somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা বাংলা ভাষার মর্যাদা দেই !!!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ছোটবেলায় স্কুলে যতগুলো পত্র লেখা শিখেছি,তার মধ্যে সরকারী,বেরকারী সব রকমই ছিল। সেগুলো বাংলায় ছিল । কোনো বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্যে স্কুল থেকে যেসকল পত্র বিভিন্ন স্থানে লেখা হত ,তা বাংলাতেই হত। ইংরেজীতে পত্র লেখা আমরা শিখেছি কিন্তু ওটা ছিল স্কুলের পরিক্ষার খাতায় লেখার জন্যে। বাস্তব ক্ষেত্রে বাংলাই ছিল মাধ্যম। এটি বেশী দিনকার কথা নয়।

বাংলা ভাষার চর্চা এখনও আছে। এখনও আপনি সরকারী,বা বেসরকারীভাবে কোনো ক্ষেত্রে বাংলায় পত্র লিখতে পারেন। কিন্তু আপনি বোধহয় নিজেই বুঝে ফেলেছেন যে, কোথাও বাংলায় পত্র লিখলে আপনার কপালে কি নিয়তি অপেক্ষা করে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ইংরেজীতে পত্র না লিখে বাংলায় লিখলে অপনার চাকুরী তাৎক্ষনিকভাবে চলে যাবে এটা আপনার জানা। কিন্তু সরকারী ক্ষেত্রেও যে াাপনি হেনস্থার শিকার হতে পারেন,তা কি জানা আছে ?

আপনি কোনো স্থানে এমনটা করে দেখুন।তাদের মুখের আকৃতি এবং চাহনী থেকে অনুমান করতে পারবেন যে,তারা আপনার শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে সন্ধিহান।

আপনি কোথাও গিয়ে ইংরেজীতে কথা বলুন,দেখবেন,তারা আপনাকে বেশী শিক্ষিত ভাবছে। বাংলায় বলুন এবং দেখুন।

আপনি কোনো অনুষ্ঠানে বাংলা গান বাজান,দেখবেন মানুষ আপনাকে কিভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করে। ইংরেজী বাজান,দেখবেন আপনাকে আপার ক্লাশ ভাবছে।

আপনি বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলুন এবং দেখুন মানুষ কি বলে। দেখবেন তারা হয় আপনাকে খ্যাত বলছে,নয়ত গোপাল ভাড় বা প্রফেসর সাহেব বলে তাচ্ছিল্ল করছে।

আপনি চাকুরীর নিয়োগকর্তা হলে বাংলায় বিজ্ঞাপন দিন, দেখবেন প্রার্থীদের কি অবস্থা হয়। তারা ভাববে এই পোস্টের বেতন বেশী না। ফলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি কাঙ্খিত প্রার্থী পাবেন না। এবং তারা আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খারাপ বা নীচের ধারনা পোষণ করবে। ইংরেজীতে বিজ্ঞাপন দিন, দেখবেন ভাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত স্থান থেকে আবেদন আসছে।

ভাবছেন,তাহলে শুধু একদিনই বাংলায় কথা বলব,সেটা ২১শে ফেব্রুয়ারী। না , তা হবে না। তাহলে একদিনেই মানুষ আপনার সম্পর্কে তথ্য জেনে যাবে। এটা আপনি হতে দিবেন কেন ? তাই ২১শের দিনটি হল একটি উপলক্ষ্য মাত্র। এটি একটি সরকারী ছুটির দিনও বটে,তাই উপভোগ করা আর কি। দেখবেন,যারাফুল নিয়ে প্রভাতফেরীতে যায়,তারাও রিমিক্স কথা কয় এবং তাদের আলোচনায় আপনি ২১শের ছিটেফোটাও পাবেন না। তারা আনন্দিত এই কারনে যে,ফুল নিয়ে লাইনের সামনে দাড়িয়েছে এবং এই উৎসবে যোগদান করে তারা ধন্য।

অনেকরে সাথে এই অছিলায় দেখা হবে,এটাই আসল। আর ইচ্ছা করলেও সকলে এখন আর বাংলায় কথা বলতে পারবে না। ইংরেজী বাংলার মধ্যে এমনভাবে ঢুকেছে,আপনি বুঝতেও পারবেন না,শব্দটা ইংরেজী নাকি বাংলা। তবে মানুষ বুঝতে পারছে,এটাই আসল ভেবে কাজ চালিয়ে যাবেন। এভাবে ভাষাকে ধর্ষন করা হচ্ছে কিনা ভেবে দেখবেন।

সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু করতে হবে বলে যারা আওয়াজ তোলে,তারাও আসলে এভাবে চালাচ্ছে। এটা হল একটা শ্লোগান। এতে কিছু পরিচিতি বাড়ে,তাই এই আওয়াজ। অনেকটা গাছের ডালে বাংলা বর্ণ ঝুলিয়ে নীচে ৩১ডিসেম্বর স্টাইলে নাচানাচি করার মত। অবশ্য এটাও নতুন নয়,পূর্বে ঘটেছে।

এতক্ষন যা বললাম,তা চেতনাধারী ও অচেতন সকলেই করে থাকে। আমাদেরই কেউ কেউ ভাষা নিয়ে বেশী বলে,আর কেউ কম,কিন্তু ঘটনা মোটামুটি একইভাবে ঘটছে। ব্যক্তিগতভাবে যেসব বাংলাপ্রেমীদের সাথে কথা বলেছি,তারাও আসলে ইংরেজীর দাস। হেথা সেথা দুএকজন প্রকৃত প্রেমিক আছে কিন্তু তাদের অনেকে যখন দেখেছে,শুধু বাংলায় ভাত নেই,তখন আবার ইংরেজীমুখী হয়েছে।

শেষ কথা হল, এইটা হচ্ছে সাষ্কৃতির ব্যাপার। মানে সাংষ্কৃতিক আগ্রাসন। এই আগ্রাসন রুখতে নিজস্ব সাংষ্কৃতি বলিষ্ঠ করতে হয় এবং তা নিজ জনতার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত রাখতে হয়। কিন্তু আমাদেরকে যেসব সাংষ্কৃতি শেখান হয়,তা আমাদের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। পরিবার থেকে কিছু শিখে সমাজে,বা প্রতিষ্ঠানে গেলে সে বুঝতে পারে,এরা তার পরিবারের শিক্ষার বিপক্ষে। তখন সে বেকায়দায় পড়ে সেটা গ্রহন করতে থাকে। তার মন সেটা মেনে নেয়না,আবার উপায় ও থাকেনা। এতে সে আসলে সর্বদিক দিয়ে বঞ্চিত হয়। এভাবে আমরা জীবন অতিবাহিত করি। এতে করে বাহির থেকে যখন কোনো সাংষ্কৃতি চলে আসে,নিজ সাংষ্কৃতি সম্পর্কে ধারনা বা জ্ঞান অতি সীমিত হওয়ার কারনে আমরা সেখানে গা ভাষায়। এবং মস্তিষ্ক লুটপাট হওয়াতেও আনন্দিত হই। আমরা যদি আমাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারতাম এবং সেটা বুঝে কাজ করতাম,তাহলে ভাষার বিষয়,মর্যাদা বুঝতে পারতাম। এবং বাংলার গাথুনী এতটা ঢিলা হতনা। আমরা বিদেশী ভাষা শিখতাম কিন্তু বাংলাকেও ভালভাবে চর্চা করতাম। কিন্তু আমাদের সাংষ্কৃতিক দ্বন্দ আমাদেরকে মানুষিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে শেখায়। এখান থেকে ভাল কিছু আশা করা যাচ্ছে না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×