somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় সিনেমা গুন্ডে ও আমাদের প্রতিবাদ

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা গল্প দিয়ে শুরু করি, আজ থেকে ১১ বৎসর আগের কথা, বরিশালের যে কোন এক এলাকায় ভাড়া করা একটা বাসায় আমাদের পুরো পরিবার থাকে। আমি নিজে থাকতাম কাছেই একটা আবাসিক মাদ্রাসায়। বাসা কাছাকাছি হওয়ায় আমার খাবার বাসা থেকেই পাঠানো হতো। আমার সাথের একটা ছাত্র আমার খাবার নিয়ে আসতো, আমাকে বাসায় যেতে দেয়া হতো না; যদি সময় মত না আসি- সেই ভয়ে। যাই হোক, যখন সেই ছেলেটা না থাকতো, মানে বাড়িতে বেড়াতে যেতো, শুধু তখন-ই আমার বাসায় যাওয়ার সুযোগ জুটতো। তো একদিন ওই ছেলে না থাকায় আমি দুপুরের খাবার খেতে বাসায় গেলাম, গিয়ে দেখি বাসার সামনের দরজায় তালা লাগানো। আমার তো মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, আমি বাসার দোতলায় আমার বোনদের হাসাহাসি শুনতে পাচ্ছি, অথচ ঘরের সামনে তালা!
যাই হোক, আমি বোনদের নাম ধরে ডাকাডাকি করছি, হঠাৎ দেখলাম, আমার থেকে বয়সে ছোট একটা ছেলে আমার সামনে এসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, জিজ্ঞেস করলাম- কি হইছে?
ও বললো- আপনে মুক্তা আপুরে ডাকেন ক্যান?
- তোমার দরকার কী?
- দরকার আছে, আপনে তারে ডাকেন ক্যান?
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো, ওকে জিজ্ঞেস করলাম- আমাকে চেনো?
- আপনারে চেনা লাগবে না, আপনে আমারে চিনেন?
- না, চিনি না, আর আমি মুক্তাদের ভাই, এইটা আমাদের বাসা, বুঝছ?
- এহ, আমি মুক্তা আপুর ভাই রে চিনি, প্রত্যেকদিন বাসায় আসে ভাত নিতে, আপনে কেডা? যান মিয়া এইখান থেইক্কা!
মেজাজটা আরও খারাপ হয়ে গেলো, বললাম- একটা থাপ্পর দেবো ফাজিল, যা এইখান থেইক্কা।
ছেলেটি আরও উল্টা ঝাড়ি দিলো, বলে- মুক্তা আপু আমারে আপনের থেইকা বেশি চিনে, আমি নালিশ দিলে আপনের খবর আছে কিন্তু।
কথা চলছে, এর মাঝেই পাশের বাসা থেকে আমার মেজো বোন বের হলো, হাতে বাসার চাবি। বললো, কী কাজে যেন ওই বাসায় গেছে, আব্বা- মা বাসায় নেই, তাই বের হওয়ার সময় তালা মেরে রেখেছিলো, আরও কী কী যেন বলেছিলো।
যাই হোক, আমি আমার সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার কথা জিজ্ঞেস করলাম, বললাম- এই ফাজিলটা কে? ততক্ষণে বাসার ভেতরে চলে এসেছি, তো বোনকে বললাম ওই ছেলেটার কথাগুলো। তখন আপু জানালো, ছেলেটার নাম রুবেল, পাশের বাসায় উঠেছে ওরা, আর ওই ছেলের মাথায় একটু ঝামেলা আছে মনে হয়।
যাই হোক, আমার বয়স তখন ১৩ আর ওই ছেলেটার হয়তো ৯-১০!
বর্তমানের গুন্ডে সিনেমার কাহিনী দেখে সবাই যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, সেভাবে দেখালে ঐদিন তো আমার মানব বন্ধন আর মিছিল না হলেও যে ছেলেটা বাসায় খাবার নেয়ার জন্য আসতো, ওর বাসায় আসা বন্ধ করে দেয়া উচিৎ ছিল। নিজের পরিচয় বিলুপ্তির যে সম্ভাবনা (!) দেখা দিয়েছিলো, তা থেকে বাঁচতে গায়ে নাম- পরিচয়, নয়তো সাথে জন্মনিবন্ধন নিয়ে হাটার দরকার ছিলো, অথবা ছেলেটাকে গিয়ে হাত-পা ধরে বুঝানো দরকার ছিলো যে, - ভাই দেখ, এই আমাদের বাসার সবার একসাথে ছবি, এইখানে আমি আছি, তার মানে আমি এই ঘরের ছেলে। নইলে কাছেই মামার বাসা ছিলো, ওকে নিয়ে সেখানে যাওয়া উচিৎ ছিলো। আর অন্য কিছু না হলেও ওর বাসায় আমার বোনদের সাথে নিয়ে গিয়ে সবার সামনে নিজের পরিচয় তুলে ধরা উচিৎ ছিলো।
আমি কিন্তু এর কোনটাই করিনি, তাতে আমার পরিচয় কি বিলুপ্ত হয়েছে? ওই ছেলেটার সাথে এখনো মাঝে মাঝে দেখা হয়, খুব-ই ভালো সম্পর্ক আমার ওর সাথে। এখন ও খুব ভালো করেই জানে আমি কে।
অর্থাৎ, প্রথম যখন ও আমাকে দেখে পাগলা পাগলা কথা বলছিলো, তখন ও আমাকে চিনতো না বা আমার সম্পর্কে, আমাদের পরিবার সম্পর্কে ও জানতো না। এটা ওর জানার অভাব ছিলো। সেটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা আসলেই পাগলামি হয়ে যেতো।

