somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০১৩'র গণজাগরণ মঞ্চ ও ১৯৬৯'র গণঅভ্যুত্থান একই সূত্রে গাঁথা

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১৩ এর শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ও '৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান বাঙালি জাতির ইতিহাসে একই সূত্রে গাঁথা যা বাঙালিকে আত্ম পরিচয়ের সন্ধানে অনুপ্রাণিত করবে বারবার। ২০১৩ এর ৫ ফেব্রুয়ারি শাহ্বাগের গণজারণ মঞ্চের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে যে জাগরণ নতুন করে সৃষ্টি হয়েছিলো তার প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার শাহবাগে আবারো বসছে ছাত্র-জনতার মহাসমাবেশ। এদিকে ১৯৬৯ এর মহান গণঅভ্যুত্থানের ৪৫ তম বার্ষিকী পার হলো গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার। এদিন শহীদ মতিউরের স্বজনেরা এসেছিলেন নবকুমার ইনস্টিটিউশনে, এসেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামসহ অনেকেই বাঙালির ইতিহাসের এই দিনটিকে স্মরণ করতে, শহীদদেরেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আব্দুল হালিমসহ সকল শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী। সেই দিনটি বাঙালি জাতির আত্মশক্তি ও আত্মদর্শন প্রকাশের এক অবিস্মরণীয় দিন। '৬৬-র বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা এবং পরবর্তীতে তৎকালীন ছাত্রসমাজের ১১-দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় '৬৯-এর ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা হল (বর্তমানে শহীদুল্লাহ হল) শাখার সভাপতি আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদ। তৎকালীন ঢাকা জেলার নরসিংদির হাতিরদিয়ায় ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণকারী আসাদ পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সমন্বয় কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের, একই সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় আইন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদ এর মৃত্যুর ৪ দিন পর সারা পূর্ব বাংলায় সংগঠিত হয় গণঅভ্যুত্থান, যার ফলশ্রুতিতে কিছুদিনের মধ্যে পতন ঘটে দোর্দন্ড প্রতাপশালী সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের। কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে তৎকালীন পত্র পত্রিকায় জানা যায়, পূর্বঘোষিত হরতালে ২৪ জানুয়ারী ঢাকা শহর মানুষে মানুষে প্লাবন ডেকে আনে। হরতাল পূর্ণভাবে সফল হয়। নগরীতে সেনাবাহিনীও তলব করা হয়। সচিবালয়ের সামনে পাখির মত গুলি করে হত্যা করা হয় প্রথমে ছাত্রকর্মী রুস্তম আলীকে, পরে স্কুলবালক (নবকুমার ইনস্টিটিউটের) কিশোর মতিউর রহমানকে। বৈদ্যুতিক তার বেয়ে মানুষ সচিবালয়ের এয়ার কন্ডিশনারের বাঙ ভাঙতে যাচ্ছে। গুলি খেয়ে সেই তার থেকে ছিটকে পড়ছে একজন। আর তা দেখে কিন্তু কেউ থামছে না। আরেকজন উঠছে। এতটা উন্মত্ত ও হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে লড়াকু জনতা।
সমগ্র নগরী এক অভূতপূব শিহরণে জেগে উঠে। ছাত্র-জনতার মধ্যে এমন একটা লড়াকু মনোভাব জাগ্রত হয়ে উঠে যে, তা যে কোনো সময় উচ্ছৃংখল হয়ে উঠতে পারে। নেতৃবৃন্দ জনতার এই অগ্নিমূর্তী দেখে ভয়াবহ কিছু ঘটনার আশংকায় (যা সামগ্রিকভাবে মূল আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে) ভাবিত করে তোলে।
লক্ষ লক্ষ মানুষ পল্টনে দুই শহীদের লাশ নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর অপেক্ষায়, আর ওই দিকে গভর্ণর হাউজে সেনাবাহিনী কামান-মেশিনগান তাক করে প্রস্তুত। যে কোনো সময় প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধ ঘটে যেতে পারে। ছাত্র নেতৃবৃন্দ ছিল কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কি করে এতটা অনুহুত রক্তাক্ত ও বিয়োগান্ত ঘটনা এড়ানো যায় তা সকলকেই চিন্তিত করে তুলেছিল। শহীদদের জানাজা শেষে দরুদ পড়তে পড়তে মিছিল এগিয়ে গেল ইকবাল হলের দিকে। সেখানে একের পর এক বক্তৃতা করলেন তোফায়েল আহমেদ, সাইফউদ্দিন মানিক, মাহবুব উল্লাহ। প্রবীণ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খানও সেখানে রুদ্ধ কন্ঠে লম্বা এক বক্তৃতা করলেন। এদিনই ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) সভাপতি সাইফ উদ্দিন মানিক ও মেননপন্থী সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল্লাহ আত্মগোপন অবস্থা থেকে প্রকাশ্যে আসেন।
শহীদ মতিউরের পিতা এ সভায় বক্তৃতা করেন। তিনি উপস্থিত লক্ষ লক্ষ বিক্ষোভকারীকে 'মতিউর' বলে ঘোষণা দেন। পরবর্তী কর্মসূচী দেয়ার জন্য ছাত্র-জনতার থেকে চাপ আসলে পরদিন ২৫ জানুয়ারিই আবার সর্বাত্মক হরতালের কথা ঘোষণা করা হয়।

আশার কথা হচ্ছে, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের মধ্য দিয়ে এদেশের সাধারণ মানুষ আবারও চেতনা ফিরে পেয়েছে। একাত্তরের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ধর্মব্যবসায়ীদের রাজনীতির পথ রুদ্ধ করে দেওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। '৬৯'র গণঅভুত্থান তাদেরকে সেই পথে এগিয়ে যেতে আত্মশক্তি অর্জনের পথ দেখাচ্ছে। ধর্মের নামে মিথ্যাচার করে যে সমাজে বেশিদিন টেকা যায় না সেটা জনগণ আবার বুঝে ফেলেছে। এ বাস্তবতাটুকু উপলব্ধি করে স্বাধীনতার চেতনার সপক্ষের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, আমলা ও ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিলে মুক্তিযুদ্ধেও চেতনায় দেশ অবশ্যই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আর তা না হলে আরও অকৃতজ্ঞতা ও মিথ্যাচারের পরিণতি ভোগ করতে হবে জাতিকে। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ২০১৩ এর শাহবাগের গণজাগরণ একই সূত্রে গাথা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×