somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি আমার সেনাবাহিনী, আমার দেশের গৌরব!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুলের পরীক্ষার সিলেবাসে সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট রচনা ছিল, "তোমার জীবনের লক্ষ্য।"
বাংলা দ্বিতীয় পত্র, কিংবা ইংলিশ সেকেন্ড পেপার, দুই বিষয়ের জন্যই রচনাটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ন।
কোনকালেই পড়া মুখস্ত করার ক্ষেত্রে আমার উৎসাহ ছিল না। অলসতাই ছিল এর মূল কারণ। পরীক্ষার আগের দিন আম্মু জোর করে রচনা মুখস্ত করাতেন। পড়তে গিয়ে ভাল লাগতো না।
"প্রতিটা মানুষের জীবনে একটি লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। লক্ষ্যবিহীন জীবন যত্রতত্র ভেসে বেড়ানো দাড়হীন নৌকার মতন। অতএব, জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে হলে চাই একটি স্থির লক্ষ্য।" ইত্যাদি ভূমিকার পরে রচনায় লেখা থাকতো, "আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই।"
কিন্তু আমি যে ডাক্তার হতে চাইনা! ডাক্তার মানেই তখন আমি ভাবতাম, তাঁরা কেবল মানুষের শরীর কাটাকুটি করে অপারেশন করেন। তাঁদের আর কোন কাজ নেই।
ক্লাসের তিরিশ চল্লিশজন ছাত্রছাত্রীর সবাই একই রচনা লিখতো। সবাই ডাক্তার হয়ে গ্রামে ফিরে যেতে চায়। গ্রামের অসহায় গরীব মানুষদের সেবা করতে চায়। তাঁদের কাছ থেকে কেউই ভিজিটের টাকা নেবে না। ইত্যাদি।
তখনও বুঝতাম, সবাই যা লিখছে তা মিথ্যা কথা। আমাদের ক্লাসের("লিটল জুয়েলসের" ক্লাস ওয়ানের কথা বলছি) ছাত্রছাত্রীরা কেউই এত মহান ছিল না। আমি জানতাম এদের বেশির ভাগই পড়ালেখা শেষে নিজেদের পিতার সওদাগরী ব্যবসায় যোগ দিবে। টাকা পয়সার উপর শুয়ে বসে আরামে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবে। খুব লিখতে ইচ্ছে করতো, "ইহা সত্য নহে।" লেখা হত না।
আমি একদিন অতি দুঃসাহসী কাজ করলাম। পরীক্ষার খাতায় এইরকম একটি রচনায় লিখে আসলাম, "আমি বড় হয়ে আর্মি অফিসার হতে চাই। আর্মি হলে আমি যুদ্ধ করতে পারবো। আমি যুদ্ধ করতে চাই।"
ছোটবেলায় মামাদের সাথে বসে ভিসিআরে র‌্যামবো দেখার ফলাফল!
পরীক্ষার খাতা ফেরত আসল। সবার আগে আমি দেখলাম আমার নিজের বানানো রচনায় আমি কত পেয়েছি। মার্কস দেখে বুঝলাম, টিচারও চাননা আমি আর্মি অফিসার হই। কিছুদিনের জন্য আমার উৎসাহ মোটামুটি দমে গেল।
একদিন টেলিভিশনে কিছু অফিসারের পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় দাফন দেখে আবারও ইচ্ছে হলো সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার। সেই উদ্দেশ্যে এইচএসসি পাশ করেই সিলেট ক্যান্টনমেন্টে পরীক্ষা দিলাম। ফিজিক্যাল টেস্টেই বাদ পড়ে গেলাম। আমার দুই হাঁটুর মধ্যে ফাঁকটা নাকি একটু বেশিই বড়। মনটা খারাপ হয়ে গেল। এমন যদি হতো রিটেন পরীক্ষা হয়েছে এবং আমি ফেইল করেছি, তাহলে নাহয় পড়ে পরেরবার পাশ করা যেত। কিন্তু বাঁকা হাঁটু আমি সোজা করি কী করে? মারা যাবার পরে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় আমার দাফন হবেনা, এইটাই আমার সবচেয়ে বড় আফসোস ছিল।
অ্যামেরিকায় আসার পরে বুঝলাম আমার ভাগ্য আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল প্রবাসী হওয়া। ক্যান্টনমেন্টের বাড়িগুলো আমার জন্য নয়।
একদিন অফিসে কাজ করছিলাম, হঠাৎ তারেক আমাকে টেক্সট করলো, "ঢাকায় যুদ্ধ লেগে গেছে।"
রাজনৈতিক রেষারেষি আর সহিংসতায় আমি তখনও অভ্যস্ত। প্রবাসীরা দড়ি দেখলেই সাপ সাপ বলে ফালাফালি করে, এটাও জানা আছে। ভাবলাম তেমনই কিছু একটা হবে হয়তো। পাত্তা দিলাম না। তবু টেক্সট এ জানতে চাইলাম, "কী হয়েছে?"
