গত পরশুই মাত্র থিম সং টি শুনলাম। গানটা ভাল লেগেছে কিন্তু সিক্সটিন সিক্সটিন কেন বলছিল বুঝতে পারছিলাম না। আশাকরি লেখাটা পড়ে এবং গানটা শুনে সিক্সটিন সিক্সটিন কেন বলা হচ্ছিল সেটার উত্তর কেউ দিবেন। যাই হোক সেটা বাদে রেফায়াত আহমেদ ও অনম বিশ্বাসের কথায় এবং ফুয়াদ আল মুক্তাদির ও কৌশিকের সুরে গানটি ভালই লেগেছে যদিও গানের সুর কিংবা গানের কথা বাংলাদেশকে পুরোপুরি রিপ্রেজেন্ট করতে পারেনি। আমরা শত চেষ্টা করেও খাটি বাংলা গান বানাতে পারলাম না।যতটুকু না ঢুকালেই নয় যেমন স্টেডিয়াম কিংবা ক্রিকেট এসব বাদেও আরো ইংরেজীকে ঢুকাতেই হল। ফোর বা সিক্স এর জায়গায় যদি চার, ছয় বাংলা শব্দ ব্যবহার করা যায় তাহলে এ্যকশান,টেনশন,হিয়ারিং,এভরিবডি,ক্রেজি,এক্সসাইটিং,ব্লকবাস্টার এরকম আরো অনেক শব্দগুলো কি বাংলায় করা যেত না? গানটার প্রায় অর্ধেক শব্দই ইংরেজীতে।
কিন্তু আজকে মিউজিক ভিডিওটা দেখে মনে হল যে আমাদের সত্যি শিক্ষা হয় নি। যেখানে গুন্ডে ছবি নিয়ে এত সমালোচনার ঝড়।সেখানে আমরা এরকম একটা মিউজিক ভিডিও কিভাবে বানাই?গানের ভিডিওর শুরু দেখেই মনে হয় এটা কোন আমেরিকান রক ব্যান্ডের গানের ভিডিও। শুধু তাই নয়,ভিডিও-র কোথাও ক্রিকেট ব্যাট-বল, মাঠ-পিচ, গ্যালারি নাই।
গানের সাথে মিউজিক ভিডিওটা মানানসই হয়নি। গানটা যেমন বাংলায় গাওয়া হয়েছে তেমনি ভিডিউতেও বাঙালী এবং বাংলাদেশী সংস্কৃতি তুলে ধরলে ভাল হত। গানটা যেহেতু টি২০ বিশ্বকাপ তাই শুধু বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকার জার্সি না দেখিয়ে বরং যেসব দেশ অংশগ্রহন করবে সবারই দলীয় জার্সি দেখানো উচিত ছিল।বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে বেশিরভাগ মেয়েরা ল্যাগিন্স,স্লিভলেস টি শার্ট, ইত্যাদি পড়ে ঘুরে বেড়ায় না বা নাচগুলোও বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে যায়না।বরং নৌকায় বর-বউ,ধান ক্ষেতে কৃষক এরকম দৃশ্য বা শাড়ী পরে নাচ ইত্যাদি বেশী তুলে ধরা উচিৎ ছিল।
গানটা গেয়েছেন ফুয়াদ এবং কৌশিক কিন্তু ভিডিওতে দেখলাম কণা,এলিটা সহ অন্যান্য শিল্পীদের গান গাওয়ার অভিনয় করতে কিন্তু মূল গানে তাদের গলা নাই। তারা যদি শিল্পী না হতেন তাহলে বুঝতাম যে তারা শুধুই এ্যাডের জন্য অভিনয় করেছেন কিন্তু ভিডিওতে গানটা গাইছেন কিন্তু মুল গানে তারা নাই। এতে আমার কাছে মনে হয়েছে যে তাদের ছোট করা হয়েছে। এটা খুবই অসামঞ্জস্যপূর্ণ একটা বিষয়।
আমরা দেখেও শিখি না। ২০১২ সালের টি২০ বিশ্বকাপে দুই ধরনের থিম সং ছিল। একটি দেশীয় এবং আরেকটি আন্তর্জাতিক।শ্রীলংকার গানটিতে ২/১ টি বাদে কোন ইংরেজী শব্দ ছিল না।সাথে সাথে সুরটাও ছিল ওদের দেশীয়। আমাদের দেশের মত সম্পূর্ণ পশ্চিমা সুর ছিল না। তাছাড়া ওরা নিজের দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরেছে এবং আন্তর্জাতিক গানে সব দেশকেই এনেছে।
২০১২ টী২০ আন্তর্জাতিক ভারশন
অফিসিয়াল সং
আর একটাই যদি গান হয় তাহলে সেখানে সব দেশকেই তুলে ধরা উচিৎ ছিল আর তা না হলে সম্পূর্ণভাবে দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরা উচিৎ ছিল। টি শার্ট আর প্যান্ট পড়লেই স্মার্ট কিংবা আন্তর্জাতিক হওয়া যায় না। ভারতের অনেক কিছুই আমাদের পছন্দ হয় না কিন্তু ওদের ওখানে এরকম কোন আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টে নিজের দেশের সংস্কৃতিকে সবার আগে তুলে ধরে। এটাই একটা সুযোগ বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের নিজস্ব স্বতন্ত্র সংস্কৃতি তুলে ধরা।
গত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কথা মনে আছে? সেখানে আমাদের দেশের একজন জনপ্রিয় শিল্পী রুনা লায়লা উর্দু গান গাইলেন(দমাদম মাস্কালান্দার)। আমরা কি কখনও চিন্তা করতে পারি যে ভারত কিংবা পাকিস্তানে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাকিস্তানী বা ভারতীয় কোন শিল্পী বাংলাদেশের বা বাংলা গান গাইবে?রুনা লায়লার তো অনেক বিখ্যাত বাংলা গান আছে সেটা গাইলে কি ক্ষতি হত?আমরা আবার তার গলায় বাংলা গান শুনতে পেতাম সাথে সাথে পৃথিবীর মানুষও বাংলা গানের সাথে পরিচিত হত।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:১২