জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করতে প্রাত্যহিক দিনলিপিতে চলতি বছর যোগ হয়েছে অগণিত নতুন পণ্য। তবে এর মধ্যে বেশ কিছু পণ্য ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছে।
উইন্ডোজ ৮ : উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। কম্পিউটার ইতিহাসের অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে আত্মপ্রকাশ। তবে স্পর্শকাতর পর্দার ক্ষুদে ডিভাইসের দৌরাত্ম্যে অস্তিত্বের শঙ্কায় পড়ে মাইক্রোসফটের এ ওএস। তবে কি হেরে যাবে মাইক্রোসফট? প্রযুক্তি অঙ্গনের এ ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে ২৫ অক্টোবর অবমুক্ত করা হয় উইন্ডোজ ৮। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্পে কোনোভাবেই যেন খুঁত না থাকে সেজন্য প্রকাশের আগে প্রোগ্রামার ডেভেলপারদের নিয়ে কয়েক দফা সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে উইন্ডোজ ৮-এ এসেছে বিশাল পরিবর্তন, যা ডেস্কটপ, ট্যাবলেট এমনকি স্মার্টফোনে সমানতালে কাজের উপযোগী। হার্ডওয়্যার ডিজাইনেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অবমুক্তকরণের পর থেকে এ পর্যন্ত যে সাড়া পাওয়া গেছে তা মাইক্রোসফটের ভাষায় 'অভাবনীয়'। সেজন্য ২০১২ সালে সবচেয়ে প্রতীক্ষিত প্রযুক্তি পণ্যের তালিকায় সহজেই ওপরে উইন্ডোজ ৮। আছে উন্নত স্পর্শকাতর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন স্টোর, ছবিযুক্ত পাসওয়ার্ড, উন্নত টাস্কবার, বুট সিকিউরিটি, চমৎকার ভিজ্যুয়ালাইজেশন।
আইফোন ৫ : ১২ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাহী টিম কুকের হাতে উন্মোচিত হয় অ্যাপলের বহুল আলোচিত স্মার্টফোন আইফোনের সর্বশেষ সংস্করণ আইফোন ৫। আগাম বায়না নেওয়া শুরু হয় ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে। মুখিয়ে থাকা ক্রেতাদের হতাশ করে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় শেষ প্রথম দফার স্টক। আর ২৪ ঘণ্টায় আগাম বুকিংয়ের সংখ্যা অতিক্রম করে ২০ লাখের কোঠা। সবার আগে কে হাতে নেবে আইফোন ৫_ তা নিয়ে ভক্তরা রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামে। এবারের আইফোনে নতুন আসা ফিচারগুলোর মধ্যে আছে এক ফ্রেমে সবার ছবি তোলার জন্য প্যানোরমিক মুড, আইওএস ৬। কাজের গতি বাড়াতে ডুয়াল কোর মানের অ্যাপল এ ৬ প্রসেসর। গুগল ম্যাপকে হটিয়ে বসানো হয়েছে অ্যাপলের নিজস্ব মানচিত্র দেখার অ্যাপস। এছাড়াও ই-মেইল ব্যবস্থাপনা, মোবাইলে ক্রেডিট কার্ড রিড করার পদ্ধতি 'পাসবুক'-এর মতো আকর্ষণীয় ফিচারগুলো তো থাকছেই।
ছোট গড়নের গ্যালাক্সি নোট : গ্যালাক্সি নোট সিরিজের সর্বশেষ সংস্করণ গ্যালাক্সি নোট ২। সবার কাছ থেকে নিজেদের পণ্যকে কিছুটা আলাদা করতেই স্মার্টফোনের চেয়ে বড়, আবার ট্যাবলেটের চেয়ে ছোট গড়নের এ ডিভাইসটি নিয়ে আসে স্যামসাং। ফিচার আর নতুন ডিজাইনের ভেলকিতে দুই মাসের কম সময়ে ডিভাইসটি বিক্রিতে ৫০ লাখের কোঠা পার করে। অ্যান্ড্রয়েড ৪.১ [জেলিবিন], ১.৬ গিগাহার্টজ গতির কোয়াড কোর প্রসেসর, সাড়ে ৫ ইঞ্চির সুপার অ্যামোলেড পর্দা, ২ গিগাবাইট র্যাম ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজ এবং অভিনব এস পেন নামক কলম গ্যালাক্সি নোট ২-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
মাইক্রোসফট সারফেস : সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। সফটওয়্যার বাণিজ্য থেকে যোগ দিল সরাসরি কম্পিউটার বাণিজ্যে। ৪৯৯ ডলারে অবমুক্ত করা হয়েছে উইন্ডোজ ৮ চালিত সারফেস ট্যাবলেটে। ১৭ অক্টোবর থেকে আগাম বিক্রি শুরু হলেও ক্রেতাদের প্রতিযোগিতার মুখে প্রথম সপ্তাহ না ঘুরতেই শেষ হয়ে যায় প্রথম দফার সারফেস ট্যাবলেট। ফলে অ্যাপল, স্যামসাং এবং গুগলের মতো জায়ান্টের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলা। ১০.৬ ইঞ্চির পর্দাবিশিষ্ট সারফেস বর্তমানে ৩২ গিগাবাইট [৪৯৯ ডলার] এবং ৬৪ গিগাবাইট [৫৯৯ ডলার] সংস্করণে পাওয়া যাচ্ছে।
