somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাইঘাটের বাম জঙ্ঘা কালী মন্দির

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দক্ষ রাজ কর্র্তৃক যজ্ঞানুষ্টানে মাতা পার্বতি দেহত্যাগ করিলে মহাদেব স্কন্ধে উন্মাদ হইয়া বিশ্ব পরিক্রমা করিতে থাকেন। এমতাবস্তায় বিষ্ণু ধ্বংসের হাত থেকে সৃষ্টিকে রক্ষা হেতু উনার সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহকে খন্ডিত করিতে থাকেন। এভাবে সতীর দেহ ৫২ (বায়ান্ন) খন্ডে বিভক্ত হয়। এই খন্ড গুলির মধ্যে ৫১ (একান্ন) খন্ড পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পতিত হয় এবং এক খন্ড প্রসান্ত মহাসাগরে। সতীর দেহের একান্ন খন্ডের মধ্যে ১টি খন্ড কানাইঘাট উপজেলার ২নং লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউ/পির বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামে পতিত হয়। খন্ডটি সতীর বাম উরুর ভাগ। সতীর দেহের খন্ড বিশেষ পৃথিবীর যে সমস্ত স্থানে পতিত হয় স্থান গুলি মাতৃতীর্থ নামে পরিচিত। বাম উরুর ভাগ পতিত হওয়ার কারণে এই মন্দিরটি বাম জঙ্ঘা মহাপীঠ কালী মন্দির নামে আখ্যায়িত।
পৃথিবীতে ৫১ পীঠের পরিচিতি ঃ ১. হিঙ্গুলোয় (বেলুচিস্তান) সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র ২. কবির পুরে (ভারত) সতীর তিন চক্ষু ৩. সুগন্ধাঘ (বাংলাদেশ) সতীর নাসিকা ৪. অমরনাথ (কাশ্মীর) সতীর কণ্ঠ ৫. জ্বালামুখী (পাঞ্জাব) সতীর জিহ্বা ৬. জলন্ধারে (ত্রিপুরা) সতীর বাম স্তন ৭. বৈদ্যনাথ (বিহার) সতীর হৃদয় ৮. নেপালে, সতীর জানুদ্বয় ৯. মানস সরোবরে সতীর দক্ষিন হস্ত ১০. উৎকলে (পূরিতে) সতীর নাভি ১১. গন্ডকি নদীতে সতীর সতীর দক্ষিন গন্ডি ১২. বহুলায় (ভারত) বাম বাহু ১৩. উজানিতে (ভোরু) সতীর দক্ষিন কনুই ১৪. চট্টগ্রাম (বাংলাদেশ) দক্ষিন হস্তার্ধ ১৫. ত্রিপুরায় সতীর দক্ষিন চরণ ১৬. ত্রিগ্রোতায় (ভারত) সতীর বাম পদ ১৭. কামরুপ বা কামাখ্যায় ঘোণীপীঠ মহামুদ্রা ১৮. প্রয়াগে (ভারত) দুই হস্তের আঙ্গুলী ১৯. জয়ন্তীতে (কানাইঘাট) সতীর বাম জঙ্ঘা ২০. কালিঘাট (কলিকাতা) দক্ষিন চরণের আঙ্গুলী ২১. কিরিটে, সতীর কিরিট ২২. বারানসী কাশীতে সতীর কুন্তল ২৩.কন্যাশ্রমে সতীর পৃষ্ট দেশ ২৪. কুরক্ষেত্র দক্ষিন পায়ের গুলফ ২৫. মনিবন্ধে (মনিবেদে) সতীর সনিবন্ধ কর গ্রন্থি ২৬. শ্রী হট্টে, সতীর গ্রীবা ২৭. কাঞ্চিদেশে, সতীর কঙ্খাল ২৮. কাল মাধবে, সতীর বাম নিতম্ব ২৯. শোন নদে, দক্ষিন নিতস্ব ৩০.রাম গিরি, দকিাষন স্তন ৩১. বৃন্দাবনে, সতীর কেশ জাল ৩২. গুচি দেশে, সতীর উর্দ্ধদন্ত ৩৩. করতোয়া তটে, সতীর তল্প ৩৪. শ্রী পর্বতে, দক্ষিন গুলফ ৩৫. বিভাসকে, বাম গুলফ ৩৬. প্রভাসে, সতীর উদর ৩৭. ভৈরব পর্বতে, সতীর উদ্ধ ওষ্ট ৩৮. মগধে, দক্ষিন জঙ্ঘা ৩৯. জন্ম স্থানে, সতীর চিবুক ৪০. গোদাবরি তীরে, দক্ষিন গন্ড ৪১. রতœবলি, সতীর দক্ষিন স্কন্ধ ৪২. ক্ষীর গ্রাম, (বর্দ্ধমানে) সতীর দক্ষিন চরনাঙ্গুষ্ট ৪৩. মিথিলায়, সতীর বাম স্কন্ধ ৪৪. নল হাটিতে, সতীর নলাপতে ৪৫. বর্ধমানে, সতীর মুন্ড ৪৬. বক্রেশ্বরে, সতীর মন ৪৭. যশোরে, সতীর কর কোমল ৪৮. অট্রহাসে, সতীর নিম অষ্ট ৪৯. নন্দীপুরে, সতীর হার ৫০. লঙ্কায়, সতীর নুপুর ৫১. বিরাটে, সতীর বাম পদাঙ্গুলী সমূহ। জয়ন্তীতে (কানাইঘাট) বাম জঙ্ঘা মহাপীঠ কালি মন্দিরের বর্ণনা ঃ কানাইঘাট উপজেলার ২নং লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউ.পি পাহাড়ের পাদদেশে বাউর ভাগ ২য় খন্ড গ্রামে মন্দিরটির অবস্থান। মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের পীঠস্থান ও প্রাচীন ঐতিহ্যের এক নিদর্শন। মন্দিরটির প্রতিষ্টাসন নির্দিষ্টভাবে নিরুপন সম্ভব নয়।
