত আলী (রাঃ) এর অনুসারে নিজেদেরকে তারা “আলাভি” হিসাবে পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করে।

সিরিয়াতে নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ৪ টি গোত্র। যথাঃ মাতাউইয়া, হাদ্দাদিন, খাইয়্যাতিন ও কাল্বিয়্যা (অর্থাৎ বনু কাল্ব গোত্রের যারা এই সম্প্রদায়ের আকিদাকে গ্রহণ করেছে)।

‘আল আসাদ’ পারিবারিক নামের শুরু ১৯২৭ সালে যখন হাফিজ আল আসাদের বাবা আলী সুলায়মান তার নামের সাথে ‘আল আসাদ’ (অর্থ সিংহ) ব্যবহার শুরু করে। আলী সুলায়মানের বাবা (হাফিজ আল আসাদের দাদা) সুলায়মান আল ওয়াহিশ (জন্ম ১৮৭৫) সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমে লাটাকিয়ার পূর্বপাশে নুসাইরিয়া পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি উপত্যকার গ্রাম কারদাহাতে বাস করত। হাফিজ আল আসাদও এই একই গ্রামে ১৯৩০ সালে জন্ম গ্রহণ করে। আর বাশার আল আসাদ দামেস্কে জন্মগ্রহণ করে।

কিন্তু আরবদের বিভিন্ন পশ্চিমা দালাল মিডিয়াতে নিজের "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব" গোত্রের পরিচয়কে গোপন করে কুরাইশ বংশের পরিচয়কে বাশার আল আসাদ বার বার সামনে আনছে (হাদিসে এসেছে কালব গোত্রের কুরায়েশী ব্যক্তি) এবং রাসুল (সাঃ) এর কুরাইশ বংশের ধোঁয়া তুলে বর্তমান মুসলিম জাহানের অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের সহজেই পথ ভ্রষ্ট করছে।

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘হে আল্লাহর রাসুল, সুফিয়ানির বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করা কিভাবে জায়েজ হবে, তারা তো তাওহীদে বিশ্বাসী হবে?’

উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

“শোন হুজায়ফা, সে সময় সে মুরতাদ অবস্থায় থাকবে। সে বিশ্বাস করবে, মদ হালাল। সে নামাজ পড়বে না”।

(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১১০)

হাফিজ আল-আসাদ এর সময় ১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ এর মুসলিমরা বিদ্রোহ করলে এই নুসাইরিয়া সম্প্রদায় হামা শহরে তাদের সেনাবাহিনী নিয়ে যে শ্লোগান নিয়ে হামা শহরের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে বলছিল, তা কখনও হামার অধিবাসীরা ভুলতে পারবে না, তারা বলছিল, “নাও অস্ত্র, ধর অস্ত্র, মুহাম্মাদের দ্বীন পশ্চাতে ও তিরোহিত”(আল-ইসলাম ফী মুওয়াজিহাতিল বাতিনিয়্যাহ, পৃ. ১১০)

আসুন, আমরা সিরিয়ার বর্তমান বনুকাল্ব গোত্রের কুরায়শি শাসক বাশার আল আসাদ শিয়া আকিদার যে নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, তাদের আকিদাগত দিকে একটু দৃষ্টি দেই এবং বুঝতে চেষ্টা করি তারা কি আদৌ ইসলামের গণ্ডির ভিতরে আছে কিনা।

তাদের সম্পর্কে জানার জন্য “আল-হাফতুশ শরিফ” কিতাবখানা পড়ুন, যা তাদের বর্তমান যুগের আলেমদের ব্যাপক সম্পাদনা, পর্যালোচনা ও নিরীক্ষার পর মুদ্রিত।তাদের পবিত্র কিতাব “আল-হাফতুশ শরিফ” থেকে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করছি, যা থেকে তাদের পথভ্রষ্টতার ধারণা হবে:

১। “হুসাইন যখন ইরাকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল, তখন আল্লাহ তার শরীরে অন্তরীণ(লক্ষ্য করুন হুসাইনের শরীরে অন্তরীণ আল্লাহ জিবরীলকে ভাই বলে সম্বোধন করছে!) হলেন। তিনি যেখানে অবতরণ করেছেন, জিবরীল সেখানে তার নিকট এসেছে ও কথা বলেছে। যখন যুদ্ধের দিন উপস্থিত হল, বিরোধী সৈন্য তাকে ঘিরে ধরল, ঘোড়াগুলো সারিবদ্ধ দাঁড়াল ও যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল, তখন আমাদের মাওলা হুসাইন জিবরীলকে ডেকে বলেন: হে ভাই! আমি কে? তিনি বললেন: আপনি আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরজাগ্রত, জীবন-মৃত্যুর মালিক। আপনি আসমানকে নির্দেশ করেন, ফলে সে আপনার আনুগত্য করে। আপনার নির্দেশে জমিন স্থির দাঁড়ায়, পাহাড় আপনার ডাকে সাড়া দেয়, সমুদ্রসমূহ আপনার আনুগত্যে দ্রুত ছুটে আসে। আপনি সে সত্তা, যার নিকট ষড়যন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্র ও অনিষ্টকারীর অনিষ্ট পৌঁছুতে পারে না”।

২। আল-হাফতুশ শরিফের” গ্রন্থকার অন্যত্র বলেন: জিবরীল উমাইয়্যাদের সেনাপ্রধান সাদ ইবনে ওমরকে লক্ষ্য করে বলেন: “তুমি ধ্বংস হও, তুমি দু’জাহানের রব, পূর্বাপর সকল মাখলুকের রব, আসমান-জমিন ও তার মধ্যবর্তী সবকিছুর স্রষ্টাকে হত্যা করছ? ওমর ইবনে সাদ এ ঘোষণা শোনে ভয়ে কম্পিত হয়”।

৩। “আল-হাফতুশ শরিফের” লেখক ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে গাল-মন্দ করে বলেন:

