বন্দিদের ছিনিয়ে নিতে হামলা জঙ্গিদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
Published : 24 Feb 2014, 08:49 PM
তারা বলছেন, কঠোর অভিযানের মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও গত এক বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেদিকে মনোযোগ দেয়া হয়নি। আর তারই সুযোগ নিয়েছে জঙ্গিরা।
২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট সারাদেশে একযোগে বোমাহামলা চালিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেয় জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)।
তবে তার-আগে পরে কয়েকটি বোমা হামলায়ও তাদের সম্পৃক্ততা ছিল বলে পরে পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে তাদের তৎপরতাও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল।
এরপর জেএমবিসহ চারটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সাঁড়াশি অভিযানে আটক হন শায়খ আব্দুর রহমানসহ অধিকাংশ শীর্ষনেতা। তাদের ফাঁসিতে ঝোলানোর পর জঙ্গি তৎপরতা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে।
এরপর গত সরকারের আমলেও সরকারের মন্ত্রীরা বলে আসছিলেন, দেশে এখন আর জঙ্গি নেই।
কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির অডিও টেপ প্রকাশের মধ্যে রোববার ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশকে মেরে ছিনিয়ে নেয়া হয় জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতাকে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত দেড় বছর ধরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদের ব্যাপারে খুব একটা মনোযোগ দিতে পারেনি।”
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এসএস মাহাফুজুল হক নুরুজ্জামানও বলেন,“রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নজর না দেয়ার (জঙ্গিদের ওপর) বিষয়টি সাময়িক হতে পারে, তবে হয়ত এটাই তারা কাজে লাগিয়েছে।”
যুদ্ধাপরাধের রায়কে কেন্দ্র করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় জামায়াতে ইসলামীর সহিংসতা, এরপর হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা বিস্তৃত হয়।
বছরজুড়ে জামায়াতের সহিংসতা অব্যাহত থাকার মধ্যে শেষ দিকে এসে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাত সৃষ্টি হয়। আর এসব মোকাবেলায় হিমশিম খেতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
র্যাব কর্মকর্তা জিয়া বলেন, “জঙ্গিরাএই সুযোগটি নিয়েছে তাদের নিজেদের সুসংগঠিত করতে এবং তা তারা কাজেও দেখিয়েছে।”
এদের মধ্যে সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও রাকিবুল হাসান মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত। জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত।
এর মধ্যে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাকিবুল ধরা পড়েন। সোমবার ভোরে পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারাও যান তিনি।
এই ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত দুটি গাড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে তিনজনকে, তাদের মধ্যে দুজনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
ডিআইজি নুরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কারা কারা ছিনতাইকাজে অংশ নিয়েছিল, সে ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।”
সালেহীন ও বোমারু মিজানকে এখনো ধরা যায়নি। তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আশা প্রকাশ করেছেন, পলাতক দুই জঙ্গিও শিগগিরই ধরা পড়বেন।
বন্দি তিন জেএমবি নেতাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে বের করে ময়মনসিংহের আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিতে নেয়া হচ্ছিল। পথেই বোমা ও গুলি নিয়ে হামলা হয়।
সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ বন্দিদের প্রিজন ভ্যানে নেয়ার সময় সামনে-পেছনে পাহারায় পুলিশের গাড়ি থাকে। তবে রোববার তিন জঙ্গিকে নেয়ার সময় তা ছিল না।
ডিআইজি নুরুজ্জামান জানান, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় একজন পরিদর্শকসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি জঙ্গিদের সংগঠিত পরিকল্পনার ফসল বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
জঙ্গি ছিনতাইয়ের এই ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি এবং পুলিশ আরেকটি কমিটি গঠন করেছেন। তিন দিন সময় নিয়ে কমিটিগুলো ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে।
র্যাব কর্মকর্তা জিয়া মনে করেন, নিষিদ্ধ জেএমবির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো অতি দ্রুত নিস্পত্তি হওয়া দরকার।
“নিষ্পত্তি হলে তাদের (জঙ্গি) অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং এই সংগঠনের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ করতে সুবিধা হবে।”
কারা কর্মকর্তাদের হিসাবে, দেশের ৬৮টি কারাগারে আড়াই হাজারের বেশি জেএমবি সদস্য রয়েছে। এসব আসামিদের অধিকাংশই বিস্ফোরক মামলার আসামি। কারো বিচার চলছে, কেউ দণ্ডিত হয়ে সাজা ভোগ করছেন।