এখন আসি মূল কথায়-
একটা সিনেমা কখনো কোন ইতিহাসের দলীল হতে পারে না। তার উপরে ভিনদেশীদের বানানো সিনেমায় শুধু কোন ইতিহাসের প্রতি তাদের মনোভাবটাই প্রকাশিত হতে পারে; ইতিহাসের সত্যতা না।
যুদ্ধ এখানে হয়েছে, ভারতে না। আর পুরো ভারতের মাঝে শুধু পশ্চিমবঙ্গ-ই যতটুকু সত্য জানে, বাকি প্রদেশ গুলোর জানার সুযোগ বলতে শুধু ওই মিডিয়া। আর তখনকার যুগের মিডিয়ার কথা বা সাধ্য উঠানোটাই মনে হয় অবান্তর। তাই ওরা আমাদের ইতিহাসের বিকৃতি করলে সেটাকে ওদের জানার অভাব বলেই ধরে নেয়া হবে।
পরবর্তী কথা হল, ভারতের একটা ফালতু সিনেমা আমাদের দেশ নিয়ে কী না কী বললো, তাতেই আমাদের মাথা খারাপ! ভারতের এতো দাম কেন আমাদের কাছে? কোথাকার কার কথায় আমরা অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে গেলাম? তাহলে আমি এইবার বললাম, আমেরিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট কেনেডি সাহেবকে খুনের পিছনে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জড়িত। এইটা নিয়ে একটা সিনেমা বানান তো কেউ, তারপরে দেখেন ভারতীয়রা বা আমেরিকানরা লাফালাফি করে কি না!
ওরা কেউ আপনার এই সিনেমার কথা হিসেবেই নিবে না। কারণ, ওরা আমাদের তেমনভাবে পাত্তা দেয় না। কিন্তু আমাদের কাছে ওদের কী দাম!
আমার মনে হয়, আমরা গুন্ডে সিনেমা নিয়ে মাতামাতি করলে সেটা আমাদের-ই সম্মানে লাগে। তাই এটাকে হাস্যকর আর অযৌক্তিক হিসেবে নেয়াটাই যুক্তিযুক্ত। নইলে ভারতীয় কোন সিনেমা কোন দিন আবার বলে বসবে বাংলাদেশ নামের দুনিয়ায় কোন দেশ নেই, ভারতের পাশে যে ব-দ্বীপ টা আছে, ওইটা তাদের আবর্জনা ফেলার জায়গা। সাথে সাথে আমরা পুরো দেশ সাবান দিয়ে ধুইতে শুরু করে দেবো। তারপর পরিষ্কার দেশের ছবি ফেসবুকে দিয়ে, সিনেমা কর্তৃপক্ষের কাছে মেইল করে প্রমাণ করবো আমরা কারো আবর্জনা ফেলার স্থান নই।
.
.
আরে ভাই, প্রতিবাদ যদি জানাতেই হয়, তাহলে ওই সিনেমাকে অগ্রাহ্য করেন। নিজের মত নিজে থাকেন। আর ভারতীয় সিনেমা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়, ওদের সিনেমার কথা মানুষ বিশ্বাস করে আমাদের ইতিহাসকে ভুল বুঝবে- তেমন মনে করলে যা ইচ্ছা তাই করেন। ওদের ইতিহাস বিকৃত করে সিনেমা বানান। সারা দুনিয়ায় প্রচার শুরু করেন- ওদের সিনেমার কথা মিথ্যা! তাতে আপনার মনের জ্বালা যেমন দূর হবে, তেমনি ভারতের অভিযুক্ত সিনেমাটাও হিট হয়ে যাবে।

শেষে একটা কথা- তথাকথিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক প্রতিনিধি গত বৎসর বলেছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ফকিন্নির পুত'রা পড়ে, তাই দেশের সকল স্থান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান সকল শিক্ষার্থীর চৌদ্দ গুষ্ঠির পরিচয় সংগ্রহ করে একটা জাদুঘর বানানোর আহ্বান জানাচ্ছি, যেখানে প্রমাণ করা হবে, আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু ফকিন্নির পুত নই। আর ফকিন্নির পুত একটা বিশেষ গালি, যার অর্থ খুব পচা!
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×