“তিনি হুসাইনের যুগে পুনর্জন্ম বিধান মতে ভেড়ার আকৃতিতে ছিলেন, আল্লাহ ফিদিয়া হিসেবে হুসাইনকে তা প্রদান করেন। তিনি ওমরকে জবাই করেন, যার নাম ছিল “দালামাহ” বা “আদলামা”। তিনি মুফাদ্দাল থেকে বর্ণনা করেন, সাদেক তাকে বলেছেন: “হে মুফাদ্দাল, যে ভেড়াটি হুসাইনকে ফিদিয়া হিসেবে দেয়া হয়েছিল, তার নাম আদলাম, কুরাইশদের আদলাম। ওমর তখন বৃদ্ধাবস্থায় ভেড়ার আকৃতিতে ছিল”। অতঃপর তিনি বলেন: তার শিং দু’টি কাবার সাথে ঝুলন্ত রয়েছে।“হে মুফাদ্দাল, বায়তুল হারামে ঝুলন্ত শিং দু’টি তুমি দেখনি? আমি বললাম: হ্যাঁ, হে আমার মনিব। তিনি বললেন: শিং দু’টি ভেড়ার, যা হুসাইনকে ফিদিয়া হিসেবে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর সাদেক হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দেখা গেল। আমি বললাম: হে আমার মাওলা, হাসলেন কেন? তিনি বললেন: হে মুফাদ্দাল, মানুষেরা যখন হজের মৌসুমে মক্কায় সমবেত হয়, তারা ভেড়ার শিং দু’টি উৎসুক হয়ে দেখে, তারা ভাবে এগুলো জান্নাত থেকে এসেছে, তাই আশ্চর্যের দৃষ্টিতে তার প্রতি তাকায়। আর আমরা সেদিকে তাকাই এ হিসেবে যে, এ শিং দু’টি “দালামার”। বস্তু একই, মানুষেরা আশ্চর্য হয় এক হিসেবে, আমরা আশ্চর্য হই অন্য হিসেবে”।--“আল-হাফতুশ শরিফ”: (৯৪)

৪। খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের ন্যায় এক সত্তা তিন সত্তার মধ্যে দেহধারণ করার মতবাদ নুসাইরিদের ধর্মে রয়েছে। তারা মনে করে এ তিন সত্তা মূলত এক সত্তা ও চিরস্থায়ী।নুসাইরিদের তিন সত্তার নীতি খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের সমতুল্য। তারা তিন সত্তার জন্য তিনটি শব্দ ব্যবহার করে, যথা: (ع.م.س) তারা বলে: এ তিন সত্তার মধ্যে আল্লাহ দেহধারণ করেছেন। এক. আলি, তার জন্য তারা (المعنى) শব্দ ব্যবহার করে। দুই. মুহাম্মদ, তার জন্য তারা (الاسم) শব্দ ব্যবহার করে। তিন. সালমান, তার জন্য তারা (الباب) শব্দ ব্যবহার করে।

(হাসান ইবরাহীম হাসান, “তারিখুল ইসলাম, আস-সিয়াসি, ওয়াদ দীনি, ওয়াস সাকাফি, ওয়াল ইজতেমায়ি”: (পৃ.৪/২৬৫, ২৬৭), দেখুন: আল-আলাবিউন: (পৃ.৫৪,৫৫))
৫। তাদের আকিদা মতে আলির মধ্যে আল্লাহ প্রবেশ করেছেন, আর আলি মুহাম্মদকে নবী হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা কুফরির শেষ প্রান্তে পৌঁছে বলেছে: আলি মুহাম্মদকে সৃষ্টি করেছে, মুহাম্মদ সৃষ্টি করেছে সালমান ফারসিকে, সালমান ফারসি সৃষ্টি করেছে পঞ্চ ইয়াতীমকে, যাদের হাতে আসমান-জমিনের নিয়ন্ত্রণ। তারা হলেন:

o মিকদাদ: তিনি মানুষের রব ও সৃষ্টিকর্তা। তার দায়িত্বে রয়েছে বিদ্যুৎ চমক, মেঘের গর্জন ও ভূমিকম্প।
o আবুদ দার: (আবুযর গিফারী), তিনি নক্ষত্র ও তারকারাজির কক্ষপথসমূহ নিয়ন্ত্রণ করেন।
o আব্দুল্লাহ ইব্‌ন রাওয়াহা আল-আনসারী: তিনি বাতাসের নিয়ন্ত্রক ও মানুষের রূহ কব্জাকারী।
o উসমান ইব্‌ন মায‘উন: তিনি শরীরের জ্বর, পেট ও মানুষিক রোগ নিয়ন্ত্রণকারী।
o কুন্বর ইব্‌ন কাদান: তিনি মানুষের শরীরে রূহ সঞ্চারকারী।

৬। এসব আকিদা লালন করে তারা নিজেদের অগ্নিপূজারী প্রমাণ দেয়, তারা ইসলামের নাম ব্যতীত কিছুই গ্রহণ করে নি। এসব আকিদা কুফরির চূড়ান্ত পর্যায়ের আকিদা, এর যে কোনো একটিই আল্লাহর দীন থেকে বের করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। “তায়েফাতুন নুসাইরিয়্যাহ”: (পৃ.৪৭)

৭। আলি মৃত্যুবরণ করে অর্থাৎ তাদের ভাষায় মানবীয় পোশাক ত্যাগ করে কোথায় প্রবেশ করেছেন, এ নিয়ে তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে: কেউ বলে: তিনি চাঁদে প্রবেশ করেছেন, তাই তারা ইবাদতের সময় তার দিকে মুখ করে, বরং চাঁদ নিজেই আলি। তাদেরকে শিমালিয়্যাহ বলা হয়।কেউ বলে: তিনি সূর্যে প্রবেশ করেছেন, তাই তারা ইবাদতের সময় তার দিকে মুখ করে, বরং সূর্য নিজেই আলি। তাদেরকে কালাযিয়াহ বলা হয়। “আল-আলাবি”: (পৃ.৫৭)

৮। নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের আকিদার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় পুনর্জন্মে বিশ্বাস করা। তারা এ বিশ্বাসের অন্তরালে কিয়ামত, পরকাল, প্রতিদান ও হিসান-নিকাশ অস্বীকার করে। আল্লামা নওবখতি পুনর্জন্মে বিশ্বাসীদের নিকট তার অর্থের বর্ণনা দিয়ে বলেন: “পুনর্জন্মে বিশ্বাসীরা এ দুনিয়ায় বারবার জন্ম নেয়ার আকিদা পোষণ করে, তাদের নিকট কিয়ামত, পুনরুত্থান ও হিসাব বলতে কিছু নেই। দুনিয়া ব্যতীত অন্য কোনো জগত নেই। কিয়ামত হচ্ছে রূহের শরীর থেকে শরীরে স্থানান্তর হওয়া। ব্যতিক্রম শুধু ভালো হলে ভালো, আর খারাপ হলে খারাপ শরীরে প্রস্থান করা। তারা পার্থিব শরীরেই নিয়ামত ভোগ করে বা শাস্তি পায়। তাদের নিকট শরীরই জান্নাত বা জাহান্নাম। তারা সুন্দর, সুখী ও ভালো শরীরে প্রস্থান করে শান্তি পায়; আর কুৎসিত, দুঃখী ও খারাপ শরীরে প্রস্থান করে শাস্তি ভোগ করে, যেমন কুকুর, শূকর, সাপ, বিচ্ছু ও গুবরেপোকা। তারা এক শরীর থেকে অপর শরীরে প্রস্থান করে শাস্তি ভোগ করে। এভাবে চিরজীবন শরীরই তাদের জান্নাত বা জাহান্নাম, এ ছাড়া কিয়ামত, পুনরুত্থান, জান্নাত, জাহান্নাম বলতে কিছু নেই। নেক আমল, বদ আমল, ইমামদের অস্বীকার করা ও গুনাহের পরিমাণ বিচারে রূহসমূহের পরবর্তী শরীর নির্ধারিত হয়”।“ফেরাকুশ শিয়াহ”: (৫৭, ৫৮)

