জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছোড়ার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তা আটকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেছে সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী।
Published : 24 Feb 2014, 11:06 AM
রোববারের ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির’ ব্যানারে শিক্ষক-কর্মচারীরও একই স্থানে মানবন্ধন করেছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর তাদের স্মারকলিপি দেয়ার কথা থাকলেও তা না পেরে নতুন কর্মসূচি দিয়ে দুপুরে ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে প্রায় তিনশ শিক্ষক-কর্মচারী পায়ে হেঁটে প্রেসক্লাবের সামনে এসে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির’ ব্যানারে মানবন্ধনে দাঁড়ান।
ব্যানারে লেখা দেখা যায়- ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর বর্বোরোচিত পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এবং অ্যাকাডেমিক ভবন এবং হলসহ অবকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন।”
এই মানববন্ধন শুরুর কিছুক্ষণ পর সহস্রাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছান এবং দুই পাশের রাস্তা আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় হাই কোর্টের সামনে ‘কদম ফোয়ারা’ ও প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে সেগুনবাগিচায় ঢোকার মুখে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ি শিক্ষা ভবনের দিক দিয়ে শাহবাগের দিকে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীরা পথ আটকায়।
পরে পুলিশের মধ্যস্ততায় ওই গাড়ি ঘুরিয়ে উল্টো দিকে চলে যেতে দেখা যায়।
বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বেলা আড়াইটার দিকে চলে যান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালের দিকে শাহবাগ থেকে হাই কোর্ট হয়ে কার্জন হলের দিকের সড়ক প্রায় দেড়ঘণ্টা বন্ধ থাকে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
শিক্ষক সমিতির সভাপতি সরকার আলী আক্কাস জানান, মানববন্ধন শেষে তারা স্মারকলিপি দেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাননি।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা মঙ্গলবার সকালে একই দাবিতে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে সমাবেশ করবেন।
হল উদ্ধার আন্দোলনের সমন্বয়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মঙ্গল ও বুধবার সকাল ৯টা থেকে তারা ক্যাম্পাসে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করবেন। এছাড়া দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল হবে।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হলের সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। পুলিশের রাবার বুলেটে এক শিক্ষকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে বিকালে লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ ও কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামানের অপসারণের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
ওই সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ঘোষণা দেন, ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষক সমিতিও এ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
‘তিব্বত হল’ দখলমুক্ত করতে চলতি মাসের শুরু থেকে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা, যে ছাত্রাবাসটি ঢাকা-৭ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সাংসদ হাজি সেলিম ২০০০ সাল থেকে দখল করে রেখেছেন বলে তাদের অভিযোগ।
এদিকে রোববারের ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক সৈয়দ ফারুক হোসেন।
কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।