সে বলল, "বিডিআর এবং আর্মির মধ্যে যুদ্ধ লেগে গেছে।"
সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ এমন কোন বড় ঘটনা নয়। কাজেই সেটাকেও তেমন গুরুত্ব দিলাম না।
বাসায় ফিরে এসে ইন্টারনেটে দেখি, অবস্থা মোটামুটি আশংকাজনক। বিডিআরের বেতন ভাতা ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি নিয়েই এই বিদ্রোহ। বিডিআর হেড কোয়ার্টার্স ঘিরে ফেলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ভিতরে অনেক অফিসার জিম্মি আছেন। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা তখন আলোচনা করছেন কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়। জনতা বিডিআরের পক্ষ্যে। কেউ কেউ নাকি সেনাবাহিনীর বিপক্ষে স্লোগান দিয়েছেন।
দুই পক্ষ থেকেই নাকি গোলাগুলি হয়েছে। এতে কয়েকজন নাকি আহত/নিহত হয়েছেন। আমার বেশ কিছু আত্মীয় স্বজন সেনাবাহিনীতে আছেন।
তাই দেশে ফোন দিলাম। জানলাম আহত, নিহতদের বেশির ভাগই উৎসুক জনতা। কি ঘটছে দেখতে গিয়েই "ক্রসফায়ারে" পড়ে গেছেন। তবে চিন্তার কিছু নেই। আলোচনা চলছে। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।
বিডিআরের কয়েকজন নেতা যখন গেট দিয়ে বেরিয়ে আসছিলেন, তখন আমাদের "উৎসুক" জনতা তাদের পিঠ চাপড়ে দিচ্ছিলেন। তাদের মুখে তখনও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তিরষ্কার ঝরে পড়ছে।
আমাদের অতি উৎসাহী জনতার এই সমস্যা, যাচাই বাছাই না করেই এক পক্ষ্য নিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন।
কয়েকদিনের মধ্যেই বিডিআর সারেন্ডার করলো। আমরা সবাই দেখলাম মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে! মানুষ কতটা বর্বর হতে পারে! দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত একেকজন অফিসারের লাশকে কিনা তাঁরই দেশের কিছু সিপাহী হত্যা করে নর্দমায় ফেলে দেয়! কারও কারও লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়!
খুনিদের অস্ত্র থেকে বের হওয়া প্রতিটা বুলেট সেদিন অফিসারদের প্রাণ নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন সহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেই সেদিন পঙ্গু করে দিচ্ছিল। সেনা অফিসারদের মৃতদেহগুলো দেখে হায়দার হোসেনের গানটাই বারবার মনে আসছিল, "আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার!"
সেনা অফিসারদের দাফন পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় হয়েছিল। তাঁদের জন্য পুরো জাতি কেঁদেছিল। তাঁদের স্মরণে জাতি এখনও কাঁদে। শুধুমাত্র এই একটি কারনেও কিছু কিছু ছেলে সেনাবাহিনীতে নাম লেখাতে চায়। তাঁদের মৃত্যুও যেন এমন গৌরবের হয়। তাঁদের মৃত্যুতেও যেন তাঁর জাতি চোখের পানি ফেলে।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×