৯। নুসাইরিদের বিশ্বাস অনুযায়ী পুনর্জন্মের চারস্তর। তাদের তথাকথিত ঈমান থেকে কাছে বা দূরে অবস্থানজনিত ত্রুটি, ইমামদের আনুগত্য ও নাফরমানির উপর ভিত্তি করে প্রতিটি স্তর নির্ধারিত হয়। চারটি স্তর: নাসখ, মাসখ, ফাসখ ও রাসখ।
§ নাসখ: অর্থাৎ এক ব্যক্তির শরীর থেকে অপর ব্যক্তির শরীরে রূহের প্রস্থান করা।
§ মাসখ: অর্থাৎ মানুষের শরীর থেকে জানোয়ারের শরীরে রূহের প্রস্থান করা।
§ ফাসখ: অর্থাৎ মানুষের শরীর থেকে জমিনে বিচরণকারী কীটপতঙ্গ ও বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের শরীরে রূহের প্রস্থান করা।
§ রাসখ: অর্থাৎ মানুষের শরীর থেকে গাছ-পালা, উদ্ভিদ ও জড়বস্তুর দেহে রূহের প্রস্থান করা।দেখুন: “তায়েফাতুন নুসাইরিয়া”: (পৃ.৮৮)

ড. আব্দুর রহমান বাদাবি লিখেছেন, ছোট্ট এক বইয়ে নুসাইরিদের আকিদা ও মৌলিক শিক্ষা পাওয়া যায়, যার শিরোনাম: (كتاب تعليم ديانة النصيرية) এ কিতাবটি হস্তাক্ষরে লেখা প্যারিসের স্থানীয় লাইব্রেরীতে রয়েছে, [নাম্বার:৬১৮২]। এ বইটি প্রশ্নোত্তর আকারে। তাতে একশ একটি প্রশ্নোত্তর রয়েছে। নমুনাস্বরূপ এখানে কয়েকটি উদ্ধৃত করছি:

প্রশ্ন: আমাদের কে সৃষ্টি করেছে?
উত্তর: আমিরুল মুমেনিন আলি ইব্‌ন আবু তালিব।

প্রশ্ন: কিভাবে জান আলি আমাদের ইলাহ?
উত্তর: মিম্বারে দাঁড়িয়ে তার দেয়া বক্তব্য খুতবাতুল বয়ানে থেকেই জানি তিনি ইলাহ, তিনি সেখানে বলেছেন: “আমি সকল রহস্যের রহস্য, আমি নূরের বৃক্ষ... আমি প্রথম ও আমি শেষ। আমি বাতেন, আমি জাহির”...।

প্রশ্ন: আমাদের মাওলা আমিরুল মুমেনিনের বিভিন্ন ভাষায় কি কি নাম রয়েছে?
উত্তর: আরবদের নিকট তার নাম আলি। তিনি নিজের নাম রেখেছেন আরাস্তুতালিস। ইঞ্জিলে তার নাম ইলিয়া (ইলিয়াস), যার অর্থ আলি, হিন্দুরা তাকে বলে ইব্‌ন কানকারাহ...

প্রশ্ন: আমাদের মাওলাকে আমরা কেন আমিরুন নাহাল বলি?
উত্তর: সত্যিকার মুমিনগণ নাহালের মত, যারা সবচেয়ে সুন্দর ফুল থেকে মধু আহরণ করে, এ জন্য তাকে আমিরুন নাহাল বলা হয়।

প্রশ্ন: পৃথিবীর ছোট জগতে ‘নুজাবা’দের নাম কি?
উত্তর: পঁচিশটি নাম রয়েছে প্রথমটি আবু আইয়ূব, সর্বশেষ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন সাবা।

প্রশ্ন: কুরআন কি?
উত্তর: আমাদের মাওলার মানব আকৃতিতে বিকশিত হওয়ার সুসংবাদ

প্রশ্ন: আমাদের সত্যিকার ভাইদের নিদর্শন কি?
উত্তর: ع.م.س.

প্রশ্ন: নাওরোজের দোয়া কি?
উত্তর: মদের পাত্রকে সম্মান করা।

প্রশ্ন: পবিত্র মদের নাম কি, যা মুমিনগণ পান করবে?
উত্তর: আব্দুন নূর।

প্রশ্ন: কেন?
উত্তর: কারণ আল্লাহ তাতে বিকশিত হন।

প্রশ্ন: মুমিনগণ কেন সালাতের সময় সূর্যের দিকে মুখ করে?
উত্তর: কারণ সূর্য সকল নূরের নূর।

উক্ত কিতাবে একশ একটি প্রশ্ন রয়েছে, আব্দুল হুসাইন আল-আসকারি তার “আল-আলাবিউন” গ্রন্থে সবক’টি প্রশ্নোত্তর উল্লেখ করেছেন। তার শিক্ষার সারাংশ হচ্ছে: আলি ইব্‌ন আবু তালিবের প্রভুত্ব ও উলুহিয়্যাত, পুনর্জন্ম ও মানুষের দেহে আল্লাহর প্রবেশ করার আকিদা, মদকে সম্মান করা, তারা যার নাম দিয়েছে আব্দুন নূর, কারণ আল্লাহ তাতে প্রবেশ করেন, নাসারা ও অগ্নিপূজকদের উৎসবগুলোকে সম্মান করা, তারকাদের সম্মান করা ও তাদের উপর ভরসা করা, সূর্যের ইবাদত করা, তাদের অগ্নিপূজা মূর্তিপূজা শিক্ষার রহস্য গোপন করার নানা উপদেশ।“আল-আলাবিউন”: (৯৬), ড. বদাওয়ি লিখিত: “মাজাহেবুল ইসলামিয়্যিন” থেকে সংকলিত: (২/৪৭৪-৪৮৭)

নুসাইরিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার ঈদ-উৎসব পালন করে, যেমন ঈদুল গাদির, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আদহা, ঈদুল আশুরা, মোবাহালার দিন ঈদুল গাদিরিস সানি, ঈদুন নওরোজ, ঈদুল মেহেরজান, ঈদুস সালিব, ঈদুল গাত্তাস, ঈদুস সা‘ফ, ঈদুল উনসুরাহ, ঈদুল কাদিসাহ সেন্ট বারবারা ও ঈদুল মিলাদ ইত্যাদি। তাদের আরো ঈদ রয়েছে। তাদের এসব ঈদ মুসলিম, খ্রিস্টান ও মূর্তিপূজক সবার থেকে সংগৃহীত।ড. হালবি রচিত “তায়েফাতুন নুসাইরিয়াহ”: (পৃ.৭১) গ্রন্থে আরো ঈদের উল্লেখ রয়েছে।

যেসব মুসলিম মনীষী নুসাইরিদের সংস্কার ও তাদেরকে ইসলামে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন, তাদের ক’জন নিম্নরূপ:

সালাহ উদ্দিন আইয়ূবি রাহিমাহুল্লাহঃ তিনি ক্রুসেডদের তাড়িয়ে মসজিদ নির্মাণ করেন, সেখানে নুসাইরিদের সালাত আদায়, সিয়াম পালন ও অন্যান্য ইসলামি আমলগুলো সম্পাদনের নির্দেশ দেন। এ কারণে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা তার অনুসরণ করে, কিন্তু তার মৃত্যুর পর সবত্যাগ করে ও মসজিদগুলো জীব-জন্তুর আস্তাবল বানায়।

জাহের বাবরসঃ তিনি তাতারিদের হটিয়ে নুসাইরিদের গ্রামে গ্রামে মসজিদ নির্মাণ করেন ও তাতে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন। তারা গ্রাম থেকে দূরে মসজিদ নির্মাণ করে পরিত্যক্ত ফেলে রাখে। অনেক সময় কোন পথিক তার পাশ দিয়ে যাতায়াতের সময় যখন আযান দিত, তারা বলত: উটের ন্যায় আওয়াজ কর না, কিছুক্ষণ পরই তোমার ঘাস চলে আসছে। পর্যটক ইব্‌ন বতুতা এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

উসমানি খলিফা সালিমঃ তিনি নুসাইরি এলাকায় মসজিদ নির্মাণসহ অনেক সংস্কারমূলক কাজ করেছেন, কিন্তু তার পরে তারা পূর্বের অবস্থানে ফিরে যায়।

মিসরের গভর্নর ইবরাহিম পাশা ইব্‌ন মুহাম্মদ আলি পাশাঃ তিনি নুসাইরিদের বাতিল আকিদা-বিশ্বাস থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য সংস্কারমূলক অনেক কাজ করেন, কিন্তু যখনি তারা নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ও শক্তিশালী দেখেছে, পশ্চাতে ফিরে গেছে।

উসমানি সুলতান আব্দুল হামিদঃ তিনি নিজের বিশেষ ব্যক্তি জিয়া পাশাকে বারবার প্রেরণ করে নুসাইরিদের হিদায়েতের চেষ্টা করেন ও তাকে লাটাকিয়া অঞ্চলের গভর্নর নিযুক্ত করেন। তিনি তাদের জন্য মসজিদ নির্মাণ ও মাদ্রাসা তৈরি করেন, ফলে তারা ইলম হাসিল, সালাত আদায় ও সিয়াম পালন করা আরম্ভ করে, তারা খলিফাকে বুঝায় যে, তারা মুসলিম। তারা খলিফার কোনো নির্দেশ অমান্য করে নি, কিন্তু যখন সে ক্ষমতা ত্যাগ করে তারা মাদ্রাসাসমূহ ধ্বংস করে ও মসজিদগুলো জ্বালিয়ে নাপাক করে দেয়।দেখুন: ইব্‌ন বতুতা রচিত: (تحفة الأنظار في غرائب الأمصار وعجائب الأسفار) (পৃ.৬৫), সম্পাদনায়: আহমদ আল-আওয়ামেরি ও মুহাম্মদ আহমদ যাদুল মাওলা, প্রকাশের স্থান: কায়রো। আরো দেখুন: মুহাম্মদ কুরদ আলি রচিত: (خطط الشام) (/২৬০, ২৬৩) ও (৩/১০৫), الحركات الباطنية في العالم الإسلامي (পৃ.৩৩২, ৩৩৩), দেখুন: “তায়েফাতুন নুসাইরিয়াহ”: (পৃ.৬৫)

শায়খুল ইসলাম ইব্‌ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহঃ নুসাইরিদের হিদায়েতের জন্য অনেক আলোচনা ও যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুসলিমদের নিয়ে “জাবালে কাসরাওয়ান” নামক স্থানে তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন ও তাদের শহর দখল করেন। অতঃপর সুলতানকে লিখে পাঠান যে, তাদের পণ্ডিতদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, যারা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করছে। তাদের এলাকায় ইসলামের বিধান কায়েম করুন ও সুন্নতের ব্যাপক প্রচার করুন।মারয়ি আল-কারমি রচিত: (الكواكب الدرية) (পৃ.৯৭ ও্র ১২৬), এবং ইব্‌ন আব্দুল হাদি রচিত: (العقود الدرية) (পৃ.১৯৭)


আব্দুল্লাহ ইবনে হাওয়ালাহ (রাঃ) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, যে উনি বলেছেনঃ

“পরিস্থিতি তার কাজের ধারা অনুযায়ী চলতে থাকবে যতক্ষণ না তোমরা তিনটি বাহিনীতে পরিণত হওঃ একটি বাহিনী সিরিয়ার, একটি বাহিনী ইয়েমেনের আর আরেকটি ইরাকের”।

ইবন হাওয়ালাহ (রাঃ) বললেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি সেই দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি তবে আমার জন্য একটি বাহিনী নির্ধারন করে দিন’।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন,

“তোমার সিরিয়া যাওয়া উচিত হবে কারন এটি আল্লাহর ভূমিদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম, এবং উনার শ্রেষ্ঠ বান্দারাই সেখানে জড়ো হবে! এবং যদি তুমি তা না চাও তবে তোমার ইয়েমেনে যাওয়া উচিত এবং সেখানকার কূপ থেকে পানি পান করা উচিত। কারন আল্লাহ আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে, উনি সিরিয়া এবং তার মানুষের উপর খেয়াল রাখবেন”!