মুঘল আমলে তৎকালীন জৈন্তিয়া রাজা কর্তৃক মন্দিরটি প্রতিষ্টিত হয়। কথিত আছে জৈন্তিয়ার রাজা স্বপ্নে দৃষ্ট হইয়া মন্দিরটি প্রতিষ্ট করেন। প্রবাদ আছে যে, জৈন্তিয়ার রাজা শীলা মূর্তিটি জৈন্তিয়াতে নিয়ে প্রতিষ্টা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু রাজা যখন উনার সৈন্য সামন্ত হাতি, ঘোড়া দ্বারা মূর্তিটি তুলতে ব্যর্থ হন তখন তিনি উক্ত জায়গাতেই মন্দির প্রতিষ্টা করেন। এই মন্দিরের নাম অনুসারেই বাউরভাগ ৪টি গ্রামের নাম করণ করা হয়। মন্দিরের তিনি ভূমি, মন্দিরের সামনে পুকুর, ও অমৃত কুন্ড নির্মাণ করেন। নিত্য নৈমিত্তিক পূজা অর্চনার জন্য তিনি পূরহিত নিয়োগ দেন। মন্দিরের সামনে পুকুরটি কালী গঙ্ঘা নামে আখ্যায়িত।


মন্দিরের সুরক্ষার জন্য তিনি ইট সুরকির প্রাচীর তৈরী করেন। যাহা প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন সরূপ দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। মন্দিরের পাশে বহু গভীর একটি কুয়া তৈরী করেন যাহা কূয়ার তলদেশ থেকে উপরি ভাগ পর্যন্ত পাথর কেটে টুকরো টুকরো করে বসানো। কূয়াটি অমৃত কুন্ড নামে পরিচিত। মন্দিরের মাহাতœ্য ঃ বৃটিশ শাসন আমলে একদিন পূরোহিত মন্দিরে পাঠা বলি দিয়ে পূজা করছিলেন। এমন সময় একজন ইংরেজ লাট সাহেব উপস্থিত হন এবং পূরোহিত ব্রাহ্মণকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি যদি লোহার পাঠা এনে দেই তাহলে কি তোমার এই খড়গ দ্বারা বলি দিতে পারবে? পূরোহিত কিছুক্ষণ ভেবে বলেন, হ্যাঁ মায়ের আর্শিবাদ হলে লোহার পাঠা ও বলি দেওয়া সম্ভব হবে। কয়েক দিন পর লাট সাহেব একটি লোহার পাঠা নিয়ে মন্দিরে উপস্থিত হন। পূরোহিত মায়ের নাম স্মরণ করে পাঠাটিকে ফুল ও বেল পাতা গলায় পরিয়ে তুলসি জল ছিটানো মাত্র পাঠাটি বাস্তব পাঠায় রূপান্তরিত হয় এবং পূরোহিত পাঠাটি বলি দিতে সম্ভব হন। এভাবে মন্দিরের অনেক মাহাতœ্য রয়েছে। মন্দিরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ঃ কানাইঘাট থেকে সুরাইঘাট সিএনজি যোগে (৭ কি.মি.) এরপর সুরাইঘাট থেকে রিক্সা যোগে বাউরভাগ কালী মন্দিরে ২কি.মি.।
মন্দিরে ভক্ত সমাগম ও পূজা অর্চ্চনাঃ মন্দিরে নিত্য পূজা হয়। প্রতি অমাবস্যাতে পূজা হয় এবং বাৎসরিক কীর্ত্তন হয়। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থান হইতে এবং বিভিন্ন দেশ হইতে শত শত ভক্ত মন্ডলী পূজা দিতে আসেন। কিছু দিন পূর্বে ভারতের হাই কমিশনার পূজা দিতে এসেছিলেন।
মন্দিরের সংস্কার ও যোগাযোগের সুবিধার্থে করণীয় ঃ সংস্কারের অভাবে মন্দিরটি ধ্বংস হতে চলেছে। এই প্রাচীন ঐতিহ্য ও ধর্মীয় প্রতিষ্টানটি রক্ষাহেতু মন্দিরের সংস্কার ও সুরাইঘাট হইতে কালী মন্দির পর্যন্ত রাস্তা পাকা করণ এবং মন্দিরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া একান্ত আবশ্যক। তাই উক্ত ঐতিহাসিক নিদর্শনটি রক্ষাকল্পে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ এবং শুভাকাঙ্খী ব্যক্তি বৃন্দের নিকট আবেদন করেছেন বাম জঙ্ঘা কালি মন্দিরের সভাপতি দিলীপ কৈরি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×