অ্যান্ড্রয়েড জেলিবিন : সিমিবিয়ান আর জাভা ওএসের রাজত্বে ভাগ বসাতে ব্যতিক্রমী মোবাইল ওএস হিসেবে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে অ্যান্ড্রয়েড কাপকেক [১.৫]। শুরুতেই কাঁপিয়ে দেয় স্মার্টফোন বিশ্বকে। যার রেশ ধরে বাজারে আসে ডোনাট [১.৬], ইকলেয়ার [২.১], ফ্রয়ো [২.২], জিঞ্জারবার্ড [২.৩], হানিকম্ব [৩.০] আইসক্রিম স্যান্ডউইচের [৪.০] মতো সংস্করণ। স্মার্টফোন দিয়ে শুরু হলেও এরপর অ্যান্ড্রয়েডের বিচরণ শুরু হয় ট্যাবলেট ও ল্যাপটপের মতো বহনযোগ্য কম্পিউটারে। আর এ বছরের শেষভাগে অবমুক্ত হয় আরেকটি সংস্করণ জেলিবিন [৪.১]। সহজ মাল্টি-টাস্কিং ব্যবস্থা, নতুন লক স্ক্রিন, দ্রুত ইনকামিং কলে সাড়া দেওয়া, উন্নত অক্ষর সংযোজন, কণ্ঠ চালনা ব্যবস্থা, ছবি দিয়ে পাসওয়ার্ড এবং সহজ ফাইল শেয়ারিং ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রায় ৩৫ শতাংশ স্মার্টফোন এবং ৬ ভাগ বহনযোগ্য কম্পিউটারে বিচরণকারী জেলিবিনকে তুলে এনেছে সেরাদের কাতারে।
আসুস ট্রান্সফরমার ট্যাবলেট : ব্যতিক্রমী পণ্য হিসেবে জুনে অনুষ্ঠিত কম্পিউটেক্স ২০১২তে উন্মোচন করা হয় নতুন ধরনের ট্যাবলেট কম্পিউটার আসুস ট্রান্সফরমার, যা কখনও ল্যাপটপ এবং কখনও ট্যাবলেট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সাধারণ ল্যাপটপের মতো দেখতে হলেও কিবোর্ড অংশ থেকে মনিটর অংশ খুলে নিলে বেরিয়ে আসে আরেকরূপ। যখন সেটা ভালো লাগে তখন তেমন ইচ্ছা কাজ করা যায়। এনভিডি টেগ্রা৩ কোয়াড কোর প্রসেসর নির্মিত এ পিসির অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে রয়েছে উইন্ডোজ ৮। আছে ১০.১ ইঞ্চির স্পর্শনির্ভর পর্দা। প্রয়োজনে এক্সটার্নাল মাউস ও কিবোর্ড যুক্ত করা যাবে। ল্যাপটপ মোডে এর থেকে ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ১৮ ঘণ্টা। দাম ৪৯৯ মার্কিন ডলার।
কিন্ডল ফায়ার ২ : ট্যাবলেটের আদলে ই-বুক রিডার 'কিন্ডল রিডার' ছেড়ে শুরুতেই বাজিমাত করেছিল অনলাইন বিকিকিনি প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ডট কম। রিডারের বাণিজ্যিক সাফল্য ধরে রাখতে জুনে কিন্ডল ফায়ার ২ বাজারে ছাড়ে প্রতিষ্ঠানটি। ৭ ইঞ্চি পর্দার রিডারের অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আছে অ্যান্ড্রয়েডের চতুর্থ সংস্করণ। ১.২ গিগাহার্জ গতির ডুয়াল কোর প্রসেসর এবং ১ গিগাবাইট র্যাম।
গ্যালাক্সি এস ৩ : আইফোনকে টেক্কা দিতে ২৯ মে গ্যালাক্সি এস ৩ ছাড়ে স্যামসাং। ছয় মাসের ব্যবধানে ৩ কোটি বিক্রির মাইলফলক স্পর্শ করে এটি। ১৩৩ গ্রাম ওজন ও ৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার পুরুত্বের এ স্মার্টফোনে জুড়ে দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। ৪ দশমিক ৮ ইঞ্চি সুপার অ্যামোলেড পর্দাযুক্ত স্মার্টফোন চালনায় আছে অ্যান্ড্রয়েড ৪। ১.৪ গিগাহার্জের কোয়াড কোর প্রসেসর এবং ১ গিগাবাইট র্যাম।
নকিয়া লুমিয়া ৯২০ : সিমবিয়ান যুগের অবসানের পর স্মার্টফোন রাজ্যে নিজেদের পুরনো আধিপত্য ফিরে পেতে গত ৫ সেপ্টেম্বর উইন্ডোজ সমর্থিত লুমিয়া ৯২০ স্মার্টফোন অবমুক্ত করে নোকিয়া। জুড়ে দেওয়া হয়েছে এইচডি সমর্থিত সাড়ে ৪ ইঞ্চির বক্রাকার পর্দা। ডুয়াল কোর মানের ১.৫ গিগাহার্জ স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর এবং ৮ মেগা পিক্সেল পিউরভিউ ক্যামেরা। পাশাপাশি সংযোজন করা হয়েছে নতুন প্রযুক্তির 'ফ্লোটিং লেন্স'।