(ইমাম আহমেদ ৪/১১০, আবু দাউদ ২৪৮৩)

এই হাদিসের প্রথম লাইনের বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। আজ এই মুহূর্তে এই তিন ভূখণ্ডে এরকম তিনটি বাহিনী অবস্থান নিয়েছে।
ইতিমধ্যে “ইরাকঃ ইমাম মাহদির হাতে বাইয়াত ও যুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে হাদিস ও সেখানে দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের বর্তমান কার্যক্রম” লিখাতে ইরাকের বাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এবং সিরিয়ার বর্তমান যুদ্ধরত বাহিনীর সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে। ইনশাল্লাহ “ইয়েমেনঃ ইমাম মাহদির আগমনের পূর্বে ও পরে যুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে হাদিস ও সেখানে দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের বর্তমান কার্যক্রম” এ ইয়েমেনের বাহিনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে ।
“তোমার সিরিয়া যাওয়া উচিত হবে কারন এটি আল্লাহর ভূমিদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম, এবং উনার শ্রেষ্ঠ বান্দারাই সেখানে জড়ো হবে!” – হাদিসের এই লাইনটি যেন এখন অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ইসলামের ১৪০০+ বছরের ইতিহাসে যেমন এই প্রথম সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রের কোন শাসক আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, একই ভাবে এর বিপরীতে উম্মতের শ্রেষ্ঠ বান্দারা সেখানে পবিত্র দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসছে। আর এদের একটা বড় অংশ ইউরোপিয়ান ধর্মান্তরিত আল্লাহর সরাসরি পছন্দ করা বান্দারা। এই সব ইউরোপিয়ান দেশসমূহের মধ্যে ফ্রান্স, জার্মানি, ইউ কে, বেলজিয়াম, স্পেন, ডেনমার্ক, বসনিয়া, অষ্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, ইতালি, সুইডেন উল্লেখযোগ্য (ওয়াশিংটন পোস্ট, ২৭ শে নভেম্বর ২০১৩)। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যে তাদের যুদ্ধরত নাগরিকদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। ১৮ ই মে, ২০১৩ তে প্রেস টিভিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাশার আল আসাদ ২৯ টি দেশের বিদেশি যোদ্ধার কথা দাবী করে। আর তার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ২রা অক্টোবর ২০১৩ তে জাতিসংঘের অধিবেশনে ৮২ টি দেশের কথা দাবী করে। এমনকি ইসরাইলের গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল আভিভ কোচাভি ২৪ শে জুলাই ২০১৩ সালে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এর নতুন অফিসারদের গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে বলতে বাধ্য হয়ঃ “Right before our eyes a center of global jihad is developing on a scale that may affect not only Syria and the borders of the state of Israel, but also Lebanon, Jordan, and Sinai. ”
সিরিয়াতে বনু কাল্ব গোত্রের শাসক আসাদ বিরোধী যোদ্ধারা মূলত দুই ধরনের।
একঃ জাতীয়তাবাদী, যারা আসাদের অপসারণের পরে নতুন এক গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের স্বপ্ন দেখে।
দুইঃ ইসলামপন্থী, যারা একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক খেলাফতের স্বপ্ন দেখে।
সিরিয়ার যে যোদ্ধারা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছেন, তাদের প্রতি বাংলাদেশের অনেক ভাইদের ভুল ধারনা আছে। সবাই মনে করছেন তারা আমেরিকার সাথে যুক্ত বা তাদের জন্য কাজ করছেন।
এটা ঠিক যে বাশারের বিপক্ষে এই যুদ্ধের প্রথম দিকে বিদ্রোহীরা কি চায় বা তারা একই উদ্দেশ্য নিয়ে এগোচ্ছে কিনা সেটা বুঝা যায় নি। কিন্তু কয়েকদিন যেতে ব্যাপার গুলো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে - আসলে সিরিয়ার সব বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথম ভাগের গ্রুপগুলো যারা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এদের মাঝে সবচেয়ে বড় ব্রিগেডের নাম হচ্ছে জাহাবাত আল-নুসরাহ। এছাড়াও আনসার-খিলাফাহ , আল-মুহাজিরিন ইত্যাদি বড় ছোট অনেক গ্রুপই আছে।
দ্বিতীয় ভাগে আছে তার বাশারের পতন চায় কিন্তু তারা সেক্যুলার রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে চায়।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে যখন আমেরিকা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সাহায্য করছে -এমন খবর ছাপে তখন অনেকে ধরেই নেনে যে এই সাহায্য সকলকে করা হচ্ছে।
এর মাঝে গত ৩০ শে মে ২০১৩ তে জাহাবাত আল-নুসরাহকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ "আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী" হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে।

কিন্তু আমেরিকা এই সব সাহায্য সেক্যুলার বিদ্রোহীদের করে আসছে প্রথম থেকেই এবং এই সাহয্যের সাথে প্রথম গ্রুপের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা সবাই জানি আমেরিকা তার সাম্রাজ্যবাদকে প্রচার করার অন্যতম মোক্ষম অস্ত্র হল মিডিয়া। এই মিডিয়ার মাধ্যমে তারা খবরগুলোকে তিল কে তাল হিসেবে উপস্থাপন করে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরাও সেগুলো অকপটে বিশ্বাস করেন। যারা ইসলামের পুনর্জাগরনকে আটকাতে শত বছর ধরে পরিকল্পনা করছে তারাই ইসলামের বিপ্লব কে সাপোর্ট দিবে এই চিন্তা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কজরতে পারে না।
দেখুন অস্ত্র সাহয্যের ব্যাপারে নিউ ইয়র্ক টাইমস অনেক আগেই বলেছেঃ
“The New York Times confirmed: “The weapons’ distribution has been principally to armed groups viewed as nationalist and secular, and appears to have been intended to bypass the jihadist groups whose roles in the war have alarmed Western and regional powers."
আল্লাহ মুমিনদেরকে যে কোন ধরনের ধোঁকা থেকে রক্ষা করুন।
উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,

“জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি হবে। তখন মদিনার একজন লোক পালিয়ে মক্কা চলে আসবে (এই আশঙ্কায় যে, পাছে মানুষ আমাকে খলীফার পদে অধিষ্ঠিত করে কিনা)। মক্কার লোকেরা তাঁকে খুঁজে বের করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুকুন এবং মাকামে ইব্রাহিমের মাঝামাঝি স্থানে বাইয়াত গ্রহণ করবে।
বাইয়াতের খবর শুনে সিরিয়ার দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে। মক্কা মদিনার মাঝামাঝি বায়দা নামক স্থানে এসে পৌঁছানোর পর এই বাহিনীটিকে ভূগর্ভে ধসিয়ে দেওয়া হবে। বাহিনী ধ্বসের সংবাদ শুনে সিরিয়ার ‘আবদাল’ (শ্রেষ্ঠ মুসলমানগণ) ও ইরাকের ‘আসাইব’ (সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ) মক্কায় এসে তাঁর (ইমাম মাহদির) নিকট বাইয়াত হবে। অতঃপর সিরিয়ার বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। সিরিয়ার দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে পরাস্ত করবেন, যার ফলে তাদের উপর বিপদ নেমে আসবে। এটিই হল ‘কালবের যুদ্ধ’। যে ব্যক্তি কালবের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে, সে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে। তাঁরপর তিনি ধনভাণ্ডার খুলে দেবেন, মাল দৌলত বণ্টন করবেন এবং ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন। এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে সাত বছর কিংবা (বলেছেন) নয় বছর”।

(আল মু’জামুল আওসাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস ৬৯৪০; ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬৭৫৭; আল মু’জামুল কাবীর, হাদিস ৯৩১)

যদিও সে সিরিয়ার শাসক হবে তারপরেও সে হক্কপন্থিদের সাথে মোকাবিলা করতে করতে সংঘাতের ঘটনা পরিক্রমায় ইরাকের কুফাতে এসে হাজির হবে।

উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,

“বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী শাসক সিরিয়াতে আত্মপ্রকাশ করবে। তার পর সে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা করবে। সে সময় মদিনা আক্রমণের জন্য সে একটি বাহিনী প্রেরণ করবে। তারা আল্লাহপাকের ইচ্ছানুপাতে যুদ্ধ করবে। এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানটিকে পর্যন্ত সে হত্যা করবে। এই গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফাতেমার কিংবা বলেছেন আলীর বংশের এক আশ্রয় গ্রহণকারী (ইমাম মাহদি) হারামে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তখন তাকে ধরার জন্য উক্ত বাহিনী তার কাছে ছুটে যাবে। বাহিনীটি বায়দা নামক স্থানে উপনীত হওয়ার পর তাদের ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। শুধু সেই লোকটি রক্ষা পাবে, যে মানুষকে সতর্ক করে বেড়াবে”।

(ইলাল, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪২৫)

হযরত আলী (রাঃ) বলেন,

“সুফিয়ানি সিরিয়াতে ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে। এরপরে তার বাহিনীর সাথে পেছন থেকে (তুরস্ক থেকে) আসা বাহিনীর সাথে ‘কিরকিসিয়্যা’তে এমন যুদ্ধ হবে যে যুদ্ধের ধ্বংস হওয়া (মৃত বা আহত) লোকদের জন্য আকাশ পাখিতে ভরে যাবে আর জমিনের হিংস্র পশুরা একত্রিত হবে। এরপর তাদের থেকে একটি বাহিনী বের হবে যতক্ষণ না তারা খোরাসান পর্যন্ত না পৌঁছে। এরপরে সুফিয়ানির বাহিনী খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে এবং কুফাতে রাসুলের বংশীয়দেরকে হত্যা করবে। তখন খোরাসানবাসিরা ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের জন্য খুব আশা করতে থাকবে”।

(নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ, আল ফিতানঃ ৬৪)

কিরকিসিয়্যা হল বর্তমান সিরিয়ায় ফোরাত নদীর উপকুলে বুসায়রা নগরীর নিকটবর্তী একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন শহর।


হযরত আরতাত (রাঃ) বলেন,

“সুফিয়ানি কুফায় প্রবেশ করবে। তিনদিন পর্যন্ত সে দুশমনদের বন্দীদেরকে সেখানে আটকে রাখবে এবং সত্তর হাজার কুফাবাসীকে হত্যা করে ফেলবে। তারপর সে আঠার দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তাদের (কুফাবাসীদের) সম্পদগুলো বণ্টন করবে। সুফিয়ানির কুফায় প্রবেশ করার ঘটনাটি তুরস্ক ও পশ্চিমাদের সাথে ‘কিরকিসিয়্যা’ এর ময়দানে যুদ্ধের পর ঘটবে। তাদের মধ্যে একদল খোরাসানে ফেরত যাবে। সুফিয়ানির সৈন্যবাহিনী আসবে এবং কুফার বিল্ডিংগুলো ধ্বংস করে সে খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে। খোরাসানের একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, যারা ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে। এরপর সুফিয়ানি মদিনার দিকে সৈন্য পাঠিয়ে রাসুলের বংশীয় লোকদেরকে বন্দী করবে। বন্দীদের কুফায় নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর মাহদি ও মানসুর (একজন সেনাপতি) উভয়ে উভয়ে কুফা থেকে পলায়ন করবে। সুফিয়ানি উভয়ের তালাশে সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর যখন মাহদি ও মানসুর মক্কায় পৌঁছে যাবে, তখন সুফিয়ানির বাহিনীকে ‘বায়দা’ নামক স্থানে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মাহদি মক্কা থেকে বের হয়ে মদিনায় যাবেন এবং ওখানে বনু হাশেমকে মুক্ত করবেন। এমন সময় কালো পতাকাবাহী লোকেরা এসে পানির উপর অবস্থান করবে। কুফায় অবস্থিত সুফিয়ানির লোকেরা কালো পতাকাবাহী দলের আগমনের কথা শুনে পলায়ন করবে। কুফার সম্মানিত লোকেরা বের হবে যাদেরকে ‘আসহাব’ বলা হয়ে থাকে, তাদের কাছে কিছু অস্ত্র শস্ত্রও থাকবে এবং তাদের মধ্যে বসরা’বাসীদের থেকে একজন লোক থাকবে। অতঃপর কুফাবাসী সুফিয়ানির লোকদেরকে ধরে ফেলবে এবং কুফার যে সব লোক তাদের হাতে থাকবে, তাদেরকে মুক্ত করবে। পরিশেষে কালো পতাকাবাহী দল এসে মাহদির হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে”।

(আল ফিতানঃ ৮৫০, মুহাক্কিক আহমদ ইবনে সুয়াইব এই হাদিসটির সনদকে ‘লাবাসা বিহা’ বা ‘বর্ণনাটি গ্রহণ করা যেতে পারে’ বলেছেন)

হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

“সুফিয়ানির ঘোড়াগুলো (সৈন্যবাহিনী) কুফায় প্রবেশ করবে। সে তার সৈন্যদেরকে খোরাসানবাসীদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করবে। খোরাসানবাসীরা লোকদেরকে ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে (ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের পূর্বে)। তখন সে (সুফিয়ানি) কালো পতাকাবাহী একদল হাশেমীদের মুখোমুখি হবে যার স্মমুখভাগের নেতৃত্ব দিবে শুহাইব বিন সালেহ। সে সুফিয়ানির বাহিনীকে ‘ইস্তাখর এর ফটকে’ ব্যস্ত রাখবে। এই দুই বাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হবে এবং কালো পতাকাবাহী বাহিনী জয়লাভ করবে। কিন্তু সুফিয়ানির ঘোড়াগুলো (সৈন্যবাহিনী) পলায়ন করবে। এটাই হবে সেই সময় যখন লোকজন ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের জন্য খুব আশা করতে থাকবে কারণ, তাঁকে (ইমাম মাহদিকে) তাদের প্রয়োজন”।
(নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ, আল ফিতান)

‘ইস্তাখর’ বর্তমানে ইরানের সিস্তান প্রদেশের অন্তর্গত একটি পরিত্যাক্ত ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত শহর। যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের অন্তর্গত।

আরেক বর্ণনায় আছে,

“কুফার অধিবাসীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এক ভাগ বনুকাল্ব গোত্রের সিরীয় শাসকের সাথে যোগ দিবে। এরা আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি হিসাবে বিবেচিত হবে। একভাগ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তারা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা হিসাবে বিবেচিত হবে। আর তৃতীয় ভাগ এই যুদ্ধকালীন সময়ে লুঠতরাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে এবং তারা পাপী হিসাবে বিবেচিত হবে”।

(আন নাজমুস সাকিব ফি বাইয়ানি আন্নাল মাহদি মিন আবদাল আলী বিন আবু তালিব)

কুফা শহরটি ইরাকের বাগদাদ নগরীর ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিনে এবং নাজাফের ১০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে অবস্থিত। এটির অবস্থান ফোরাত নদীর তীরে। নাজাফ, সামারা, কারবালা, কাদিমিয়া এবং নাজাফের মতোই কুফা শিয়া আকিদায় বিশ্বাসী প্রধান একটি নগরী।
রয়টার্সের অন লাইন সংস্করণ http://www.reuters.com এ গত ১৬ ই অক্টোবর ২০১২ তারিখের প্রতিবেদন Iraqi Shi'ite militants fight for Syria's Assad এ ইরাকের এই সব শিয়া আকিদায় বিশ্বাসী প্রধান নগরীগুলো থেকে সিরিয়ায় গিয়ে বনু কালব গোত্রের বর্তমান অত্যাচারী শাসক বাসার আল আসাদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণের খবর নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও ইরান ও লেবাননেরর শিয়া সম্প্রদায় সরাসরি এই যুদ্ধে বনু কালব গোত্রের বর্তমান অত্যাচারী শাসক বাসার আল আসাদের পক্ষ নিয়ে লড়ছে।
অপর বর্ণনায় এসেছে,

“প্রথম বাহিনী বায়দায় ধ্বসে যাওয়ার পর ইমাম মেহেদী মুজাহিদদের নিয়ে সিরিয়ার দিকে এগিয়ে যাবেন, সেখানে অন্য এক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করবেন এবং তাদেরকে পরাজিত করবেন। এই যুদ্ধটি ‘কাল্ব যুদ্ধ’ নামে হাদিসে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই বাহিনীর নেতার উপাধি ‘সুফিয়ানি’ (বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী)। হযরত মেহেদী (আঃ) তারবিয়া হ্রদের কাছে এই শাসককে হত্যা করবেন”।

(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) এর অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“ইমাম মাহদি সিরিয়ায় আসবে এবং সুফিয়ানিকে একটি গাছের নিচে হত্যা করবে, যার ডালপালাগুলো তারবিয়া উপসাগরের দিকে। তারপর সে কাল্ব গোত্রকে হত্যা করবে। যে ব্যাক্তি কাল্ব যুদ্ধের দিন গনিমত থেকে বঞ্চিত থাকবে, সে ক্ষতিগ্রস্থ বলে বিবেচিত হবে। চাই উটের একটি লাগামই ভাগে পাক না কেন”।
(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১১০, আল ফিতান, তাবরানী)

আল ফিতানে একটি আশ্চর্যরকম বর্ণনা এখানে না উল্লেখ করলেই নয়। সেখানে বনু কাল্বের দুই অত্যাচারী শাসকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রথমজন অত্যাচারের চরম মাত্রায় পৌঁছানোর পরে কুফা অধ্যায় শেষ করে মারা যাবে। আর এরপরেই দ্বিতীয়জনের আবির্ভাব হবে যে কিনা ইমাম মাহদির বিরুদ্ধে বাহিনী প্রেরণ করবে।

ইমাম যুহরি বলেছেন,

“সিরিয়ার লোক সুফিয়ানির আনুগত্য মেনে নেবে এবং সে পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে যুদ্ধ করে পরাজিত করবে যতক্ষণ না তারা (সুফিয়ানির বাহিনী) ‘মার্জ আস-সাফার’ (বর্তমান সিরিয়াতে দামেস্কের দক্ষিনে বিশাল সমভূমি) পর্যন্ত পৌঁছে। এরপরে আবার এই দুই বাহিনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে এবং পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে পরাজিত করবে যতক্ষণ না তারা (সুফিয়ানির বাহিনী) ‘মার্জ আস সানিয়্যা’ (বর্তমান সিরিয়াতে দারা প্রদেশের অন্তর্গত আল কারাক শহরের নিকটে একটি জায়গা) পর্যন্ত পৌঁছে। এরপরে তারা আবার যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে পরাজিত করবে যতক্ষণ না তারা (সুফিয়ানির বাহিনী) ‘আল হিস’ (একটি পরিবারের নাম/জায়গার নাম) এর নিকটে পৌঁছে। এরপরে তারা আবার যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে পরাজিত করবে যতক্ষণ না তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন শহর ( সিরিয়ার ‘কিরকিসিয়্যা’) পর্যন্ত পৌঁছে। এরপরে আবার এই দুই বাহিনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে এবং পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে যুদ্ধ করে যতক্ষণ না তারা (সুফিয়ানির বাহিনী) ‘আকার কুফ’ (ইরাকের বাগদাদ প্রদেশের অন্তর্গত একটি স্থান যা বর্তমানে পরিবেশ বিপর্যয়ের স্বীকার ও বসবাসের অযোগ্য) পর্যন্ত পৌঁছে। এরপরে আবার এই দুই বাহিনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে এবং পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে পরাজিত করবে এবং সুফিয়ানি তাদের সকল সম্পদ হস্তগত করবে। এরপরে সুফিয়ানির গলায় একটি ফোঁড়া উঠবে। তখন সে সকালবেলা কুফাতে প্রবেশ করবে আর বিকাল বেলা তার সৈন্যবাহিনীসহ বের হয়ে আসবে এবং সিরিয়াতে প্রবেশ করার পর সে মারা যাবে।

এবার সিরিয়ার লোকরা বনু কাল্বের এক মহিলার পুত্রের আনুগত্য মেনে নেবে যার নাম হবে ‘আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াজিদ ইবনুল কালবিয়্যা, যে কিনা শুষ্ক দৃষ্টি ও রুক্ষ মুখায়ব সম্পন্ন। পূর্বদিকের (খোরাসানবাসীরা) সুফিয়ানির মৃত্যুর খবর শুনে বলবে, ‘সিরিয়ার জনগণের খারাপ দিন শেষ হয়ে গেছে!’ এবং তারা বিদ্রোহ করে বসবে। বনু কাল্বের মহিলার ঐ পুত্র এই খবর শুনবে এবং সে যুদ্ধের জন্য তার বাহিনীকে প্রস্তুত করবে। সে পূর্বদিকের (খোরাসানের) বাহিনীকে পরাজিত করবে যতক্ষণ না তারা ‘কুফা’ পর্যন্ত পৌঁছে। সেখানে সে তার দুশমনদের হত্যা করবে, মহিলা ও সিশুদেরকে বন্দী করবে এবং কুফাতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে। এরপরে সে হিজাজ (মক্কা মদিনা) এ সৈন্যবাহিনী পাঠাবে”।

(নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ, আল ফিতানঃ ৬৪)

আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) বলেছেন,

“মাহদির আগমনের আলামত হচ্ছেঃ টার্কস (বর্তমান রাশিয়া) তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে। তোমাদের শাসক যে কিনা ধন সম্পদের ব্যাপারে মোহাচ্ছন্ন, মারা যাবে। এবং তোমরা তার পরবর্তী শাসক হিসাবে দুর্বল একজনকে নির্বাচন করবে, সুতরাং শাসক হবার দুই বছর পরে তাকে প্রত্যাহার করা হবে। দামেস্ক মসজিদের পশ্চিমের দিকে একটি ধ্বসের ঘটনা ঘটবে। বৃহত্তর সিরিয়াতে তিনজন ব্যক্তির আবির্ভাব হবে। পশ্চিম দিক থেকে মিশরে আক্রমণ হবে। এটাই সুফিয়ানির আবির্ভাবের শুরু”।

(নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ, আল ফিতান)


ইবনে মাসুদ (রাঃ) বলেছেন,

“যদি জাজিরাতুল আরব ও আজারবাইজানে টার্কস ও খাজার (বর্তমান রাশিয়া ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা)-দের আবির্ভাব হয় এবং আমাক (উত্তর সিরিয়ার একটি এলাকা) ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাতে রোমানরা (খ্রিস্টানরা) এসে পৌঁছে, রোমানরা (খ্রিস্টানরা) কানসারিনে (উত্তর সিরিয়ায় আলেপ্পো প্রদেশের অন্তর্গত একটি এলাকা) বনু কায়েশের এক ব্যক্তির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। সুফিয়ানি ইরাকে পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে আগতদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। প্রতিটি পার্শ্বই শত্রু দিয়ে ঘেরা। সুফিয়ানি চল্লিশ দিন পর্যন্ত যুদ্ধ করার পর কারও কাছ থেকে (কোন মুসলিম ভূখণ্ড থেকে) কোন সাহায্য না পেয়ে রোমানদের সাথে এই মতৈক্যে পৌঁছাবে যে কোন পক্ষই জয়লাভ করলো না”।

(নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ, আল ফিতান)

২০১৩ সালের আগস্টে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের পর যুক্তরাষ্ট্র (আধুনিক রোমানদের প্রতিনিধি ভূখণ্ড) যখন সিরিয়া আক্রমণ করতে চেয়েছিল তখন রাশিয়া জাজিরাতুল আরবের কেন্দ্র বিন্দু সৌদি আরব আক্রমণের ঘোষণা দিয়েছিল। আর ন্যাটো (আধুনিক রোমানদের অগ্রগামী বাহিনী) ইতিমধ্যেই তুরস্কে উপস্থিত আছে ২০১৩ এর মাঝামাঝি সময় থেকে। অর্থাৎ এক পর্যায়ে এটি ত্রিমুখী যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। আর হাদিসেও সেটারই ইঙ্গিত এসেছে।

উপরের বর্ণনা মোতাবেক বোঝা যাচ্ছে, সিরিয়ার চলমান এই সংঘাত ধীরে ধীরে ছড়াবে এবং ধীরে ধীরে অনেক ভূখণ্ড অংশগ্রহণে বাধ্য হবে এবং পরিস্থিতি ধীরে ধীরে চূড়ান্ত ঘটনার দিকে যাবে।

যদিও পশ্চিমা মিডিয়া ও একশ্রেণীর অতি সমঝদার মুসলিম নামধারী বিশ্লেষক যারা ইসলামের ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে জ্ঞানশূন্য, একে তৈলক্ষেত্র দখল, আঞ্চলিক রাজনীতি, এই পক্ষ সেই পক্ষ বিষয়ক ঘটনা হিসাবে সারা মুসলিম জাহানে উপস্থাপন করেছে। অথচ এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে বিশাল সতর্কবাণী।

তাই যেহেতু হাদিসে বর্ণিত বনু কাল্ব গোত্রের সিরীয় অত্যাচারী শাসকের সাথে এখনও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর যুদ্ধ এখনও সিরিয়ার ভূখণ্ডেই বিদ্যমান ও চলমান, সতর্ক বিশ্বাসী পুরুষ ও মহিলা হিসাবে আমরা এই যুদ্ধের দিকে সর্বদাই এক চোখ খোলা রাখব। আরও চোখ রাখব সমগ্র ইরাক, সিরিয়া, খোরাসান ও জাজিরাতুল আরবের ভূখণ্ডগুলোসহ নেতৃস্থানীয় বিধর্মী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সামরিক পরিস্থিতির উপর।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×